আল্লাহর শাস্থি বড় শক্ত

imagesCAISOZ93আল্লাহ মহান করুণাময়, বান্দাহর প্রতি অত্যধিক দয়ালু ও গভীর শুভাকাক্সী। আল্লাহর ৯৯টি সিফাতি নামের বেশির ভাগই করুণাময় দয়ার স্মারক। তাই বলে এই বিশাল করুণার সুযোগ গ্রহণ করে বেপরোয়া ভাব প্রকাশ করার কোনো অবকাশ নেই। যারা আল্লাহর মহান করুণাকে পুঁজি করে বেপরোয়া জীবন যাপন করে, আল্লাহর দ্বীন তথা জীবনব্যবস্থা ইসলামের সাথে শত্রুতা পোষণ করে, মসজিদ-মাদরাসা, ইসলামী প্রতিষ্ঠান, আলেম-ওলামা, ইসলামী নেতৃত্ব ও ব্যক্তিত্বকে হেয়প্রতিপন্ন বা অসম্মানিত করে, তাদের সামনে আল্লাহ তায়ালার নিম্নোক্ত বাণীটি পেশ করা হলো। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তারপর যারা নিকৃষ্টতম চক্রান্ত করছে, তারা কি এ ব্যাপারে নির্ভয় হয়ে গেছে যে, আল্লাহ তাদেরকে ভূগর্ভে প্রোথিত করে দেবেন না অথবা এমন দিক থেকে তাদের ওপর আজাব আসবে না, যেদিক থেকে তার আসার ধারণা-কল্পনাও তারা করেনি? অথবা আচমকা চলাফেরার মধ্যে তাদেরকে পাকড়াও করবেন না? কিংবা এমন অবস্থায় তাদেরকে পাকড়াও করবেন না, যখন তারা নিজেরাই আগামী বিপদের জন্য উৎকণ্ঠায় দিন কাটাবে এবং তার হাত থেকে বাঁচার চিন্তায় সতর্ক হবে? তিনি যাই কিছু করতে চান, তারা তাকে নিষ্ক্রিয় করার মতা রাখে না। আসল ব্যাপার হচ্ছে, তোমাদের রব বড়ই কোমল হৃদয় ও করুণাময়। আর তারা কি আল্লাহর সৃষ্ট কোনো জিনিসই দেখে না, কিভাবে ছায়া ডাইনে-বাঁয়ে ঢলে পড়ে আল্লাহকে সিজদা করছে? সবাই এভাবে দীনতার প্রকাশ করে চলছে। পৃথিবী ও আকাশে যত সৃষ্টি আছে প্রাণসত্তা সম্পন্ন এবং যত ফেরেশতা আছে, তাদের সবাই রয়েছে আল্লাহর সামনে সিজদাবনত। তারা কখনো অবাধ্যতা প্রকাশ করে না। ভয় করে নিজেদের রবকে, যিনি তাদের ওপরে আছেন এবং যা কিছু হুকুম দেয়া হয় সেই অনুযায়ী কাজ করে।’ (আন নাহল ৪৫-৫০)।
ইসলামের সাথে শত্রুতা পোষণ করার হীনতর কাজটি কাফের ও মুশরিকদের জন্য স্বাভাবিক হতে পারে, কিন্তু মুসলিম নামধারী কোনো ব্যক্তি থেকে এ ধরনের আচরণ অস্বাভাবিক ও আশ্চর্যজনকই বটে। কারণ তারা এক দিকে নামাজ, রোজা ও হজ করছে, অন্য দিকে ইসলাম, ইসলামী প্রতিষ্ঠান ও ইসলামের মৌলিক হুকুমগুলোর সাথে বেপরোয়া আচরণ করে চলেছে। তারা এতটাই বেপরোয়া হয়ে পড়েছে যে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূলের নামটুকু পর্যন্ত মুছে ফেলার দুঃসাহস দেখাচ্ছে। দুনিয়ার জীবনের বিভিন্ন শক্তি বিশেষত রাষ্ট্রীয় শক্তিকে করায়ত্ত করে দুর্দান্ত প্রতাপ নিয়ে তারা ইসলামের স্পর্শকাতর বিষয়ের ওপর হামলা করে যাচ্ছে। আল্লাহর শাস্তির ব্যাপারে এতটাই নির্ভীক হয়ে পড়েছে যে, তৎকালীন মক্কার কাফেরদের মতোই সরাসরি বলছে, ‘কই তোমাদের সেই আল্লাহ? পারলে তোমাদের রা করতে আসুক।’ এসব অপরিণামদর্শী গোঁয়ারদের সামনে আল কুরআনের নিম্নোক্ত বাণীটি পেশ করা হলো। মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘এমন একসময় আসা বিচিত্র নয়, যখন আজ যারা অস্বীকার করছে, তারা অনুশোচনা করে বলবে, হায়! যদি আমরা আনুগত্যের শির নত করে দিতাম! ছেড়ে দাও এদেরকে, খানাপিনা করুক, আমোদ ফুর্তি করুক এবং মিথ্যা প্রত্যাশা এদেরকে ভুলিয়ে রাখুক। শিগগির এরা জানতে পারবে। ইতঃপূর্বে আমি যে জনবসতিই ধ্বংস করেছি, তার জন্য একটি বিশেষ কর্ম-অবকাশ লেখা হয়ে গিয়েছিল। কোনো জাতি তার নিজের নির্ধারিত সময়ের আগে ধ্বংস হতে পারে না, তেমনি সময় এসে যাওয়ার পরে অব্যাহতিও পেতে পারে না।’ (সূরা হিজর : ২-৫)।

অপরাধ করার সাথে সাথে আল্লাহ কাউকে গ্রেফতার করেন না। আর এ জন্য নির্বোধরা ধারণা করে নিয়েছে যে, ইসলাম, ইসলামী হুকুম-আহকাম ও ইসলামী ব্যক্তিত্বের সাথে অসদাচরণ করা হলেও কিছু হয় না। অথচ আল্লাহর নিয়ম হচ্ছে, প্রত্যেক জাতিকে শোনার, বোঝার ও নিজেকে শুধরে নেয়ার জন্য কী পরিমাণ অবকাশ দেয়া হবে এবং তার যাবতীয় দষ্কৃৃতি ও অনাচার সত্ত্বেও পূর্ণ ধৈর্যসহকারে তাকে নিজের ইচ্ছামতো কাজ করার কতটুকু সুযোগ দেয়া হবে, তা আল্লাহ আগেই স্থির করে নেন। যতণ এ অবকাশ থাকে এবং আল্লাহর নির্ধারিত শেষ সীমা না আসে, ততণ পর্যন্ত আল্লাহ ঢিল দিতে থাকেন। এই নির্ধারিত সময়সীমা কিয়ামত পর্যন্ত হতে পারে। আবার এমনটিও হতে পারে যে, তাদের কর্মকাণ্ড যদি বিকৃতির চরম পর্যায় ধারণ করে, তা হলে তার কর্মের অবকাশ কমিয়ে দেয়া হয় এবং তাকে ধ্বংস করে ফেলা হয়। যার নজির আমাদের সামনে অনেক রয়েছে।

ঢিল দেয়া বা ধ্বংস করে দেয়ার অর্থ এই নয় যে, এখানেই সব শেষ। বরং আখেরাতে আবার তাদেরকে কঠিন শাস্তির সম্মুখীন করা হবে। আল্লাহ বলেন, ‘যারা নিজেদের রবের দাওয়াত গ্রহণ করেছে, তাদের জন্য কল্যাণ রয়েছে, আর যারা তা গ্রহণ করেনি তারা যদি পৃথিবীর সব সম্পদের মালিক হয়ে যায় এবং এ পরিমাণ আরো সংগ্রহ করে নেয় তা হলেও তারা আল্লাহর পাকড়াও থেকে বাঁচার জন্য এসবকে মুক্তিপণ হিসেবে দিয়ে তৈরি হয়ে যাবে। এদের হিসাব নেয়া হবে নিকৃষ্টভাবে এবং এদের আবাস হবে জাহান্নাম, বড়ই নিকৃষ্ট আবাস।’ (সূরা রাদ : ১৮)।
আজকে যারা রাষ্ট্রীয় দণ্ডের জোরে আল্লাহর পাকড়াওকে পরোয়া করছে না। বরং মানুষের ওপর জুলুম-নির্যাতনের স্টিম রোলার চালিয়ে যাচ্ছে। খুব অচিরেই তাদের মতা ও প্রতিপত্তির অবসান ঘটবে। কর্মফলের দিন অতি সন্নিকটে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘কর্মফলের দিন তারা তার মধ্যে প্রবেশ করবে। এবং সেখান থেকে কোনোভাবেই সরে পড়তে পারবে না। আর তোমরা জানো কি, ওই কর্মফল দিনটি কী? হ্যাঁ, তোমরা কি জানো, ওই কর্মফল দিনটি কী? এটি সেই দিন, যখন কারোর জন্য কোনো কিছু করার সাধ্য কারোর থাকবে না। ফয়সালা সেদিন একমাত্র আল্লাহর এখতিয়ারে থাকবে।’ (সূরা ইনফিতার : ১৬-১৯)। অর্থাৎ কাউকে সেখানে তার কর্মফল ভোগ করার হাত থেকে নিষ্কৃৃতি দান করার মতা থাকবে না। কেউ সেখানে এমন প্রভাবশালী বা আল্লাহর প্রিয়ভাজন হবে না যে, আল্লাহর আদালতে তাঁর রায়ের বিরুদ্ধে বেঁকে বসে এ কথা বলতে পারে, ওমুক ব্যক্তি আমার নেতা, প্রিয় বা আমার সাথে সম্পর্কিত, কাজেই দুনিয়ায় সে যত খারাপ কাজ করে থাকুক না কেন, তাকে তো মাফ করতেই হবে।
আল্লাহ করুণাময়, বান্দাহর প্রতি অত্যধিক দয়ালু ও গভীর শুভাকাক্সী। কিন্তু যখন কাউকে পাকড়াও করার প্রয়োজন হয়ে পড়ে, তখন তার পাকড়াও অত্যন্ত কঠিন হয়ে থাকে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যিনি মহাপরাক্রমশালী এবং নিজের সত্তায় নিজেই প্রশংসিত, যিনি আকাশ ও পৃথিবীর রাজত্বের অধিকারী। আর সে আল্লাহ সব কিছু দেখছেন। যারা মুমিন পুরুষ ও নারীদের ওপর জুলুম-নিপীড়ন চালিয়েছে, তারপর তা থেকে তওবা করেনি, নিশ্চিতভাবেই তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের আজাব এবং জ্বালা-পোড়ার শাস্তি। আসলে তোমার রবের পাকড়াও বড় শক্ত। (সূরা বরুজ : ৯-১২)

Related Post