New Muslims APP

সুদ হারাম ব্যবসায় হালাল

images[4]

ইসলাম একটি কল্যাণমুখী জীবনব্যবস্থা। ইসলামই একমাত্র আদর্শ, যা মানুষকে এ দুনিয়ায় শান্তি, নিরাপত্তা, সুখ-সমৃদ্ধি এবং আখিরাতে মুক্তি দিতে পারে। ইসলামের চিরন্তন আদর্শকে মানুষের সার্বিক জীবনে বিজয়ী করার জন্য প্রত্যেকটি মুসলিমকে যথাসম্ভব প্রচেষ্টা চালাতে হবে। এটি প্রত্যেকেরই দ্বীনি দায়িত্ব। ইসলামি অর্থব্যবস্থা চালু করার মাধ্যমেই কেবল সামাজিক বৈষম্য দূর করা সম্ভব। অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জন করা সম্ভব। এর কোনো বিকল্প নেই। সোনালি যুগের মুসলিমরা ইসলামি অর্থব্যবস্থার সুফল লাভ করেছিলেন। উমার বিন আবদুল আযীযের শাসনকাল। রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় ধনীদের কাছ থেকে জাকাতের অর্থ ও সম্পদ সংগ্রহ করা হলো। এগুলো দরিদ্রদের মধ্যে বিতরণ করতে হবে, যাতে তারা খেয়ে পরে বাঁচতে পারে। মর্যাদার সাথে জীবনযাপন করতে পারে। কিন্তু কী আশ্চর্য! বিশাল মুসলিম সাম্রাজ্যে এমন একটি লোকও খুঁজে পাওয়া গেল না যে দারিদ্র্যের শিকার।
আল্লাহর দেয়া অর্থনৈতিক বিধান রাষ্ট্রীয়ভাবে চালু থাকার ফলে সবার জীবনে এসেছে সচ্ছলতা। পরে জাকাতের অর্থসম্পদ আফ্রিকায় পাঠিয়ে দেয়া হলো। ইসলাম ধনীদের জন্য নির্দিষ্ট হারে জাকাত ফরজ করেছে। যাদের ফল, ফসল আছে তাদের জন্য ওশুর (দশ ভাগের এক ভাগ) ফরজ করেছে। এর ফলে সম্পদের বিকেন্দ্রীকরণ হয়। ধনীদের হাতে সম্পদ কুক্ষিগত হয়ে পড়ে না। ধনীরা স্বেচ্ছাচারী ও লাগামহীনভাবে চলার সুযোগ পায় না। দরিদ্ররা ধনীদের সম্পদের কিছু অংশ পাওয়ায় তাদের অবস্থার উন্নতি হয়। অপর দিকে যেসব কারণে অর্থনীতির মেরুদণ্ড ভেঙে যায়, মানুষ পশুর সারিতে নেমে আসে, ফতুর হয়ে পড়ে, সেসব বিষয় ও বস্তুকে ইসলাম হারাম করেছে। যেমন অপচয়, অপব্যয়, মদ, জুয়া, ঘুষ, সুদ, মজুদদারি, ধোঁকা, প্রতারণা, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, লুটপাট ইত্যাদি। ইসলামে সৎ ব্যবসায়ীদের মর্যাদা : আল্লাহর রাসূল সা: বলেছেন, ‘সত্যবাদী আমানতদার ব্যবসায়ী অবস্থান করবে নবী, সত্যপরায়ণ ও শহীদগণের সাথে’ (তিরমিজি ও হাকিম।) সৎ ব্যবসায়ীদের গুণাবলি : ষ সৎ ব্যবসায়ীরা মিথ্যা কথা বলেন না। ষ আমানতের খেয়ানত করেন না। ষ ওয়াদা ভঙ্গ করেন না। ষ মাপে-ওজনে কম করেন না। ষ গলাকাটা দাম চান না। ষ অন্যের পাওনা টাকা পরিশোধে টালবাহানা করেন না। ষ কারো সাথে খারাপ ব্যবহার করেন না। ষ মাল বিক্রির সময় মিথ্যা কসম খান না। মালের মিথ্যা প্রশংসা করেন না। ষ মজুদদারির মাধ্যমে বাজারে মালের কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করেন না। ষ ভালো মালের সাথে খারাপ মাল মেশান না। ষ সর্বদা আল্লাহকে ভয় করে চলেন। ষ সঠিকভাবে মালের জাকাত দেন। কর্মচারীদের ওপর জুলুম করেন না। সর্বদা হালাল আয়-রোজগার করার চেষ্টা করেন।
যেসব পন্থায় অর্থ উপার্জন করা হারাম : ১. অন্যায়ভাবে কারো সম্পদ লুণ্ঠন, আত্মসাৎ, খেয়ানত, দখল বা ভোগ করা। ২. চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, অপহরণ ইত্যাদির মাধ্যমে অর্থ-সম্পদ অর্জন করা। ৩. এতিমের সম্পদ অন্যায়ভাবে আত্মসাৎ করা। ৪. পতিতাবৃত্তি ও ব্যভিচারের মাধ্যমে সম্পদ অর্জন করা। ৫. মাদকদ্রব্য, মূর্তি, লটারি ইত্যাদির উৎপাদন ও ক্রয়-বিক্রয়ের মাধ্যমে অর্থ-সম্পদ উপার্জন করা। ৬. মাপে ও ওজনে কম দিয়ে বা প্রতারণ করে অর্থ উপার্জন করা। ৭. সুদের লেনদেনের মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করা। ৮. ঘুষের মাধ্যমে অর্থসম্পদ উপার্জন করা। ৯. ভাগ্য গণনা করে অর্থসম্পদ লাভ করা। ১০. যেসব জিনিস মানুষের জন্য ক্ষতিকর এবং সমাজ ও রাষ্ট্রে অরাজকতা, নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির কাজে ব্যবহার করা হয় সেসব জিনিসের উৎপাদন, পরিবহন ও বেচাকেনাও অবৈধ। ১১. গান, বাজনা, নৃত্য, মানুষের নৈতিক চরিত্রের অবক্ষয় এবং অশ্লীলতা বৃদ্ধির যাবতীয় উপকরণের উৎপাদন ও বেচা-কেনার মাধ্যমে সম্পদ অর্জন করা বৈধ নয়। ১২. মূল্যবৃদ্ধির আশায় নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য মজুদ করে বাজারে সেগুলোর কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে অর্থ উপার্জন করা অবৈধ। ১৩. যেসব জিনিস খাওয়া, পান করা এবং ব্যবহার করা অবৈধ (যেমন, মদ, বিড়ি, সিগারেট, আতশ, পটকা প্রভৃতি) সেগুলোর উৎপাদন, ক্রয়-বিক্রয় এবং এর মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করাও অবৈধ। হাটে/বাজারে/শপিং সেন্টারে প্রবেশ করার দোয়া : মহানবী সা: বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি বাজারে প্রবেশ করে বলবে, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা-শারিকা লাহু লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ইয়াহুদি ওয়া ইউমিতু ওয়া হু হাইউন লা ইয়ামুতু বিয়াদিহিল খাইরু ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইইন কাদির’ আল্লাহ তার জন্য হাজার হাজার সওয়াব লিখবেন, তার হাজার হাজার পাপ মুছে ফেলবেন, হাজার হাজার মর্যাদা উন্নীত করবেন এবং তার জন্য জান্নাতে একটি বাড়ি বানাবেন। শায়খ আলবানী (রহ.) এ হাদীসটিকে ‘হাসান’ বলেছেন। ব্যবসায় প্রতারণার বিভিন্ন রূপ : ষ আমাদের দেশে সরিষার তেলে টক্সিক, ফলমূলে ইথালিন অক্সাইড এবং মাছের পচনরোধে ফরমালিন রাসায়নিক ব্যবহার করা হচ্ছে। এসব নিয়মিত খাওয়ার ফলে ক্যান্সার, আলসার, চর্মরোগ, প্যারালাইসিসসহ নানা ধরনের জটিল রোগ হতে পারে। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে চোখের দৃষ্টিশক্তিও হারাতে হতে পারে চিরতরে। (তথ্য সূত্র : আজকের কাগজ, নগর জীবন, ২৩ জুলাই ২০০৪)।
কখনো কখনো গরুর গোশত বলে মহিষের গোশত বিক্রি করতে শোনা যায়। ষ কখনো কখনো রেস্তরাঁয় মৃত প্রাণীর গোশত পরিবেশন করা হয় বলেও অভিযোগ রয়েছে। ষ অনেক সময় আল্লাহর নাম না নিয়েই পশু জবাই করা হয়। ষ মাপে ওজনে কম করা হয়। ষ সরলমতি ক্রেতাদের কাছ থেকে পণ্যের গলাকাটা দাম রাখা হয়। ষ বিভিন্ন পণ্যদ্রব্যে ভেজাল মেশানো হয়। ষ অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার তৈরি করা হয়। ষ দেশী পণ্যকে বিদেশী পণ্য বলে বিক্রি করা হয়। মহানবী সা: বলেছেন, ‘যে ধোঁকা দেয় সে আমাদের দলভুক্ত নয়’ (তিরমিজি, হাদিসটি হাসান সহিহ)। আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,কোনো জাতি মাপে ওজনে কম দিলে তার ওপর চরম দুর্ভিক্ষ, জীবিকা অর্জনে কষ্ট এবং শাসকের পক্ষ থেকে জুলুম-অত্যাচার নেমে আসবে। যে জাতি জাকাত দিতে অস্বীকার করবে তার ওপর বৃষ্টি বর্ষণ বন্ধ হয়ে যাবে। যদি চতুষ্পদ জন্তু না থাকত তাহলে মোটেই বৃষ্টি হতো না…’ (ইবনে মাজাহ)। সুখী সমৃদ্ধ সমাজ গড়ার লক্ষ্যে অর্থ-সম্পদ উপার্জনের ক্ষেত্রে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সা:-এর শাশ্বত নীতিমালা মেনে চলা উচিত। মহানবী সা: ব্যবসায়ীদের যে সুসংবাদ শুনিয়েছেন তার অন্তর্ভুক্ত হওয়ার জন্য আজ থেকে দৃঢ় অঙ্গীকার করি। আল্লাহ সবাইকে শক্তি দিন। সমাপ্ত=

Leave a Reply


This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.