বিশ্বের প্রত্যেক জাতির,প্রত্যেক ধর্মানুসারীরই রয়েছে আনন্দের-উত্সবের দিবস।সেই দিবসে তাদের মধ্যে বয়ে যায় আনন্দের বন্যা। উত্সবের আমেজে তারা থাকে বিভোর, মাতোয়ারা। পারস্যবাসী নববর্ষে আনন্দ উত্সবে মেতে ওঠে। খ্রিস্টানরা ক্রিসমাস এবং বড়দিন উদযাপন করে বেশ ধুমধামের সঙ্গে। হিন্দুরা হোলি দেওয়ালি র নামে উত্সবেরআসরে নিজেদের উজাড় করে দেয়। অন্য ধর্মানুসারীরাও পালন করে নিজ নিজ ধর্মীয় ও জাতীয়আনন্দ উত্সব।
মানুষের ফিত্রত, মানুষের জন্মগত বৈশিষ্ট্য হচ্ছে আনন্দ উত্সবেরপ্রতি তার বিশেষ আকর্ষণ। আর এই চাহিদার জগত্টাও সীমিত পরিসরে নয়; দুয়েকজন একত্রেবসে উত্সবের জগত্টা পাড়ি দিয়ে দেবে তেমনটি ভাবাও ঠিক নয়। মানব চাহিদা এবং তারচাওয়া-পাওয়ার পরিধি খানিকটা ব্যাপক। সবাই একত্রে উত্সবে মেতে উঠবে, আনন্দ ফুর্তিতেতার জীবনের মুহূর্তগুলো কাটিয়ে দেবে, মানুষের ভেতর এমন চাহিদাটাই বেশ তীব্রভাবে কাজকরে। আর এজন্য প্রয়োজন একটি বিশেষ দিন ও ক্ষণের।মানব চাহিদার এই দিকটি প্রত্যেকজাতি, প্রত্যেক ধর্মানুসারীর কাছেই ছিল একটি বিবেচ্য বিষয়। আর এ কারণেই দেখা যায়বিভিন্ন জাতি, বিভিন্ন ধর্মানুসারী এই চাহিদা পূরণে দিনক্ষণ ঠিক করে উত্সবের আমেজেনিজেদের ভেতরকার ঐক্য সংহতি ধরে রাখার কসরত্ চালিয়ে থাকে। এসব উত্সব দিবসকে কেন্দ্রকরে আনন্দের জোয়ারে নিজেদের ভাসিয়ে দেয়। খেলাধুলা থেকে শুরু করে এ সময় তারা সবকিছুইকরে উত্সবকে প্রাণবন্ত করে রাখার জন্য। একে কেন্দ্র করে অনেকেই শরাব পান করে মাতালথাকাটাকেও পুণ্য হিসেবে ভাবতে থাকে। জিনার ন্যায় গর্হিত কাজও এ সময় তাদের জন্য হয়েযায় হালাল। বেশ ঘটা করেই তাদের মধ্যে কেউ কেউ মূর্তি পূজায় মেতে থাকে। ঢাকঢোলপিটিয়ে, গান-নৃত্যের আসর জমিয়ে এসব দিবসকে স্মরণীয় করে তোলার প্রাণান্তকর প্রচেষ্টাপরিলক্ষিত হয়। তাদের মধ্যে সভ্যতার দাবিদার মানব গোষ্ঠীর এই শ্রেণীটি নিজেদের ইচ্ছাও প্রবৃত্তির যাবতীয় উলঙ্গ নোংরামিতে পরিপূর্ণ করে তাদের ধর্মীয় ও জাতীয় উত্সবেরআমেজকে ধরে রাখার প্রচেষ্টায় নীরব রয়েছে যুগ যুগ ধরে।
ইসলামী শরীয়ত এসব উত্সবএবং মানব চাহিদার সার্বিক অবস্থার খুঁটিনাটি বিষয়-আসয়গুলো পর্যবেক্ষণ করেছে বেশগুরুত্বের সঙ্গে। কী কারণে মানুষের মধ্যে এসব বিষয় বার বার উঁকিঝুঁকি দেয় সেইতাত্পর্য ও বিশ্লেষণে ইসলাম পিছিয়ে থাকেনি। পরিশেষে খোদায়ী সভ্যতার প্রধান ওসর্বশেষ প্রতীক মহানবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই সিদ্ধান্তঘোষণা করলেন, মানুষের এই চাহিদা অহেতুক নয়, এটি কোনো অন্যায় চাহিদাও নয়। কোনো জাতি, কোনো গোষ্ঠী উত্সবের আয়োজন করবে, এটা কেনো দোষণীয় হবে? ঐক্যবদ্ধ, সমাজবদ্ধজীবন-যাপন করাটাই তো উত্তম। পরস্পর মতবিনিময়, চিন্তার আদান-প্রদান, অর্থনৈতিকউন্নয়ন অগ্রগতির জন্য সেই জাতির, সেই গোষ্ঠীর সব সদস্যের একত্রে বসা, একত্রিত হওয়াঅত্যন্ত জরুরি একটি বিষয়। তাই মহানবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামমুসলিম উম্মাহর জন্য এ জাতীয় উত্সব আয়োজন ও উদযাপনের অনুমতি দিয়ে দিলেন।কিন্তুঅন্যান্য ধর্মানুসারী ও গোষ্ঠীর উত্সব দিনে যেসব ভ্রান্ত অমুলক কার্যক্রম চালু ছিল,বেহায়াপনা ও উলঙ্গপনার যে বিশ্রী অমানবিক কার্যক্রম প্রচলিত ছিল, ইসলামের উত্সবদিনে তা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়। বিশ্বনবী (সা.) উত্সবের আমেজকে পবিত্রভাবেপালন করার জন্য নির্দেশ দিয়ে সমাজের সামনে ইসলামকে সুমহান পূতপবিত্র একটি আদর্শহিসেবে তুলে ধরতে সক্ষম হন। তিনি এই দর্শন বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরেন যে,ইসলামেরআবির্ভাব তাবত্ নোংরামি এবং অপসংস্কৃতির মূলোত্পাটনের জন্যই হয়েছে। তিনি এর মাধ্যমেএ কথাও প্রমাণ করেছেন যে, ইসলাম খোদা প্রদত্ত একটি ধর্ম। মানুষের মনগড়া কোনো মতবাদইইসলামের সামনে টিকে থাকতে পারে না। ইসলাম মানব জাতিকে আদর্শ মানুষ,পবিত্র নাগরিকহিসেবে গড়ে তোলার জন্য আত্মপ্রকাশ করেছে। তাই ইসলামের এই সভ্যতার বিকাশ ও লালনেপ্রয়োজন ছিল বিশাল একটি উত্সব দিনের। যে দিনে আল্লাহ ছাড়া চলবে না আর কারো ইবাদতউপাসনা। শরাব পান,জিনার ন্যায় অপকর্মগুলো যে দিনে থাকবে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। মূর্তিপূজার ন্যায় গর্হিত কাজগুলো পরিহার করা হবে পুরোপুরিভাবে। অপসংস্কৃতি আর অসভ্যতারকোনো নাম-নিশানা থাকবে না এ দিবসটিকে কেন্দ্র করে। গঙ্গা, যমুনার স্নান, হোলি, দেয়ালির উত্সব আমেজ থেকে থাকবে এ দিনটি সম্পূর্ণ মুক্ত।
তাই মহানবীর (সা.) মাধ্যমে আল্লাহতাআলার পক্ষ থেকে উত্সবের জন্য নির্দিষ্ট করে দেয়া হয় দু টি দিন। তারএকটি হলো ঈদুল ফিতর আর অপরটি হলো ঈদুল আজহা। ইসলামের উত্সব আর আনন্দ দিবসেরঅর্থ হচ্ছে, সম্মিলিতভাবে আল্লাহকে স্মরণ করা। খোদামুখি হয়ে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনেরজন্য নিজেকে উজাড় করে দেয়া। অসহায় গরিবদের প্রতি সাহায্যের হাত সম্প্রসারণ করা।তাদের প্রতি হামদর্দী ও সহমর্মিতা প্রকাশ করা। ইসলামের উত্সব আমেজ দিবস দু’টি এতব্যাপক, এত বিশাল; যাতে নেই কোনো জন্মভূমির প্রশ্ন, নেই এতে দেশ-মহাদেশেরসীমাবদ্ধতা। জাতি, গোষ্ঠী ব্যক্তি সত্তার বিসর্জন দিয়ে একমাত্র একক সত্তাআল্লাহতাআলার শাহী দরবারে নিজেকে উজাড় করে দেয়া, খোদায়ী সত্তার মধ্যেই নিজের সবকিছুসীমিত করে নেয়া এবং নিজের চাওয়া-পাওয়ার চাহিদা তার গণ্ডিসীমা লংঘন না করা। এটাইহলো, ইসলামী উত্সব দিবসের শিক্ষা।
এছাড়া ইসলামী উত্সবের আনন্দমুখর এই পরিবেশেঅসহায় দরিদ্রদের প্রতি দান-খয়রাতের নির্দেশ প্রদানের মাধ্যমে তাদের মুখেও উত্সবেরহাসির ঝিলিক ফোটানোর নির্দেশ এ কথারই প্রমাণ করে যে, ইসলাম একটি বিশ্বজনীন ব্যাপকভিত্তিক ধর্ম। জাতি, গোষ্ঠী, দেশীয় স্বার্থ এতে আঘাত হানতে সক্ষম নয়। এখানেনেই কোনো দেশের প্রতিবন্ধকতা। ব্যক্তি স্বার্থ ইসলামী আকিদা বিশ্বাসের ক্ষেত্রেকোনো অন্তরায়ই সৃষ্টি করতে পারবে না। এটা শুধু ইসলামের সার্বজনীন ব্যাপক নীতিরই ফসল। ইসলাম চৌদ্দশ বছর ধরে বিশ্ববাসীর সামনে তার এই সফলতা তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছেবলেই ইসলাম আজ সারা দুনিয়ার অপরাজেয় অপ্রতিরোধ্য শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হতে সক্ষমহয়েছে।
সুতরাং ইসলামী উত্সব ব্যক্তিগত বা জাতীয় ধ্যান-ধারণা বাস্তবায়নের কোনোদর্শন নয় বরং ইসলামী উত্সব সামগ্রিক ব্যাপক ও সার্বজনীন চিন্তা-চেতনা বাস্তবায়নেরমাইলফলক। আর এটা একমাত্র খোদামুখী চিন্তা-চেতনাকে লালনের মাধ্যমেই সম্ভবপর। এর একটিবাস্তব প্রমাণ যখন মুসলমান ঈদের নামাজের উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হয়ে যায়, তাদেরমধ্যে থাকে না তখন রংয়ের ছড়াছড়ি, ব্যক্তি, জাতীয়তার জয়জয়কার ধ্বনিত হয় না তাদের মুখথেকে। এ সময় তাদের মুখে স্লোগান থাকে—আল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবর, লা ইলাহাইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবর, অলিল্লাহিল হামদ।
অর্থাত্ আল্লাহবড়, আল্লাহ শ্রেষ্ঠ, আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। আল্লাহ বড়, আল্লাহ শ্রেষ্ঠ, প্রশংসা শুধু তাঁরই জন্য।সুতরাং দেখা যাচ্ছে মুসলমানদের এই ধর্মীয় উত্সব পালিতহচ্ছে খোদার বড়ত্ব,খোদার শ্রেষ্ঠত্ব এবং তাঁরই একত্ববাদ ঘোষণার মাধ্যমে। একেবারেইসুশৃংখল, পূতপবিত্র একটি উত্সব আমেজ। ফেরেশতাতুল্য কাতারবন্দি আবহে সম্মিলিতভাবেএমন একটি মহা উত্সব মহা আনন্দে উদযাপিত হয়। ঈদের সম্মানিত ইমাম ঈদগাহের সামনেঅগ্রসর হয়ে তাকবীর বলা মাত্র মুকাব্বিরগণ উচ্চধ্বনিতে পৌঁছে দেন সবার কানে এই ধ্বনিলহরী। সুমধুর কণ্ঠে তিলাওয়াত হয় পবিত্র কোরআনের। সমবেত মুসলিম জনতা সেই তিলাওয়াতশুনে মুগ্ধ হন, ভবিষ্যত্ আদর্শ জীবন গঠনে তারা এই নামাজ আদায় করে থাকেন খুবইএকাগ্রতার সঙ্গে। রুকু, সিজদা করে তারা আল্লাহর শাহী দরবারে নিজের সর্বস্ব বিলিয়েদেন। নামাজ শেষে তারা সম্মিলিতভাবে আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি করেন নিজের জন্য,দেশের জন্য,সারা দুনিয়ার জন্য আত্মীয়-স্বজনসহ দুনিয়া ছেড়ে চলে যাওয়া সমগ্র মুসলিমউম্মাহর জন্য। ইসলাম মুসলমানদের এমন একটি উত্সব উপহার দিয়েছে যার সম্পর্ক দুনিয়ারসঙ্গেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং দুনিয়া ছেড়ে চলে যাওয়া অসংখ্য অগণিত মুসলমানও এর সঙ্গেঅংশীদার। তারাও শরিক হয়ে যাচ্ছেন এই উত্সবের আমেজের সঙ্গে। এই উত্সবের আমেজ চলতেথাকবে কবরে, হাশর-পুলসিরাত সর্বক্ষেত্রেই। একটু অগ্রসর হয়ে এ দাবি করলেও ভুল হবে নাযে, এই উত্সবী আমেজে হজরত আদম থেকে নিয়ে কিয়ামত পর্যন্ত সব ঈমানদার বান্দাইসমানভাবে শরিক।
সুতরাং ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে হলে ঈমানদার হতে হবে। এছাড়া এইবিশাল নেয়ামতের স্বাদ আস্বাদন করা কোনোক্রমেই সম্ভব নয়। ঈদের এই উত্সব, মহা আনন্দেরমহা খুশির উত্সব। সৌভাগ্য সেই জাতির যাদের দেয়া হয়েছে এমন একটি পূতপবিত্র উত্সবেরসুবর্ণ সুযোগ। তাই এই সুযোগকে কাজে লাগাতে হবে। ঈদের উত্সবের আমেজ পৌঁছে দিতে হবেসবার ঘরে ঘরে। ঈদের আনন্দ, ঈদের খুশি শুধু দামি দামি কাপড়-চোপড় পরিধান, সুগন্ধিব্যবহার, মিষ্টি খাবার-দাবারেই সীমাবদ্ধ নয়। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামএ প্রেক্ষিতেই ঘোষণা করেছেনঈদ তো তার জন্য যে আল্লাহকে ভয় করে যে আল্লাহর প্রতিরুজু হয়; তার জন্য নয়, যে নতুন ও ভালো কাপড় পরিধান করে।হজরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) বলেনমুমিনের জন্য ঈদ পাঁচদিন এক. যেদিন গোনাহমুক্ত কাটাবে। দুই. শয়তানেরফেরেবমুক্ত হয়ে যেদিন ঈমান অক্ষুণ্ন রাখতে সক্ষম হবে। তিন. যেদিন নির্দ্বিধায়দোযখের উপর দিয়ে পুলসিরাত অতিক্রম করতে সক্ষম হবে। চার. যেদিন দোযখের অগ্নি থেকেমুক্ত হয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে। পাঁচ. যেদিন মহান রাব্বুল আলামীন আল্লাহ তাআলারদিদার লাভ করবে। কোনো এক ব্যক্তি ঈদের দিন হজরত আলীকে (রা.) শুকনো রুটি চিবুতে দেখেপ্রশ্ন করলহে আবু তুরাব! আজ তো ঈদের দিন!হজরত আলী (রা.) বললেন, ‘আমার ঈদ সেইদিন, যেদিন গোনাহমুক্ত হব।ওহাব ইবনে মুনাব্বিহ (রা.)কে ঈদের দিন কাঁদতে দেখেকেউ বললআজ তো খুশি আর আনন্দের দিন!তিনি বললেন—‘আজকের খুশি তো ওই ব্যক্তির জন্য, যার রোজা আল্লাহর দরবারে গৃহীত হয়েছে।
হজরত শিবলী (রহ.)কে ঈদের দিন পেরেসানদেখে কেউ জিজ্ঞাসা করলঈদের দিন আপনি এত পেরেসান কেন? জবাবে তিনি বললেনমানুষঈদের আনন্দে নিমজ্জিত হয়ে খোদায়ী ধমকীর কথা ভুলতে বসেছে।
ঈদের ফজিলত এবং করণীয়বর্ণনা করতে গিয়ে হজরত শায়খ আবদুল কাদির জিলানী (রহ.) বলেন
ঈদ তাদের জন্য নয়, যারা পানাহারে নিমজ্জিত। ঈদ তাদের জন্য যারা ইখলাছ ও নিষ্ঠার সঙ্গে ইবাদতেলিপ্ত।
ঈদ তাদের জন্য নয়, যারা ভালো ও উত্তম কাপড় পরিধান করে সুসজ্জিত। ঈদতাদেরই জন্য যারা খোদায়ী সতর্ক বাণীতে ভীতসন্ত্রস্ত।
ঈদ তাদের জন্য নয়, যারাসুগন্ধি ব্যবহার করে সুরভিত। ঈদ তাদেরই জন্য যারা নিজের গোনাহ থেকে তওবার মাধ্যমেআল্লাহ থেকে ক্ষমাপ্রাপ্ত।ঈদ তাদের জন্য নয়, যারা দুনিয়ার চাকচিক্যের পূজারত।ঈদ তাদেরই জন্য যারা তাকওয়া পরহেজগারীকে করে নিচ্ছে অনবরত।ঈদ তাদের জন্য নয়, যারা উন্নত আরোহণে আরোহিত, ঈদ তাদেরই জন্য যারা যাবতীয় গোনাহখাতা হতেবিদুরিত।
ঈদ তাদের জন্য নয় যারা ফরস ফুরুসে লাল গালিচার মতো। ঈদ তাদেরই জন্যযারা পুলসিরাত করতে পেরেছে অতিবাহিত।সুতরাং মুসলমানদের ঈদ, তাদেরআনন্দ-উত্সবের মূল বক্তব্যই হলো আল্লাহর স্মরণ, আল্লাহর জিকির, আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব, আল্লাহর বড়ত্বকে দৃষ্টির সামনে রেখে সম্মিলিত আনন্দের পরিবেশ গড়ে তোলা। যাতে থাকবেনিজের পরিবারের, সমাজের, দেশের, সমগ্র দুনিয়ার অন্তর্ভুক্তি। থাকবে অন্তর্ভুক্তিঈমানদার জীবিত সব মানুষ। মৃত জগতে যারা চলে গেছেন তারাও থাকবেন শামেলে হাল। এইআনন্দে অংশগ্রহণে ধনী-দরিদ্রে থাকবে না কোনো ভেদাভেদ। বরং দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে এইআনন্দে একাকার করতে ইসলাম ধনীদের উপর ওয়াজিব করেছে সদকায়ে ফিতর। সদকায়ে ফিতরেঅন্তর্নিহিত অন্যতম তাৎপর্য হচ্ছে ঈদের আনন্দে ঈদের খুশিতে দরিদ্র শ্রেণীর লোকদেরওশামিল করে নেয়া। কেননা, ঈদের নামাজের আগেই যখন একজন অভাবী অনাহারি মানুষ কিছু পায়, তখন তা তার আনন্দের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।সদকায়ে ফিতরের আরো একটি তাত্পর্য হলো, এটিরোজার জাকাত। জাকাত যেমন সম্পদকে পবিত্র করে সদকায়ে ফিতর রোজাকে পবিত্র করে। মানুষভুল-ত্রুটির ঊর্ধ্বে নয়। রোজার ত্রুটি-বিচ্যুতির ক্ষতিপূরণ করে সদকাতুল ফিতর। ফিতরাওয়াজিব হয় ঈদের দিন সুবহে সাদিক থেকে। গম, গমের আটা দ্বারা ফিতরা আদায় করলে অর্ধসাঅর্থাত্ ১ কেজি ৬৫০ গ্রাম আর যব, যবের আটা কিংবা খেজুর দ্বারা আদায় করলে এক সা৩ কেজি ৩০০ গ্রাম আদায় করতে হবে। ঈদুল ফিতরের আগে ফিতরা আদায়করা জায়েজ। নিজের এবংনিজের নাবালেগ সন্তানের পক্ষে সদকায়ে ফিতর আদায় করা ওয়াজিব। স্ত্রী এবং বালেগ সন্তানের ফিতরা নিজেরাই আদায় করবে। এক ব্যক্তির ফিতরা এক মিসকিনকে দেয়া উত্তম। তবে একাধিক ব্যক্তিকেও দেয়া জায়েজ।