১৪তম পর্ব
পৃথিবীতে সুহৃদের সংখ্যা খুবই কম। মানুষ অনেক সময় শুভার্থী সাজে বটে, তবে ঐ শুভ কামনার পেছনে থেকে যেতে পারে সুদূর প্রসারী কোন অমঙ্গল। বিশেষ করে পারিবারিক সুখ প্রতিবেশী বা নিকটজনদের অনেক সময় সহ্য হয় না। তাই যে কোন উপায়ে ঐ সুখ নষ্ট করে দেয়ার চিন্তায় বিভোর হয়ে থাকে তারা। তবে সকল প্রতিবেশী বা স্বজনই যে এ রকম তা কিন্তু নয়। তাই স্বজনকে চেনার জন্যে, প্রকৃত হিতৈষীকে বোঝার জন্যে যাচাই করে নেয়া উচিত। এই যাচাইয়ের কাজ সময় নিয়ে ধীরে ধীরে বুঝে উঠতে হবে যাতে প্রতিবেশী ব্যাপারটা টের পেয়ে মনে কষ্ট না পায়। এ কথা বলার মানে এই নয় যে, মানুষকে সব সময় সন্দেহ করতে হবে বরং মানুষ যাতে আপনার এবং পরিবারের ক্ষতি করতে না পারে সেজন্যেই এই সতর্কতা। দেখা গেছে বহু পরিবার ভেঙ্গে গেছে কেবল বাইরের মানুষের কারণে।
একজন প্রখ্যাত মনীষী বলেছেন, হিংসুক এ চিন্তাতেই শুকিয়ে যায় যে তার প্রতিবেশী কেন এতো সুখে থাকে। তাই ক্ষতি করার সুদূর প্রসারি পরিকল্পনা নিয়ে ঐ প্রতিবেশী বন্ধু সাজার চেষ্টা করে। বন্ধুত্বের এক পর্যায়ে শুরু হয়ে যায় আসল কাজ অর্থাৎ স্বামীর সাথে স্ত্রীর কিংবা স্ত্রীর সাথে স্বামীর দূরত্ব সৃষ্টির অপচেষ্টা। সাধারণত মহিলারা একটা জায়গায় একত্রিত হলে বিচিত্র গল্পের পাশাপাশি স্বামীদের নিয়েও গল্প শুরু করে দেয়। এইসব গল্প যে সবসময় সুখকর তা নয়। পরচর্চা আর পরনিন্দা করার অভ্যাস মহিলাদের মধ্যেই একটু বেশী দেখা যায়। ফলে পরনিন্দা করতে করতে নিজের স্বামীরও নিন্দা শুরু করে দেয়। এর ব্যতিক্রম যে নেই, তা কিন্তু নয়। আর দুষ্টলোকেরা এই সুযোগে পারস্পরিক বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টির উদ্দেশ্য হাসিল করে। কার স্বামী কেমন, কী চাকরী করে, আর স্বামীদের কার কী খুঁত-এইসব নিয়েও তারা আলাপ করে। এমনকি একজন আরেকজনকে গল্পচ্ছলে এমনও বলে বসে-তুই কেন অমুক পেশার লোককে বিয়ে করতে গেলি! তোর মতো সুন্দরী মেয়ের কি আরো ভালো বর পাওয়া কঠিন ছিল? তুই চাইলেতো যে কাউকেই বিয়ে করতে পারতি, আহা রে…..! ইত্যাদি। এই কথাগুলো আপাত দৃষ্টিতে সহানুভূতিশীল বলে মনে হতে পারে, কিন্তু এর ভেতরেই লুকিয়ে আছে সর্বনাশের বীজ। এইসব কথা পরোক্ষভাবেই বান্ধবীর স্বামীকেই নিন্দা করা ছাড়া আর কিছু নয়। যে বান্ধবীকে এই কথাগুলো শোনানো হয়, তার ভেতরে কিন্তু কথাগুলো বারবার প্রতিধ্বনিত হবে। এরপর শুরু হবে স্বামী বিদ্বেষ। পরিণতিতে পারিবারিক বিশৃঙ্খলা, দ্বন্দ্ব-সংঘাত এমনকি বিচ্ছেদও ঘটতে পারে।
প্রকৃতপক্ষে এভাবে যারা কথা বলে, তারা নারীরূপে সাক্ষাৎ শয়তান। এরা পারিবারিক জীবনের শত্রু । রাসূল (সাঃ) এ ধরণের হীনকাজ করা থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকতে বললেও অনেকেই এই স্বভাব ছাড়তে পারেন না। মহানবী(সাঃ) বলেছেন, “তোমাদের মধ্যে যারা নিজেদেরকে মুসলমান বলে দাবী কর, কিন্তু নিজেদের অন্তরে প্রকৃত বিশ্বাস জাগ্রত করতে ব্যর্থ হয়েছ, তারা অপর কোন মুসলমান সম্পর্কে কটু কথা বলো না, কিংবা তাদের দোষত্রুটি খুঁজে বেড়িও না। যে ব্যক্তি অপরের দোষ খুঁজে বেড়ায় আল্লাহও তার সাথে অনুরূপ আচরণ করবেন। ফলে সে সমাজে হেয় প্রতিপন্ন হবে, নিজেকে ঘরের মধ্যে লুকিয়ে রেখেও সে আত্মরক্ষা করতে পারবে না।”
অনেক আত্মীয়-স্বজন আবার আপনজনের মতো তাদের মেয়েদের এমনসব পরামর্শ দেয়, যা স্বামীর সংসারে মেয়ের টিকে থাকাটাকেই সংশয়িত করে তোলে। আর মেয়েও তার আত্মীয়-স্বজনদের কথা চোখবুঁজে মেনে নিতে চায়। কারণ তাদের সে একান্ত আপন মনে করে। কিন্তু এই ধারণাটা একদম ঠিক নয় । কারণ বিয়ের পর মেয়েদের সবচেয়ে আপনজন হলো তাদের স্বামী। মনে রাখতে হবে আপনজনদের নাক গলানোর কারণেও বহু মেয়ের সংসার ভেঙ্গে গেছে। এ সম্পর্কে আসলে মহানবীর দিক-নির্দেশনাটিই সবচে’ কার্যকরী। তিনি বলেছেন, “তোমাদের নারীদের মধ্যে সে-ই উত্তম, যে অনেক সন্তানের জন্মদাত্রী, স্নেহময়ী ও পূত-পবিত্র, যে নিজের আত্মীয়-স্বজনের ইচ্ছা-অনিচ্ছার কাছে আত্মসমর্পন না করে বরং স্বামীর প্রতিই অনুগত থাকে, স্বামীর জন্যেই কেবল সাজ-সজ্জা করে এবং অপরিচিতদের থেকে নিজেকে দূরে রাখে, স্বামীর কথা মন দিয়ে শোনে ও মান্য করে, একান্তে স্বামীর ইচ্ছার বশবর্তী হয় এবং কোন অবস্থাতেই নিজের শালীনতা ক্ষুন্ন হতে দেয় না।”
হাদীস শরীফে সাজ-সজ্জার কথা এবং শালীনতা বজায় রাখার কথা বলা হয়েছে। এ দুটি বিষয় সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ। অনেকে কেবল বাইরে যাবার জন্যেই সাজগোজ করে, কিন্তু বাসায় সেজেগুজে থাকে না, এটা কিন্তু ঠিক নয়। বাসাতেই বরং সবসময় সেজেগুজে থাকা প্রয়োজন। মনে রাখতে হবে-স্বামীরা সব সময়ই তাদের স্ত্রীদের সুন্দরী ও স্মার্ট হিসেবে দেখতে চায়। এ কথাটি সবাই হয়তো প্রকাশ নাও করতে পারে, তবে মনে মনে সব স্বামীই প্রত্যাশা করে। আরেকটি বিষয় হলো পরিচ্ছন্ন ঘরে যদি আপন স্ত্রীকে সাজ-সজ্জারত পায়, তাহলে স্বামীদের দৃষ্টি বাইরে না গিয়ে ঘরের দিকেই পড়ে এবং ঘরে ফেরার জন্যে তারা উদগ্রীব হয়ে থাকে-যা প্রত্যেক স্ত্রীরই একান্ত প্রত্যাশা।
শালীনতা একটা বিচিত্রমাত্রিক শব্দ। সর্বক্ষেত্রেই এর প্রয়োগ যথার্থ। কথাবার্তা, চলাফেরা, আচার-আচরণ, পোষাক-আশাক, নাওয়া-খাওয়া ইত্যাদি সর্বক্ষেত্রেই শালীনতা একটা মস্ত ব্যাপার। আপনার স্বামী কোন কারণে হয়তো রেগে গেল, আপনি কি তখন গোমরামুখো হয়ে প্রতিক্রিয়া দেখাবেন ? না এখানে শালীনতা হলো আপনি স্বাভাবিক থাকুন এবং প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে বরং রাগ কমানোর আন্তরিক কৌশল ব্যবহার করুন। পরিস্থিতি অনুকূল হয়ে আসলে রাগের কারণ কিংবা সঙ্গত-অসঙ্গত বিষয়ে ধীরে-সুস্থে কথা বলুন। এরই নাম শালীনতা। প্রত্যেকটি ব্যাপারে এভাবে ধৈর্যের সাথে পরিস্থিতি মোকাবেলা করাই হলো শালীনতা। এই শালীনতা যে কেবল ধৈর্যেরই পরিচায়ক তা নয় বরং আপনার এই ভূমিকা আপনাকে করে তুলবে আরো বেশী ব্যক্তিত্বময়ী ও মহীয়সী।
১ম পর্ব ২য় পর্ব ৩য় পর্ব ৪র্থ পর্ব ৫ম পর্ব ৬ষ্ঠ পর্ব ৭ম পর্ব ৮ম পর্ব ৯ম পর্ব ১০ম পর্ব ১১তম পর্ব ১২ তম পর্ব ১৩তম পর্ব