Originally posted 2013-03-29 20:16:00.
লিখেছেন: আমির হোসাইন মজুমদার
জন্মগত পরিচয়, চাল-চলন, আচার-ব্যবহার, কথাবার্তা, সৌন্দর্য ও মাধুর্যতা, সততা, আদর্শ ও নৈতিকতার মাধ্যমে একটি গোষ্ঠী বা জাতির পরিচিতি মেলে। নিজস্ব স্বকীয়তাকে বেমালুম ভুলে প্রকারাকান্তে ভিনদেশী চিন্তা-চেতনা, ধোঁকাবাজির ফাঁদে পড়াকে আনন্দের হাতিয়ার বানানো চরম বোকামী বই আর কি!
সংস্কার শব্দ থেকে সংস্কৃতি শব্দের উৎপত্তি। সংস্কারপ্রাপ্ত মার্জিত মানসিকতাই সংস্কৃতি। সংস্কারের কৃষ্টি তথা কর্ষণই যুগে যুগে মানুষের অনাবাদী মন-মগজের উৎকর্ষ সাধন করেছে। সোজা কথা চিত্তের উৎকর্ষ মানেই সংস্কৃতি। আর জ্ঞান-গবেষণার কর্ষনই অনাবাদী মন-মগজে সংস্কৃতির সোনার গাছ-জন্মায়। আর স্বর্ণ ফসল সভ্যতা মানুষকে আশরাফুল মাখলুকাতের তথা সর্বোত্তম সৃষ্টির সঠিক মর্যাদা দান করে। তাদের মানসিকতাকে মানব মর্যাদার অনুকুল করে সাজিয়ে তোলে।
সংস্কৃতি ও ধর্ম অবিভাজ্য। ধর্মীয় ধ্যান ধারনাই মানব মনে সংস্কারের জন্ম দেয়। আদি পিতা আদম (আঃ) থেকে আজ পর্যন্ত একই ইসলামী তথা সৃষ্টি বিশ্বাসের সংস্কৃতির ধারা চলে এসেছে। যুগে-যুগে শুধু তার যুগোপযোগী সংস্কারণ বর্ধিত সমস্যার পরিপ্রেক্ষিতে পরিবর্ধিত হয়ে দেখা দিয়েছে। এভাবে বৈজ্ঞানিক যুগের উদগাতা ঐতিহাসিক কালের বিশ্বনবী মুহাম্মদ (সাঃ) এর হাতে তার পূর্ণতা ও পরিসমাপ্তি ঘটেছে। সংস্কৃতির ভিত্তি যে জাতির যেমন সে জাতির সংস্কৃতি আর তার বিকাশও তেমন যে জাতির কাছে আল্লাহ প্রদত্ত জ্ঞান সম্পূর্ণ অপরিবর্তিত অবস্থায় বাস্তব অনুশীলনের মাধ্যমে সংরক্ষিত একমাত্র তারাই সংস্কারের নির্ভেজাল উপাদনের সংস্কৃতির ভিত্তি রচনা করতে পারে।
জ্ঞান যদি জাতীয় সংস্কৃতির প্রতিচ্ছবি হতে ব্যর্থ হয় তাহলে সে সমাজের বা জাতির কল্যাণের চেয়ে অকল্যাণই বেশী করে থাকে। সংস্কৃতির বিকাশ ও প্রসারের ক্ষেত্রে জ্ঞান চর্চা ও সাহিত্যের ভূমিকা অন্য। আজ আমাদের সাহিত্যে যে সংস্কৃতি দেখছি তা আমাদের নিজস্ব নয়। ভিনদেশী জ্ঞান গবেষণার প্রভাবে এ দেশে গড়ে উঠেছে একটি তথাকথিত সংস্কৃতিবান গোষ্ঠী। এরা সেক্যুলার বা বাস্তবাদী শিক্ষায় গড়ে উঠেছে যা আমাদের সংস্কৃতির প্রতি বৈরী, ঐতিহ্য বিরোধী এবং ইতিহাস বিদ্বেষী।
নিজেদের ঐতিহ্য সংস্কৃতিকে ঘৃণাভরে পদাঘাত না করে ভিনদেশীর শিক্ষার্জন সম্ভব নয়। আর নিজেদের সংস্কৃতিকে ঘৃণা ভরে প্রত্যাখ্যান করা জাতীয় আত্মহত্যারই নামান্তর।
এ প্রসঙ্গে বিশ্বকবি আল্লামা ইকবাল লিখেছেন, “কোন আগুন তোমার চাই, তা জানার জন্যে তুমি কোন মাটির তা আগে জেনে নাও। অন্যের আলোর পেছনে ছুটে তোমার কোন লাভ নেই। পাশ্চাত্যের কাঁচশিল্পীর প্রাচুর্য কামনা করে তোমার কোন লাভ নেই। সুর্যের ঝর্ণার কাছে পানি প্রবাহ আশা করো না। অপরের পক্ষপুটে কতকাল তুমি থাকবে? বাগানের হাওয়া নিজের পাখা মেলে উড়তে শেখ।”
ইসলামে জ্ঞান গবেষণাকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবাদাত হিসেবে মূল্যায়ন করা হয়েছে। আল কুরআনে নামাযের কথা বলা হয়েছে ৮২ বার অথচ জ্ঞানার্জনের কথা বলা হয়েছে ৯২ বার। আর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক আয়াত ৭৫০টি।
প্রকৃতির সম্পদ চিহিৃত করতে আগে বিশেষ ধরনের জ্ঞান ও দক্ষতার দরকার। সম্পদ আহরণ করে প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য দরকার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং ব্যবস্থাপনার কলাকৌশল। জ্ঞানের শক্তিতেই একদিন মুসলমানরা সারা পৃথিবীকে শাসন করেছে। ১২৫০ সালে স্পেনের টলোডোতে আজকের সভ্য ইউরোপের শিক্ষক মুসলমানেরা প্রথম শিক্ষাকেন্দ্র School of Oriental Studie স্থাপন করেন কর্ডোভাতে পৃথিবীর প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় মুসলমানরা স্থাপন করেন। যেখানে সব সময় ইউরোপ, এশিয়া, আফ্রিকা মহাদেশের দশ হাজার ছাত্র অধ্যায়নরত যার ব্যাপারে যোশেফ হলেনের মন্তব্য হলো Cordova Shone like light house on the darkness of Europe আমরা সেই সময়ের কথা বলছি যখন ইউরোপে খৃষ্টানদের সবচেয়ে বড় লাইব্রেরীটি ছিল রাণী ইসাবেলার অধীনে যাতে বইয়ের সংখ্যা ছিল মাত্র ২০১টি। অপরদিকে তৎকালীন ফাতেমীয় সম্রাজ্যের রাজধানী আলেকজান্দ্রিয়াতে মুসলমানদের পাঠাগারে জমা ছিল ১০ লক্ষ বই।
ঠিক সে সময় অসভ্য ইউরোপের মুসলমানদেরই আবিস্কার পৃথিবী গোল বলার অপরাধে মি. ব্র“নোকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয়, গ্যালিলিও কে বিজ্ঞানের প্রচারের জন্য কারাগারে আটক করা হয়। অবশেষে অন্ধ বধির হয়ে তিনি সেখানেই মারা যান। কাগজ, ঘড়ি, বারুদ, মানচিত্র, ইউরোপ থেকে ভারতের রাস্তা এমনকি আমেরিকার আবিষ্কারর্কতা মুসলমানরা দুর্ভাগ্য, আজকে তারাই বিশ্বে সবচেয়ে পশ্চাৎপদ জাতি। কারণ এক সময় পৃথিবীর শিক্ষক হলেও এখন তারাই সবচেয়ে কম শিক্ষা গ্রহণ করে, কম জ্ঞান গবেষণা করে। মানবতার শ্রেষ্ঠ শিক্ষক রাসূল (সাঃ) জ্ঞানকে আখ্যায়িত করলেন শত্র“মহলে ঢাল এবং মিত্রমহলে অলংকার হিসেবে। অথচ আন্তর্জাতিক এক ম্যাগাজিনের ভাষ্যমতে এখন জাতি হিসেবে বিশ্বে মুসলমানদের শিক্ষার ১৯%। হিন্দুদের ২৪%, বৌদ্ধদের ৪৯%, খৃষ্ঠানদের ৯৮% ও ইহুদীদের ৯৯%। বোঝা গেল কম শিক্ষিতরা মার খাচ্ছে।
অজ্ঞতাই ইসলামের বড় শত্র“ বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের অধঃপতনের সবচেয়ে কারণ অজজ্ঞা, অথচ মানবজাতির সংবিধান আল কুরআন নাযিল শুরু হয়েছিল জ্ঞান গবেষণার নির্দেশ (সূরা আলাক ১-৫) দিয়ে। কিন্তু দুর্ভাগ্য মুসলিম জাতির। জাতীয় কবি নজরুল ইসলামের ভাষায়-
(১) আল্লাহতে যার পূর্ণ ঈমান কোথা সে মুসলমান?
(২) বাহিরের দিকে মরেছি যতটা ভিতরের দিকে তত
গুনতিতে মোরা বাড়িয়ে চলেছি গরু-ছাগলের মত।”
বর্তমান বিশ্বে ইসলামের বিরুদ্ধে লেখার মুসলমান আছে, বিজাতির পদলেহনকারী মুসলমান নেতা আছে, কিন্তু শিবদের পাগড়ী দেবনা’ বলার মুসলমান কোথায়?
বেশ কয়েক শতাব্দী ধরে পশ্চিমের দেশগুলো মুসলিম দেশগুলোকে প্রত্যক্ষভাবে শোষণ করছে। বর্তমানে সেই শোষণ চলছে পরোক্ষভাবে। দুনিয়ার সর্বোত্র ন্যায় ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠার জন্য যে ত্যাগ-কুরবাণী দরকার, তা করার জন্য ৫৬টি মুসলিম দেশের শাসকবর্গ এবং ইসলামী স্কলার গবেষক ও চিন্তাবিদগণ যদি বাস্তবমুখী পদক্ষেপ নেন তাহলে মুসলিম উম্মাহ ইসলামের হারানো সেই সোনালী অতীত খুঁজে পাবেন। যা সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ রাষ্ট্রনায়ক মুহাম্মদ (সাঃ) কায়েম করেছিলেন এবং খলিফাতুল মুসলিমিনরা বাস্তবায়ন করেছিলেন।
কিন্তু আগ্রহ থাকলেও মুসলিম নেতৃবৃন্দের মধ্যে উদ্যোগের বড়ই অভাব। মুসলিম শাসকদের দুর্বল পররাষ্ট্রনীতি, পরনির্ভরশীলতা, আত্মপ্রত্যয়ের অভাব, অনৈক্যকে পুঁজি করে অতীতে খৃষ্টান ও ইহুদী সম্প্রদায় এবং তাদের প্রেতাম্মরা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে মুসলমানদের বিপর্যস্ত করেছে, হত্যা করেছে পাইকারী হারে। তারপর (বর্তমানে) মুসলিম শাসকগণ তাদেরকে মুরব্বী মানতে দ্বিধা করছে না। অথচ সূরা মায়েদার ৫১নং আয়াতে আল্লাহ বলেছেন- তোমরা ইহুদী ও খৃষ্টানদের বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করো না, তারা একে অপরের বন্ধু তোমাদের মধ্যে যে তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবে সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত হবে। আল্লাহ জালিমদের পথ প্রদর্শন করেন না।
ক্ষমতার মোহে মুসলিম শাসকরা অন্ধ ক্ষমতার লোভে তাদের সাথে বন্ধুত্ব করার ফলশ্র“তিতে স্পেনের গ্রানাডায় ৭ লক্ষ ৩৪ হাজার মুসলমানকে শাহাদাত বরণ করতে হয়েছে। তাদের ছলনাময়ী, চাতুর্যপূর্ণ বন্ধুত্বের শিকার আজ সারা বিশ্ব। শুধু বন্ধুত্বের টানে তাদের তৈরী মনগড়া বিষয়গুলো মুসলমানদের খুব গুরুত্ব দিয়ে থাকে। যেমন 14 February Valentine day/ Rag day/ 31st night / মৃতব্যক্তির জন্য দাঁড়িয়ে ১ মিনিট নিরবতা পালন/ কবরে মাল্যদান/ জন্তু জানোয়ারের মুখোশ লাগিয়ে বাংলা নববর্ষ পালন (এদিন হলদে শাড়ী পরে ভোর বেলায় মাটির বাসনে করে পান্তাভাত ইলিশ ভাজা খাওয়া!)। বিভিন্ন শ্লোগানের মাধ্যমে গণসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে একটা ম্যাসেজ দেয়া হয় এ সমস্ত ঘটনাকে কেন্দ্র করে। অত্যন্ত পরিতাপের সাথে বলতে হয় এই দিবসসমূহ (অনুষ্ঠানসমূহ) পালনের নামে মুসলমানরা তাদের মূল ঐতিহ্য সংস্কৃতি, নীতি-নৈতিকতা থেকে সরে এসেছে নিজেদের অজান্তে যার জ্বলন্ত উদাহরণ ১লা এপ্রিলের বোকা দিবস “April Fool” অন্যতম। মুসলিম ইতিহাসের অন্যতম শোকাবহ ১লা এপ্রিলের কোন চেতনায় মুসলিম সম্প্রদায় হাসি-তামাশা করে অন্যকে বোকা বানিয়ে মজা লোটে? একজনকে ফাঁকি বা ধোঁকা দিয়ে বোকা বানানো অন্যায় ও অনৈতিক এবং এটি শরীয়ত বিরোধী কাজ। মুসলমানদের রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল স্পেনের গ্রানাডার মাটি। অন্তত: পক্ষে ঈমানের চেতনায় বলিয়ান হয়ে কোন মুসলমান সেদিনকে স্মরণ করে শোক প্রকাশের পরিবর্তে হাসতে পারে না। অন্যকে বোকা বানাতে পারে না। অঢ়ৎরষ ঋড়ড়ষ পালন করতে পারে না।
April Fool এর মূল ঘটনাটা বিশ্লেষণ করলে আমরা দেখতে পাই অষ্টম শতাব্দীতে স্পেনে প্রতিষ্ঠিত হয় ইসলামী শাসন। মুসলমানদের নিরলস প্রচেষ্টায় স্পেনে জ্ঞান-বিজ্ঞান, সাহিত্য-সংস্কৃতি ও সভ্যতায় বিস্ময়কর উন্নতি লাভ করে। মুসলমানদের এ উন্নতি দেখে খৃষ্টানজাতি ঈর্ষান্বিত হয়ে উঠে এবং তারা স্পেন থেকে মুসলমানদের উচ্ছেদ করার জন্য বদ্ধ পরিকর হয়। এরই রেশ ধরে তারা স্পেনের গ্রামান্তরে মুসলমানদের বাড়ী ঘর শষ্যক্ষেত্র জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেয় এবং তাদের উপর নির্মমভাবে হত্যাযজ্ঞ চালাতে থাকে। ১৪৭৯ খৃষ্টাব্দে চরম মুসলিম বিদ্বেষী এরাগান রাজ ফার্ডিন্যান্ড এবং ক্যাষ্টাইলের রাণী ইসাবেলা বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হবার পর থেকে স্পেনে খৃষ্টানদের শক্তি বৃদ্ধি পেতে থাকে। অপরদিকে মুসলমানদের মধ্যে দেখা দেয় বিশ্বাসঘাতকতা। ইসলাম থেকে দূরে সরে যাবার কারণে সম্মিলিত খৃষ্টান শক্তি আক্রমণ করে কর্ডোভা, সেভিল, ভেলেপিয়া দখলের পর মুসলিম সভ্যতা ও জ্ঞান বিজ্ঞানের কেন্দ্রস্থল গ্রানাডা রাজ্যের দোর গোড়ায় উপনীত হয়। গ্রানাডার শেষ রাজা আবুল হাসানের ক্ষমতালোভী পুত্র বিশ্বাসঘাতক আবু আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ খৃষ্টান নেতা ফার্ডিন্যান্ড ও ইসাবেলার সাথে যোগ দিয়ে নিজ পিতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে গ্রানাডা দখল করে খৃষ্টানদের হাতে তুলে দেয়। কার্যসিদ্ধির পর খৃষ্টানরা তাকে বিতাড়িত করে। খৃষ্টানদের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন স্থানে সাধারণ মুসলমানরা প্রতিরোধ গড়ে তোলে। এমনিভাবে ৬২ বছর পর্যন্ত ভয়ানক যুদ্ধ চলতে থাকে। এ সময় প্রতারক ফার্ডিন্যান্ড ঘোষণা করল মুসলমানরা যদি শহরের গ্রানাডার প্রধান ফটক খুলে দেয় এবং নিরস্ত্র অবস্থায় মসজিদে আশ্রয় নেয় তাহলে তাদের মুক্তি দেয়া হবে। নেতৃত্ববিহীন রণক্লান্ত, হতাশাগ্রস্ত মুসলমানরা খৃষ্টানদের প্রতারণা বুঝতে না পেরে সরল বিশ্বাসে শহরের বিভিন্ন মসজিদে আশ্রয় নেয় নিজেদের জান বাঁচানোর আশায়। ১৪৯২ সালের ১ এপ্রিল সকালে ঘাতক খৃষ্টান নেতার অনুচররা একযোগে শহরের সমস্ত মসজিদের দরজাগুলোতে তালা লাগিয়ে দেয়। ঘাতক ফার্ডিন্যান্ড আন্তর্জাতিক যুদ্ধনীতি উপেক্ষা করে নিরীহ বেসামরিক শান্তিপ্রিয় মুসলমানদের আশ্রয় স্থল মসজিদের কামানদেগে চারিদিক ঘেরাও করে আগুন জ্বালিয়ে ৭ লাখ ৩৪ হাজার মুসলিম নর-নারী ও শিশুকে পৈশাচিকভাবে হত্যা করে। এরগান রাজ ফার্ডিন্যান্ড এর কুটচালে মুসলমানদের বিপর্যয়ের এ ঘটনা শুনে তার স্ত্রী ক্যাষ্টাইলের রানী ইসাবেলা বলেছিল সত্যিই মুসলমান! You are April Fool অর্থাৎ এপ্রিলের বোকা। সেদিনের জঘন্য হত্যাকান্ড ঘটেছিল সকাল ৯.৩০ মিনিট ১লা এপ্রিল ১৪৯২ খৃষ্টাব্দ। আর মুসলমানদের সাথে এই প্রতারণার স্মৃতির স্মরণ করে খৃষ্টান দুনিয়ায় আনন্দ উৎসব হিসেবে এপ্রিল মাসের ১ তারিখ April Fool অর্থাৎ এপ্রিলের বোকা দিবস পালিত হয়।
ইতিহাসের জঘন্যতম এই হত্যাকান্ড কেন্দ্র করে এদিন আমোদ ফূর্তি করা কতটুকু বিবেকবানের কাজ তা বিচারের ভার পাঠকের কাছে রইল। অশিক্ষা-কুশিক্ষা, অজ্ঞানতা এমনকি সামাজিকতা রক্ষার নামে আমরা Birthday, Marriageday, এক মিনিট নিরবতা (নীরবে মনে মনে কি বলতে হয়?) পালন করছি, কবরে পুষ্পস্তবক অর্পন, 31st Night উদযাপন, Valentine day পালন, April Fool day (১লা এপ্রিল) পালন, হিন্দু ধর্মেরঅনুসরণে পালন করছি গায়ে হলুদ (ভারতে এটিকে বলা হয় ‘গাত্রে হরিদ্রা) অনেকেই আরো Advance হয়ে অতি Cultured আর বিত্তশালীরা পালন করছে রাখী বন্ধন, মঙ্গল প্রদীপ জ্বালিয়ে অনুষ্ঠান উদ্বোধন, বিশেষ পদ্ধতিতে টিপ চন্দনের ব্যবহার ইত্যাদি। মোমবাতি জ্বালিয়ে, ছুরি দিয়ে কেক কেটে জন্মদিন পালন করছি, যার জন্মদিন তাকে জানাই Happy birth day to you (শুভ জন্মদিন তোমার)। এর মানেটা কি? যার জন্মদিন তার জন্য আল্লাহর নিকট এটা কি কোন দোয়া হলো? যাদের দাওয়াত দেওয়া হয় তাদেরকেও ফেলা হয় বিপদে, তারা ভাবে আর একটা ঝামেলায় পড়া গেল, কিছু একটা উপহার তো দিতে হবে। এভাবে যখন একজনকে বিপদে ফেলা হয় তখন তার দোয়া করার মানসিকতার আর ফুরসত থাকে না। সেক্যুলার (ঔপনিবেশিক আমলের উদ্দেশ্যহীন) শিক্ষার পাশাপাশি গবেষণায় ঔদাসীন্য ও নির্লিপ্ততা ইসলামী সংস্কৃতি প্রচার প্রসারে অনগ্রসরতার অন্যতম কারণ। যাদের পূর্বপুরুষরা শতাব্দী যাবত পৃথিবীর মানুষকে বিজ্ঞানের নানা শাখা-প্রশাখার সাথে পরিচিত করিয়েছে তারা আজ অজ্ঞতার অন্ধকারে নিমজ্জিত। বর্তমানে ১৫৬ কোটি জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত মুসলিম বিশ্বের মাত্র ৪৫ হাজার বিজ্ঞানী বিজ্ঞান গবেষণায় নিয়োজিত আছেন, অথচ মাত্র ৪৫ লাখ আধুষিত ইহুদী রাষ্ট্র ইসরাইলে বিজ্ঞান গবেষণায় নিয়োজিত ৩৫ হাজার বিজ্ঞানী।
তারা ইহুদী-খৃষ্টানরা ঠিকই জ্ঞান গবেষণায় রয়েছে আর আমরা তাদের বস্তাপচা কালচারকে নিজেদের অজান্তেই অনুসরণ করে চলছি। বাজে বন্ধুদের সাথে অতিরিক্ত আড্ডা, অবৈধ প্রেম, নগ্নতা, মেয়েদের নিজেকে আকর্ষণীয় করে অন্যের চোখে মেলে ধরার কৌশল, হিরোইন, মদ, গাঁজা, আফিম, কোকেন, ফেনসিডিল, ড্রাগ, সম্প্রতি আবিস্কৃত এলএসডি ইত্যাদি আসক্তি আজ বিস্তার লাভ করছে। বর্তমান সময়ের যে ভালবাসা তার জন্য হতবাক হতে হয়। শপিং মল, মেলা, উৎসবে, মানুষ গড়ার আঙ্গিনায় ভালবাসার ছড়াছড়ি। তরুণ-তরুণীর ভালবাসা Transfer হয়ে চলে যাচ্ছে কোন তারকার দিকে। কয়েক বছর পূর্বে বাংলাদেশে এক নায়ক মারা গেল, তার মোহে পাগল হয়ে সারা দেশে শোকে মুহ্যমান হয়ে মারা যায় কয়েকজন মেয়ে। ঢাকা ষ্টেডিয়ামে ক’বছর পূর্বে ক্রিকেট খেলতে নেমেছিল পাকিস্তানের খেলোয়াড়রা, গ্যালারী ভর্তি দর্শকের বেশিরভাগ তরুণ-তরুণী। ডজনের উপরে তরুণী সেদিন গলায়, বুকে বিজ্ঞান লটকিয়ে ছিল Afridi Please maray me’ যা দেশের জাতীয় দৈনিকগুলো ফলাও করে প্রচার করেছে ছবি সমেত। কত বড় নির্লজ্জ বসাত্বতা বিবর্জিত, বিবেকহীন কান্ডকারখানা। আজকের পাশ্চাত্যের জ্ঞান-বিজ্ঞান যে মধ্যযুগের মুসলমানদের দান, সে ঐতিহাসিক উত্তরাধিকারের ধারাবাহিকতা আমরা মুসলমানরা রক্ষা করতে পারিনি। ইহুদীবাদের জনক থিওডোর হার্টজেল তার জাতির প্রকৃত সমস্যা অনুধাবন করে শিক্ষাকে তাদের উন্নতির একমাত্র পথ হিসেবে চিহিৃত করেছিলেন।
সানডে টাইম এর খবর অনুযায়ী ইসরাইলের প্রধান রাসায়নিক ও জীবানু অস্ত্র নির্মাণ গবেষণাগার নেস আইওনার বায়োলজিক্যাল ইনষ্টিটিউট এমন জীবাণু অস্ত্র নির্মাণে সক্ষম হয়েছে যা মানব জিনের পার্থক্য নিরুপনের মাধ্যমে বেছে বেছে আরব জনগোষ্ঠীর উপর আঘাত হানবে। এ জীবাণু অস্ত্রের মাধ্যম হলো পানি ও বায়ু। দৈনিক ভোরের কাগজ ২৩/৯/৯৮ইং।
আজ যদি মুসলিম জাতিকে টিকে থাকতে হয়, তবে মানবিক জ্ঞান ও ইসলামী জ্ঞান দ্বারা জাতীয় জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রকে সত্যিকার অর্থে ঢেলে সাজাতে হবে। ইসলামী জ্ঞান ও আধুনিক কলা-কৌশলের মাধ্যমে অজ্ঞতা, অশিক্ষা-কুশিক্ষা, অপসংস্কৃতি-কুসংস্কৃতিকে দলিত মথিত করে ইসলামের সোনালী অতীতকে ফিরিয়ে আনার মাধ্যমে সব সমস্যার সমাধান করতে হবে।