৬ পর্ব
মানুষের তথা সৃষ্টিকুলের ভালোবাসা পেতে হলে যা সবচেয়ে বড় প্রয়োজন কিংবা একমাত্র প্রয়োজন তা হলো আল্লাহর ভালোবাসা। রাসূল (সাঃ) বলেছেন “আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যখন তার কোনো বান্দাকে ভালোবাসেন তখন তিনি আকাশ বাসীকে জানিয়ে দেন আমি আমার অমুক বান্দাকে ভালোবাসি তোমরাও তাকে ভালোবেসো। আকাশবাসীরা তখন জমীন বাসীদের জানিয়ে দেন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তার অমুক বান্দাকে ভালোবাসেন আমরা আকাশবাসী ফেরেস্তারাও তাকে ভালোবাসি। হে জমিনবাসী তোমরাও তাকে ভালোবেসো। তখন সত্যপন্থি মানুষের অন্তরে ঐ ব্যক্তির জন্য ভালোবাসার সৃষ্টি হয়। তারা তাকে ভালোবাসে।
অতএব হিসাব অতি সহজ। মানুষের ভালোবাসা পেতে হলে আল্লাহকে ভালোবাসতে হবে। আর আল্লাহকে ভালোবসতে হলে রাসূল (সা.) কে ভালোবাসতে হবে। তার আনিত শরিয়তের পাবন্দি করতে হবে। তার দিক নির্দেশনা মেনে চলতে হবে। তার আনুগত্য করতে হবে শর্তহীনভাবে। তার নিষেধ থেকে স্বযত্নে নিজেকে দূরে রাখতে হবে। তিনি যেভাবে যে কাজ করতে যেভাবে যে কথা বলতে- যেভাবে যে পথে চলতে বলেছেন, সেই ভাবে কাজ করা, সেই ভাবে কথা বলা, সেই ভাবে পথচলার মধ্যেই আছে শান্তি আর ভালোবাসা।
আর পরিপূর্ণ শান্তি তো দুনিয়াতেই নেই। রাসূল (সাঃ) বলেছেন, আল্লহ পাক বলেন,“আমি শান্তিকে বন্দী করেছি জান্নাতে, মানুষ কি করে তা দুনিয়াতে খুঁজে পাবে?
আমি সম্মান আর ভালোবাসাকে বন্দি করেছি আমার আনুগত্যের মধ্যে মানুষ কি করে তা রাজা বাদশাহর দরবারে খুঁজে পাবে?”
অতএব যে যত আল্লাহর আনুগত্য করবে রাসূল (সা.) এ প্রদর্শিত পথে চলবে সে তত সম্মান ও ভালোবাসা পাবে দুনিয়া ও আখেরাতে।
রাজা বাদশ মন্ত্রী এমপি, আমলা এদের কি মানুষ ভালোবাসে? সম্মান করে?
স্বার্থের জন্য এদের পিছে পিছে ঘোরে হুজুর হুজুর স্যার স্যার করে। ভয় পায়, একটু আড়াল হলেই অশ্লীল ভাষায় গালি দিতে কুন্ঠা বোধ করে না।
উদাহরণ নেওয়ার জন্য বেশি দূরে যাওয়ার দরকার নেই আজকের বাংলাদেশের দিকে তাকালেই দেখা যায় কোথায় বড় বড় মন্ত্রী এমপিদের সেই সম্মান সেই ভালোবাসা? নিজেদের বাঁচানোর জন্য তারা একে অপরের উপর দোষারোপ করছে।
হযরত খোবায়েব (রা.) বন্দী হলেন কাফেরদের হাতে। কাফের বা তাকে নির্মম নির্যাতন করে শহিদ করে দেয়। হত্যা করার আগে কাফেররা বলেছিলো তোমার পরিবর্তে যদি মুহাম্মাদকে (সা.) এখানে হত্যা করা হয় তাহলে তোমার কি মনে হয়। খোবায়েব (রা.) বলেন আমাকে যদি বল আমার জীবনের বিনিময়ে আমার নবীজির পায়ে একটু কাঁটা ফুটুক আমি তাতেও রাজী হবনা।”
বর্তমান সময়ের কোনো ইসলামী আন্দোলনের নেতা কিংবা কোনো ইসলামী ব্যক্তিত্ব সম্পর্কেও যদি কেউ খারাপ মন্তব্য করে কলিজায় আঘাত লাগে যেন। কারণ এই সব ব্যক্তিগণ আল্লাহর আনুগত্যের মধ্যে আছেন তাই তাদের ভালোবাসী, সম্মান করি।
আসুন গোলাপ চাষের মতো ভালোবাসার চাষ করি। ভালোবাসার ফুল ফুটুক আমাদের প্রত্যেক মুমিনের হৃদয় আঙ্গিনায়। সংসার মৌতাত হোক ভালোবাসার সৌরভে।
ভালোবাসার সেজদায় লুটাই দেহমন মস্তিস্ক। ভালোবাসার দরুদ পাঠাই প্রিয়তম নবীজির শানে।
ভালোবাসার কালেমা পড়ি। সবাইকে ভালোবাসি।
আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন জনৈক ব্যক্তি রাসূল (সা.) এর কাছে এসে জিজ্ঞেস করলো হে আল্লাহর রাসূল! কেয়ামত কখন হবে? রাসূল (সা.) বললেন তোমার কল্যাণ হোক, তুমি কি এর জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করেছ? সে বললো তার জন্য আমি বিশেষ কোনো প্রস্তুতি গ্রহণ করতে পারিনি। তবে আমি আল্লাহ ও তার রাসূলকে খুব ভালোবাসী। রাসূল (সা.) বললেন, তুমি যাকে ভালোবাসো পরকালে তার সাথেই থাকবে। আনাস (রা.) বলেন সেদিন সমবেত মুসলমানগণ এতো বেশি খুশী হয়েছিলেন যে ইসলাম গ্রহণের পরে এতো খুশী হতে আমি কখোনো দেখিনি। (বুখারি-মুসলিম)
ভালোবাসার মতো অমূল্যধন আর কিছু নজরে পরে না আমার। তাইতো আমি ভালোবাসি নিজেকে, পরিবার পরিজনকে, আত্মীয় স্বজন, পাড়া প্রতিবেশী, বন্ধু বান্ধবীকে, দ্বীনি ভাই বোনদের। কারো সাথে কিছুক্ষণ কথা হলেই তার জন্য ভালোবাসায় পূর্ণ হয়ে যায় হৃদয়টা। সর্বোপরি ভালোবাসি আমার প্রিয়তম নবীজি (সা.) কে মহান রব্বুল আলামীনকে।
আর আমি যতোটা ভালোবাসি তার চেয়ে সহস্রগুণ হয়ে ফিরে আসে সেই ভালোবাসা তাদের দিক থেকে আমার কাছে। আমি আপ্লুত হই অভিভূত হই শুকরিয়া জানানোর ভাষা খুঁজে পাই না।
আমার নামায আমার রোজা আমার অন্যান্য ইবাদাতের উপর সত্যি বলছি আমি ভরসা পাইনা। মনে হয় কি জানি মহান মালিক আমার এইসব ইবাদাত কবুল করবেন তো? কিন্তু আমার ভালোবাসার উপর আমার বিরাট আস্থা। মনে হয় ইনশা আল্লাহ আমার এই আমলটি আমার মহান রব কবুল করবেন আর সেই দিন-যেদিন কোনো ছায়া থাকবে না তার ছায়া ব্যতীত। আমার সব প্রিয়জনদের সাথে আমাকেও স্থান দেবেন তাঁর ছায়াতলে। ভালোবাসা ভরা হৃদয় নিয়ে আমি প্রতিক্ষায় আছি সেই দিনের।
আমার এই প্রায় অর্ধশতাব্দীর জীবন। আত্মীয় -স্বজন, সল্প পরিচিত, দীর্ঘ পরিচিত, পাড়া প্রতিবেশী কর্মী রোকন ভাইবোনদের অকুন্ঠ অকৃত্রিম ভালবাসা পাওয়ার কতটুকু যোগ্যতা আমার আছে? এ যে আমার রবের আমার মালিকের আমার ইলাহর একান্তই দয়ার দান। সারাজীবন সেজদায় পড়ে থাকলেও তো তার শুকরিয়া আদায় করে শেষ করা যাবে না।
তবে এ ভালোবাসার একটা পার্থিক কারণ ইদানীং আমি খুঁজে পেয়েছি। তাহলো আমিও তাদের ভালোবাসি, অসম্ভব ভালোবাসি আমি এদের সবাইকে। যখনই এদের কারো সাথে কথা বলি, তখনই তাদের জন্য ইহকাল আর পরকালের কল্যাণ কামনায় ভরে উঠে আমার হৃদয় মন। আমি কাউকে অবিশ্বাস করি না- কেনো যেনো কারো ত্রুটি আমার নজরে তেমন একটা পড়ে না। এর জন্য যে কোথাও ঠকিনি কিংবা ধোঁকা খাইনি তা নয়। ঠকেছি- ধোঁকা খেয়েছি- আবার ভুলেও গেছি সেই তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা। তিক্ত কথা গুলো তিক্ত ব্যবহার গুলো যে যত তাড়াতাড়ি ভুলতে পারে সে তত সুখি। আল্লাহ পাক এই অমূল্য সম্পদটি ও আমায় দান করেছেন। তাইতো কারো সাথে দীর্ঘ সময় আমার মনোমালিন্য থাকে না। (চলবে…)