New Muslims APP

যেসব পণ্যের যাকাত দিতে হয়

যেসব পণ্যের যাকাত দিতে হয়

যেসব পণ্যের যাকাত দিতে হয়

 

ক. ব্যবসার সম্পদে নগদ ক্যাশ বা পাওনা টাকা।

খ. বিক্রয় করার জন্য মজুদ করা বা উৎপাদিত পণ্য।

গ. প্রক্রিয়াধীন পণ্য ও কাঁচামাল। যেমন, পোশাকের ফ্যাক্টরীর কাপড়, জুতার কারখানার চামড়া, রেক্সিন ইত্যাদি।

ঘ. এমন জিনিস যা বিক্রি করে দেয়ার উদ্দেশ্য ক্রয় করা হয়েছে এবং সে ইচ্ছা এখনো বিদ্যমান আছে। যেমন, বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে ক্রয়কৃত জমি, বাড়ি, ফ্ল্যাট, প্লট, ধান, আলু, পিঁয়াজ ইত্যাদি। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ফার্ণিচার বা বিক্রয়ের জন্য নয় এমন কোন কিছুতেই যাকাত নেই। যেমন, মাল তৈরির মেশিন, আলমারী ইত্যাদি।(ফাতাওয়ায়ে মাহমুদিয়া: ১৪/১২২)

ভবিষ্যতে কোন কাজের উদ্দেশ্যে জমা রাখা টাকার উপর যাকাত

ভবিষ্যতে হজ্জ, বিবাহ, গৃহ নির্মান কিংবা ব্যবসা-বাণিজ্য ইত্যাদি উদ্দেশ্যে জমাকৃত টাকা ঐ উদ্দেশ্যে ব্যয় করে ফেলার পূর্বে বৎসর অতিবাহিত হয়ে গেলে সেগুলোর উপরও যাকাত আবশ্যক হবে। (ফাতাওয়ায়ে হাক্কানিয়া: ৩/৪৯৩)

পোলট্রি ফার্মের যাকাত

পোলট্রি ফার্মে যে সকল মুরগী বা ডিম সরাসরি বিক্রির উদ্দেশ্যে থাকে তার মূল্যের উপর যাকাত প্রদান করতে হবে। কিন্তু যেসকল লিয়ার মুরগী ডিম উৎপাদনের জন্য রাখা হয়,সরাসরি বিক্রয়ের জন্য না হয়, সেগুলোর মূল্যের উপর যাকাত আসবে না। (দূররুল মুখতার: ২/২৭৩-২৭৪)

মৎস্য খামারের যাকাত

কেউ যদি পুকুর বা হাউজ ইত্যাদিতে বিক্রির উদ্দেশ্যে মাছ বা মাছের পোনা ক্রয় করে ছাড়ে তাহলে সেগুলোরও বাজার মূল্য হিসাব করে যাকাত আদায় করতে হবে। (দূররুল মুখতার: ২/২৭৩-২৭৪)

গরুর ফার্ম

ক. শুধু দুধ বিক্রির উদ্দেশ্যে করা হলে গরুর মূল্যের উপর যাকাত আসবে না।

খ. গরু সরাসরি বিক্রি করা উদ্দেশ্য হলে তার মূল্যমানের উপর যাকাত আবশ্যক হবে। (দূররুল মুখতার: ২/২৭৩-২৭৪)

গার্মেনটসের যাকাত

গার্মেনটসের কাঁচামাল তথা কাপড়,সূতা ইত্যাদির উপর যাকাত আসবে,তবে এর মেশিনারি,যন্ত্রপাতি,আসবাবপত্র ইত্যাদির উপর যাকাত আসবে না।

মূলধন এবং লাভ

যদি কারো বছরের শুরুতে মূলধন একটি থাকে আর বছরের শেষদিকে তা বেড়ে যায় তাহলে পুরো হিসাবের উপর যাকাত হবে। যেমন,কারো বছরের শুরুতে মূলধন ১ লাখ টাকা থাকলে এবং বছরের শেষদিকে ৫০ হাজার টাকা লাভ হলে তাকে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকার উপরই যাকাত দিতে হবে। এক্ষেত্রে যাকাত হবে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকার ২.৫%।

হারাম মালের উপর যাকাত

সুদ বা এ জাতীয় হারাম মাল সম্পূর্ণটাই মালিকের কাছে পৌঁছে দিতে হয় কিংবা সদকা করে দিতে হয়। তাই এর উপর যাকাতের প্রশ্নই আসতে পারে না। (শামী: ২/২৯১)

স্ত্রীর সোনা বা রূপার অলঙ্কারের যাকাত

স্ত্রীর অলঙ্কারের যাকাত তার নিজেকেই দিতে হবে স্বামীকে নয়। যদি স্বামী চায় তাহলে সে তা স্ত্রীর পক্ষ থেকে আদায় করতে পারবে। যদি স্বামী না দিতে চায় এবং স্ত্রীর নিজস্ব আয় না থাকে, তাহলে কিছু স্বর্ণ বা রূপা বিক্রি করে হলেও স্ত্রীকে যাকাত আদায় করতে হবে।

সম্পত্তি, বাড়ী, গাড়ীর যাকাত

• যে বাড়ীতে থাকে তার যাকাত দিতে হবেনা, যদি একাধিক বাড়ী থাকে তবুও না।
• জমি ব্যবসার জন্য কেনা জমি ছাড়া অন্য কোন জমির জন্য যাকাত দিতে হবেনা।
• যদি কোন জমিতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, দোকান ইত্যাদি থাকে তারও যাকাত দিতে হবেনা।

• ব্যবসার জন্য ব্যবহৃত সম্পদ যেমন-ফার্নিচার, ট্রাক, বুলডোজার ইত্যাদির যাকাত দিতে হবেনা।

মাসিক ভিত্তিতে যাকাত

যাকাত হলো আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত ফরজ এবং তা হলো অন্যের হক। ফরজ হবার পর এ টাকা দিতে দেরী করার অবকাশ নেই। যাকাতের টাকা পুরো হিসাব করে তা থেকে প্রতি মাসে মাসে একান্ত প্রয়োজন ছাড়া দেয়া যাবেনা।

অগ্রিম যাকাত

যাকাত বছর ঘুরে আসার আগেই আদায় করা যাবে। এক্ষেত্রে কম বা বেশী হলে পরবর্তিতে তা ব্যালেন্স করা যাবে।

বাবা যদি সন্তানের নামে টাকা জমা রাখে

সন্তানকে যদি ওই টাকার উপর পুরো অধিকার দেয়া হয় তাহলে সন্তানকে যাকাত দিতে হবে, অন্যথায় বাবাকেই তার যাকাত দিতে হবে।

বাড়ী ভাড়ার উপর যাকাত

কোন লোকের যতটি বাড়ীই থাকুক তা যদি বিক্রি করে ব্যবসার উদ্দেশ্য না থাকে তাহলে তার যাকাত দিতে হবেনা। তবে সে বাড়ীর ভাড়ার টাকা যদি বছর শেষে নিসাব অতিক্রম করে তাহলে তার যাকাত দিতে হবে।

তবে দুই সম্পর্কের মানুষকে যাকাত দেয়া যাবে না

১. ঔরসজাত সম্পর্ক। যেমন- পিতা ছেলেকে, বা ছেলে পিতাকে।

২. বৈবাহিক সম্পর্ক। যেমন- স্বামী স্ত্রীকে, বা স্ত্রী স্বামী।

এ দুই গ্রুপ ছাড়া অন্য সকল অভাবীকে (উপরিউক্ত সংজ্ঞানুসারে) দেয়া যাবে।

পবিত্র কুরআনে আল্লাহ এ ব্যাপারে বলেছেন

“আল্লাহ তাআলা নিজের অনুগ্রহ দিয়ে তাদের যে প্রাচুর্য দিয়েছেন, যারা তা আল্লাহর পথে ব্যয় করতে কার্পণ্য করে-তারা যেন কখনও এটা মনে না করে যে তাদের জন্য কল্যাণকর কিছু হবে; না, এ কৃপণতা তাদের জন্য খুবই অকল্যাণকর। কার্পণ্য করে তারা যা জমা করেছে, অচিরেই কিয়ামাতের দিন তা দিয়ে তাদের গলায় বেড়ী পরিয়ে দেয়া হবে। আকাশসমূহ আর জমিনসমূহের উত্তরাধীকার তো আল্লাহরই জন্য, আর তোমাদের প্রতিটি কার্যকলাপ সম্বন্ধে আল্লাহ বিশেষভাবে অবগত আছেন”। (সূরা আল ইমরান: ১৮০)

আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করুন। যাকাত এবং ইসলামের অন্য সকল বিধান পুরোপুরি মেনে চলার ভাগ্য আমাদের দান করুন। তাদের ভেতর শামিল হওয়া থেকে আমাদের আশ্রয় দিন যাদের তিনি নিশ্চিত শাস্তির ঘোষণা দিয়েছেন। আমীন।

Leave a Reply


This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.