এই পৃথিবীর সব মানুষ’ই মানুষের জন্যে। একে অন্যের কল্যাণে এগিয়ে আসবেন এটাই স্বাভাবিক। যখনই মানুষের মধ্যে কথাবার্তা, চলাফেরা, কাজকর্ম, লেনদেন- এসব বিষয়ে কোন মানুষ তার ভালো-মন্দ কাজকর্মে গড়মিল দেখা দেয় তখনি মানুষ বলে এই লোকের চরিত্র ভাল, সেই ব্যক্তির চরিত্র খারাপ। আসলে চরিত্র কি? বিষয়টি ভালোভাবে বুঝা দরকার। চরিত্র বাংলা শব্দ আরবীতে এর প্রতি শব্দ হলো ‘আখলাক’। এর অর্থ চরিত্র, স্বভাব, আচার, ব্যবহার।
আখলাক প্রধানত দুই প্রকার। আখলাকে হামীদা ও আখলাকে যামীমা। আখলাকে হামীদা মানে উত্তম, প্রশংসনীয়, সৎস্বভাব, সৎচরিত্র, সৎব্যবহার ও সৎগুণাবলী। যেমনঃ তাওহীদ, রিসালাত ও আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস রাখা। নামায রোজা, যাকাত যথাসময়ে আদায় করা, মানুষের সাথে ভালো ব্যবহার, ভালো কথা বলা, ভালো কাজে সহযোগিতা করা, পথহারা শিশুকে পথ দেখানো, দুঃখী মানুষ ও রোগির সেবা করা। কাজে কর্মে লেনদেনে সকলের সাথে সুন্দর ব্যবহার করা। বড়দের সম্মান, ছোটদের আদর ও সাক্ষাতে সালাম দেয়া ইত্যাদি। ছেলে মেয়েদের চরিত্র ভালো হলে মাতা-পিতারও সুনাম হয়। বিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রীদের সুন্দর নম্র ও ভদ্র ব্যবহার হলে শিক্ষকগণও তাদেরকে আদর করেন। চরিত্র ভালো হলে দুনিয়ার জীবনও সুখের হয়, আখিরাতেও শান্তি পাওয়া যায়।
অন্যদিকে আখলাকে যামীমা বলতে নিন্দনীয় খারাপ স্বভাব, দুঃচ্চরিত্র, ঝগড়াটে, মাদকাসক্ত, নিষিদ্ধ অভ্যাস ইত্যাদি। যেমনঃ যারা তাওহীদ, রিসালাত ও আখিরাতের উপর বিশ্বাস করেনা। নামায, রোজা, যাকাত সময় মত আদায় করে না। অসহায়, দুর্বল মানুষের জায়গা জমি নগদ এবং বাকী টাকা বিভিন্ন কৌশল খাটিয়ে, মিথ্যা প্রতারণা করে কোটিপতি ও ভূমিদস্যু উপাধি পাওয়া। বিড়ি, সিগারেট, মদ, গাঁজা, হেরোইনসহ মানব দেহের ক্ষতিকারক বিভিন্ন জিনিস তৈরি করে শিল্পপতি ও ডাইরেক্টর হওয়া। নিরীহ, দরিদ্র, সৎমানুষের উপর সবল অসৎ মানুষের পৈচাশিক জুলুম, নির্যাতন, গুপ্ত হত্যা ও নারী ধর্ষণ করে সমাজ সেবী মুরুব্বী হওয়া ইত্যাদি। এসব হীন-নিন্দনীয় কর্ম-কান্ড হতে ফিরিয়ে রাখতে পারে একমাত্র পরকালের শাস্তি তথা আল্লাহভীতি।
নি¤েœর ঘটনাটির সত্যতা বিশ্লেষণ না করে, তা থেকে উপদেশ গ্রহণ করতে পারলেই আমরা গুনাহের কাজ থেকে ফিরে থাকবো পারবো ইনশা-আল্লাহ।
ভারত-পাকিস্তান আলাদা দেশ হওয়ার আগেই হিন্দু-মুসলিমদের মাঝে ভয়াবহ দাঙ্গা শুরু হয়েছিল। সেসময় এক ধনাঢ্য ব্যক্তির অতীব রূপসী কন্যা তার এক আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে যাচ্ছিল। অর্ধেক রাস্তা যাবার পরেই সে দেখল ভয়াবহ এক দাঙ্গা শুরু হয়ে গেছে। মেয়েটি পাশেই একটি মসজিদ দেখতে পেল এবং দ্রুত মসজিদে প্রবেশ করে আশ্রয় নিল। দাঙ্গা গভীর রাত পর্যন্ত চলছিল এবং মেয়েটি বুঝতে পারছিল না যে সে কি করবে। মসজিদের তত্ত্বাবধায়ক ছিল একজন তরুণ যুবক, সে রাতে যখন মসজিদ বন্ধ করতে এল তখন এই রূপসী মেয়েটিকে দেখতে পেল। সে ছিল খুবই মর্যাদা সম্পন্ন যুবক এবং তার মধ্যে আল্লাহর ভয় ছিল প্রবল, আর এ কারণে সে ভদ্রভাবে মেয়েটিকে মসজিদ ছেড়ে চলে যেতে বলল। যুবকটি বলল কেউ যদি তাকে এখানে দেখে তবে তাদের দুজনের জন্যই তা কলঙ্কের এবং সমাজচ্যুতির কারণ হবে। মেয়েটি তার কাছে অনেক কাকুতি মিনতি করে তাকে বলল যে, বাইরে ভীষণ দাঙ্গা চলছে, তার জন্য বাইরে বের হওয়া ভয়ঙ্কর বিপদের কারণ হতে পারে। সব শুনে যুবকটি মেয়েটিকে মসজিদে অবস্থান করতে রাজি হয় এবং নিজে মসজিদের অপর প্রান্তে পড়তে বসে যায়। মেয়েটি সারাদিনের অনাকাঙ্খিত ঘটনাগুলোর কারণে ঘুমাতে পারছিলনা তাই মসজিদের অপর প্রান্তে মোম জ্বালিয়ে পাঠরত ছেলেটিকে সে দেখছিল। একটা ব্যাপারে খুবই অবাক হল। কিছুক্ষণ পর-পর ছেলেটি মোমের উপরে হাত রাখছিল এবং আগুনের আঁচ অসহ্য না হওয়া পর্যন্ত সরাচ্ছিল না। তারপর আবার পড়তে বসছিল। এভাবেই ভোর পর্যন্ত চলল। এরপর ছেলেটি আযান দিল এবং মেয়েটিকে বলল যে, যেহেতু সবকিছু শান্ত হয়ে গেছে সেহেতু জামাত শুরু হবার আগেই যেন সে চলে যায়। মেয়েটি রাজী হলেও শর্ত দিল যে, সারারাত ধরে একটু পরপর ছেলেটি কেন বার বার মোমের উপর হাত দিচ্ছিল-এর কারণ তাকে বলতে হবে।
ছেলেটি বলল এটা তার একান্ত ব্যক্তিগত ব্যপার, কিন্তু মেয়েটি উত্তর না জেনে যেতে রাজী হল না। ছেলেটি বলল “আমি একজন যুবক যার প্রবৃত্তির তাড়না তীব্র। দেখুন! তরুণ ও যুবকদের প্রবৃত্তির তাড়না তীব্র থাকে। আমরা একা ছিলাম এবং আমার আকাঙ্খা বেড়ে যাচ্ছিল এবং যদিও আমি পড়াশোনা করছিলাম তবুও শয়তান থেমে থেমে আমার মনে লোভ সৃষ্টি করছিল। এ কারণে যতবার আমার মনে এমন কিছু সৃষ্টি হচ্ছিল ততবার আমি আগুনের উপর হাত দিচ্ছিলাম এবং আমার হাত পুড়ে যাচ্ছিল। আমি নিজেকে বলছিলাম, জাহান্নামের আগুনের কাছে এই আগুনের তাপ তুচ্ছ। মেয়েটি মসজিদ থেকে বেরিয়ে বাড়িতে গেল এবং বাবা-মাকে সব ঘটনা বলে তাদের দুশ্চিন্তা দূর করল। সে তার মাকে বলল যে, সে ঐ মসজিদের তত্ত্বাবধায়ককে বিয়ে করতে চায়। সে ওই রাতের ঘটনা তার বাবা মাকে খুলে বলল এবং সেই সাথে এও বলল যে, “একমাত্র এ রকম আল্লাহভীরু লোকই তার স্ত্রীর কাছে সৎ থাকতে পারে। এমন মানুষ যার অন্তরে আল্লাহর ভয় আছে সেই পারে স্ত্রীর হক পরিপূর্ণরূপে আদায় করতে। আর এভাবেই একজন দরিদ্র মসজিদ রক্ষক একজন সম্ভ্রান্ত পরিবারের রুপসী কন্যাকে অর্জন করল। সে এই মর্যাদা তার চেহারার জন্য পায়নি বরং পেয়েছিল তার উত্তম চরিত্রের জন্য।”
তাই আসুন আমরাও জাহান্নামের আগুনের কথা স্মরণ করে দুনিয়ার সাময়িক অবৈধ সুখ লাভ করা থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করি এবং চিরস্থায়ী জান্নাতী লাভ করার চেষ্টা করি। হে আল্লাহ! আমাদের সেই তাওফীক দান করুন। আমীন॥