কন্যা সন্তান মহান আল্লাহ তা’য়ালার পক্ষ থেকে মাতা-পিতার জন্য একটি বিশেষ শ্রেষ্ট নেয়ামত। কন্যা সন্তানকে অশুভ মনে করা কাফিরদের বদস্বভাব। কন্যা সন্তানকে অপছন্দ করা খাটি মুমিনের পরিচায়ক নয়। কন্যা সন্তান অশুভ নয়, অকল্যানকর নয়। বরং কন্যা সন্তান জন্ম নেয়া খোশ কিসমতী ও সৌভাগ্যের নিদর্শন। হজরত আয়িশা (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ঐ স্ত্রী স্বামীর জন্য অধিক বরকতময়, যার দেন-মোহরের পরিমান কম হয় এবং যার প্রথম সন্তান হয় মেয়ে।” রাসুলুল্লাহ (সা.) আরো ইরশাদ করেন, ” যার গৃহে কন্যা সন্তান জন্ম গ্রহন করল, অতঃপর সে তাকে (কন্যাকে) কষ্টও দেয়নি, তার উপর অসন্তুষ্ট ও হয়নি এবং পুত্র সন্তানকে প্রাধান্য দেয়নি, তাহলে ঐ কন্যার কারনে আল্লাহ তা’য়ালা তাকে বেহেশতে প্রবেশ করাবেন।” (মুসনাদে আহমদ, ১:২২৩)
রাসুলুল্লাহ (সা.) আরো বলেছেন,” যে ব্যক্তির তিনটি কন্যা সন্তান হবে, এবং সে তাদেরকে এলেম-কালাম, আদব-কায়দা শিক্ষা দিবে, এবং যত্নের সাথে প্রতিপালন করবে ও তাদের উপর অনুগ্রহ করবে, সে ব্যক্তির উপর অবশ্যই জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যাবে। উল্লেখিত বর্ণনা দ্বারা প্রমানিত হয় যে, কন্যা সন্তান আল্লাহ তায়ালার এক বিশেষ নেয়ামত। সুতারাং কন্যা সন্তানকে বেশী করে ভালবাসুন। আদর-সোহাগ করুন আর মায়া-মমতা দিয়ে লালন-পালন করুন। সে তো আপনার কলিজার টুকরার টুকরো, দেহের এক বিশেষ অংশ। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর অসীম বানীর প্রতি লক্ষ্য রেখে কন্যা সন্তানকে পুত্রের চাইতে ও বেশী আদর যত্ন করুন। এখানে একটি বিষয় আলোচ্য হলো, কন্যা সন্তান আল্লাহ মহান প্রদত্ত নেয়ামত ঠিক কিন্তু পুত্র সন্তানও কিন্তু কোনো অংশে কম নয়। এই আলাচেনার উদ্দেশ্য হচ্ছে, কন্যা সন্তানের প্রতি বিরুপ মানসিকতা পরিহার করা। একমাত্র ছেলে সন্তানের কামনায় কন্যা সন্তানকে অবহেলার পাত্র না বনানো। আল্লাহ আমাদের সবাইকে পবিত্র কোরান ও হাদিসের বর্ণনা মেনে কন্যা সন্তানকে আল্লাহ মহানের পক্ষ থেকে প্রদত্ত নেয়ামত করার এবং কন্যা সন্তানের সাথে ব্যবহার করার, নায্য প্রাপ্ত প্রদান করার ব্যাপারে কন্যা সন্তানকে উপযুক্ত মর্যাদা প্রদান করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এবার কন্যা সন্তানের গুরুত্ব এবং তাত্পর্য সম্পর্কে হাদিস কী বলে সে সম্পর্কে আলোকপাত করা যাক। রসুল (সা.) বলেছেন— কোনো ব্যক্তির যদি তিনটি কন্যা সন্তান থাকে এবং লোকটি যদি কন্যাদেরকে আদর যত্ন করে লালন-পালনের সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহর দ্বীন শিক্ষা দেয় এবং সৎ পাত্রে বিয়েশাদির আয়োজন করে তবে লোকটি জান্নাতে আমি নবী মুহাম্মাদুর রসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে বসবাসের সুযোগ লাভ করবে। সর্বকালের সমাজ-সংসার এবং রাষ্ট্রকে হুঁশিয়ার করে দিয়ে নবী (সা.) বলেন, তোমরা কেউ কোনো দিন কন্যা সন্তানের পিতাকে গালি দেবে না কারণ আমি মুহাম্মাদুর রসুলুল্লাহও (সা.) যে কন্যাদের পিতা। তিনি কন্যা সন্তানের পিতাদের উদ্দেশ করে বলেন— দূর দেশে সফরে গেলে ফেরার সময় অবশ্যই কন্যাদের জন্য উপহার সামগ্রী নিয়ে আসবে। ঘর থেকে বের হওয়ার পূর্বে সবার শেষে কন্যাদের কাছ থেকে বিদায় নেবে এবং ঘরে ফিরে সবার আগে কন্যা সন্তানদের খোঁজ করবে ।