প্রথম অংশ এখানে
৫. সংসার নয় দায়িত্বই বড়
রাসুলুল্লাহ (সা.) এর ইন্তেকালের পর হযরত আবু বকর (রা:) তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন। খলীফাতুর রাসুল (রাসুলের খলীফা বা প্রতিনিধি) এ উপাদিটি শুধু তাঁকেই দেয়া হয়। পরবর্তী খলীফাগণ আমীরুল মু’মিনিন (মু‘মিনদের আমীর বা নেতা) উপাধিতে ভূষিত হন। হযরত আববু বকর (রা:)- গতকাল মাত্র খলীফা নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর উপর এখন ইসলামী রাষ্ট্রের বিশাল দায়িত্ব। নতুন দায়িত্ব পেলে কতো ঝামেলা পোহাতে হয়। কিন্তু আবু বকর সে দিকে পরোয়া নেই। তিনি চলেছেন বাজারে। পিঠে কাপরের বোঝা। প্রতিদিনই তিনি এই বোঝা নিয়ে বাজারে যান। কারণ তিনি একজন জাত ব্যবসায়ী। কাপরের ব্যবসা করে তিনি সুনাম অর্থকড়ি সব কুড়িয়েছেন।
আজও চলেছেন ব্যবসার কাজে। লোকেরা তাতে অবাক হচ্ছে। ব্যাপার কি? আবু বকর তো এখন ইসলামী রাষ্ট্রের খলীফা। তিনি কাপরের বোঝা নিয়ে বাজারে যাচ্ছেন! তিনি যদি এখন ব্যবসা করে ঘুরে বেড়ান তাহলে রাষ্ট্র চালাবে কে? লোকদের মনে আরো নানা প্রশ্ন। কিন্তু তাঁকে এই কথাটা কে বলবে? কাপড়ের বোঝা কাঁধে নিয়ে তিনি প্রায় বাজারের কাছে এসে গেছেন। এমন সময় সামনে এসে দাড়ালেন দু’ব্যক্তি। আবু বকর ভাবতে পারেননি যে তার সামনে কেউ এ ভাবে পথ আগলে দাঁড়াবে। তিনি থতমত খেলেন। দেখলেন সামনে দাঁড়িয়ে আছেন হযরত ওমর ও আবু ওবাইদা (রা:)।
ঃ ব্যাপার কি ওমর, আবু ওবাইদা? তোমরা যে এভাবে পথ আগলিয়ে দাঁড়িয়ে আছো?
ঃ আপনার কাধেঁ কি?
ঃ কাপড়।
ঃ কোথায় নিচ্ছেন?
ঃ কেন বাজারে। অবাক হলেন আবু বকর তাদের পশ্নে।
ঃ বাজারে এ সব বেঁচে আপনি ব্যবসা করবেন। আর খেলাফত চালাবে কে?
ঃ খেলাফতের তো কোন অসুবিধা হবার কথা নয়।
ঃ আপনি সারাদিন ব্যবসা করে ঘুরে বেড়াবেন। তাতেইতো আপনার সময় শেষ হয়ে যাবে। রাষ্ট্র চালাবেন কখন?
ঃ কিন্তু আমার সংসার চলবে কি করে? যদি ব্যবসা না করি?
ঃ বায়তুল মাল থেকে আপনার সংসার চলবে।
ঃ কিন্তু মালেতো আমার হক নাই।
ঃ তা আমরা দেখবো। খেলাফতের কাজ করতে করতে আপনার সময় শেষ হয়ে যাবে। আপনি ব্যবসা করবেন কখন?
আবু বকর ভাবলেন তাই তো। এতবড় দায়িত্ব তাঁর উপর। আর সে চলছে ব্যবসা করতে। তিনি এটা গভীরভাবে উপলব্ধি করলেন। তিনি ভাবলেন “সংসারের চেয়ে তাঁর খেলাফতের দায়িত্ব তাঁর কাছে অনেক অনেক বড়”। তিনিতো সংসারের জন্য এতবড় দায়িত্বের অবহেলা করতে পারেন না। তিনি ওমর ও আবু ওবাইদাকে বললেন-
ঃ চলো ফিরে যাই। ওমর ও আবু ওবাইদা আনন্দিত হলেন। এর পর সবাই বাড়ীর দিকে ফিরে গেলেন।
আলোচনা সাপেক্ষে অন্যান্য মুহাজিরকে যে ভাতা দেয়া হয় সে পরিমাণের একটি ভাতা হযরত খলীফা আববু বকর (রা:)- এর জন্য বরাদ্দ হলো। ভাতা নির্দিষ্ট হবার পর খলীফা এ কথাটি জন সাধারণকে জানানো দরকার মনে করলেন। তিনি মদীনায় সব লোককে ডেকে বললেন: তোমরা জান যে, ব্যবসা দ্বারা আমি জীবিকা নির্বাহ করতাম। এখন তোমাদের খলীফা হবার ফলে সারাটা দিনই আমাকে খিলফতের কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়, ব্যবসা দেখা-শুনা করতে পারিনা। সে জন্য বায়তুল মাল থেকে আমাকে ভাতা নির্র্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে।
হযরত আববু বকর (রা:)- বেঁচে থাকার প্রয়োজনে যে টুকু ভাতা গ্রহণ করতেন, জনসাধারণের কাছ থেকে এই ভাবে তা তিনি মঞ্জুর করিয়ে নিলেন।
মৃত্যুর সময় উপস্থিত হলে তিনি হযরত আয়েশাকে বললেন: আমার মৃত্যুর পর আমার প্রয়োজনে আনা বায়তুল মালের যাবতীয় জিনিস-পত্র আমার পরবর্তী খলফার নিকট পাঠিয়ে দিও। তাঁর মৃত্যুর পর কোন টাকা পয়সাই তাঁর কাছে পাওয়া যায়নি। মাত্র একটি দুগ্ধবতী উট, একটি পেয়ালা, একটি চাদর ও একটি বিছানাই ছিল তাঁর রেখে যাওয়া জাগতিক সম্পদ। এ জিনিসগুলো খলীফার নির্দেশ মুতাবিক পরবর্তী খলীফা হযরত ওমরের (রা:)-র নিকট পাঠিয়ে দেয়া হয়। এসব দেখে অর্ধ জাহানের খলীফা ওমর (রা:) বললেন: “আল্লাহ আবু বকরের উপর রহম করুন। তিনি তাঁর পরবর্তী খলীফাদের বড়ই মুস্কিলে ফেলে গেলেন”।
৬. তিনি নিশ্চয় জান্নাতে প্রবেশ করবেন
একদিন মহানবী (সা.) উপস্থিত সাহাবাদের সাথে আলাপ কালে এক পর্যায়ে জিজ্ঞস করলেন: তোমাদের মধ্যে এমন কে আছে যে আজ রোযা রেখেছে?
হযরত আবু বকর (রা.) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি রেখেছি।
নবী (সা.) আবার জিজ্ঞেস করলেন: এমন কে আছে যে, মৃতের সাথে গমন করে জানাজার নামাজ পড়েছে?
হযরত আবু বকর (রা.) বললেন: এইমাত্র আমি এ কাজ সমাধা করে এসেছি।
মহানবী (সা.) আবারও প্রশ্ন করলেন: আচ্ছা এমন ব্যক্তি এখানে কে আছে, যে কোন পীড়িতের সেবা করেছে?
হযরত আবু বকর (রা.) মৃদু কন্ঠে জবাব দিলেন: আজ আমি একজন পীড়িত ব্যক্তির সেবা করেছি।
মহনবী (সা.) আবারও জানতে চাইলেন: তোমাদের মাঝে এমন কেউ কি আছে, যে কোন অভাবীকে সাহায্য করেছে?
এবারও হযরত আবু বকর স্বলজ্জিতভাবে জবাব দিলেন: আজ আমি কোন অতিথিকে সামান্য অর্থ সাহায্য করার সুযোগ পেয়েছিলাম। অবশেষে বিশ্ব নবী (সা) বললেন, “একদিন যিনি এতগুলো সৎকাজ করেছেন তিনি নিশ্চয় জান্নাতে প্রবেশ করবেন”।
৭. মুরতাদ প্রশ্নে আবু বকরের দৃঢ়তা
ভন্ড মহিলা নবী দাবীদার সাজাহ- এর মিত্র ও সাহায্যকারী মালিক ইবনে নুয়াইরা মুসলিম সেনাধ্যক্ষ খালীদের হাতে যুদ্ধে পরাজিত হয়ে বন্ধী হয়। এই মালিক ইবনে নুয়াইরাই যাকাত দিতে অস্বীকার করেছিল। অনেকের মতে মাগরিব ও এশার নামাজ পড়া বন্ধ করে দিয়েছিল সে। সিদ্ধান্ত সাপেক্ষে হযরত খালিদ মালিককে সাহাবী হযরত যারার ইবনে আওয়ায়ের দায়িত্বে সোপর্দ করেছিল। পরে সে নিহত হয়েছিল। এ খবর মদীনায় পৌঁছলে হযরত ওমর (রা.) হযরত যিরার ও হযরত খালিদের বিরুদ্ধে মালিক হত্যার অভিযোগ আনলেন। হযরত ওমর (রা) পরিস্থিতিগত কারণে যাকাত অস্বীকারকারীদেরকেও নরম নীতি অবলম্বনসহ তাদের সাময়িকভাবে মুসলমান বলে মনে করার পক্ষপাতিত্ব ছিলেন। ওমর ফারুক (রা.) হযরত আবু বকরের কাছে অভিযোগ করে বলে ছিলেন, “খালিদ মালিককে হত্যা করে কিতাবুল্লাহর বিরুদ্ধাচারণ করেছেন”।
কিন্তু হযরত আবু বকর তাঁর সাথে এক মত হলেন না। মুরতাদের জন্য খলীফা হযরত আবু বকরের বিন্দুমাত্রও দরদ ছিলনা। মুরতাদের প্রতি হযরত ওমরের শৈথিল্য প্রস্তাবের উত্তরে খলীফা আবু বকর বলেছিলেন, “আমি নামাজ, যাকাত প্রভৃতি কোন ফরজ সম্বন্ধে সামান্যও শৈথিল্য প্রদর্শন করতে পারি না। আল্লাহর ফরয হিসেবে নামায যাকাতের মধ্যে কোন প্রভেদ নেই। আজ যাকাত সম্বন্ধে শৈথিল্য দেখালে কাল নামাজ রোজা সম্বন্ধেও কিছুটা ঢিল দিতে হবে। আল্লাহর শপথ করে বলছি, রাসূলুল্লাহ (সা.) কে যারা একটি মেষ শাবক যাকাত দিত, আমি সেই মেষ শাবকটি পর্যন্ত লোকের ভয়ের খাতিরে বাদ দিতে পারি না। আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের বিধান এর সকল অবাধ্য লোকদের অবনত করতে আমি একা হলেও তাদের বিরুদ্ধে লড়ে যাব”।
৮. পরবর্তী খলীফা নির্বাচন
হযরত আবু বকর যখন বুঝতে পারলেন, তাঁর দুনিয়ার হায়াত আর বেশি বাকী নেই, তখন তিনি পরবর্তী খলীফা নির্বাচনের কথা বিশেষভাবে ভাবতে লাগলেন। তিনি চেয়েছিলেন যে মুসলমানগণ আত্মকলহ থেকে বেঁচে থাকুক। এ জন্য তিনি বিশেষ চিন্তাশীল ব্যক্তিগণের পরামর্শ গ্রহণ করে নিজেই হযরত ওমর (রা.) এর নাম ঘোষণা করলেন। হযরত তালহা (রা.) বললেন, আপনি আল্লাহর দরবারে চলে যাচ্ছেন। ভেবে দেখুন যে, আল্লাহর দরবারে কি জবাব দিবেন? ওমরের মতো একজন কঠিন হৃদয়ের মানুষকে আপনি খলীফা নিযুক্ত করে যাচ্ছেন! হযরত আবু বকর (রা) জবাবে বললেন, “আমি আল্লাহকে বলবো, আমি তোমার বান্দাদের উপর ঐ ব্যক্তিকেই নিযুক্ত করে এসেছি, যিনি সর্বশ্রেষ্ট্র ছিলেন”। তিনি ভিষণ অসুস্থ্য অবস্থায় ঘরের বারান্দায় চলে এলেন। তার বিবি হযরত উম্মে রুম্মান তার দু’হাত ধরে রাখলেন। সামনে লোকজন সমবেত হলো। তিনি তাদের উদ্দেশ্যে বলতে লাগলেন, যাকে আমি খলীফা নির্বাচন করব তাকে কি তোমরা গ্রহণ করবে? আল্লাহর শপথ, আমি চিন্তা করতে মোটেও ত্রুটি করি নাই। তাছাড়া আমি আমার কোন আত্মীয়কেও নির্বাচন করি নাই। আমি ওমর ইবনুল খাত্তাবকে আমার স্থলাভিষিক্ত নির্বাচন করে যাচ্ছি। আমি যা করছি তোমরা মেনে নাও।
নির্বাচিত খলীফার উদ্দেশ্যে অন্তিম উপদেশ ও দোয়া: তিনি হযরত ওমরকে নির্জনে ডেকে নিয়ে নি¤েœর উপদেশ প্রদান করলেন, হে আল্লাহ! আমি এ নির্বাচন এ জন্যে করেছি যাতে উম্মতের মঙ্গল হয়। আমার ভয় ছিল শেষ পর্যন্ত তারা ঝগড়া ও আত্মকলহে লিপ্ত হয়ে না যায়। “আমার চিন্তায় আমি এমন এক ব্যক্তিকে আমীর নির্বাচন করেছি, যিনি সবচেয়ে দৃঢ়, ব্যক্তিত্বসম্পন্ন এবং মুসলমানদের সবচেয়ে বেশি হিতাকাঙ্খী”। হে আল্লাহ! আমি তোমার নির্দেশে দুনিয়া ত্যাগ করছি। এখন তোমার বান্দারা তোমার হাতেই সমর্পিত হচ্ছে। এরা তোমারই বান্দা। হে আল্লাহ! মুসলমানদের জন্যে সৎ শাসনকর্তা দাও। ওমরকে খলীফায়ে রাশেদীনের অন্তর্ভুক্ত করো এবং তাঁর প্রজাদিগকে তাঁর যোগ্যতা দ্বারা উপকৃত করো।
হযরত ওমরকে খলীফা নির্বাচন- হযরত আবু বকরের মুসলিম জাতির জন্য এক বিরাট অবদান, কিয়ামত পর্যন্ত যার কোন নজীর মিলবেনা।
দুনিয়ার হিসাবঃ হযরত আবু বকর (রা.) এর মৃত্যুর পূর্বে বললেন: বায়তুলমাল হতে এ পর্যন্ত আমি যে ভাতা গ্রহণ করেছি তার হিসাব কর। হিসাব করে জানা গেল যে, গোটা খেলাফত আমলে তিনি মোট ৬০০০ দিরহাম গ্রহণ করেছেন। তিনি নির্দেশ দিলেন, আমার জমী বিক্রি করে এখনই এ অর্থ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা করে দাও। টাকা পরিশোধ করার পর বললেন: খেলাফতের দায়িত্ব গ্রহণ করার পর আমার সম্পত্তি কোন প্রকার বৃদ্ধি হয়েছে কি না? অনুসন্ধান করে জানা গেল *একজন কৃতদাস যে শিশুদের দেখাশুনা এবং মুসলমানদের তরবারী পরিস্কার করত * পানি আনার জন্য একটি উষ্ট্রী এবং * ১ টাকা ৪ আনা মূল্যের একটি চাদর বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়েছে। তিনি হিসাব শুনে নির্দেশ দিলেন, আমার মৃত্যুর পর এগুলো পরবর্তী খলীফার নিকট পৌঁছে দিবে। ইন্তেকালের পর যখন এ সব নতুন খলীফার নিকট পৌঁছানো হলো তখন হযরত ওমর (রা) বলতে লাগলেন, “হে আমীরুল মু’মিনিন! আপনি আপনার স্থলাভিষিক্তদের দায়িত্ব খুবই কঠিন করে গেলেন”।
৯. জীবনের শেষ মুহূর্তে আবু বকর (রা.)
ইরাক যুদ্ধরত মুসলিম বাহিনীর সরকারী সেনাপতি ‘মুসান্না’ এসে মদীনায় পৌঁছলেন। এ সময় খলীফা মৃত্যু যন্ত্রণায় চরম অবস্থা অতিক্রম করছেন। মুসান্নার আগমেনর সংবাদ শুনে তাঁকে কাছে ডাকলেন। যুদ্ধের বিস্তারিত খবর বর্ণনা করে বললেন, পারস্য সম্রাট কিসরা ইরাকে নতুন সৈন্য প্রেরণ করেছে। সব খবর শুনে হযরত ওমরকে ডেকে বললেন, হে ওমর! আমি যা বলি তা মনোযোগ দিয়ে শোন এবং সেভাবে কাজ কর। আমার মনে হয় অদ্য আমার জীবন শেষ হয়ে যাবে। যদি দিনের বেলায় আমার মৃত্যু হয় তবে সন্ধ্যার পূর্বেই মুসান্নার সহিত সৈন্য প্রেরণ করবে। অতঃপর বললেন, ওমর! যে কোন বিপদ মুহূর্তে আল্লাহর নির্দেশ অথবা ইসলামের কোন কাজ আগামী দিনের জন্যে ফেলে রেখোনা। আল্লাহর রাসূলের মৃত্যুর চেয়ে বড় বিপদ আমাদের জন্যে আর কি হতে পারত? কিন্তু তুমি দেখেছ ঐ দিন আমাদের যা করণীয় ছিল তা আমরা করেছি। আল্লাহর শপথ! ঐ দিন যদি আল্লাহর নির্দেশ পালনে অবহেলা করতাম, তা হলে আমাদের উপর ধ্বংসের শাস্তি নেমে আসত এবং মদীনার ঘরে ঘরে কলহ নেমে আসত। আল্লাহ যদি ইরাকে মুসলিম বাহীনিকে কৃতকার্য করেন তবে খালেদের বাহনীকে সিরিয়ার সীমান্তে পাঠিয়ে দিও। কেননা, সে বিচক্ষণ এবং ইরাকের অবস্থা সম্পর্কে বিশেষভাবে অবহিত।
অতঃপর খলীফা জিজ্ঞেস করলেন, আল্লাহর রাসূল কোন দিন ইন্তেকাল করেছেন? বলা হলো সোমবার। তিনি বললেন, আমার আকাঙ্খা আমি যেন আজই বিদায় গ্রহণ করি। যদি আল্লাহ আমার এ আশা পূর্ণ করেন তবে আমাকে রাসূলুল্লাহর পবিত্র কবরের পাশে সমাহিত করো।
ধিরে ধিরে শেষ নিঃশ্বাসের সময় এগিয়ে আসছে। হযরত আয়েশা (রা) কে জিজ্ঞেস করলেন, আল্লাহর রাসূল (সা.) কে কয়টি কাপড় দ্বারা দাফন দেয়া হয়েছিল? তিনি বললেন, তিনটি কাপড় দ্বারা। আবু বকর বললেন, আমাকেও তিনটি কাপড় দ্বারা দাফন দিও। আমার শরীরে যে দু’টু চাদর আছে এ গুলো ধুয়ে দাও। আর একটি কাপড় বাহির থেকে ব্যবস্থা কর। আয়েশা (রা.) বললেন, আমরা কি এতই গরীব যে নতুন কাপড় দিতে সমর্থ হবোনা। হযরত আবু বকর (রা.) বললেন, কন্যা! মৃতদের চেয়ে জীবিতদের জন্যে নতুন কাপড় বেশি প্রয়োজন, আমার জন্যে এ পুরাতন কাপড়ই যথেষ্ট হবে।
পিতার মৃত্যুর মুহূর্তে হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) বাবার শিয়রে বসে অশ্রু বিসর্জন করছিলেন। দুঃখ- বেদনায় ভরা এক একটি কষ্ট থেকে ভেসে আসছিল এবং আবৃত্তি করছিলেন: “তোমার বয়সের শপথ! মৃত্যুর উর্ধŸশ্বাস যখন এসে উপস্থিত হয়, তখন ধন সম্পদ কোন কাজে আসেনা”। হযরত আবু বকর বললেন, তুমি বল: মৃত্যু যন্ত্রণার শেষ সময় এসে উপস্থিত, উহা ঐ সময় যা হতে তোমরা পালাতে চেষ্টা করছ। ( সূরা কাফ: ১৯)
হযরত আবু বকর (রা.) এর পবিত্র জীবনের সমাপ্তি ঘটেছিল এ কথা বলে: توفني مسلما والحقني بالصالحين “হে আমার রব! আমাকে মুসলমান হিসেবে মৃত্যু দাও এবং তোমার সৎ বান্দাদের সাথে মিলিত করো”।
হিজরী ১৩ সনের ২৩ জুমাদাল আখের সোমবার মাগরিব ও এশার মধ্যবর্তী সময় তাঁর পবিত্র আত্মা বিদায় গ্রহণ করে। তখন তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর। তাঁর খেলাফত কাল ছিল ২ বছর ৩ মাস ১১ দিন।
ইবনে সা’দ হযরত সাইদ ইবনুল মুসাইয়্যিব (রা.) বর্ণনা করেন, আবু বকর (রা.) এর ইন্তিকালের সময় মাক্কা শরীফ প্রকম্পিত হয়েছিল। তখন হযরত আবু বকরের পিতা-আবু কুহাফা জিজ্ঞিাসা করলেন এ প্রকম্পন কিসের? তাঁকে বলা হলো যে, আপনার ছেলে ইন্তেকাল করেছেন। (তারিখে খোলাফা)