হযরত ফাতিমার পিতার নাম আসাদ ইবনে হাশেম ইবনে আবদে মানাফ। যেহেতু তিনি হাশেমী বংশের কন্যা, তাই বংশ সম্পর্কে আর বেশি আলোচনার প্রয়োজন নেই। আবূ তালেব ইবনে আব্দুল মোওালেবের সাথে তার বিয়ে হয়। তার ঔরসেরই হযরত আলীর (রাঃ) জন্ম হয়। আল্লামা ইবনে আবদুল বার এ সম্পর্কে লিখেন, তিনি হচ্ছেন হাশেমী বংশের প্রথম মহিলা, যার গর্ভে হাশেমী সন্তানের জন্ম হয়েছে। হযরত (সাঃ) আরববাসীদের নিকট ইসলামের দাওয়াত পেশ করলে সমস্ত কবীলার মধ্যে বনু হাশেম অগ্রবর্তী ছিল। এ কবীলায় প্রায় সকলেই ইসলাম গ্রহন করেন। হযরত ফাতিমাও তাদের মধ্যে ছিলেন। তিনি নিজেও ইসলাম কবুল করেন। তার কোন কোন সন্তানও ইসলাম গ্রহণ করে। আল্লাহ্ তা’আলা তাকে ইসলামের সাথে হিজরতেরও মর্যাদা দেন। তিনি যখন মদিনা শরীফ গমন করেন, তখন হযরত আলীর (রাঃ) সাথে হযরত ফাতিমার বিয়ে হয়। আহলে বায়তের জীবন ছিল দুনিয়ার জৌলুশ মুক্ত, একেবারে সাদা সিধে। তাই তারা নিজেরাই ঘরের সমস্ত কাজকর্ম করতেন। চাকর-নকর, দাস-দাসীর নাম-গন্ধও ছিল না। এ প্রসঙ্গে হযরত আলী (রাঃ) তার মাতাকে সম্বোধন করে বলেন ঃ
كفى فاطمة بنت رسول الله سقاية الماء والذهاب فى الحاجة وتكفيك خدمة الداخل و الطحن والعجن.
আমি পানি তুলবো আর বাইরের কাজ কর্ম করবো। আর ফাতিমা ইবনেতে রাসূলাল্লাহ চাক্কী পিষবে এবং আটা খামীর করার কাজে আপনাকে সাহায্য করবে।
তিনি ছিলেন অত্যন্ত নেক মেযাজ এবং শরীফ অভ্যাসের মহিলা। রাসূলে খোদা তার প্রশংসা করতেন। তার ইন্তিকালের পর হযরত (সাঃ) বলেন ঃ
لم يكن احد بعد ابى طالب ابربى منها.
আবূ তালেবের পর আমার প্রতি তার চেয়ে বড় মেহেরবান আর কেউ ছিল না।
হযরত (সাঃ) অধিকন্তু তার ঘরে বিশ্রাম নিতেন এবং তাকে দেখতে যেতেন। তালেব, আকীল, জাফর এবং আলী ছিলেন তার পুএ সন্তান এবং উম্মে হানী, হামানা ও রাবতা ছিলেন তার কন্যা সন্তান। কারো কারো ধারণা, হিজরতের পূবেই তার ইন্তিকাল হয়েছে। কিন্তু এ ধরণা অমূলক। হিজরতের পরেই তাঁর ইন্তিকাল হয়েছে। হযরত (সাঃ) আপন জামা দিয়ে তাকে কাফন পরান এবং তাকে দাফন করার পর তার সাথে কবরে শুয়ে পড়েন। লোকেরা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, আবূ তালেবের পর তার চেয়ে বেশি দয়া আমার প্রতি কেউ দেখায়নি। এ কারণে আমি তাকে আমার জামা পরিয়েছি, যাতে জান্নাতে তাকে বেহেশতী লেবাস পরান হয় আর তার সাথে কবরে শুয়েছি, যাতে তার কবরের কষ্ট লাঘব হয়।
আদ-দুররুল মানসূর গ্রন্থে বলা হয়েছে ঃ
وفاطمة هذه لها فضائل مشهورة وماثر مشكورة مذ كورة فى كتب التاريخ.
তিনি হচ্ছেন সেই ফাতিমা, যার বিশিষ্ট ফযীলত-মর্যাদার কথা ইতিহাস গ্রন্থে লিপিবদ্ধ রয়েছে।