মুসলমানদের বড় একটা অংশ পিছিয়ে শিক্ষা থেকে। সারা দুনিয়ায় মুসলমানদের সম্পদের তেমন অভাব নেই। কিন্তু এসব সম্পদ নিয়ন্ত্রণ করছে ইহুদি, খ্রিষ্টানেরা। মুসলমানেরা জ্ঞানচর্চা থেকে পিছিয়ে পড়ার কারণে মুসলিম দেশগুলোর খনিজসম্পদ অন্য জাতির মানুষ লুটে নিচ্ছে। স্পেন মুসলমানদের দখলে ছিল ৮৫০ বছর। তখন সেখানকার মুসলমানেরা জ্ঞানচর্চা করতেন। যখনই মুসলমানেরা জ্ঞানচর্চা ছেড়ে দিলেন তখনই রাজা রডরিক ও রানী ইসাবেলা সুযোগ পেয়ে গেল। অনেকে কুরআনের শিক্ষা অর্জনকে জ্ঞানচর্চা মনে করে না। কুরআন যে জ্ঞানের মহাসমুদ্র তা মুসলমান বুঝতে সক্ষম হচ্ছে না। মানবরচিত কিছু বই পাঠ করে কোনোমতে একটি সার্টিফিকেট নিয়েই বহুজন মহাজ্ঞানী সাজতে চান। এসব কারণে আমাদের এত দুর্দশা। মহান আল্লাহ বলেছেন- ১. পড়ো (হে নবী!) তোমার রবের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন; ২. জমাট বাঁধা রক্তের এক পিণ্ড থেকে মানুষকে সৃষ্টি করেছেন; ৩. পড়ো, আর তোমার রব বড়ই অনুগ্রহশীল; ৪. যিনি কলমের সাহায্যে জ্ঞান শিখিয়েছেন; ৫. মানুষকে এমন জ্ঞান দিয়েছেন, যা সে জানত না। (সূরা আলাক ১-৫)। এখানে স্পষ্ট কথা- আল্লাহ মানুষকে কিভাবে সৃষ্টি করেছেন এবং শিক্ষা দান করেছেন। বর্তমানে অনেক মুসলমানের সন্তান বড় নাস্তিকদের লেখা বই পড়ে নিজেদের উচ্চশিক্ষিত ভাবে। বাস্তবে এ শিক্ষা প্রকৃত শিক্ষা নয়। যারা কুরআন শিক্ষা অর্জন করে তাদেরকে এসব ব্যক্তি অশিক্ষিতও ভাবে। তারা মনে করে কুরআনকে জানলে শিক্ষিত হওয়া যায় না। যদি অধিকসংখ্যক ব্যক্তি কুরআন শিক্ষা অর্জন করত তাহলে আমাদের এত বিপর্যয় হতো না। কোনো মুসলমান অশিক্ষিত থাকতে পারে না এবং সেটা কুরআন থেকে অর্জন করতে হবে। মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘এটা কী করে সম্ভব যে, যে ব্যক্তি তোমার আল্লাহর এই কিতাবকে- যা তিনি তোমার প্রতি নাজিল করেছেন- সত্য বলে জানে, আর যে ব্যক্তি এই মহাসত্যের ব্যাপারে অন্ধ- তারা দু’জনেই সমান হয়ে যাবে? উপদেশ তো বুদ্ধিমান লোক মাত্রই কবুল করে থাকে।’ (সূরা- রায়াদ ১৯)।
আমাদের দেশে বহু ব্যক্তিই আছেন যারা ইহুদি-খ্রিষ্টানদের লেখা কিছু বই পড়ে পরীক্ষা দিয়ে পিএইচডি ডিগ্রি নিচ্ছেন, অধ্যাপক হচ্ছেন। তারা কুরআনকে সত্য বলে জানেন না কিন’ তাদের মাঝে কিছু ব্যক্তির ওই ডিগ্রি নেয়ার পাশাপাশি কুরআন শিক্ষা অর্জন করেন এবং মনে-প্রাণে বিশ্বাস করেন। যারা কুরআন থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেনি এবং কুরআনকে বিশ্বাস করেনি তারা পৃথিবীর যত বড় ডিগ্রি অর্জন করুক না কেন কিয়ামতের ময়দানে তা কোনো কাজে আসবে না।
পৃথিবীতে বহু অমুসলিম কুরআন থেকে বিজ্ঞান শিক্ষা অর্জন করে। তারা এতে অনেক উপকৃত হয়েছে। দুঃখজনক আমাদের এই জন্মভূমি বাংলাদেশেই প্রায় ৬০ লাখ মাদরাসা ছাত্র-শিক্ষক আছেন কিন’ তাদের বড় একটা অংশ কুরআন থেকে উপযুক্ত শিক্ষা অর্জন করতে সক্ষম হচ্ছেন না। এদের মধ্যে বিভিন্ন ভেদাভেদ। সুন্নাত পালন নিয়ে অনেক বাড়াবাড়ি। অথচ বহু ফরজ-ওয়াজিবের চিন্তা তাদের মধ্যে উপসি’ত নেই। এ ছাড়া তাদের বড় একটা অংশ, তারা কুরআনের অর্থ মাতৃভাষায় শেখে না, যার কারণে এই বিপুল ছাত্র-শিক্ষক এক ধরনের অমেরুদণ্ডী প্রাণীর মতো বেঁচে আছেন। আল্লাহ বলেছেন, আপনি বলুন, যারা জানে আর যারা জানে না তারা কি সমান হতে পারে? বুদ্ধিমান লোকেরাই তো নসিহত কবুল করে থাকে। (সূরা- জুমার ৯) মহান আল্লাহ আরো বলেছেন, ‘পক্ষান্তরে যারা জ্ঞান ও বিদ্যায় পাকাপোক্ত লোক তারা বলে আমরা তার প্রতি ঈমান এনেছি। সবই আমাদের রবের তরফ থেকে এসেছে। আর সত্য কথা এই যে, কোনো জিনিস থেকে প্রকৃত শিক্ষা কেবল জ্ঞান বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষই লাভ করে। (সূরা- আলে-ইমরান ৭)।
আমাদের সমাজে এমন দেখা যায় অনেক ব্যক্তির কুরআনের শিক্ষা নেই, বিভিন্ন অসৎ পন’ায় অর্থ উপার্জন করে, ফরজ, ওয়াজিব তেমন মেনে চলে না- এদের মাঝে অনেকে বড় দাড়ি রাখে, সাদা পাঞ্জাবি পরে, টুপি পরে। সমাজের হাজারো মানুষ তাদেরকে শ্রদ্ধা করে, বিশ্বাস করে। এর বিপরীতে কোনো ব্যক্তি যদি এমন থাকে প্যান্ট, শার্ট পরে হালাল উপার্জন করে ফরজ, ওযাজিব নিয়মিত মেনে চলে- তাদেরকে সমাজের বহুজনেই তেমন শ্রদ্ধা করে না, বিশ্বাস করে না। এমনকি যদি অনেক মুসলমান একত্র হয় নামাজের জন্য, তখন ওই প্যান্ট-শার্ট পরা লোকটিকে নামাজে ইমামতি করতেও দেয়া হয় না; যদি ইমামতি করতে দেয়া হয় সেটা নিয়ে বড় বিতর্কের সৃষ্টি হয়। কুরআন থেকে শিক্ষা অর্জন বেশির ভাগের না থাকায় সমাজ-রাষ্ট্রে এই সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। রাসূল সা: বলেছেন, হজরত আনাস রা: থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলে কারিম সা: বলেছেন, দ্বীনি ইলম শিক্ষা করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য ফরজ, অবশ্য কর্তব্য। আর অপাত্রে ইলম রাখা শূকরের কণ্ঠে জওহার মোতি ও স্বর্ণের হার ঝুলানোর মতো। (ইবনে মাজাহ)। উপরোল্লিখিত হাদিস থেকেও প্রমাণিত- আল্লাহর রাসূল সা: দ্বীনি শিক্ষার ব্যাপারে কঠোরভাবে নির্দেশ দিয়েছেন। সুতরাং আমাদের কুরআন এবং হাদিস থেকে প্রকৃত জ্ঞান অর্জন করে অন্ধকার থেকে বের হওয়া এখন সময়ের দাবি।