আমরা যে যতটুকু নেক আমল করি, তার মুখ্য উদ্দেশ্যই হলো যে, কৃত আমলটি কবূল হলো কিনা? নিশ্চয়ই সৎ আমল করতে পারা বড় একটি নেয়ামত; আর তখনই এই নিয়ামত কাজে আসবে যখন এটি কাবুলিয়াতের দরজায় পৌঁছাবে। এই প্রচন্ড গরমে প্রায় ষোল ঘন্টা দীর্ঘ সময় রোযা বা সিয়াম পালন করলাম, আল্লাহর দরবারে যদি তা কবূল বা গৃহীত না হয়। তবে তো এই কষ্টই বৃথা। এত কষ্ট স্বীকার করে আমল করার পর যদি তা হয় প্রত্যাখ্যাত এর চেয়ে পরিতাবের বিষয় আর কি হতে পারে? কুরআন ও সুন্নাহয় বিভিন্ন কারণ বর্ণিত হয়েছে, যদরুণ আমল বাতিল বলে গণ্য হয়। অতএব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, আমল কবুলের কারণ ও উপায় সম্পর্কে জানা। যদি কারণগুলি তার মধ্যে বিদ্যমান থাকে, তবে যেন আল্লাহর প্রশংসা করে এবং ক্রমাগত তার উপর অটল থাকে ও আমল করে যায়। আর যদি তা বিদ্যমান না পায় তবে এ মুহূর্তেই যে বিষয়ের উপর গুরুত্ব দিতে হবে তা হল: ইখলাসের সাথে সেগুলোর মাধ্যমে আমল করায় সচেষ্ট হওয়া।
আমল কবুলের কতিপয় উপায়:
১। স্বীয় আমলকে বড় মনে না করা ও তার উপর গর্ব না করা: মানুষ যত আমলই করুক না কেন, আল্লাহ তার দেহ থেকে শুরু করে সার্বিকভাবে যত নেয়ামত তাকে প্রদান করেছেন, সে তুলনায় আল্লাহর সে মূলত: কিছুই হক আদায় করতে পারে নি। সুতরাং একনিষ্ঠ ও খাঁটি মু’মিনের চরিত্র হল, তারা তাদের আমলসমূহকে তুচ্ছ জ্ঞান করবে, বড় মনে করে গর্ব-অহংকার করবে না।
স্বীয় আমলকে তুচ্ছ জ্ঞান করার সহায়ক বিষয়:
(১) আল্লাহ তায়ালাকে যথাযথভাবে জানা ও চেনা (২) তাঁর নিয়ামতসমূহ উপলব্ধি করা ও (৩) নিজের গুনাহ-খাতাকে স্মরণ করা।
২। আমলটি কবূল হবে কিনা, এ মর্মে আশঙ্কিত থাকা: সালাফে সালেহীন- সাহাবায়ে কিরাম আমল কবূল হওয়ার ব্যাপারটিকে খুব বেশি গুরুত্ব দিতেন, এমনকি তাঁরা ভয় ও আশঙ্কায় থাকতেন।
৩। আমল কবুলের আশা পোষণ ও দু‘আ করা: আল্লাহর প্রতি ভয়ই যথেষ্ট নয়; বরং অনুরূপ তাঁর নিকট আশা পোষণ করতে হবে। কেননা আশা বিহীন ভয় নিরাশ হওয়ার কারণ এবং ভয় বিহীন আশা আল্লাহর শাস্তি হতে নিজেকে মুক্ত মনে করার কারণ; অথচ উভয়টিই দোষনীয়, যা মানুষের আকীদা ও আমলে মন্দ প্রভাব বিস্তার করে। জেনে রাখুন! আমল প্রত্যাখ্যান হয়ে যাওয়ার ভয়-আশঙ্কার সাথে সাথে আমল কবুলের আশা পোষণ মানুষের জন্যে বিনয়-নম্রতা ও আল্লাহ ভীতি এনে দেয়। যার ফলে তার ঈমান বৃদ্ধি পায়। যখন বান্দার মধ্যে আশা পোষণের গুণ সাব্যস্ত হয় তখন সে অবশ্যই তার আমল কবূল হওয়ার জন্য তার প্রভুর নিকট দু’হাত তুলে প্রার্থনা করে। যেমন- করেছিলেন আমাদের পিতা ইবরাহীম খলীল ও তাঁর পুত্র ইসমাঈল (আলাইহিমাস সালাম)। যা আল্লাহ তায়ালা তাদের কা’বা গৃহ নির্মাণের ব্যাপারটি উল্লেখ করে বর্ণনা করেন।
“যখন ইবরাহীম ও ইসমাঈল (আলাইহিমাস সালাম) বায়তুল্লাহর ভিত্তি বুলন্দ করেন (দু‘আ করেন) হে আল্লাহ আমাদের প্রতিপালক তুমি আমাদের দু‘আ কবূল করে নিও। নিশ্চয়ই তুমি সর্বশ্রোতা সর্বজ্ঞ। (সূরা বাকারা: ১২৭)
৪। বেশি বেশি ইস্তেগফার-ক্ষমা প্রার্থনা: মানুষ তার আমলকে যতই পরিপূর্ণ করার জন্য সচেষ্ট হোক না কেন, তাতে অবশ্যই ত্রুটি ও অসম্পূর্ণতা থেকেই যাবে। তাই প্রত্যেক ইবাদতের পর ইস্তেগফার বা প্রার্থনা করা। আর নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) প্রত্যেক নামাযের পর তিনবার করে “আস্তাগফিরুল্লাহ” (আমি তোমার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি) বলতেন।
৫। বেশি বেশি সৎ আমল করা: নিশ্চয়ই সৎ আমল একটি উত্তম বৃক্ষ। বৃক্ষ চায় তার পরিচর্যা, যেন সে বৃদ্ধি লাভ করে সুদৃঢ় হয়ে যথাযথ ফল দিতে পারে। সৎ আমলের পর সৎ আমল করে যাওয়া অবশ্যই আমল কবুলের একটি অন্যতম আলামত। আর এটি আল্লাহর বড় অনুগ্রহ ও নেয়ামত, যা তিনি তার বান্দাকে প্রদান করে থাকেন। যদি বান্দা উত্তম আমল করে ও তাতে ইখলাস বজায় রাখে তখন আল্লাহ তার জন্য অন্যান্য উত্তম আমলের দরজা খুলে দেন। যার ফলে তার নৈকট্যের ও বৃদ্ধি পায়।
রমযানের পর করণীয়:
মাহে রমযান হতে আমরা কি উপকারিতা গ্রহণ করলাম? আমরা তো কোরআনের মাস কে বিদায় জানালাম। অমরা অতিবাহিত করলাম তাকওয়ার মাস। আমরা বিদায় জানালাম ধৈর্যের মাস। যাতে আমরা আল্লাহর আনুগত্য প্রকাশ ও পাপাচার হতে বিরত থাকর মাধ্যমে ধৈর্যের অনুশীলন করেছি। আমরা অতিবাহিত করলাম জিহাদের মাস। ২য় হিজরীর এ মাসেই অনুষ্ঠিত হয়ে ছিল ঐতিহাসিক ফুরকান তথা হক ও বাতিলের পার্থক্য নিরূপণ কারী বদর যুদ্ধ। আমরা অতিবাহিত করলাম রহমতের মাস, বরকতের মাস, এবং মাগফিরাতের মাস ও জাহান্নামের আগুন হতে মুক্তির মাস
যেহেতু আমরা রমযানের প্রতিষ্ঠান হতে মুত্তাকীর সনদ নিয়ে বের হলাম, তবে কি আমরা যথাযথ তাকওয়া অর্জন করতে পেরেছি?
আমরা কি আত্মা ও প্রবৃত্তির বিরুদ্ধে জিহাদে বিজয় লাভ করতে পেরেছি, না অপসংস্কৃতি, কুসংস্কার, বদভ্যাস, যত অনৈসলামী কৃষ্ঠি-কালচার আমাদের মাঝে ছেয়ে বসেছ? আমরা কি রহমত, বরকত, মাগফিরাত ও মুক্তি পাওয়ার মাধ্যম গুলির অনুশীলন করেছি? বহু জিজ্ঞাসার উত্তর নিজেই তালাশ করি। বাকী এগারো মাস যেন আমরা রমযানের বরকত নিয়ে সুন্দরভাবে পরিচালনা করতে পারি সেই চেষ্টা অব্যাহত রাখি। আল্লাহ আমাদের সকলকে সেই তাওফীক দান করুন। আমীন