উম্মে হারাম তার নাম নয়, কুনিয়াত। আসল নাম জানা যায় না। তিনি বনু খাযরাজের নেজার গোত্রের সন্তান ছিলেন। তার বংশধারা: উম্মে হারাম বিনতে মালহান ইবনে খালেদ ইবনে যায়েদ ইবনে হারাম ইবনে জুন্দুব ইবনে আমের ইবনে গানাম ইবনে আদী ইবনে নেজার। তার মাতা ছিলেন মুলকিয়া অর্থাৎ মালেক ইবনে আদী ইবনে যায়েদ ইবনে মানাত ইবনে আদী ইবনে আমর ইবনে মালেক ইবনে নেজার এর কন্যা। এ রিশতায় তিনি হযরত উম্মে সালমার বোন এবং হযরত আনাসের খালা হন। কেবল তাহযীব গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে যে, তার প্রথম স্বামী ছিলেন আরম ইবনে কায়েস আনছারী। অবশ্য অন্যান্য জীবন চরিত গ্রন্থ থেকে জানা যায় যে, হযরত ওবাদা ইবনে ছামেত ছিলেন তার স্বামী। তিনি ছিলেন বড় দরজার সাহাবী। ঐতিহাসিক ইবনে সা’আদের মতে তার প্রথম বিয়ে হয় ওবাদা ইবনে ছামেত এর সাথে। পরে আমর ইবনে কায়েস এর সাথে। কিন্তু এটা ঠিক নয়। কারণ, ওবাদা ইবনে ছামেত যে শেষ স্বামী ছিলেন, নির্ভরযোগ্য জীবন চরিত গ্রন্থ থেকে তা বুঝা যায়। হযরত রাসূলে কারীম (সা.) তার শহীদ হওয়ার সংবাদ দিয়েছিলেন। একদিন নবীজী তার ঘরে আসেন। খাবার পর তিনি আরাম করেন এবং তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়েন। একটু পরই জেগে উঠে হেসে বলেন, আমি স্বপ্নে দেখেছি যে, আমার উম্মাতের কিছু লোক যুদ্ধের উদ্দেশ্যে সমুদ্র পাড়ি দিয়েছে। উম্মে হারাম বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার জন্য দোয়া করুন, আমিও যেন তাদের অন্তর্ভুক্ত হতে পারি। নবীজী দোয়া করে আবার শুয়ে পড়েন। কিছুক্ষণ পর আবার জেগে উঠে পুনরায় সে স্বপ্নের কথা বললেন। উম্মে হারাম এবারও দোয়ার জন্য আবেদন জানান। রাসূলে কারীম (সা.) এরশাদ করলেন, তুমি তাদের অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এর কিছুদিন পরই হযরত ওবাদা ইবনে ছামেত এর সাথে তার বিয়ে হয়। ২৭ হিজরীতে হরত ওসমান (রাঃ) এর খেলাফত কালে শাম দেশের শাসনকর্তা আমীর মুআবিয়া সাইপ্রাস দ্বীপে অভিযান পরিচালনার অনুমতি লাভ করেন। এ অভিযানের জন্য তিনি একটা বাহিনীও তৈয়ার করেন। এ বাহিনীতে হযরত আবূ যর, হযরত আবূ দারদা এবং হযরত ওবাদা ইবনে ছামেতসহ অনেক সাহাবী ছিলেন। স্বামীর সাথে হযরত উম্মে হারামও রওয়ানা করেন। কিন্তু তিনি সওয়ারীতে আরোহণ করতে পারেন নি। ঘোড়া তাকে পৃষ্ঠ হতে ফেলে দেয়। ফলে তিনি নিচে পড়ে ভীষণ আঘাত পান। এ আঘাতে তিনি সেখানেই মারা যান। বাধ্য হয়ে তাকে সেখানেই দাফন করা হয়। অন্যান্য নারীদের মত তিনিও হাদীস বর্ণনার মার্যাদা লাভ করেছেন। হযরত আনাস, হযরত আমর ইবনে আসওযাদ, ওবাদা ইবনে ছামেত, হযরত আতা ইবনে ইয়াসার, ইয়া’লা ইবনে শাদাদ ইবনে আওস তার শ্রবণের উপর নির্ভর করেছেন এবং তার সিলসিলায় হাদীস বর্ণনা করেছেন। উসুদুল গাবাহ গ্রন্থের লেখক উল্লেখ করেন যে, হযরত (সা.) তার সম্মান করতেন তাকে দেখার জন্য যেতেন এবং তার গৃহে আরাম করতেন। তিনি তিন পুত্র রেখে যান। প্রথম স্বামীর পক্ষে কায়েস এবং আবদুল্লাহ্ আর দ্বিতীয় স্বামীর পক্ষে মুহাম্মাদ।