নফল বলতে ঐ ইবাদাতকে বুঝায় যা পালন আবশ্যক নয় কিন্তু তা বান্দাকে আল্লাহর নিকটতম করে। আল্লাহবলেন: “যে ব্যক্তি অতিরিক্ত করবে সেটাতার জন্য ভাল।” (সূরা আল-বাকারাহ: ১৮৪)
অর্থাৎ- যে ব্যক্তি অবশ্যকরণীয় ইবাদতের পরে নফল ইবাদত করবে সে সর্বোত্তম। কেননা ভাল শব্দটি যে কোন উপকারী বিষয়কে অর্ন্তভূক্ত করে। ইমাম আহমদ (রহ) বলেন: নফল ইবাদতের মধ্যে রোযাইউত্তম, কেননা এর মধ্যে রিয়া বা প্রদর্শনেচ্ছা প্রবেশ করতে পারে না।
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, রাসূল (সঃ) বলেছেন: “কোন বান্দাহ যদি আল্লাহর পথে একদিন রোযা রাখে আল্লাহ তার বিনিময়ে ঐ দিন তার মুখমন্ডল ও জাহান্নামের মধ্যে৭০ বছর দূরত্ব সৃষ্টি করে দেন।” (বুখারী মুসলিম)
আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সঃ) এর কাছে আমরা অনেক যুবক ছিলাম যারা কিছুই পেতাম না; তিনি আমাদেরকে বললেন: “হে যুব সম্প্রদায়! তোমাদের মধ্যেযারা সামর্থ্য রাখে তারা যেন বিবাহ করে, কেননা এটি দৃষ্টি অবনতকারী ওযৌনাঙ্গ হেফাজতকারী। আর যে সক্ষম নয় সে যেন রোযা রাখে কেননা এটি যৌন তাড়নাকে অবদমিত রাখে।” (বুখারী)
নফল রোযা যদি কেউ ভেঙ্গে ফেলে তার উপর ক্বাযা আবশ্যক হয় না তবে আদায় করে দেয়া উত্তম। উম্মুল মু’মিন আয়েশা (রাঃ)থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: “একদা রাসূল (সঃ) আমার ঘরে প্রবেশ করলেন এবং বললেন: ‘তোমার কাছে কি খাবার মত কিছু আছে?’ আমি বললাম- না। তিনি বললেন: ‘তাহলেআমি রোযা রেখেদিলাম’। অন্য একদিন তিনি এলেন তখন আমি বললাম: হে আল্লাহররাসূল! আমাদের জন্য কিছু হাদিয়া এসেছে। তিনি বললেন: ‘আমাকে দেখাও, আমি রোযাবস্থায় সকাল করেছি’ অত:পর তিনি তা খেলেন।” (মুসলিম)
নফল রোযার মধ্যেসবচেয়ে উত্তম রোযা হল আল্লাহর নবী দাউদ (আঃ)-এররোযা। আব্দুল্লাহ বিন আমরবিন আস (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল (সঃ) বলেন: “আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় নামায হল দাউদ (আঃ) এর নামায, আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় রোযা হল দাউদ (আঃ)এর রোযা; তিনি রাতের অর্ধাংশ ঘুমাতেন, একতৃতীয়াংশ ইবাদত করতেন অত:পর একষষ্টাংশ ঘুমাতেন এবং একদিন রোযা রাখতেন ও একদিন বিরতি দিতেন।” (বুখারীমুসলিম)
১- শাওয়াল মাসের ছয় রোযা:
আবু আইয়ূব আনসারী (রাঃ) হতেবর্ণিত, রাসূল (সঃ) বলেছেন: “যে ব্যক্তি রমযানের রোযা রাখল এবং শাওয়ালেরছয়টি রোযা তার অনুগামী করল সে যেন এক যুগ রোযা রাখল।” (মুসলিম)
২- সোম ও বৃহস্পতিবারের রোযা:
আবুহুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূল (সঃ) সোমবার ও বৃহস্পতিবারসর্বাধিক রোযা রাখতেন; এ ব্যাপারে তাকে বলা হলে তিনি বললেন: “প্রত্যেক সোমবার ও বৃহস্পতিবার আমল উপস্থাপন করা করা হয়, ঐ দিন মহান আল্লাহ যেসব বান্দাহ তার সাথে কাউকে শরীক করে না তাদেরকে ক্ষমা করে দেন শুধুমাত্র ঐদুইজনকে ছাড়া যারা ঝড়গা করে সম্পর্কচ্ছেদ করে, তাদের ব্যাপারে ফিরিশতাদেরবলেন: তাদের বিষয়টি মূলতবী রাখ যতক্ষণ না তারা সংশোধন হয়। (আহমাদ)
৩ – প্রত্যেক মাসে তিনটি রোযা:
আবুহুরায়রা (রাঃ) বলেন: “আমার প্রিয়তম বন্ধু আমাকে তিনটি বিষয়ে বিশেষভাবে অসীয়ত করেছেন, মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আমি সেগুলো ছাড়ব না: প্রত্যেক মাসে তিনটিরোযা রাখা, দু রাকায়াত চাশতের নামায পড়া এবং ঘুমানোর আগে বিতির নামায আদায়করা।” (বুখারী মুসলিম)
আবু যার গিফারী (রাঃ) বলেন: রাসূল (সঃ) আমাকে বললেন: “কোন মাসে যদি তুমি তিনটি রোযা রাখতে চাও তবে তের, চৌদ্দ ও পনেরতারিখ রাখবে।” (তিরমিযী নাসায়ী কুবরা)
৪ – রোযা ছাড়া কোন মাস অতিবাহিত না করা:
আব্দুল্লাহ বিন শাকীক বলেন: আমি আয়েশা (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, রাসূল (সঃ) কি সবমাসেই রোযা রাখতেন? তিনি বললেন: রমযান ছাড়া অন্য কোন মাসে পুরামাস রোযারেখেছেন এমনটি আমার জানা নেই; আবার কোন মাস রোযা রাখা ছাড়া অতিবাহিতওকরেননি আর এভাবেই তিনি তার পথ অতিক্রম করেছেন।” (মুসলিম)
৫- প্রত্যেক মাসের শেষে রোযা রাখা:
ইমরান বিন হুসাইন (রাঃ) বর্ণিত হাদীস রাসূল (সঃ) তাকে বা অন্য কাউকে বলেছেন:তুমি কি শাবানের গোপন (শেষ) ভাগে রোযা রেখেছ? তিনি বললেন না; তখন রাসূল (সঃ) বললেন: যখন (রমযানের) রোযা থেকে ইফতার করবে তখন দুদিন রোযা রেখে দেবে। (বুখারী মুসলিম) এখানে গোপনভাগ বলতে মাসের শেষাংশ। কেননা এ সময়কালে চন্দ্রআড়ালে থাকে; আর এটি আঠাশ, উনত্রিশ ও ত্রিশ তারিখের রাত্রি। আবু উবায়েদ ওযাইন বিন মুনাইয়ের (রহ) বলেন: এ হাদীস থেকে প্রতি মাসের শেষে রোযা নফলহওয়ার প্রমাণ মেলে। আর যে ব্যক্তির এই অভ্যাসটি থাকবে তার জন্য রমযানেরএকদিন বা দুইদিন আগে রোযা রাখার নিষেধাজ্ঞা আর থাকবে না; এ ব্যাপারে রাসূল (সঃ) এর বাণী: “তবে যে ব্যক্তি সব সময় রোযা রাখে সে রাখবে।” (ফাতহুল বারী) ইবনু হাজর (রহ) বলেন: এ হাদীসটি রমযানের একদিন বা দুইদিন পূর্বে রোযা নারাখার বিধান ও শা’বান মাসের মধ্যভাগে রোযা না রাখার বিধানের সাথে সাংঘর্ষিকনয়, কেননা যিনি সব সময় এ সময়ে রোযা রাখেন তার জন্য এই নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্যনয়। (ফাতহুল বারী)
৬- হাজী ছাড়া অন্যদের জন্য আরাফাত দিবসে রোযা রাখা:
রাসূল (সঃ) বলেন: “আরাফাত দিবসের রোযা আল্লাহরনিকট পূর্ববতী এক বছর ও পরবর্তীএকবছরের গুনাহ মাফের উপলক্ষ হিসেবে গণ্য।” (মুসলিম) মায়মুনা (রাঃ) থেকেবর্ণিত, তিনি বলেন: একদল লোক রাসূল (সঃ) এর আরাফাত দিবসের রোযা নিয়ে সন্দেহপোষণ করল তখন আমি তার খিদমতে সামান্য দুধ পাঠালাম, এসময় তিনি আরাফাতেঅবস্থান করছিলেন। তখনই তিনি দুধটুকু পান করে ফেললেন, আর মানুষ তা দেখতেলাগল। (বুখারী মুসলিম) আর এটি ছিল বিদায় হজ্জে।
৭ – মুহাররাম মাসে বেশি বেশি রোযা রাখা:
আবুহুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূল (সঃ) কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল:ফরজ নামাযের পর কোন নামায সর্বোত্তম? এবং রমযানের রোযার পর কোন রোযাসর্বোত্তম? তিনি বললেন: “ফরজ নামাযের পর সর্বোত্তম নামায হল গভীর রাতেরনামায, রমযানের রোযার পর সর্বোত্তম রোযা হল, আল্লাহর হারামকৃতমাস মুহাররামের রোযা।” (মুসলিম)
আশুরার রোযা
ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন: “আমি রাসূল (সঃ) কে এই দিন অর্থাৎ আশুরার দিন এবং এ মাস অর্থাৎ মাহে রমযানভিন্ন আর কোন দিনকে অধিক ফযীলত মনে করে রোযা রাখতে দেখিনি।” (বুখারী)
রাসূল (সঃ) বলেন: “প্রতি মাসে তিনটি রোযা ও এক রমযান থেকে অন্য রমযান পর্যন্ত সময়কালে রোযা সারা বছর রোযা রাখার সমান। আরাফাত দিবসের রোযা আল্লাহরকাছেএরপূর্বের এক বছর ও পরের এক বছরের জন্য গুনাহ মাফকারী হিসেবে পরিগণিত; আশুরার রোযা আল্লাহর কাছে পূর্বের একবছরের গুনাহ মাফকারী হিসেবে গণ্য করা হয়।” (মুসলিম)
আয়েশা (রাঃ) বলেন: “কুরাইশরা জাহেলী যুগে আশুরার রোযারাখত, রাসূল (সঃ) ও উক্ত রোযা রাখতেন, এরপর যখন তিনি মদীনায় আগমন করলেনতিনি নিজেও রোযা রাখলেন এবং সকলকে রোযা রাখার নির্দেশ দিলেন। অত:পর যখন রমযানের রোযা ফরয হল তখন তিনি আশুরার রোযা রাখার আবশ্যক তাকে ত্যাগ করলেন; অতএব যার ইচ্ছা সে রোযা রাখবে আর যার ইচ্ছা সে ছেড়ে দিবে।” (বুখারী)
ইবনুআব্বাস (রাঃ) বলেন: রাসূল (সঃ) মদীনায় হিজরত করার পর দেখলেন ইয়াহুদীরাআশুরার রোযা রাখে, তিনি জিজ্ঞেস করলেন: “এ দিনটি এমন কি যে তোমরা রোযারাখ?” তারা বলল: এ এক সম্মানিত দিন যে দিন আল্লাহমুসা (আঃ) ও তার উম্মতকে মুক্তি দিয়েছিলেন এবং ফেরাউন ও তার কওমকে ডুবিয়ে মেরেছিলেন; এ কারণে মুসা (আঃ) শুকরিয়া স্বরূপ এ দিনটিতে রোযা রেখেছিলেন। তখন রাসূল (সঃ) বললেন: “আমরা তোমাদের চেয়ে মুসার অধিকতর হকদার” অত:পর রাসূল (সঃ) ঐ দিন রোযারাখলেন ও সাহাবীগণকে রোযা রাখার নির্দেশ দিলেন। (বুখারী মুসলিম)
আবুমুসা আল-আশয়ারী (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: খায়বরবাসীরা আশুরার দিন রোযারাখত, এ দিনটিকে তারা তাদের ঈদের দিন হিসেবে গ্রহণ করত, তাদের মেয়েরা অলংকার ও ফিতা পরিধান করত, এ কারণে রাসূল (সঃ) বললেন: “তোমরাও এ দিন রোযারাখ”। (বুখারী মুসলিম) সালমা বিন আকওয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (সঃ) এক নও মুসলিমকে নির্দেশ দিলেন সে যেন মানুষের মধ্যে এ ঘোষণাদেয়: “যে আহার করেছে সে যেন দিনের বাকী অংশ রোযা রাখে আর যে এখনো আহার করেনাই সে যেন আহার না করে রোযা রাখে কেননা আজকের দিনটি হল আশুরার দিন।” (বুখারী মুসলিম)
ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন: রাসূল (সঃ) যখন আশুরার রোযারাখলেন এবং অন্যদের রাখার নির্দেশ দিলেন, তখন সাহাবীগণ বললেন: হে আল্লাহররাসূল! এ দিনটিতো ইয়াহুদী ও নাসারারা সম্মান করে; তিনি বললেন: “ইনশাআল্লাহ আগামী বছর আমরা ৯ তারিখও রোযা রাখব।” বর্ণনাকারী বলেন: কিন্তু পরের বছর আসতে না আসতে তিনি ইন্তিকাল করলেন। (মুসলিম)
আশুরার দিনটি আল্লাহর দিনসমূহের একটি,
প্রসিদ্ধ মতানুযায়ী এটি মুহাররম মাসের ১০ তারিখ। সালফে সালেহীনের একদল নয় ও দশতারিখ দুদিনই রোযা রাখার মতামত ব্যক্ত করেছেন। তাদের মধ্যে ইমাম শাফেয়ী (শেষে তিনি এ মতামত দেন), ইমাম আহমদ, ইসহাক প্রমুখ রয়েছেন; আশুরা মূলত: কোনদিন সেটি নিশ্চিতভাবে নির্ধারণে সমস্যার কারণে সতর্কমূলক ব্যবস্থা হিসেবেদুদিন রোযা রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন: আয়েশা (রাঃ)-এর বাণী “কোরাইশরা জাহেলী যুগে আশুরার রোযা রাখত” দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয় যে, মহাত্ম ও বৈধতার দিক থেকে এ রোযা তাদের কাছে পরিচিত ছিল। আর সম্ভবত: তারাইব্রাহীম ও ইসমাইল (আঃ) এর শরীয়তের অনুকরণে রোযা রাখতেন, কারণ বংশগত দিকথেকে তারা ঐ দুজনেরই উত্তরসূরী ছিল। রাসূল (সঃ) এর রোযা রাখার দ্বারা এটাবুঝা যায় যে, তাদের এ বিধানটির ব্যাপারে তার সম্মতি ছিল। এমনও বলা যায় যে, মহান আল্লাহ তাকে ঐ রোযা রাখার অনুমতি দিয়ে ছিলেন। এরপর যখন তিনি মদীনায় আসলেন তখন ইয়াহুদীদেরও রোযা রাখতে দেখে তাদের সাথে এ রোযার সংশ্লিষ্টতা জিজ্ঞেস করলেন, তারা এর উত্তরে যা বলেছিল তা ইবনু আব্বাসের বর্ণনায় আমরা ইতোপূর্বে জেনেছি: এটি এক মর্যাদাপূর্ণ দিবস, এ দিনে মহান আল্লাহ মুসা (আঃ)ও তার সাথীদেরকে মুক্তি দিয়েছিলেন এবং ফেরাউন ও তার কওমকে ডুবিয়ে মেরে ছিলেন। আর এ কারণেই মুসা (আ) শুকরিয়া স্বরূপ এই দিনটিতে রোযা রেখে ছিলেনতারই ধারাবাহিকতায় আমরা রোযা রাখি। তখন রাসূল (সঃ) বললেন: “আমরা তোমাদেরচেয়ে মুসার অধিক হকদার”। সেই থেকে মদীনায় তিনি ঐ দিনটিতে রোযা রাখেন এবংসাহাবীগণের উপর রোযা রাখা ওয়াজিব করেন। তিনি এ ব্যাপারে এমন তাগিদ দিয়েছিলেন যে, ছোট ছোট বাচ্চারাও আশুরার রোযা রাখত। রাসূল (সঃ)ও সাহাবীগণের উপর এ রোযার আবশ্যকতা রমযানের রোযা ফরয হওয়ার আগ পর্যন্ত ছিল। এরপর যখন রমযানের রোযা ফরয হল তখন এটির আবশ্যকতা রহিত হয়ে গেল। তখন রাসূল (সঃ)বললেন: “আল্লাহ তোমাদের উপর এই দিনের রোযা ফরয করেননি।” অত:পর তিনি এই দিনেররোযা রাখা না রাখার স্বাধীনতা দেন এবং এ রোযার ফযীলত অবিশিষ্ট রেখে বলেন: “তবে আমি রোযা রেখেছি”; এ বর্ণনাটি মুয়াবিয়া (রাঃ) এর। প্রকাশ থাকে যে, রাসূল (সঃ) ইয়াহুদীদের অনুকরণে আশুরার রোযা রাখেননি, কেননা তিনি মদীনায় তাদের কাছে আসার ও তাদের অবস্থা অবগত হওয়ার আগেই এ রোযা রাখতেন। তবে মদীনায় এসে তিনি নিজের জন্য এ রোযা আবশ্যক করে নেন এবং সাহাবাগণকে এ রোযা রাখারজন্য নির্দেশ দেন এটা ইয়াহুদীদেরকে কাছে টানার জন্য বা ক্রমান্বয়ে তাদেরকে ইসলামে নিয়ে আসার জন্য একটি হিকমাত ছিল, যেমনটি তাদের কেবলা (বায়তুল মুকাদ্দাস) মুখী হয়ে নামায আদায় করার মধ্যেও ছিল। এ সময়কালে রাসূল (সঃ) যেসব ব্যাপারে আল্লাহর কোন নিষেধাজ্ঞা আসেনি সেসব বিষয়ে তাদের সাথে যোগসাযুজ্য রাখতে ভাল বাসতেন। (আল-মুফহাম)
রাসূল (সঃ) আশুরার রোযা রাখারনির্দেশ দিয়েছিলেন মদীনায় আগমনের পর; আর তার আগমন হয়েছিল প্রথম হিজরীর রবিউল আওয়াল মাসে। অতএব তার এ নির্দেশ ছিল দ্বিতীয় হিজরীর মুহাররাম মাসে, আর রমযান মাসে রোযা ফরজ হয় দ্বিতীয় হিজরীতে। এ থেকে প্রমাণিত হয় আশুরার রোযা এক বছরের জন্য ওয়াজিব ছিল। এরপর এ নির্দেশটি নফলে পরিণত হয়। (ফাতহুলবারী)
ইবনু হাজর (রহ) বলেন: আশুরার রোযার তিনটি স্তর রয়েছে: সর্বনিম্মস্তর হল একদিন রোযা রাখা, তার উপরের স্তর হল এর সাথে নয় তারিখও রোযা রাখা, তারও উপরের স্তর হল- নয়, দশ ও এগার তারিখ তিনদিন রোযা রাখা। (ফাতহুল বারী)
৮- শা’বান মাসে অধিক পরিমাণ রোযা রাখা:
আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূল (সঃ) রোযা রাখতেন এমনকি আমরা বলতাম, মনে হয় তিনি কোন বিরত হবেন না; তিনি রোযা থেকে বিরতি দিতেন এমনকি আমরাবলতাম তিনি আর রোযা রাখবেন না। আমি রাসূল (সঃ)কে রমযানের মত অন্যকোন মাসেপূরা মাস রোযা রাখতে দেখিনি, আর শা’বান মাসের মত অন্য কোন মাসে তাকে অধিকহারে রোযা রাখতে দেখিনি।” (বুখারী মুসলিম)
উসামা বিন যায়েদ (রাঃ) হতেবর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূল (সঃ) যখন রোযা রাখতেন তখন তিনি বিরামহীন রোযারাখতেন এমনকি বলা হত, তিনি মনে হয় আর রোযা থেকে বিরতি নিবেন না। আবার যখনবিরতি দিতেন তখন সপ্তাহের দুই দিন ছাড়া রোযা রাখার কোন সম্ভাবনা দেখা যেতনা। শা’বান মাসে যত রোযা রাখতেন অন্য কোন মাসে এত রোযা রাখতেন না। এ জন্যআমি জিজ্ঞেস করলাম: হে আল্লাহর রাসূল! আপনি যখন রোযা রাখা শুরু করেন তখন বিরতি দেয়ার কোন সম্ভবনা থাকে না, আর যদি বিরতি দেয়া শুরু করেন তবে সপ্তাহেদুদিন ছাড়া অন্য কোন রোযা রাখার সম্ভাবনা থাকে না। তিনি বললেন: “কোনদুইদিন?” আমি বললাম: সোমবার ও বৃহস্পতিবার। তিনি বললেন: “ঐ দুইদিন মানুষেরআমল আল্লাহ রব্বুল আলামীনের দরবারে উপস্থাপিত হয়; আর আমি চাই আমার আমল এমনঅবস্থায় উপস্থাপিত হোক যে, আমি একজন রোযাদার।” আমি বললাম: শা’বান মাসে আপনিযে পরিমাণ রোযা রাখেন অন্য কোন মাসে আপনাকে এত রোযা রাখতে দেখি না! তিনিবললেন: “রজব ও রমযান মাসের মধ্যবর্তী ঐ শা’বান মাস সম্পর্কে লোকজন গাফেলথাকে অথচ ঐ মাসে মানুষের আমল আল্লাহ রব্বুল আলামীনের দরবারে উপস্থাপন করাহয়, আর আমি এটাই ভালবাসি যে, আমার আমল এমন অবস্থায় উপস্থাপিত হোক যখন আমি রোযাদার।” (আহমদ: নাসায়ী কুবরা)
শা’বান মাসের একদিনের রোযা অন্য মাসের দুই দিনের রোযার সমান। ইমরান বিন হুসাইন (রা) হতে বর্ণিত আছে যে রাসূল (সঃ)তাকে বা অন্য কাউকে বলেছেন: “তুমি কি শাবানের গোপনভাগে (শেষে) রোযা রেখেছ? তিনি বললেন: না তখন রাসূল (সঃ) বললেন: যখন তুমি (রমযানের রোযা থেকে) ইফতারকরবে তখন দুইদিন রোযা রেখে দিবে” (বুখারী মুসলিম)