মুসলিম শব্দের অর্থ হচ্ছে আত্মসমর্পণকারী। আর ইসলাম শব্দের অর্থ হচ্ছে আত্মসমর্পণ। যে ব্যক্তি আত্মসমর্পণ করে তাকে আত্মসমর্পণকারী বলে। অর্থাৎ যে ব্যক্তি ইসলাম মেনে জীবনযাপন করে তাকে মুসলিম বলে। মোট কথা যে ব্যক্তি আল্লাহতায়ালার আইন বা বিধি-বিধান তথা কুরআন ও সুন্নাহর আইন মেনে চলে বা কুরআন সুন্নাহর আইন মেনে জীবন যাপন করে তাকে মুসলিম বলে। আল্লাহতায়ালা তাঁর বান্দা ও নবী হজরত ইব্রাহিম আ:-কে আত্মসমর্পণ করতে বা মুসলিম হতে বলেছিলেন। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যখন আমি তাঁকে (ইব্রাহিম আ:কে) বললাম তুমি মুসলিম (বা আমার অনুগত বা আত্মসমর্পণকারী) হয়ে যাও, তখন তিনি (ইব্রাহিম আ:) বললেন, আমি সৃষ্টিকুলের মালিক (আল্লাহ তায়ালার) নিকট আত্মসমর্পণ করছি বা পূর্ণ আনুগত্য স্বীকার করছি।’ (সূরা বাকারা-১৩১ আ.)।
মুসলিম জাতির পিতা হজরত ইব্রাহিম (আ:) তাঁর পরবর্তী বংশধরদেরও মুসলিম হিসেবে জীবনযাপন করার নির্দেশ দিয়ে গেছেন। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যে পথ ইব্রাহিম নিজের জন্য বেছে নিলেন, সে পথে চলার জন্য তিনি তাঁর সন্তান-সন্ততিদেরও ওসিয়ত করে গেছেন, (ইব্রাহিম আ:-এর সন্তান) ইয়াকুব আ:ও তাঁর সন্তানদের ওসিয়ত করে বলেছিলেন, ‘হে আমার সন্তানগণ, নিশ্চয়ই আল্লাহতায়ালা তোমাদের জন্য সেই দ্বীনই (আল ইসলাম) মনোনীত করেছেন। অতএব, তোমরা কোনো অবস্থাতেই এ দ্বীন বা জীবন বিধানের আনুগত্য না করে (অর্থাৎ মুসলিম না হয়ে) মৃত্যুবরণ করো না।’ (সূরা বাকারা-১৩২ আ.)।
হজরত ইয়াকুব আ: তাঁর সন্তানদের উপরিউক্ত ওসিয়ত করার পর তিনি তাঁর মৃত্যুর আগে প্রশ্ন করেছিলেন যে, আমরা মৃত্যুর পর তোমরা কার ইবাদত করবে বা হুকুম মেনে জীবনযাপন করবে, তাঁর সন্তানেরা জবাবে বলেছিলেন, ‘আমরা অবশ্যই তোমার মাবুদ ও তোমার পূর্বপুরুষ ইব্রাহিম, ইসমাইল ও ইসহাকের মাবুদের ইবাদত করব বা হুকুম মেনে জীবনযাপন করব, এ মাবুদ হচ্ছেন একক, আর আমরা তাঁর নিকট আত্মসমর্পণকারী বা তাঁর অনুগত বান্দা (অর্থাৎ মুসলিম) হয়েই থাকব।’ (সূরা বাকারা-১৩৩ আ.)।
মুসলমানের সংজ্ঞা : ‘হজরত আবু হুরায়রা রা: হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সা: বলেছেন, মুসলমান সেই ব্যক্তি যার মুখের কটূক্তি ও হাতের অনিষ্টতা থেকে অন্যান্য মানুষ সুরতি বা নিরাপদ, আর মু’মিন ওই ব্যক্তি যার নিকট লোকেরা তাদের জান ও মাল সম্পর্কে সম্পূর্ণ নিরাপদ থাকে।’ (সহিহ তিরমিযী ও নাসায়ী)।
মুসলমান সমাজে অমুসলিমের অধিকার বা হক : আল্লাহতায়ালা ঘোষণা করছেন, ‘যারা দ্বীনের ব্যাপারে তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেনি এবং কখনো তোমাদের ঘরবাড়ি থেকে বিতাড়িত করেনি তাদের প্রতি দয়া দেখাতে ও ন্যায় আচরণ করতে আল্লাহ তায়ালা কখনো নিষেধ করেনি, অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা ন্যায়পরায়ণদের ভালোবাসেন।’ (সূরা মোমতাহিনা-৮ আ.)। আরো নির্দেশ আছে সূরা আনকাবুতের ৪৬ আয়াতে।
মুসলমানগণ অবশ্যই অন্য ধর্মের প্রতি হবে শ্রদ্ধাশীল : আল্লাহতায়ালার কাছে শুধু ইসলামই একমাত্র মনোনীত জীবনবিধান। আল্লাহতায়ালা ঘোষণা করেছেন, ‘ইন্নাদ দ্বীনা ইন্দাল্লাহিল ইসলাম’ অর্থাৎ ‘আমার নিকট একমাত্র মনোনীত জীবনব্যবস্থা হচ্ছে ইসলাম।’ (সূরা আলে ইমরান-১৯ আ.)। তা ছাড়া আল্লাহতায়ালা ঘোষণা করেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে যদি কেউ ইসলাম ছাড়া নিজের জন্য অন্য কোনো দ্বীন বা জীবনব্যবস্থা তালাশ করে তবে তার উদ্ভাবিত সে ব্যবস্থা তার কাছ থেকে কখনোই গ্রহণ করা হবে না, পরকালে সে হবে চরম ব্যর্থ।’ (সূরা আলে ইমরান-৮৫ আ.)। তার পরও আল্লাহতায়ালা পরমতসহিঞ্চুতা ও পরধর্মের বা মতাদর্শের প্রতি শ্রদ্ধা দেখাতে ঈমানের দাবিদার প্রতিটি মুসলমানকে নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তারা আল্লাহতায়ালার বদলে যাদের ডাকে, তাদের তোমরা কখনো গালি দিও না, নইলে তারাও শত্র“তার কারণে না জেনে তোমাদের আল্লাহতায়ালাকেও গালি দেবে, আমি প্রত্যেক জাতির কাছেই তাদের কার্যকলাপ সুশোভনীয় করে রেখেছি, অতঃপর সবাইকে একদিন তার মালিকের কাছে ফিরে যেতে হবে, তারপর তিনি তাদের বলে দেবেন, তারা দুনিয়ার জীবনে কে কী কাজ করে এসেছে।’ (সূরা আনয়াম-১০৮ আ.)। সূরা কাফিরুনে আল্লাহতায়ালা পরমত বা পরধর্ম বা দ্বীনের ব্যাপারে সহিঞ্চু হতে শিা দিয়েছেন। সূরা বাকারার ২৫৬ নম্বর আয়াতে আল্লাহতায়ালা নির্দেশ করছেন যে, ‘আল্লাহর দ্বীনের ব্যাপারে কোনো জোর জবরদস্তি নেই, কারণ সত্য এখানে মিথ্যা থেকে পরিষ্কার হয়ে গেছে, তোমাদের মধ্যে যদি কেউ বাতিল মতাদর্শকে অস্বীকার করে, আর আল্লাহর দেয়া জীবনাদর্শের ওপর ঈমান আনে, সে যেন এর মাধ্যমে এমন এক শক্তিশালী রশি ধরল, যা কোনো দিনই ছিঁড়ে যাওয়ার নয়, নিশ্চয়ই আল্লাহতায়ালা সবকিছু শোনেন ও সব কিছু জানেন।’
মুসলমানের কাছে তার শত্র“র অধিকার বা হক : আল্লাহতায়ালা নির্দেশ করছেন- ‘তোমরা আল্লাহর পথে সেসব লোকদের সাথে লড়াই করো যারা তোমাদের সাথে লড়াই (আগে আক্রমণ) করে, কোনো অবস্থায়ই সীমালঙ্ঘন করো না, কারণ আল্লাহ তায়ালা সীমালঙ্ঘনকারীদের পছন্দ করেন না।’ (সূরা বাকারা-১৯০ আ.)। শত্র“ দ্বারা আক্রান্ত হলে প্রতিরোধ বা প্রতিহত করার অনুমতি দেয় ইসলাম। কোনো অবস্থাতেই আগে আক্রমণ করা যাবে না। যেমন আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমরা কা’বা ঘরের পাশে কখনো তাদের (কাফেরদের) সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয়ো না, যতণ পর্যন্ত না তারা তোমাদের আক্রমণ করে, তারা যদি তোমাদের সাথে যুদ্ধ করে তাহলে তোমরাও তাদের সাথে যুদ্ধ করো।’ (সূরা বাকারা-১৯১ আ.)। কোনো মুসলমানের কাছে তার শত্র“ এমনকি তার ভাইয়ের বা পুত্রের হত্যাকারী আশ্রয় চাইলেও তাকে আশ্রয়দানে আল্লাহতায়ালার নির্দেশ, ‘আর মোশরেকদের মধ্য থেকে যদি কোনো ব্যক্তি তোমার কাছে আশ্রয় চায় তবে অবশ্যই তাকে আশ্রয় দেবে, যাতে করে সে আল্লাহতায়ালার বাণী শুনতে পায়, অতঃপর তাকে তার নিরাপদ জায়গায় পৌঁছে দেবে, এটা এ জন্য যে, এরা আসলেই এমন এক সম্প্রদায়ের লোক যারা কিছুই জানে না।’ (সূরা তওবাহ-৬ আ.)। এমন আরো অনেক আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহতায়ালা মুসলমানদের তার শত্র“র প্রতি কী আচরণ করতে হবে তা শিা দিয়েছেন।
প্রতিবেশীর হক : প্রতিবেশী সে যে-ই হোক, সে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, ইহুদি বা নাসারা অথবা অন্য যেকোনো ধর্মের হোক, ধর্মনিরপে বা ধর্মহীন অথবা সেকুলার হোক তাদের প্রত্যেকের ওপর প্রত্যেকের হক বা অধিকার রয়েছে। যে অধিকারগুলো হচ্ছে মানুষের প্রতি মানুষের অধিকার বা আল্লাহর বান্দার প্রতি বান্দার অধিকার। বিশেষ করে মুসলিম সমাজের মুসলমানদের এটা ঈমানের দাবি যে, সে মুসলমান প্রতিবেশীর অধিকার বা হক আদায় করবে। আল্লাহ তায়ালার নির্দেশ হচ্ছে, ‘তোমরা এক আল্লাহ তায়ালার ইবাদত করো, কোনো কিছুকে তাঁর সাথে শরিক করো না এবং পিতা-মাতার সাথে উত্তম ব্যবহার করো, আর যারা তোমার ঘনিষ্ঠ আত্মীয়, ইয়াতিম, মিসকিন, আত্মীয় প্রতিবেশী, অনাত্মীয় প্রতিবেশী, তোমাদের চলার পথের (পথচারী) সঙ্গী ও তোমাদের অধিকারভুক্ত দাস-দাসী তাদের সবার সাথে ভালো ব্যবহার করো, অবশ্যই আল্লাহতায়ালা এমন মানুষকে পছন্দ করেন না যারা অহঙ্কারি ও দাম্ভিক’ (সূরা আন নিসা-৩৬ আ.)।
অনাত্মীয় প্রতিবেশী হতে পারে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, ইহুদি বা নাসারা। চলার পথের সাথী, সঙ্গী বা পথচারী তারাও হতে পারে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, ইহুদি বা নাসারা। তাদের সবার সাথে ভালো ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছেন স্বয়ং আল্লাহ তায়াল। আল্লাহ তায়ালার হুকুম মেনে সালাত আদায়, জাকাত দান, হজ ও সিয়াম পালন যেমন ফরজ, অনুরূপ উপরিউক্ত আয়াতের নির্দেশ মানাও ফরজ। যে ব্যক্তি নিজকে মুসলমান দাবি করবে আর আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সা:-এর হুকুম মানবে না সে মুসলমান থাকতে পারে না। মুসলমান হচ্ছে সে ব্যক্তি যে, আল্লাহতায়ালার সব হুকুম ও রাসূল সা:-এর সব সুন্নাহ মেনে জীবনযাপন করে। এ কথা মনে করা সমীচীন নয় যে, কারো নাম আবদুর রহমান, অতএব সে মুসলমান। নামে মুসলমানের পরিচয় নয়, মুসলমান হবে কাজে। তবে নামেরও যথেষ্ট গুরুত্ব আছে বৈকি।
প্রতিবেশীর হক সম্পর্কে রাসূল সা: যা বলেছেন : হজরত আবু খুযায়ী রা: হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সা: বলেছেন, ‘আল্লাহর শপথ, সে ব্যক্তি ঈমানদার নয়, আল্লাহর শপথ, সে ব্যক্তি মু’মিন নয়, আল্লাহর শপথ, সে ব্যক্তি ঈমানদার নয়। সাহাবাগণ জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ সা:, কে সে হতভাগ্য ব্যক্তি? উত্তরে রাসূল সা: বললেন, সেই ব্যক্তি, যার প্রতিবেশী তার অনিষ্ট ও তির হাত হতে নিরাপদ নয়।’ (সহিহ আল বুখারি)। অন্য এক হাদিসে রাসূল সা: বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস রাখে এবং পরকালে আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি ও কল্যাণ লাভ করতে চায়, সে যেন প্রতিবেশীদের কোনোরূপ কষ্ট না দেয়।’ (সহিহ আল বুখারি ও মুসলিম)। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা: হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল সা:কে বলতে শুনেছি যে, সেই ব্যক্তি মু’মিন নয়, যে ব্যক্তি নিজে পেটপুরে খেল, আর তার পাশেই তার প্রতিবেশী অভুক্ত অবস্থায় পড়ে রইল।’ (বায়হাকি)।
বিশ্বমানবতার মুক্তির দূত রাসূল সা:-এর শুধু বিদায় হজের ভাষণ মেনে নিলেই বিশ্বের সব অশান্তি দূর হতে পারে। রাসূল সা: তাঁর বিদায় হজের ভাষণে বলেছেন, ‘তোমাদের রক্ত এবং ধন-সম্পদ পরস্পরের জন্য আজকের দিনে, বর্তমান মাসে এবং বর্তমান শহরের মতোই হারাম ঘোষণা করা হলো। শোন, জাহেলি যুগের সব কিছু আমার পদতলে পিষ্ট করা হয়েছে। জাহেলি যুগের খুনও খতম করে দেয়া হয়েছে। আমাদের মধ্যকার প্রথম যে রক্ত পণ আমি তা শেষ করে দিচ্ছি, আর সেটা হলো রবিয়া ইবনে হারেসের পুত্রের রক্ত পণ। এই শিশুটি বনি সা’দ গোত্রের, সে তার মায়ের দুধ পান করা অবস্থায় হোযাইল গোত্রের লোকেরা তাকে হত্যা করেছিল।’ (সহিহ মুসলিম-২৮১৯)। খুন-গুম, ঝগড়া ইসলাম পছন্দ করে না। অতএব কোনো মুসলমান এহেন কাজে লিপ্ত হতে পারে না। আর যেসব ব্যক্তি এ ধরনের অপরাধে লিপ্ত সে মুসলমান থাকতে পারে না।
ইতিহাস সাী যে, রাসূল সা:-এর ওপর কাফেরেরা যে জুলুম, নির্যাতন, নিপীড়ন আর অত্যাচার করেছিল, মক্কা বিজয়ের পর সব কাফেরকে তাদের কৃত অপরাধ মা করে দিয়েছিলেন। সব শেষে রাষ্ট্রীয় মতা হাতে আসার পরও বিদায় হজের ভাষণে তিনি খুনের মতো অপরাধে অপরাধী কাফেরদের মা করে দিয়েছিলেন। কারণ আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করেছেন, ‘যে ব্যক্তি ধৈর্য ধারণ করে এবং মানুষকে তাদের অপরাধ মা করে দেয়, সে যেন জেনে রাখে অবশ্যই এটা (ধৈর্য ধারণ করা ও মা করা) হচ্ছে সাহসিকতার কাজগুলোর মধ্যে অন্যতম।’ (সূরা আশ শুরা-৪৩ আ.)।
রাসূল সা: বিদায় হজের ভাষণে আরো যা বলেছিলেন, ‘‘তোমাদের কাছে আমি এমন একটি জিনিস রেখে যাচ্ছি, যদি তোমরা তা দৃঢ়ভাবে ধারণ করো তবে এরপর তোমরা পথভ্রষ্ট হবে না, আর সে জিনিস হচ্ছে আল্লাহতায়ালার ‘কিতাব’ বা ‘আল কুরআন’।” (সহিহ মুসলিম-২৮১৯)। তিনি আরো বলেছিলেন, ‘হে লোকসকল, মনে রেখো আমার পরে আর কোনো নবী নেই, আর তোমাদের পরে আর কোনো উম্মত নেই। কাজেই তোমরা নিজ প্রতিপালকের ইবাদত করবে। পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করবে। রমাদান মাসে সিয়াম পালন করবে। সানন্দচিত্তে নিজের সম্পদের জাকাত দেবে। আল্লাহর ঘরে হজ পালন করবে। নিজের শাসকের আনুগত্য করবে। যদি এরূপ করো তাহলে তোমাদের প্রতিপালকের জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে। (ইবনে মাযা)।
রাসূল সা: তাঁর বিদায় হজের দীর্ঘ ভাষণে সমাজ ও রাষ্ট্রের সব দিক ও বিভাগ সম্পর্কে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি মাতা-পিতার হক, সন্তান-সন্ততির হক, আত্মীয়তার হক, ইয়াতিম-মিসকিনের হক, মুসাফিরের হক, চলার পথের সাথী বা পথচারীর হক, দাস-দাসী বা চাকর-চাকরানীর হক এমনকি ইসলামি রাষ্ট্রে অমুসলিমের হক সম্পর্কেও কথা বলেছেন। রাসূল সা: সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম সমাজে অমুসলিমদের মুসলমানদের নিকট আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প থেকে আমানত বলেছেন। তিনি মুসলমানদের অমুসলিমদের নিরাপত্তাদানের নির্দেশ দিয়েছেন।
অতএব, মুসলমান দাবিদার প্রত্যেকেরই কর্তব্য হচ্ছে আল্লাহতায়ালার প্রতিটি হুকুম ও রাসূল সা:এর প্রতিটি আদেশ ও সুন্নাহ যথাযথভাবে মেনে চলা। মুসলমান কখনো গায়েপড়ে কারো সাথে ঝগড়া করবে না, কারো ওপর অন্যায় অত্যাচার করবে না, জুলুম করবে না, নির্যাতন করবে না, কারো সম্পদ অন্যায়ভাবে ভণ করবে না, কারো ন্যূনতম কোনো হক নষ্ট করবে না। মনে রাখতে হবে মুসলিম অর্থ হচ্ছে আত্মসমর্পণকারী। যে ব্যক্তি আত্মসমর্পণ করে সে কোনো অন্যায় করতে পারে না। আত্মসমর্পণকারী ব্যক্তি যার কাছে আত্মসমর্পণ করে তাঁর হুকুম মেনেই চলতে হয়।