New Muslims APP

নামায ও রোযার ক্ষেত্রে ঋতুস্রাবের বিধি-বিধান

নামায ও রোযার ক্ষেত্রে ঋতুস্রাবের বিধিবিধান

নামায ও রোযার ক্ষেত্রে ঋতুস্রাবের বিধিবিধান

প্রশ্ন ১: ফজরের পরপরই যদি কোন ঋতুবতী মহিলা ঋতুস্রাব মুক্ত হয়, তাহলে কি সে খানাপিনা ত্যাগ করতঃ ঐ দিনের রোযা রাখবে? তার ঐ দিনের রোযা কি আদায় হয়ে যাবে নাকি পরে ক্বাযা আদায় করতে হবে?
উত্তরঃ ফজরের পরে কোন মহিলা ঋতুস্রাবমুক্ত (ঋতুমুক্ত হওয়ার কয়েকটা নিদর্শন রয়েছে। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলোঃ ১. রক্ত বন্ধ হওয়ার বিষয়টা অনুভূত হওয়া। ২. শুষ্কতা অনুভব করা। ৩. সাদা জাতীয় পদার্থ বের হওয়া (এর সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা ২৪নং প্রশ্নের পাদটীকায় আলোচনা করা হয়েছে)।
৪. সম্পূর্ণভাবে রক্ত বন্ধ হয়ে যাওয়া (আল-আহকাম আল-ফিক্বহিইয়াহ আল-মুখতাছারাহ ফী আহকামি আহলিল আ‘যার)।) হলে ঐ দিনে তার রোযা রাখার ক্ষেত্রে আলেমগণের দুটো অভিমত রয়েছেঃ
প্রথম অভিমতঃ ঐ দিনের বাকী অংশে তাকে খানা-পিনা, যৌনসঙ্গম ইত্যাকার কর্মকা- থেকে বেঁচে থাকতে হবে। তবে তা ঐ দিনের রোযা হিসাবে পরিগণিত হবে না; বরং তাকে পরে ক্বাযা আদায় করতে হবে। এটা হাম্বলী মাযহাবের প্রসিদ্ধ অভিমত।
দ্বিতীয় অভিমতঃ ঐ দিনের বাকী অংশে তাকে খানাপিনা ইত্যাদি থেকে বিরত থাকতে হবে না। কেননা সে ঐ দিনের শুরুতে ঋতুবতী থাকার কারণে সেদিনের রোযা তার জন্য শুদ্ধ নয়। আর রোযা যেহেতু শুদ্ধ নয়, সেহেতু খানাপিনা থেকে বিরত থাকারও কোন অর্থ নেই। এই দিনটা তার জন্য সম্মানীয় কোন সময় নয়। কেননা ঐ দিনের শুরুতে তাকে রোযা ভাঙ্গার আদেশ করা হয়েছে; বরং ঐ দিনের শুরুতে রোযা রাখা তার জন্য হারাম। আর রোযার সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, “ফজর উদয় হওয়া থেকে শুরু করে সূর্যাস্ত পর্যন্ত আল্লাহর ইবাদতের উদ্দেশ্যে রোযা ভঙ্গকারী যাবতীয় বিষয় থেকে বিরত থাকার নাম রোযা।”
এই অভিমতটা আগের খানাপিনা থেকে বিরত থাকা আবশ্যক মর্মের অভিমতের চেয়ে বেশী প্রাধান্য পাওয়ার যোগ্য। যাহোক [ঐ দিনের বাকী অংশে সে খানাপিনা ইত্যাদি থেকে বিরত থাক বা না থাক] উভয় অভিমতের আলোকে বলা যায়, তাকে পরবর্তীতে ঐ দিনের ক্বাযা আদায় করতেই হবে।

প্রশ্ন ২: প্রশ্নকারী বলছেন, ঋতুবর্তী যদি [ফজরের আগে] ঋতুস্রাব মুক্ত হয় এবং ফজরের পরে গোসল করে নামায আদায় করতঃ ঐ দিনের রোযা পূর্ণ করে, তাহলে কি তাকে আবার ক্বাযা আদায় করতে হবে?
উত্তরঃ ঋতুবর্তী ফজরের এক মিনিট আগে হলেও যদি নিশ্চিত ঋতুস্রাব মুক্ত হয়, তাহলে রমযান মাস হলে তাকে ঐ দিনের রোযা আদায় করতে হবে এবং তার ঐ দিনের রোযা শুদ্ধ রোযা হিসাবে পরিগণিত হবে। তাকে আর ক্বাযা আদায় করতে হবে না। কেননা সে পবিত্র অবস্থায় রোযা রেখেছে। আর ফজরের পরে ছাড়া গোসল করার সুযোগ না পেলেও কোন সমস্যা নেই। যেমনিভাবে কোন পুরুষ সহবাস জনিত কারণে অথবা স্বপ্নদোষের কারণে যদি অপবিত্র থাকে এবং ঐ অবস্থায় সাহরী করে নেয়, তাহলে ফজরের আগে গোসল না করলেও তার রোযা শুদ্ধ হবে। এক্ষেত্রে আমি মহিলাদের একটি বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই, রোযা অবস্থায় ঋতুস্রাব আসলে কোন কোন মহিলা মনে করে যে, ইফতারের পরে ঋতুস্রাব আসলে ঐ দিনের রোযা নষ্ট হয়ে যায়। অথচ ইফতার তো দূরের কথা সূর্যাস্তের পরপরই যদি তার ঋতুস্রাব আসে, তথাপিও তার সেদিনের রোযা পূর্ণ এবং শুদ্ধ হবে।

প্রশ্ন ৩: সদ্য সন্তান প্রসবকারিণী নারী যদি চল্লিশ দিনের আগে পবিত্র হয়ে যায়, তাহলে কি তার উপরে রোযা রাখা এবং নামায আদায় করা ওয়াজিব হবে?
উত্তরঃ হ্যাঁ, সদ্য সন্তান প্রসবকারিণী নারী চল্লিশ দিনের আগে যখনই পবিত্র হবে, তখনই তার উপর রোযা রাখা অপরিহার্য হয়ে যাবে- যদি তখন রমযান মাস চলে। অনুরূপভাবে তার উপরে নামায আদায়ও ওয়াজিব হবে এবং তার স্বামীর জন্য তার সাথে সহবাস করাও বৈধ হবে। কেননা সে একজন পবিত্র নারী হিসাবে বিবেচিত হবে। যার মধ্যে নামায-রোযা ও সহবাসের বৈধতায় বাধাদানকারী কোন কিছু অবশিষ্ট নেই।
প্রশ্ন ৪: কোন মহিলার ঋতুস্রাবের সময়সীমা যদি প্রত্যেক মাসে আট অথবা সাতদিন হয়; কিন্তু দেখা গেল, মাঝেমধ্যে অভ্যাস ভঙ্গ করে ২/১ দিন বেশী সময় ধরে ঋতুস্রাব চলে, তাহলে সেক্ষেত্রে বিধান কি?
উত্তরঃ যদি উক্ত মহিলার মাসিক ঋতুস্রাবের সময়সীমা ছয় বা সাত দিন হয় কিন্তু মাঝে-মধ্যে এ সময়সীমা বৃদ্ধি হয়ে আট, নয়, দশ অথবা এগারো দিনে গড়ায়, তাহলে পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত তাকে নামায আদায় করতে হবে না। কেননা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঋতুস্রাবের কোন নিন্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেননি। আর আল্লাহ তা‘আলা বলছেন, “তারা তোমাকে মহিলাদের ঋতুস্রাব সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করে; তুমি বলে দাও, সেটা হচ্ছে কষ্টদায়ক বস্তু”। (সূরা বাকারা: ২২২) সুতরাং এই রক্ত থাকাকালীন সময়ে মহিলারা আপন অবস্থায় থাকবে, তারপর ভাল হয়ে গেলে গোসল করে নামায আদায় করবে।
অনুরূপভাবে পরবর্তী মাসে যদি গত মাসের তুলনায় কম দিনে ঋতু বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে সে গোসল করে নিবে [এবং নামায-রোযা শুরু করবে]। এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ কথা হলো এই যে, মহিলার ঋতুস্রাব থাকাকালীন সময়ে সে নামায আদায় করবে না- চাই ঋতুস্রাব গত মাসের মত একই সময় পর্যন্ত চলুক অথবা কিছু দিন বেশি বা কম চলুক। আর যখনই ঋতুস্রাব বন্ধ হয়ে যাবে, তখনই নামায আদায় করবে।

প্রশ্ন ৫: সদ্য প্রসবকারিণী নারী কি ছালাত-ছিয়াম (নামায-রোযা) পরিত্যাগ করে চল্লিশ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করবে নাকি রক্ত বন্ধ হওয়া না হওয়াই হলো মূল বিষয়? অর্থাৎ যখনই রক্ত বন্ধ হয়ে যাবে, তখনই কি পবিত্র হয়ে যাবে এবং নামায শুরু করবে? আর পবিত্র হওয়ার সর্বনিম্ন কোন সময়সীমা আছে কি?
উত্তরঃ প্রসূতি মহিলার নির্দিষ্ট কোন সময়সীমা নেই; বরং যতদিন রক্ত থাকবে, ততদিন অপেক্ষা করবে। এমতাবস্থায় নামায পড়বে না, রোযা রাখবে না এবং তার স্বামী তার সাথে সহবাসও করবে না। পক্ষান্তরে যখনই সে পবিত্র হয়ে যাবে-যদিও তা চল্লিশ দিনের আগে হয়; এমনকি দশ বা পাঁচ দিনেও যদি সে পবিত্র হয়- তাহলে সে নামায পড়বে, রোযা রাখবে এবং তার স্বামী তার সাথে সহবাসও করবে। এতে কোন সমস্যা নেই। মূলকথাঃ প্রসূতি অবস্থা ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য একটা বিষয়- যা থাকা আর না থাকার সাথে এ সম্পর্কীয় বিধিবিধান সম্পর্কযুক্ত। সুতরাং যখনই সেটা বিদ্যমান থাকবে, তখনই তার বিধিবিধান বলবৎ থাকবে। আর যখনই কোন মহিলা তা থেকে মুক্ত থাকবে, তখনই সে উহার বিধিবিধান থেকে মুক্ত থাকবে। কিন্তু যদি তার রক্ত ষাট দিনের বেশী সময় ধরে চলে, তাহলে বুঝতে হবে সে ইস্তেহাযাগ্রস্ত মহিলা। (ইস্তেহাযা এমন রক্ত-যা ঋতুস্রাব ও প্রসূতির সময় ছাড়া অন্য সময়ে বের হয় অথবা এতদুভয়ের পরপরই বের হয়। সে কারণে কোন মহিলার হায়েয ও নিফাসের নির্দিষ্ট সময়সীমা থাকলে যদি ঐ সময়সীমা অতিক্রম করে তার রক্ত চলে, তাহলে তাকে ইস্তেহাযা বলে। এটি মূলতঃ এক ধরনের রোগ।

হায়েয ও ইস্তেহাযার মধ্যে পার্থক্যঃ
১. ইস্তেহাযা লাল রঙের হয়। পক্ষান্তরে হায়েয হয় কালো রঙের অথবা গাঢ় লাল (প্রায় কালো) রঙের। ২. ইস্তেহাযার দুর্গন্ধ থাকে না। পক্ষান্তরে হায়যের দুর্গন্ধ থাকে। ৩. ইস্তেহাযার রক্ত বের হওয়ার পর জমাটবদ্ধ হয়ে যায়। কিন্তু হায়েয কখনও জমাটবদ্ধ হয় না। ৪. বেশীরভাগ ক্ষেত্রে হায়েয প্রচুর পরিমাণে বের হয়। কিন্তু ইস্তেহাযা কম পরিমাণ বের হয়। ৫. বেশীরভাগ ক্ষেত্রে হায়েয বেদনা সৃষ্টি করে। কিন্তু ইস্তেহাযা তা করে না। ৬. হায়েয খুব গাঢ় হয়। কিন্তু ইস্তেহাযা পাতলা হয় ইত্যাদি। (আল-আহকাম আল-ফিক্বহিইয়াহ আল-মুখতাছারাহ ফী আহকামি আহলিল আ‘যার)।–অনুবাদক।) এক্ষেত্রে সে শুধুমাত্র অন্যান্য মাসের ঋতুস্রাবের দিনগুলো সমপরিমাণ অপেক্ষা করবে এবং এরপরে বাকী দিনগুলোতে গোসল করে নামায পড়বে।
প্রশ্ন ৬: যদি রমযান মাসে দিনের বেলায় কোন মহিলার সামান্য রক্তের ফোটা পড়ে এবং সারা রমযান এই রক্ত চালু থাকা অবস্থায় সে রোযা রাখে, তাহলে কি তার রোযা শুদ্ধ হবে?
উত্তরঃ হ্যাঁ, তার রোযা শুদ্ধ হবে। আর এই রক্ত তেমন কোন বিষয় না। কারণ এটা শিরা থেকে আসে। আলী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “এই রক্তবিন্দুগুলো নাক দিয়ে রক্ত পড়ার মত, এগুলো ঋতুস্রাব নয়”। এমন বক্তব্যই তাঁর পক্ষ থেকে উল্লেখ করা হয়।

প্রশ্ন ৭: ঋতুবর্তী অথবা প্রসূতি নারী যদি ফজরের পূর্বে রক্তমুক্ত হয় এবং ফজরের পরে গোসল করে, তাহলে কি তার রোযা শুদ্ধ হবে?
উত্তরঃ হ্যাঁ, ঋতুবর্তী যদি ফজরের পূর্বে পবিত্র হয় এবং ফজরের পরে গোসল করে, তাহলে তার রোযা শুদ্ধ হবে। অনুরূপ বিধান প্রসূতি নারীর ক্ষেত্রেও। কেননা তারা তখন রোযা রাখার উপযুক্ত প্রমাণিত হবে। তাদের বিধান ঐ ব্যক্তির বিধানের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ, যে ফজরের সময় সহবাস জনিত কারণে অপবিত্র রয়েছে। কেননা তার রোযাও শুদ্ধ হবে। মহান আল্লাহ বলেন, “অতএব এক্ষণে তোমরা (রোযার রাতেও) নিজেদের স্ত্রীদের সাথে সহবাস কর এবং আল্লাহ তোমাদের জন্য যা কিছু দান করেছেন, তা অনুসন্ধান কর। আর পানাহার কর যতক্ষণ না কালো রেখা থেকে ভোরের শুভ্র রেখা পরিষ্কার দেখা যায়”। (সূরা বাকারা: ১৮৭) এখানে আল্লাহ তা‘আলা যেহেতু ফজর উদয় হওয়া পর্যন্ত সহবাস করার অনুমতি দিয়েছেন, সেহেতু ফজরের পরে গোসল করাই স্বাভাবিক হয়ে যায়। অনুরূপভাবে আয়েশা (রাদিয়াল্লাহু আনহা) বর্ণিত হাদীছে এসেছে, “রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সহবাসজনিত কারণে অপবিত্র অবস্থায় সকাল করতেন অথচ তিনি রোযা থাকতেন”। (বুখারী, ‘রোযা’ অধ্যায়, ‘রোযাদারের গোসল’ অনুচ্ছেদ হা/১৯৩১; মুসলিম, ‘রোযা’ অধ্যায়, ‘অপবিত্র অবস্থায় যার ফজর হয়েছে, তার রোযা শুদ্ধ’ অনুচ্ছেদ, হা/৭৫,১১০৯।) অর্থাৎ তিনি ফজর উদিত হওয়ার পর গোসল করতেন।

প্রশ্ন ৮: কোন মহিলা যদি রক্ত আসার ভাব অনুভব করে অথবা তার অভ্যাস অনুযায়ী ব্যথা অনুভব করে অথচ সূর্যাস্তের পূর্বে রক্ত বের না হয়, তাহলে তার ঐ দিনের রোযা কি শুদ্ধ হবে নাকি তাকে ক্বাযা আদায় করতে হবে?
উত্তরঃ কোন মহিলা যদি রোযা অবস্থায় ঋতুস্রাব আসার আলামত টের পায় অথবা ব্যথা অনুভব করে অথচ সূর্যাস্তের পরে ছাড়া রক্ত বের না হয়, তাহলে তার ঐ দিনের রোযা শুদ্ধ হয়ে যাবে। ফরয রোযা হলে তাকে আবার আদায় করতে হবে না এবং নফল রোযা হলে তার নেকী নষ্ট হবে না।
প্রশ্ন ৯: কোন মহিলা যদি রক্ত দেখতে পায় কিন্তু সে নিশ্চিত নয় যে, সেটা ঋতুস্রাবের রক্ত, তাহলে ঐদিন তার রোযার বিধান কি?
উত্তরঃ তার ঐদিনের রোযা শুদ্ধ হবে। কেননা [নারীর] আসল অবস্থা হলো, ঋতু না থাকা। তবে ঋতুর বিষয়টা স্পষ্ট হলে সেটা ভিন্ন কথা।

প্রশ্ন ১০: কোন কোন সময় মহিলারা রক্তের সামান্য আলামত দেখতে পায় অথবা সারাদিনে বিচ্ছিন্নভাবে খুব অল্প কয়েক ফোটা রক্ত দেখতে পায়। আর এটা সে কখনও প্রত্যেক মাসের ঋতুস্রাবের নির্ধারিত সময়ে কিন্তু ঋতু না আসা অবস্থায় দেখতে পায়, আবার কখনও অন্য সময়ে দেখতে পায়। এক্ষণে উভয় অবস্থায় উক্ত মহিলার রোযার বিধান কি?
উত্তরঃ ইতিপূর্বে এ জাতীয় প্রশ্নের উত্তর গত হয়ে গেছে। কিন্তু এখানে একটা বিষয় হলো, এই রক্তবিন্দুগুলো যদি মাসের নির্ধারিত সময়ে হয় এবং সে উহাকে তার পূর্ব পরিচিত ঋতুস্রাব জ্ঞান করে, তাহলে তা ঋতুস্রাব হিসাবেই গণ্য হবে।
প্রশ্ন ১১: ঋতুবতী এবং প্রসূতি মহিলা কি রমযানের দিনের বেলায় খানাপিনা করবে?
উত্তরঃ হ্যাঁ, তারা রমযানের দিবসে পানাহার করবে। তবে উত্তম হলো, যদি তাদের নিকটে কোন বাচ্চাকাচ্চা থাকে, তাহলে সেক্ষেত্রে খানাপিনা গোপনে করা উচিত। কেননা প্রকাশ্যে খেলে বিষয়টা তাদের মধ্যে জটিলতা সৃষ্টি করবে।

প্রশ্ন ১২: ঋতুবতী অথবা প্রসূতি নারী আছরের সময় পবিত্র হলে তাকে কি আছরের সাথে যোহরের নামাযও আদায় করতে হবে নাকি শুধু আছর পড়লেই চলবে?
উত্তরঃ এই মাস্আলায় অগ্রাধিকারযোগ্য কথা হলো, তাকে কেবল আছরের ছালাত আদায় করতে হবে। কেননা তার উপর যোহরের নামায ওয়াজিব হওয়ার দলীল নেই। আর মানুষের আসল হলো, সে দায়মুক্ত। তদুপরি রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “যে ব্যক্তি সূর্যাস্তের পূর্বে আছরের এক রাকআত পেল, সে পুরো আছরের নামায পেল।” ( বুখারী, ‘নামাযের সময় সমূহ’ অধ্যায়, ‘যে ব্যক্তি ফজরের এক রাক’আত পেল’ অনুচ্ছেদ হা/৫৭৯; মুসলিম, ‘মসজিদ এবং নামাযের স্থান সমূহ’ অধ্যায়, ‘যে ব্যক্তি কোন নামাযের এক রাক’আত পেল, সে ঐ নামাযের পুরোটাই পেল’ অনুচ্ছেদ হা/১৬৩, ৬০৮।) এখানে রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেননি যে, সে যোহরের নামাযও পেল। আর যোহরের নামায যদি তার উপর ওয়াজিবই হত, তাহলে নিশ্চয় রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তা বলে দিতেন।
অনুরূপভাবে কোন মহিলা যদি যোহরের নামাযের সময় শুরু হওয়ার পরে ঋতুবতী হয়, তাহলে [ঋতুমুক্ত হওয়ার পর] তাকে কেবল যোহরের নামাযের ক্বাযা আদায় করতে হবে, আছরের নয়। অথচ যোহরের নামায আছরের নামাযের সাথে জমা করে পড়া হয় [সফরের ক্ষেত্রে]। এই অবস্থা এবং প্রশ্নকৃত অবস্থার মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। অতএব, অগ্রাধিকারযোগ্য কথা হলো, দলীল এবং ক্বিয়াসের উপর ভিত্তি করে বলা যায়, তাকে কেবল আছরের নামায আদায় করতে হবে। অনুরূপভাবে যদি কেউ এশার সময় শেষ হওয়ার পূর্বে পবিত্র হয়, তাহলে তাকে কেবল এশার নামায আদায় করতে হবে, মাগরিবের নামায নয়।

প্রশ্ন ১৩: কিছু কিছু মহিলার অকাল গর্ভপাত ঘটে। এর দুটো অবস্থা হতে পারেঃ- হয় গর্ভস্থ সন্তান আকৃতি ধারণের আগে তাকে গর্ভপাত করে, না হয় আকৃতি ধারণের পরে গর্ভপাত করে। এক্ষণে উক্ত মহিলার গর্ভপাত ঘটার দিন এবং পরবর্তী যে দিনগুলোতে রক্ত আসবে, সেগুলোতে তার রোযা রাখার বিধান কি হবে?
উত্তরঃ যদি গর্ভস্থ সন্তান আকৃতি ধারণ না করে, তাহলে সে ক্ষেত্রে তার এই রক্ত প্রসূতি অবস্থার রক্ত হিসাবে গণ্য হবে না। অতএব তাকে রোযা রাখতে হবে, নামায পড়তে হবে এবং তার রোযা শুদ্ধ রোযা হিসাবে পরিগণিত হবে। পক্ষান্তরে যদি সন্তান আকৃতি ধারণ করে, তাহলে উক্ত মহিলার রক্ত প্রসূতির রক্ত হিসাবে গণ্য হবে। অতএব, নামায পড়া, রোযা রাখা তার জন্য বৈধ হবে না। এই মাসআলায় নিয়ম হলো এই যে, যদি সন্তান আকৃতি লাভ করে, তাহলে রক্ত হবে প্রসূতি অবস্থার রক্ত। আর যদি আকৃতি লাভ না করে, তাহলে তার রক্ত প্রসূতি অবস্থার রক্ত নয়। অতএব, যখন রক্ত প্রসূতি অবস্থার রক্ত হবে, তখন তার উপর ঐ সমস্ত বিষয় হারাম হবে, যেগুলো একজন প্রসূতি মহিলার উপর হারাম হয়। পক্ষান্তরে যদি রক্ত প্রসূতি অবস্থার রক্ত না হয়, তাহলে তার উপর সেগুলো হারাম হবে না।

প্রশ্ন ১৪: রমযানের দিবসে গর্ভবতী মায়ের রক্ত বের হলে তা কি তার রোযায় কোন প্রভাব ফেলবে?

উত্তরঃ কোন মহিলা রোযা থাকা অবস্থায় যদি তার ঋতুর রক্ত আসে, তাহলে তার রোযা নষ্ট হয়ে যাবে। রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “মহিলার বিষয়টা কি এমন নয় যে, যখন সে ঋতুবতী হয়, তখন সে নামায আদায় করে না এবং রোযাও রাখে না?”। (বুখারী, ‘রোযা’ অধ্যায়, ‘ঋতুবতী নামায ও রোযা পরিত্যাগ করবে’ অনুচ্ছেদ হা/১৯৫১।) এজন্য ঋতুস্রাবকে আমরা রোযা ভঙ্গকারী বিষয়সমূহের অন্তর্ভুক্ত গণ্য করি। অনুরূপভাবে প্রসূতি অবস্থার রক্তও।

অতএব, রামাযানের দিবসে বের হওয়া গর্ভবতীর রক্ত যদি ঋতুস্রাব হয়, তাহলে তা সাধারণ মহিলার ঋতুস্রাবের মতই। অর্থাৎ উহা তার রোযায় প্রভাব ফেলবে। [অর্থাৎ রোযা ভঙ্গ হবে, পরবর্তীতে কাযা করতে হবে] পক্ষান্তরে যদি ঋতুস্রাব না হয়, তাহলে প্রভাব ফেলবে না। [অর্থাৎ রোযা ভঙ্গ হবে না, রোযা রাখা জায়েয হবে] আর গর্ভবতীর যে ঋতুস্রাব আসতে পারে, সেটা হলো ধারাবাহিক ঋতুস্রাব- যা গর্ভধারণের পর থেকে চলছে। এমনকি তা প্রত্যেক মাসের নির্ধারিত সময়েও আসতে পারে। অগ্রাধিকারযোগ্য মতানুসারে ইহা ঋতুস্রাব হিসাবে গণ্য হবে এবং সাধারণ ঋতুস্রাবের বিধিবিধান তার ক্ষেত্রেও বলবৎ থাকবে। কিন্তু যদি এমন হয় যে, কিছুদিন রক্ত বন্ধ থাকার পর উক্ত মহিলা আবার রক্ত দেখতে পেল- যা ঋতুস্রাবের রক্ত নয়, তাহলে তা তার রোযায় কোন প্রভাব ফেলবে না। [রোযা শুদ্ধ হয়ে যাবে] কেননা তা ঋতুস্রাব নয়।

প্রশ্ন ১৫: যদি কোন মহিলা তার মাসিক ঋতুস্রাবের নির্ধারিত সময়ে একদিন রক্ত দেখতে পায় কিন্তু পরেরদিন সারাদিনে রক্ত দেখতে না পায়, তাহলে সেক্ষেত্রে তার করণীয় কি?
উত্তরঃ স্বাভাবিকভাবে মনে হয়, ঋতুস্রাবের দিনগুলোতে তার ক্ষণিকের এই পবিত্রতা ঋতুর অন্তর্ভুক্ত ধরা হবে, সেটাকে পবিত্রতা গণ্য করা হবে না। অতএব, সাধারণ ঋতুবতী যেগুলো থেকে বিরত থাকে, উক্ত মহিলাও সেগুলো থেকে বিরত থাকবে। অবশ্য কোন কোন আলেম বলেছেন, যদি কোন মহিলা একদিন রক্ত এবং আরেক দিন স্বচ্ছতা দেখতে পায়, তাহলে ঐ রক্ত ঋতুস্রাব হিসাবে এবং ঐ স্বচ্ছতা পবিত্রতা হিসাবে গণ্য হবে। পনের দিন পর্যন্ত এই হুকুম বলবৎ থাকবে। পনের দিন অতিক্রম করলে ঐ রক্ত ইস্তেহাযার রক্ত হিসাবে গণ্য হবে। এটা ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল (রাহিমাহুল্লাহ)-এর মাযহাবের প্রসিদ্ধ মত।

প্রশ্ন ১৬: ঋতুর শেষ দিনগুলোতে পবিত্র হওয়ার পূর্বে মহিলারা সাধারণতঃ রক্তের চিহ্ন দেখতে পায় না। এক্ষণে সাদা জাতীয় পদার্থ( [যা ঋতুর শেষের দিকে কোন কোন মহিলার হয়ে থাকে] না দেখা সত্তে¦ও কি সে ঐ দিনগুলোতে রোযা রাখবে, না কি করবে?
উত্তরঃ যদি তার অভ্যাস এমন হয় যে, [নিশ্চিত পবিত্র হওয়ার আলামত হিসাবে] সে সাদা জাতীয় পদার্থ দেখতে পায় না-যেমনটি কোন কোন মহিলার ক্ষেত্রে হয়ে থাকে, তাহলে সে রোযা রাখবে। পক্ষান্তরে সাদা জাতীয় পদার্থ দেখা যদি তার অভ্যাস হয়ে থাকে, তাহলে সে তা না দেখা পর্যন্ত রোযা রাখবে না।
প্রশ্ন ১৭: জরূরী প্রয়োজনে ঋতুবতী এবং প্রসূতি মহিলার দেখে ও মুখস্ত কুরআন তেলাওয়াতের বিধান কি-যেমন যদি সে ছাত্রী অথবা শিক্ষিকা হয়?
উত্তরঃ ঋতুবতী এবং প্রসূতি মহিলার [জরূরী] প্রয়োজনেঃ যেমন শিক্ষিকা ও ছাত্রীর ক্ষেত্রে কুরআন তেলাওয়াত করাতে কোন দোষ নেই। তবে শুধুমাত্র ছওয়াবের উদ্দেশ্যে তেলাওয়াত না করাই উত্তম। কেননা অধিকাংশ আলেম মনে করেন যে, ঋতুবতীর জন্য কুরআন তেলাওয়াত ঠিক নয়।
প্রশ্ন ১৮: ঋতুবতীর ঋতু বন্ধ হওয়ার পর তার পোষাকে রক্ত বা অপবিত্র কোন কিছু লাগেনি জেনেও কি তাকে পোষাক বদলাতে হবে?
উত্তরঃ এটা তার জন্য যরূরী নয়। কেননা ঋতুস্রাব পুরো শরীরকে অপবিত্র করে না; বরং শরীরের যে অংশে লাগে, কেবল সে অংশকেই অপবিত্র করে। আর এ কারণে রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মহিলাদের পোষাকের যে অংশে ঋতুস্রাব লাগে, তা ধুয়ে ফেলে ঐ পোষাকে নামায পড়ার বিধান করেছেন।
প্রশ্ন ১৯: প্রশ্নকারী বলেন, একজন মহিলা প্রসূতি থাকা অবস্থায় সাতদিন রোযা ভেঙ্গেছে এবং স্তন্যদানকারিণী থাকা অবস্থায় পরবর্তী রমযানের সাতদিন অতিবাহিত হয়ে গেছে-তথাপিও অসুস্থতার অজুহাতে সে রোযার ক্বাযা আদায় করেনি। এমনকি তৃতীয় রমযানও আসার উপক্রম হয়েছে এক্ষণে তার করণীয় কি? জানিয়ে বাধিত করবেন। আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন।
উত্তরঃ উক্ত মহিলার বক্তব্য অনুযায়ী যদি সে সত্যিই অসুস্থ হয়ে থাকে এবং ক্বাযা আদায় করতে সক্ষম না হয়, তাহলে যখনই সক্ষম হবে তখনই ক্বাযা আদায় করবে। এক্ষেত্রে পরবর্তী রমযান এসে গেলেও সমস্যা নেই। কেননা সে ওযরগ্রস্ত। কিন্তু যদি তার ওযর না থাকে; বরং অহেতুক অজুহাত দেখায় এবং বিষয়টা তুচ্ছ জ্ঞান করে, তাহলে তার জন্য এক রমযানের ক্বাযা রোযা অন্য রমযান পর্যন্ত বিলম্বিত করা বৈধ নয়। আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, “আমার উপর রোযা ক্বাযা থাকত এবং আমি তা শাবান মাসে ছাড়া ক্বাযা আদায় করতে পারতাম না।” (বুখারী, ‘রোযা’ অধ্যায়, ‘রমযানের ক্বাযা রোযা কখন আদায় করবে?’ অনুচ্ছেদ হা/১৯৫০; মুসলিম, ‘রোযা’ অধ্যায়, ‘রমযানের ক্বাযা রোযা দেরীতে আদায় করা জায়েয’ অনুচ্ছেদ হা/১৫১, ১১৪৬।) অতএব, ঐ মহিলাকে নিজের প্রতি খেয়াল করতে হবে; আসলেই যদি তার ওযর না থাকে, তাহলে সে গোনাহগার হবে এবং তাকে আল্লাহর নিকট তওবা করতে হবে। আর তার যিম্মায় যে রোযা বাকী রয়েছে, তা দ্রুত ক্বাযা আদায় করতে হবে। পক্ষান্তরে, যদি সে ওযরগ্রস্ত হয়, তাহলে এক বা দুই বছর পিছিয়ে দিলেও তার কোন গোনাহ হবে না।
প্রশ্ন ২০: কতিপয় মহিলা পরবর্তী রমযানে পদার্পণ করেছে অথচ বিগত রমযানের কয়েক দিনের রোযা তারা রাখে নি এক্ষণে তাদের করণীয় কি?
উত্তরঃ তাদের করণীয় হলো, এহেন কাজ থেকে ফিরে এসে আল্লাহর নিকট তওবা করতে হবে। কেননা বিনা ওযরে কারো জন্য এক রমযানের রোযা অন্য রমযানে ঠেলে নিয়ে যাওয়া জায়েয নয়। এ মর্মে আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, “আমার উপর রমযানের রোযা বাকী থাকত এবং আমি তা শাবান মাসে ছাড়া আদায়ে সক্ষম হতাম না।” এই হাদীছ প্রমাণ করে যে, এক রমযানের রোযা পরবর্তী রমযানের পর পর্যন্ত বিলম্বিত করা সম্ভব [বৈধ] নয়। সুতরাং তাকে তার কৃতকর্মের দরুন তওবা করতে হবে এবং দ্বিতীয় রমযানের পর ছেড়ে দেওয়া রোযাগুলোর ক্বাযা আদায় করতে হবে।
প্রশ্ন ২১: কোন মহিলা বেলা ১টার সময় ঋতুবতী হলো [অর্থাৎ নামাযের সময় হওয়ার পরে তার ঋতুস্রাব আসল] কিন্তু তখনও সে যোহরের নামায আদায় করেনি, তাহলে ঋতু বন্ধ হওয়ার পরে কি তাকে ঐ নামাযের ক্বাযা আদায় করতে হবে?
উত্তরঃ এই মাসআলায় আলেমগণের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। তাঁদের কেউ কেউ বলেছেন, তাকে ঐ নামাযের ক্বাযা আদায় করতে হবে না। কেননা সে অবহেলা করে ছেড়ে দেয়নি। অনুরূপভাবে সে পাপীও হবে না। কেননা নামাযের শেষ ওয়াক্ত পর্যন্ত নামাযকে বিলম্বিত করা তার জন্য জায়েয রয়েছে।
আবার কেউ কেউ বলেছেন, তাকে ঐ নামাযের ক্বাযা আদায় করতে হবে। কেননা রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “যে ব্যক্তি নামাযের এক রাকআত পেল, সে পুরো নামায পেল।” আর সাবধানতাহেতু তার ক্বাযা আদায় করাই ভাল। কেননা এক ওয়াক্ত নামায আদায় করতে তার কষ্ট হওয়ার কথা নয়।
প্রশ্ন ২২: গর্ভবতী মহিলা যদি সন্তান প্রসবের ২/১ দিন আগে রক্ত দেখতে পায়, তাহলে এই কারণে কি সে নামায-রোযা পরিত্যাগ করবে না কি করবে?
উত্তরঃ গর্ভবতী মহিলা যদি সন্তান প্রসবের ২/১ দিন আগে রক্ত দেখতে পায় এবং তার সাথে প্রসব বেদনা থাকে, তাহলে উহা প্রসূতি অবস্থার রক্ত। এই কারণে সে নামায-রোযা পরিত্যাগ করবে। কিন্তু যদি তার সাথে প্রসব বেদনা না থাকে, তাহলে উহা কূ-রক্ত। এটাকে কোন কিছু গণ্য করা হবে না এবং ঐ রক্ত তাকে নামায-রোযা থেকেও বিরত রাখবে না।
প্রশ্ন ২৩: মানুষের সাথে রোযাব্রত পালনের স্বার্থে মাসিক ঋতুস্রাব বন্ধের পিল সেবনের বিষয়ে আপনার মতামত কি?
উত্তরঃ আমি এ থেকে সাবধান করছি কারণ এই বড়িগুলোতে ব্যাপক ক্ষতি রয়েছে- যা ডাক্তারগণের মাধ্যমে আমার কাছে প্রমাণিত হয়েছে। সেজন্য মহিলাদেরকে বলব, এটা আদম সন্তানের নারীকূলের উপর আল্লাহপাক নির্ধারণ করে দিয়েছেন। সুতরাং আল্লাহর নির্ধারণকৃত বিষয় নিয়েই সন্তুষ্ট থাক এবং কোন বাধা না থাকলে রোযা রাখ আর বাধা থাকলে আল্লাহর তাক্বদীরের উপর সন্তুষ্ট থেকে রোযা পরিত্যাগ কর।
প্রশ্ন ২৪: প্রশ্নকারী বলছেন, একজন মহিলা প্রসূতি অবস্থা থেকে পবিত্র হওয়ার দুই মাস পরে রক্তের ছোট ছোট কিছু বিন্দু দেখতে পেয়েছে। এক্ষণে সে কি নামায-রোযা পরিত্যাগ করবে না কি করবে?
উত্তরঃ ঋতুস্রাব ও প্রসূতি অবস্থার ক্ষেত্রে মহিলাদের সমস্যাগুলো কিনারা বিহীন সাগরের মত। আর এর অন্যতম কারণ হচ্ছে, জন্মবিরতিকরণ এবং ঋতুস্রাব প্রতিরোধক পিল ব্যবহার। আগে মানুষ এ জাতীয় সমস্যা সম্পর্কে তেমন অবগত ছিল না। তবে একথা ঠিক যে, মুহাম্মদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর রাসূল হিসাবে আবির্ভাবের পর থেকে শুধু নয়; বরং মহিলাদের সৃষ্টিলগ্ন থেকেই তাদের সমস্যা ছিল। তবে দুঃখজনক বিষয় হলো, তাদের সমস্যাগুলো ইদানিং এত পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে যে, সেগুলোর সমাধান করতে গিয়ে মানুষ কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ছে। অবশ্য এসব ক্ষেত্রে সাধারণ নিয়ম হচ্ছে, মহিলা যখন ঋতুস্রাব ও প্রসূতি অবস্থা থেকে নিশ্চিতভাবে পবিত্র হযে যাবে অর্থাৎ ঋতুস্রাবের ক্ষেত্রে সাদা জাতীয় পদার্থ (القصة البيضاء ) দেখতে পাবে- যা মহিলারা চিনে (ইমাম যায়লাঈ (রহেমাহুল্লাহ) বলেন, القصة (আল-ক্বাছ্ছাহ) হলো সাদা সূতার মত- যা মহিলাদের ঋতুস্রাবের শেষের দিকে তাদের পবিত্র হওয়ার আলামত হিসাবে সম্মুখ ভাগ দিয়ে বের হয়। আবার কেউ কেউ বলেন, القصة (আল-ক্বাছ্ছাহ) হলো সাদা জাতীয় পানি- যা হায়েয বন্ধ হওয়ার সময় গর্ভাশয় থেকে বের হয় (আল-মাওসূআতুল ফিক্বহিইয়াহ আল-কুয়েতিইয়াহ ৩৩/২৭৯)।) এবং এরপর ঘোলা বা হলুদ রঙের যা বের হবে অথবা ২/১ ফোটা যে রক্ত আসবে অথবা সামান্য যে সিক্ততা অনুভূত হবে, সেগুলো আসলে ঋতুস্রাব নয়। সে কারণে এগুলো তাকে নামায-রোযা থেকে বিরত রাখবে না এবং স্বামীকে স্ত্রী সহবাস থেকেও বাধা দিবে না। উম্মে আত্বিয়্যা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, “ঘোলা বা হলুদ রঙের যা বের হয়, তাকে আমরা কিছুই গণ্য করতাম না।”(বুখারী)। (‘ঋতুস্রাব’ অধ্যায়, ‘ঋতুস্রাবের নির্দিষ্ট দিনের বাইরে হলুদ বর্ণের এবং ঘোলা পদার্থ [বের হওয়া]’ অনুচ্ছেদ হা/৩২৬।) ইমাম আবু দাঊদ কিছু শব্দ বেশী উল্লেখ করে হাদীছটা বর্ণনা করেছেন, “পবিত্র হওয়ার পরে”[অর্থাৎ পবিত্র হওয়ার পরে ঘোলা বা হলুদ রঙের যা বের হয়, তাকে আমরা কিছুই গণ্য করতাম না।]। তাঁর সনদও ছহীহ। (‘পবিত্রতা’ অধ্যায়, ‘পবিত্র হওয়ার পরে যে মহিলা হলুদ ও ঘোলা বর্ণের পদার্থ দেখতে পায়’ অনুচ্ছেদ হা/৩০৭।) সেজন্য আমরা বলি, নিশ্চিত পবিত্রতা অর্জনের পরে উল্লেখিত যা কিছু ঘটবে, তাতে মহিলার কোন সমস্যা হবে না এবং তাকে তা নামায-রোযা ও সহবাস থেকেও বিরত রাখবে না। কিন্তু পবিত্রতা অর্জনের পূর্বে বিষয়গুলো নিয়ে তাড়াহুড় না করা আবশ্যক। কেননা কতিপয় মহিলা রক্ত শুকিয়ে গেলে নিশ্চিত পবিত্রতা অর্জনের আগেই তাড়াহুড়া করে গোসল করে নেয়। এই কারণে মহিলা ছাহাবীগণ (রাযিয়াল্লাহু আনহুন্না) উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা)-এর নিকট রক্তযুক্ত তুলা পাঠাতেন আর তখন তিনি বলতেন, “সাদা জাতীয় পদার্থ না দেখা পর্যন্ত তোমরা তাড়াহুড়া করে কিছু করবে না।” (ইমাম বুখারী হাদীছটাকে ‘মুআল্লাক্ব’ হিসাবে বর্ণনা করেছেন, ‘ঋতুস্রাব’ অধ্যায়, ‘ঋতুস্রাব আসা এবং চলে যাওয়া’ অনুচ্ছেদ।)

প্রশ্ন ২৫: কিছু কিছু মহিলার ঋতুস্রাব চলতে থাকে এবং মাঝে মাঝে ২/১ দিনের বিরতি দিয়ে আবার শুরু হয়। এমতাবস্থায় নামায-রোযা সহ অন্যান্য ইবাদতের হুকুম কি?
উত্তরঃ বেশীর ভাগ আলেমগণের নিকট প্রসিদ্ধ কথা হলো, যদি উক্ত মহিলার নিন্দিষ্ট কোন দিনে ঋতুস্রাব বন্ধ হওয়ার পূর্বাভ্যাস থাকে এবং সেই নিন্দিষ্ট দিন শেষ হয়ে যায়, তাহলে সে গোসল করে নামায-রোযা করবে। আর এর ২/৩ দিন পর যা বের হতে দেখবে, তা মূলত ঋতুস্রাব হিসাবে গণ্য হবে না। কেননা তাদের নিকট একজন মহিলার পবিত্র থাকার সর্বনিম্ন সময় হচ্ছে ১৩ দিন [অর্থাৎ দুই হায়েযের মাঝখানে ১৩ দিনের কম সময় বিরতি থেকে রক্ত দেখা দিলে তাকে পবিত্র গণ্য করা হবে। আর ১৩ দিনের বেশী বিরতির পর রক্ত দেখা গেলে তাকে ঋতুবতী হিসাবে গণ্য করা হবে]।
আবার কেউ কেউ বলেন, যখনই সে রক্ত দেখবে, তখনই তা ঋতুস্রাব হিসাবে গণ্য হবে আর যখনই রক্ত বন্ধ হতে দেখবে, তখনই সে পবিত্র হিসাবে বিবেচিত হবে। যদিও দুই ঋতুর মাঝখানে ১৩ দিন না হয়।
প্রশ্ন ২৬: রমযানের রাত্রিগুলোতে মহিলাদের বাড়ীতে নামায পড়া উত্তম নাকি মসজিদে- বিশেষ করে মসজিদে যদি ওয়ায-নছীহতের ব্যবস্থা থাকে? যেসব মহিলা মসজিদে নামায পড়ে, তাদের ব্যাপারে আপনার পরামর্শ কি?
উত্তরঃ মহিলাদের বাড়ীতে নামায পড়াই উত্তম। এমর্মে রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাধারণ ঘোষণা হচ্ছে, “তাদের জন্য তাদের বাড়ীই উত্তম”। (আবু দাঊদ, ‘নামায’ অধ্যায়, ‘মহিলাদের মসজিদে যাওয়া’ অনুচ্ছেদ হা/৫৬৭।) তাছাড়া মহিলাদের বাড়ীর বাইরে হওয়ার বিষয়টা বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে ফেৎনামুক্ত নয়। সে দৃষ্টিকোণ থেকে মসজিদে যাওয়ার চেয়ে বাড়ীতে অবস্থান করাই তাদের জন্য অধিক কল্যাণকর। ওয়ায-নছীহত ক্যাসেটের মাধ্যমে তারা বাড়ীতেই শোনার ব্যবস্থা করতে পারবে।
আর যারা মসজিদে নামায পড়তে যায়, তাদের ব্যাপারে আমার পরামর্শ হলো, তারা কোন প্রকার সৌন্দর্য্য প্রদর্শন এবং সুঘ্রাণ ব্যবহার ছাড়াই মসজিদে যাবে।
প্রশ্ন ২৭: রমযান মাসে দিনের বেলায় রোযা অবস্থায় কোন মহিলার খাদ্যের স্বাদ চেখে দেখার হুকুম কি?
উত্তরঃ প্রয়োজনে স্বাদ চেখে দেখলে কোন অসুবিধা নেই। তবে সে যেন স্বাদ চেখে দেখার পর মুখ থেকে ঐ জিনিষটা ফেলে দেয়।
প্রশ্ন ২৮: গর্ভধারণের প্রাথমিক অবস্থায় থাকা একজন মহিলা দুর্ঘটনায় আঘাতপ্রাপ্ত হয়। অতঃপর প্রচ- রক্তক্ষরণের পর তার গর্ভপাত ঘটে। এমতাবস্থায় উক্ত মহিলার জন্য কি রোযা ছেড়ে দেওয়া জায়েয নাকি সে রোযা চালিয়ে যাবে? আর রোযা ভাঙলে কি তার কোন গোনাহ হবে?
উত্তরঃ আমাদের বক্তব্য হলো, গর্ভবতীর সাধারণতঃ ঋতুস্রাব আসে না, যেমনটি ইমাম আহমাদ (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, “মহিলারা ঋতুস্রাব বন্ধ হওয়ার মাধ্যমে গর্ভাবস্থা টের পায়।” আর আলেম সমাজের বক্তব্য অনুযায়ী, আল্লাহপাক এই ঋতুস্রাবকে অন্তর্নিহিত এক তাৎপর্যকে লক্ষ্য করে সৃষ্টি করেছেন। তাহলো এই যে, গর্ভজাত সন্তানের জন্য খাদ্য হিসাবে কাজ করা। সেজন্য যখন পেটে সন্তান আসে, তখন ঋতুস্রাব বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু কিছু কিছু মহিলার গর্ভধারণের আগের মতই ঋতুস্রাব চলতে দেখা যায়। এই ঋতুস্রাবও প্রকৃত ঋতুস্রাব হিসাবে গণ্য হবে। কেননা গর্ভাবস্থার কারণে তার ঋতুস্রাবের উপর কোন প্রভাব পড়ে নি। সুতরাং সাধারণ মহিলার ঋতুস্রাব যা থেকে বিরত রাখবে, গর্ভবতীর ঋতুস্রাবও তা থেকে বিরত রাখবে এবং উহা যা আবশ্যক করবে ইহাও তা আবশ্যক করবে। অনুরূপভাবে উহা যা থেকে দায়মুক্ত করবে ইহাও তা থেকে দায়মুক্ত করবে। মূলকথা হচ্ছে, গর্ভধারিণীর রক্ত দুই ধরনেরঃ এক ধরনের রক্ত ঋতুস্রাব হিসাবে গণ্য হবে। আর তা হচ্ছে, যেটা এখনও চলছে, যেমনিভাবে গর্ভধারণের পূর্বেও চলছিল। অর্থাৎ গর্ভধারণ এই ঋতুস্রাবের উপর কোন প্রভাব ফেলেনি। বিধায় ইহা ঋতুস্রাব হিসাবেই গণ্য হবে। আরেক ধরনের রক্ত গর্ভধারিণীর নিকট হঠাৎ আসে- দুর্ঘটনাজনিত কারণে হোক বা কোন কিছু বহনের কারণে হোক অথবা কোন কিছু থেকে পড়ে গিয়ে হোক অথবা অন্য কোন কারণে হোক। এই ধরনের রক্তকে ঋতুস্রাব গণ্য করা হবে না; বরং তা শিরা থেকে আসা সাধারণ রক্ত। সুতরাং এই রক্ত তাকে নামায-রোযা থেকে বিরত রাখবে না; বরং সে পবিত্র হিসাবে বিবেচিত হবে। কিন্তু দুর্ঘটনার কারণে যদি গর্ভপাত ঘটেই যায়, তাহলে আলেমগণের বক্তব্য অনুযায়ী তার দুটো অবস্থাঃ
এক গর্ভজাত সন্তান আকৃতি ধারণের পর বের হলে বের হওয়ার পরবর্তী রক্ত প্রসূতি অবস্থার রক্ত হিসাবে গণ্য হবে। ফলে সে নামায-রোযা ত্যাগ করবে এবং পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত তার সাথে তার স্বামী সহবাস করা থেকে বিরত থাকবে।
দুই গর্ভজাত সন্তান আকৃতি ধারণের পূর্বে বের হলে সেই রক্তকে প্রসূতি অবস্থার রক্ত গণ্য করা হবে না; বরং সেটা কূ-রক্ত হিসাবে বিবেচিত হবে এবং উহা তাকে নামায-রোযা ইত্যাদি ইবাদত থেকেও বিরত রাখবে না।
বিশেষজ্ঞ মহল বলেন, বাচ্চা আকৃতি ধারণের সর্বনিম্ন সময় হচ্ছে ৮১ দিন। এ প্রসঙ্গে আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বর্ণনা করেন- যিনি হচ্ছেন সর্বজনবিদিত সত্যবাদী- “তোমাদের যে কাউকে চল্লিশ দিন ধরে তার মায়ের পেটে একত্রিত করা হয়, তারপর অনুরূপ চল্লিশ দিনে সে জমাটবদ্ধ রক্ত হয় এবং তারপর অনুরূপ চল্লিশ দিনে সে মাংসপি-ে পরিণত হয়। অতঃপর চারটি বিষয়ের নিন্দেশনা দিয়ে তার কাছে ফেরেশতা পাঠানো হয়। অতঃপর তার রিযিক্ব, দুনিয়াতে তার অবস্থানকাল, তার আমলনামা এবং সে দুর্ভাগা হবে না সৌভাগ্যবান হবে তা তিনি নির্ধারণ করে দেন।” (বুখারী, ‘নবীগণের কাহিনী’ অধ্যায়, ‘আদম ও তার সন্তানাদি সৃষ্টি’ অনুচ্ছেদ হা/৩৩৩২; মুসলিম, ‘ভাগ্য’ অধ্যায়, ‘আদম সন্তানের তার মায়ের পেটে সৃষ্টির ধরন’ অনুচ্ছেদ হা/১, ২৬৪৩।) এই হাদীছের আলোকে ৮১ দিনের আগে আকৃতি লাভ সম্ভব নয়। আর বিশেষজ্ঞগণের মতে, বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে ৯০ দিনের আগে আকৃতি প্রকাশিত হয় না।
প্রশ্ন ২৯: গত বছর গর্ভধারণের তৃতীয় মাসে আমার গর্ভপাত ঘটে এবং পবিত্র হওয়ার আগে আমি নামায আদায় করিনি। তখন আমাকে বলা হয়েছিল, তোমার নামায পড়া উচিৎ ছিল। এমতাবস্থায় আমার করণীয় কি? উল্লেখ্য যে, নিন্দিষ্টভাবে সেই দিনগুলোর সংখ্যা আমার জানা নেই।
উত্তরঃ আলেমগণের নিকট প্রসিদ্ধ কথা হলো, তিন মাসে কোন মহিলার গর্ভপাত ঘটলে সে নামায পড়বে না। কেননা কোন মহিলার যখন গর্ভপাত হয়, তখন গর্ভস্থ সন্তানের যদি আকৃতি প্রকাশ পায়, তাহলে উক্ত মহিলার ঐ রক্ত প্রসূতি অবস্থার রক্ত হিসাবে পরিগণিত হবে। ফলে সে নামায আদায় করবে না।
বিদ্বানগণ বলেন, ৮১ দিন পূর্ণ হলে গর্ভস্থ বাচ্চার আকৃতি প্রকাশ পাওয়া সম্ভব। আর এটা তিন মাসেরও কম সময়। সুতরাং উক্ত মহিলা যদি নিশ্চিত হয় যে, তিন মাসেই তার গর্ভপাত ঘটেছে, তাহলে তার রক্ত প্রসূতি অবস্থার রক্ত( হিসাবে পরিগণিত হবে। কিন্তু যদি ৮০ দিনের আগে গর্ভপাত ঘটে, তাহলে তার ঐ রক্ত কূ-রক্ত হিসাবে পরিগণিত হবে। ফলে সে নামায পরিত্যাগ করবে না। এক্ষণে উক্ত প্রশ্নকারিণীকে মনে মনে [নামাযের ওয়াক্তের সংখ্যা] স্মরণ করার চেষ্টা করতে হবে। যদি ৮০ দিনের আগে গর্ভপাত ঘটে, তাহলে সে [ছুটে যাওয়া] নামাযের ক্বাযা আদায় করবে। আর কত ওয়াক্ত নামায ছুটে গেছে তা যদি সে স্মরণ করতে না পারে, তাহলে একটা অনুমানের আপ্রাণ চেষ্টা করবে এবং সেই অনুমানের ভিত্তিতে সে ক্বাযা আদায় করবে।
প্রশ্ন ৩০: একজন মহিলা বলছে, সে তার উপর রমযানের রোযা ফরয হওয়ার পর থেকে রোযা রাখে কিন্তু মাসিক ঋতুস্রাবের কারণে ভাঙ্গা রোযাগুলোর ক্বাযা সে আদায় করে না । আর এর অন্যতম কারণ হচ্ছে, ঐদিনগুলোর হিসাব তার কাছে থাকে না। এক্ষণে সে তার করণীয় বিষয় সম্পর্কে জানতে চায়।
উত্তরঃ মুমিন নারীদের এমন ঘটনা আমাদেরকে কষ্ট দেয়। কেননা ফরয রোযার ক্বাযা অনাদায়- হয় না জানার কারণে, না হয় অবহেলা করার কারণে হয়ে থাকে। আর এদুটোই মছীবত। কারণ মূর্খতার ঔষধ হলো জানা এবং জিজ্ঞেস করা। আর অবহেলার ঔষধ হলো আল্লাহভীতি, তাঁর নযরদারীর কথা চিন্তা করা, তাঁর শাস্তির ভয় পাওয়া এবং তাঁর সন্তুষ্টির কাজে দ্রুত অগ্রসর হওয়া। অতএব, উক্ত মহিলাকে তার কৃতকর্মের জন্য আল্লাহর নিকট তওবা এবং ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। অতঃপর পরিত্যাগকৃত রোযাগুলোর একটা হিসাব করার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে সেগুলোর ক্বাযা আদায় করতে হবে। এভাবে সে দায়মুক্ত হওয়ার চেষ্টা করবে। আল্লাহ তার তওবা কবুল করুন- আমরা সেই কামনা করি।
প্রশ্ন ৩১: একজন প্রশ্নকারিণী বলছেন, নামাযের সময় শুরু হওয়ার পরে কোন মহিলা ঋতুবতী হলে তার হুকুম কি? পবিত্র হওয়ার পরে কি ঐ নামাযের ক্বাযা আদায় করা তার উপর ওয়াজিব হবে? নামাযের ওয়াক্ত শেষ হওয়ার পূর্বে পবিত্র হলেও কি অনুরূপ বিধান?
উত্তরঃ প্রথমতঃ নামাযের সময় শুরু হওয়ার পরে কেউ ঋতুবতী হলে পবিত্র হওয়ার পর ঐ নামাযের ক্বাযা আদায় করা তার উপর ওয়াজিব- যদি ঋতুস্রাব আসার আগে সে ঐ নামায আদায় না করে থাকে। এ মর্মে রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “যে ব্যক্তি নামাযের এক রাকআত পেল, সে পুরো নামাযই পেল।” অতএব, এক রাক‘আত নামায পড়ার মত সময় যদি সে পায় অতঃপর সেই নামায পড়ার আগে তার ঋতুস্রাব আসে, তাহলে পবিত্র হওয়ার পরে ঐ নামাযের ক্বাযা আদায় করা তার জন্য জরূরী।
দ্বিতীয়তঃ যদি সে নামাযের ওয়াক্ত শেষ হওয়ার পূর্বে পবিত্র হয়ে যায়, তাহলে তাকে ঐ নামাযের ক্বাযা আদায় করতে হবে। অতএব, যদি সে সূর্যোদয়ের আগে এক রাকআত নামায পড়ার মত সময় বাকী থাকতে পবিত্র হয়, তাহলে ফজরের নামাযের ক্বাযা আদায় করা তার উপর আবশ্যক হবে। যদি সে সূর্যাস্তের আগে এক রাকআত নামায পড়ার মত সময় বাকী থাকতে পবিত্র হয়, তাহলে তার উপর আছরের নামায পড়া আবশ্যক হবে। অনুরূপভাবে যদি সে মধ্যরাতের আগে এক রাকআত নামায পড়ার মত সময় বাকী থাকতে পবিত্র হয, তাহলে তার উপর এশার নামাযের ক্বাযা আদায় করা আবশ্যক হবে। কিন্তু যদি সে মধ্যরাতের পরে পবিত্র হয়, তাহলে তাকে এশার নামায আদায় করতে হবে না। তবে ফজরের নামাযের সময় হলে তা তাকে আদায় করতে হবে। মহান আল্লাহ বলেন, “অতঃপর যখন তোমরা নিরাপদ হও, তখন তোমরা নামায প্রতিষ্ঠিত কর। নিশ্চয়ই নামায বিশ্বাসীগণের উপর নিন্দিষ্ট সময়ের জন্য নির্ধারিত” (আন-নিসা ১০৩)। অর্থাৎ এমন কিছু নিন্দিষ্ট সময়ে তা ফরয করা হয়েছে- যা থেকে নামাযকে অন্য সময়ে বিলম্বিত করা এবং উক্ত সময় শুরু হওয়ার আগে তা আদায় করা কারো জন্য জায়েয নয়।

প্রশ্ন ৩২: নামাযরত অবস্থায় আমার ঋতুস্রাব এসেছে। এখন আমার করণীয় কি? আমি কি ঐ নামাযের ক্বাযা আদায় করব?
উত্তরঃ নামাযের সময় হওয়ার পর যদি ঋতুস্রাব আসে-যেমন সূর্য ঢলে যাওয়ার আধঘণ্টা পর কারো ঋতুস্রাব আসল, তাহলে সে ঋতুস্রাব থেকে মুক্ত হওয়ার পর ঐ নামাযের ক্বাযা আদায় করবে- যার ওয়াক্ত শুরু হওয়ার সময় সে পবিত্র ছিল। এ মর্মে মহান আল্লাহ বলেন, “নিশ্চয়ই নামায বিশ্বাসীগণের উপর নিন্দিষ্ট সময়ের জন্য নির্ধারিত” (নিসা ১০৩)। উক্ত মহিলা যে নামাযে তার ঋতু এসেছিল, সে নামাযের ক্বাযা আদায় করবে না। রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দীর্ঘ এক হাদীছে এ মর্মে বলেন, “মহিলার বিষয়টা কি এমন নয় যে, যখন তার ঋতুস্রাব আসে, তখন সে নামায পড়ে না এবং রোযাও রাখে না?” অনুরূপভাবে আলেম সমাজ এমর্মে ঐক্যমত পোষণ করেছেন যে, ঋতুকালীন সময়ে ছুটে যাওয়া নামায তাকে আদায় করতে হবে না। কিন্তু এক বা একাধিক রাকআত পরিমাণ নামায পড়ার মত সময় বাকী থাকতে যদি সে পবিত্র হয়, তাহলে সে ঐ ওয়াক্তের নামাযের ক্বাযা আদায় করবে। এ মর্মে রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “যে ব্যক্তি সূর্যাস্তের পূর্বে আছরের এক রাকআত পেল, সে পুরো আছরের নামায পেল।” অতএব, যদি আছরের সময় পবিত্র হয় এবং সূর্যাস্তের পূর্বে এক রাকআত পরিমাণ নামায পড়ার সময় থাকে, তাহলে তাকে আছরের নামায পড়তে হবে। অনুরূপভাবে যদি সে সূর্যোদয়ের পূর্বে এক রাকআত পরিমাণ নামায পড়ার মত সময় বাকী থাকতে পবিত্র হয়, তাহলে তাকে ফজরের নামায পড়তে হবে।

প্রশ্ন ৩৩: এক ব্যক্তি বলছেন, আপনার অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে, আমার মায়ের বয়স ৬৫ বছর। ১৯ বছর ধরে তিনি কোন সন্তান প্রসব করেননি। বিগত তিন বছর ধরে তার রক্তক্ষরণ হচ্ছে। এক্ষণে রমযানের আগমন উপলক্ষে তাঁকে নছীহতদানে বাধিত করবেন। এ জাতীয় মহিলারা কিভাবে চলবেন?
উত্তরঃ এ জাতীয় মহিলা- যার রক্তক্ষরণ হয়, সে এই ঘটনার আগের মাসিক ঋতুস্রাবের দিনগুলো হিসাব করে তদনুযায়ী প্রত্যেক মাসে নামায-রোযা পরিত্যাগ করবে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, যদি আগে প্রত্যেক মাসের শুরুতে ছয় দিন ধরে ঋতুস্রাব চলা তার অভ্যাস থাকে, তাহলে এখনও সে প্রত্যেক মাসের শুরুতে ছয় দিন অপেক্ষা করবে- নামায পড়বে না, রোযাও রাখবে না। অতঃপর ছয় দিন শেষ হয়ে গেলে গোসল করে নামায-রোযা আদায় করবে।
উক্ত মহিলার এবং তার মত রোগগ্রস্ত মহিলার নামাযের পদ্ধতি হলো, সে তার লজ্জাস্থানকে পরিপূর্ণভাবে ধুয়ে পট্টি বাঁধবে এবং তারপর অযু করবে। আর ফরয নামাযের ক্ষেত্রে নামাযের সময় শুরু হলে এমনটা করবে। অনুরূপভাবে ফরয নামাযের সময় ছাড়া অন্য সময় নফল নামায পড়তে চাইলে তখনও তা-ই করবে। বিষয়টা কষ্টসাধ্য হওয়ার কারণে যোহরের নামাযকে আছরের সাথে এবং মাগরিবের নামাযকে এশার সাথে জমা করে পড়া তার জন্য জায়েয রয়েছে। যাতে করে তার কষ্টসাধ্য এই কাজটা ৫ বারের পরিবর্তে ৩ বার করলেই যথেষ্ট হয়ঃ যোহর ও আছরের জন্য একবার, মাগরিব ও এশার জন্য একবার এবং ফজরের জন্য একবার।
আমি আবারও বলছি, যখন সে পবিত্রতা অর্জন করতে চাইবে, তখন সে তার লজ্জাস্থান ভাল করে ধুয়ে ন্যাকড়া বা অনুরূপ কোন কিছু দিয়ে উহাতে পট্টি বাঁধবে- যাতে রক্তক্ষরণের পরিমাণটা কমে। অতঃপর অযু করে নামায পড়বে। যোহরের চার রাকআত, আছরের চার রাক‘আত, মাগরিবের তিন রাক‘আত, এশার চার রাক‘আত এবং ফজরের দুই রাক‘আত পড়বে। অর্থাৎ সে কছর করবে না- যেমনটি কিছু কিছু মানুষ মনে করে থাকে। তবে যোহর ও আছরকে এবং মাগরিব ও এশাকে জমা করে পড়া তার জন্য জায়েয রয়েছে- কছর করে নয়। যোহরকে আছরের ওয়াক্তে বিলম্বিত করে অথবা আছরকে যোহরের ওয়াক্তে এগিয়ে নিয়ে এসে জমা করে পড়া যায়। অনুরূপভাবে মাগরিবকে এশার ওয়াক্তে বিলম্বিত করে অথবা এশাকে মাগরিবের ওয়াক্তে এগিয়ে নিয়ে এসে জমা করে পড়া যায়। আর যদি সে এই অযুতে নফল নামায পড়তে চায়, তাহলে পড়তে পারে- কোন অসুবিধা নেই।
প্রশ্ন ৩৪: হাদীছ এবং বক্তব্য শোনার জন্য ঋতুগ্রস্ত অবস্থায় কাবা শরীফে কোন মহিলার অবস্থানের বিধান কি?
উত্তরঃ কাবা ঘর অথবা অন্য কোন মসজিদে ঋতুবতীর অবস্থান জায়েয নয়। তবে প্রয়োজনে মসজিদের ভেতর দিয়ে যেতে পারে এবং প্রয়োজন মিটাতে পারে। রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা)-কে “খুমরা” (‘খুমরা’ হচ্ছে জায়নামায-যার উপর মুছল্লী সেজদা করে থাকে। আর এটাকে খুমরা (আচ্ছাদন) বলা হয় এই কারণে যে, উহা সেজদার সময় চেহারা ঢেকে রাখে।) আনতে বললে তিনি বলেন, ওটা তো মসজিদে আছে, আর আমি ঋতুগ্রস্ত। তখন রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, “তোমার ঋতুস্রাব তো তোমার হাতে লেগে নেই।” (মুসলিম, ‘ঋতুস্রাব’ অধ্যায়, ‘ঋতুবতী তার স্বামীর মাথা ধুয়ে দিতে পারে এবং চিরুনি করে দিতে পারে’ অনুচ্ছেদ হা/১১, ২৯৮।) সুতরাং মসজিদে রক্তবিন্দু পড়বে না মর্মে আশংকামুক্ত থাকা অবস্থায় ঋতুবতী মসজিদ দিয়ে গেলে কোন সমস্যা নেই। তবে যদি সে মসজিদে ঢুকে বসতে চায়, তাহলে তা জায়েয হবে না। কেননা রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মহিলাদের -তরুণী, কুমারী এবং ঋতুবতীদের- ঈদগাহে যেতে বলেছেন। তবে তিনি ঋতুবতীদেরকে নামাযের স্থান ত্যাগ করতে আদেশ করেছেন। (বুখারী, ‘ঈদায়েন’ অধ্যায়, ‘সাধারণ এবং ঋতুবতী মহিলাদের ঈদগাহে যাওয়া’ অনুচ্ছেদ, হা/৯৭৪. মুসলিম, ‘ঈদায়েন’ অধ্যায়, ‘দুই ঈদে মহিলাদের ঈদগাহে যাওয়া’ অনুচ্ছেদ, হা/১০, ৮৯০।) এ হাদীছ প্রমাণ করে যে, কুরআন-হাদীছ বা বক্তব্য শোনার জন্য মসজিদে অবস্থান করা ঋতুবতীর জন্য জায়েয নয়।

Leave a Reply


This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.