Main Menu

আল্লাহর পরিচয়

রেশম বা তুঁত পোকা

রেশম বা তুঁত পোকা

রেশম বা তুঁত পোকা

তাহলে বল, তোমাদের প্রভুর কোনসে নেয়ামত তোমরা অস্বীকারকরবে? (সুরা আর রাহমান) আল্লাহ তাআলার অগণিত নেয়ামতের মধ্যে রেশম বা তুঁত পোকা একউত্তম নেয়ামত। রেশম পোকা, তার নিজেরই দেহ নিঃসৃত আঠা দ্বারা কত মজবুত, মোলায়েম মসৃণও সুন্দর সোনালি রঙের সুতা তৈরি করে, যা চিন্তা করলে হয়রান হতে হয়। অথচ মানুষ ঐসুতা লাভ করার জন্য কত নির্দয়ভাবে সেই পোকা হত্যা করে। সেই সুতা দিয়ে মূল্যবান কাপড়তৈরি করে ব্যবসা করে এবং অর্থ রোজগার করে। নিষ্পাপ এই ক্ষুদ্র কীটটি মানুষের জন্যমূল্যবান সুতা সরবরাহ করা ছাড়া জ্ঞান ও কৌশলগত কত শিক্ষণীয় বিষয় তুলে ধরে, সচরাচরকেউ হিসাব করে না। সুতা বানাতে গিয়ে তাকে কোন্‌ কোন্‌ পর্যায় অতিক্রম করতে হয়, আরসেই বুদ্ধি হিকমতের পিছনে কোন সে মহান কুশলীর অদৃশ্য হাত কাজ করে, তা অপরিণামদর্শীলঘুচেতা ও ভাসা ভাসা জ্ঞানসম্পন্ন মানুষ হিসাব করে না। যদি ঐ কীটের সূক্ষ্ম জ্ঞান ওবুদ্ধির কথা মানুষ চিন্তা করত, তাহলে সে তার মনযিলে মকসুদ, অর্থাৎ আখেরাতেরজিন্দিগির রহস্য বুঝতে পারতো, অনুধাবন করতে পারতো আল্লাহর পক্ষ থেকে কোরআন হাদিসেরমাধ্যমে প্রদত্ত জীবন পদ্ধতির তাৎপর্য ও উপকারিতা। সর্বোপরি জানতে পারতো সবকিছুরপিছনে দয়াময় পরওয়ারদেগারের জ্ঞান, ইচ্ছা ও হিকমত প্রচ্ছন্ন থাকার কথা এবং এর ফলেবহুলাংশে বৃদ্ধি পেত তার ঈমান ও সত্যপথে টিকে থাকার অবিচলতা। এবার আমরা সূক্ষ্মদৃষ্টি দিয়ে তাকিয়ে দেখি ঐ ক্ষুদ্র কীটের মধ্যে আল্লাহ প্রদত্ত ইলহামী জ্ঞানেরদিকে।

মহান রব্বুল ইজ্জতের অদৃশ্য ইশারাতে ঐ পোকা খায় আঠাযুক্ত পত্রপল্লব, যেমন কুলবা বরই পাতা, তুঁত-পাতা ইত্যাদি। এসব আঠাযুক্ত পাতা তার পেটের মধ্যে প্রবেশ করেসেখানে অবস্থিত আরও কিছু উপাদানের সংমিশ্রণে এই মূল্যবান সুতা তৈরি হয় এবং তাকেজীবন সঞ্জীবনী নেয়ামতের অধিকারী বানায়। এইভাবে প্রকাশ পায় তার মাধ্যমে আল্লাহ পাকেরকরুণারাশির ঝরনাধারা। রেশম-কীট জন্ম-লগ্নে ছোট একটি পিঁপড়ার মত ক্ষুদ্র থাকে এবংফেব্রুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহে, বসন্ত সমাগমের সাথে সাথে দিবালোকে বেরিয়ে আসে। এসময়ে গাছে গাছে দেখা দেয় পত্রপল্লবের কুঁড়ি ও কচি-কচি মনোরম পাতা। রেশম কীটের এইবাচ্চাগুলি ঐ তুলতুলে পাতাগুলি খেতে খেতে দ্রুত গতিতে বাড়তে থাকে এবং শীঘ্রই পূর্ণপোকায় পরিণত হয়। তারপর রাব্বুল আলামিনের অদৃশ্য ইশারায় নিরাপদ বাসস্থান লাভের আশায়ঘর তৈরির দিকে তারা পরিপূর্ণ মনোযোগ দেয়। সে ঘর এমনই সুপরিকল্পিত ও সুগঠিত এবং এতসুন্দর যে, দেখলে মনে হয়-এ ঘরের পূর্ণ ছবি তার নিজের মধ্যে খোদিত ছিল এবং সেটাই এখনবাস্তবে আত্মপ্রকাশ করেছে। এভাবে ঘরগুলি নজরে পড়তে থাকে। এসব ঘরের মধ্যে তারা আরামেশুয়ে পড়ে এবং মুখ নিঃসৃত আঠা দ্বারা প্রস্তুত সূক্ষ্ম সুতার বেষ্টনী দিয়ে ঘরেরআচ্ছাদন বাড়াতে থাকে। ঘরের একটি অংশ হাওয়া বা অক্সিজেন প্রবেশের জন্য খোলা রাখে।কবুতরের ডিমের মত ঘরের প্রস্তুতিকাজ সম্পন্ন হয়ে গেলে ক্লান্ত-শ্রান্ত কীটগুলিপরিপূর্ণ বিশ্রামের জন্য নিষ্ক্রিয় হয়ে শুয়ে পড়ে। এরপর শীত মৌসুমের আগমনে কীটগুলিনিজ নিজ ঘরের মধ্যেই অদৃশ্য জগতের উদ্দেশ্যে উধাও হয়ে যায়।

কী মজার ব্যাপার ! ফেব্রুয়ারি মাসের একুশ তারিখ পড়ার সাথেসাথে, হঠাৎ করে দেখা যায়, পোকাগুলি নিজ নিজ ঘর থেকে বেরিয়ে আসছে এবং তাদেরবাচ্চাদেরকে ডিম থেকে বের করে বাস্তব কর্মক্ষেত্রে ছেড়ে দিচ্ছে। এখন একটু চিন্তাকরে দেখুন, শীত আসছে-কে পূর্বাহ্নে তাদেরকে একথা জানিয়ে দেয় যে জন্য তারা শীতেরপ্রকোপ থেকে রক্ষা পেতে তড়িঘড়ি ঘর বানাতে শুরু করে। এবং এত চমৎকার ও মজবুত কেল্লারমত ঘর বানাতে তাদেরকে কে শেখায় ! কে তাদের কে তিনটি মাস ধরে অভুক্ত অবস্থায় বাইরেরআলো বাতাস থেকে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় বাঁচিয়ে রাখে ! কে দেয় তাদেরকে এ জ্ঞান বুদ্ধি ওহিকমত ! আবার ফেব্রুয়ারি মাস আসার সাথে সাথে কে তাদেরকে ঐ গভীর নিদ্রা থেকে জাগিয়েকর্মতৎপর করে তোলে ! আসুন, ঊর্ধ্বলোকে সফরের সাথি ভাইয়েরা, এই রেশম কীটদের প্রদত্তগায়েবি জ্ঞান সম্পর্কে একবার চিন্তা করুন এবং ভাবুন, কে নিয়ন্ত্রণ করছে আপনাকে, আমাকে, সবাইকে এবং দুনিয়ার সকল সৃষ্টিসমূহকে।

Related Post