ইস্তিখারা ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল। ইস্তিখারার শাব্দিক অর্থ কল্যাণপ্রার্থনা। যখন কেউ কোনো কাজ করার ইচ্ছে করবে, তখন সে কাজ সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা ওপরামর্শের পর আল্লাহ তায়ালার দরবারে কল্যাণ ও বরকতের জন্য দুই রাকাত নফল নামাজ পড়েহাদিসে শেখানো দোয়া করবে। অর্থাত্ প্রত্যাশিত কর্মে কল্যাণ প্রার্থনা করবে, তারপরকাজে অবতীর্ণ হবে। এরূপ নামাজ ও দোয়া-প্রার্থনা করাকেই ইসলামের পরিভাষায় ইস্তিখারাবলা হয়।
হাদিস শরীফে এরূপ ইস্তিখারা করার প্রতি বিশেষভাবে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে।বিয়ে-শাদি, চাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্য, সফর, সহায়-সম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয়, গাড়ি-বাড়িনির্মাণ ইত্যাদি জায়েয কাজ ইস্তেখারা করেই আরম্ভ করা উত্তম। এতে আল্লাহর ইচ্ছায়কোনো অমঙ্গল হবে না এবং পরে কোনোরূপ অনুতপ্ত হতে হবে না।
যদি কোনো কারণেইস্তিখারার নামাজ পড়তে না পারে, তবে ইস্তিখারার দোয়াটি কয়েকবার পড়ে নেবে। তবুওইস্তিখারা ছাড়বে না। ইস্তিখারার গুরুত্ব ও তাগিদ সম্পর্কে হাদিস শরীফে বর্ণিত হয়েছেযে, হজরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়াসাল্লাম আমাদের কাজ-কর্মের ব্যাপারে ইস্তিখারা করার নিয়ম-পদ্ধতি এত গুরুত্বসহকারে শিক্ষা দিতেন, যেরূপ গুরুত্ব সহকারে আমাদের কোরআন মজিদের কোনো সূরা শিক্ষাদিতেন। তিনি বলতেন, যখন তোমাদের কেউ কোনো কাজ করার ইচ্ছা করে (আর সে তার পরিণতিসম্পর্কে চিন্তিত হয়, তখন তার উচিত এভাবে ইস্তিখারা করা) যে প্রথমে দুই রাকাত নফলনামাজ পড়বে। অতঃপর এই দোয়া করবে—আল্লাহুম্মা ইন্নি আস্তাখিরুকা বিইলমিকা…। আরবিদোয়াটি কোনো আলেমের কাছ থেকে বিশুদ্ধ উচ্চারণে শিখে নিতে হবে। (সহিহ বুখারি, হাদিস-১১৬২. সুনানে তিরমিযি, হাদিস-৪৮০)
দোয়াটির সার কথা হলো, হে আল্লাহ! এ কাজেযদি আমার কল্যাণ থাকে তবে তুমি সহজ করে দাও এবং তাতে বরকত দান কর; আর যদি তা আমারজন্য উপযোগী না হয় তবে তা থেকে আমাকে বিরত রাখ এবং যেখানে কল্যাণ আছে সেখানে নিয়েযাও আর তাতে আমাকে সন্তুষ্ট থাকার তাওফিক দান কর।
ইস্তিখারার মূল কথা হলো অভীষ্টকাজ সম্পর্কে কল্যাণ প্রার্থনা ও মঙ্গল চাওয়া। কল্যাণ সম্পর্কে অবগত হওয়া নয়। অথচকেউ কেউ মনে করে, ইস্তিখারার বিষয়টি হলো স্বপ্নের মাধ্যমে অবগত হওয়া। এ কারণেইস্তিখারার নামাজ ও দোয়া ঘুমানোর আগে করতে হয়। আর ইস্তিখারার ফলাফল অর্থাত্ কাজটিকরা উচিত কি উচিত না—তা স্বপ্নযোগে জানিয়ে দেয়া হয়। এটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ধারণা।স্বপ্ন দেখা তো ইস্তিখারার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোনো বিষয় নয়। ইস্তিখারার পর কেউ কোনোস্বপ্ন দেখতে পারে আবার নাও দেখতে পারে। স্বপ্নে কোনো কিছু দেখলে তাকে বিচার করতেহবে স্বপ্নের বিষয়ে শরিয়তের যে বিধান আছে তারই ভিত্তিতে। আর মানুষের দেখা স্বপ্ন তোকোনো দলিল নয় যে, এর মাধ্যমে তার সমাধান করবে। এ ব্যাপারে শরিয়তের বিধানইঅনুসরণীয়-অনুকরণীয়।
হাদিস শরীফে প্রয়োজনগ্রস্ত ব্যক্তিকেই ইস্তিখারা করতে বলাহয়েছে। অথচ এক্ষেত্রে আরেকটি ভুল হলো, নিজে না করে অন্যকে দিয়ে ইস্তিখারা করানো।অনেকে মসজিদের ইমাম সাহেব বা পরিচিত কোনো আলেমের কাছে ইস্তিখারার আবেদন করে থাকেন।এটাও ইস্তিখারার মূলনীতির খেলাফ, যা পরিত্যাজ্য। এভাবে ইস্তিখারার ক্ষেত্রে আরওনানা ধরনের ভুল-ভ্রান্তিতে লিপ্ত হতে দেখা যায়।