Originally posted 2013-05-08 15:14:53.
ইসলামের আগে, জাহিলিয়াতের যুগে সারা বিশ্বের জাতিগুলো প্রচলিত রীতি অনুযায়ী নারীর মর্যাদা অন্যান্য সাধারণ গৃহস্থালি আসবাবপত্রের চেয়ে বেশি ছিল না। তখন চতুষ্পদ জীবজন্তুর মতো তাদেরও বেচাকেনা চলত। নিজের বিয়ে শাদির ব্যাপারেও নারীর মতামতের কোনো রকম মূল্য ছিল না। অভিভাবকেরা যার দায়িত্বে অর্পণ করত তাদের সেখানেই যেতে হতো। নারী তার আত্মীয়স্বজনের পরিত্যক্ত সম্পদ বা জিনিসের অধিকারী হতো না। বরং সে নিজেই ঘরের অন্যান্য জিনিসপত্রের মতো পরিত্যক্ত সম্পত্তি হিসেবে বিবেচিত হতো। তাদের মনে করা হতো পুরুষের স্বত্বাধীন।
কোনো জিনিসেই তাদের নিজস্ব কোনো স্বত্ব ছিল না। আর যা কিছুই নারীর স্বত্ব বলে গণ্য করা হতো, তাতেও পুরুষের অনুমতি ছাড়া ভোগ-দখল করার সামান্য অধিকারও তাদের ছিল না।
তবে স্বামীর এ অধিকার স্বীকৃত ছিল, সে তার নারীরূপী নিজস্ব সম্পত্তি যেখানে খুশি, যেভাবে খুশি ব্যবহার করতে পারবে, তাতে তাকে স্পর্শ করারও কেউ ছিল না। এমনকি ইউরোপের অনেক দেশে এমন কিছু লোক ছিল যারা নারীর মানবসত্তাকেই স্বীকার করত না।
ধর্মেকর্মেও নারীদের জন্য কোনো অংশ ছিল না, তাদের ইবাদত বন্দেগি কিংবা বেহেশতের যোগ্যও মনে করা হতো না। এমনকি রোমের কোনো কোনো সংসদে পারস্পরিক পরামর্শক্রমে সাব্যস্ত করা হয়েছিল, নারী হলো অপবিত্র এক জানোয়ার, যাতে আত্মার অস্তিত্ব নেই।
সাধারণভাবে পিতার পে কন্যাকে হত্যা কিংবা জীবিত কবর দিয়ে দেয়াটাকে কৌলিণ্যের ধারক মনে করা হতো। অনেকের ধারণা ছিল নারীকে যে কেউ হত্যা করে ফেলুক না কেন, তাতে হত্যাকারীর প্রতি মৃত্যুদণ্ড কিংবা খুনের বদলা ওয়াজিব হবে না। কোনো কোনো জাতির প্রচলিত নিয়মানুযায়ী স্বামীর মৃত্যু হলে স্ত্রীকেও তার চিতায় আরোহণ করে আত্মাহুতি দিতে হতো।
মহানবী সা:-এর নবুওয়তের আগে ৫৮৬ খ্রিষ্টাব্দে ফরাসিরা নারীসমাজের প্রতি এতটুকু অনুগ্রহ করেছিল যে, বহু বিরোধিতা সত্ত্বেও তারা এ প্রস্তাব পাস করে যে, নারী প্রাণী হিসেবে মানুষই বটে কিন্তু শুধু সেবার উদ্দেশ্যেই তাদের সৃষ্টি করা হয়েছে। মোট কথা সারা বিশ্ব ও সব ধর্ম নারীসমাজের সাথে যে আচরণ করেছে তা অত্যন্ত হৃদয়বিদারক ও লোমহর্ষক।
ইসলামের আগে সৃষ্টির এ অংশ ছিল অত্যন্ত অসহায়। তাদের ব্যাপারে যুক্তিসঙ্গত কোনো ব্যবস্থাই নেয়া হতো না। হজরত রাসূলে কারিম সা: ও তার প্রবর্তিত ধর্মই বিশ্ববাসীর চোখের পর্দা উন্মোচন করেছে। মানুষকে মানুষের মর্যাদা দান করতে শিক্ষা দিয়েছে। ন্যায়নীতির প্রবর্তন করেছে এবং নারী সমাজের অধিকার সংরক্ষণ পুরুষের ওপর ফরজ করে দিয়েছে।
বিয়ে শাদী ও ধন সম্পদে তাদের স্বত্বাধিকার দেয়া হয়েছে। কোনো ব্যক্তি যদি তিনি পিতাও হন তবুও কোনো প্রাপ্তবয়স্কা স্ত্রীলোককে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়েতে বাধ্য করতে পারেন না। এমন কি স্ত্রী লোকের অনুমতি ব্যতীত বিয়ে দিয়ে দিলেও তা তার অনুমতির ওপর স্থগিত থাকে। সে অস্বীকৃতি জানালে তা বাতিল হয়ে যায়। তার সম্পদে কোনো পুরুষই তার অনুমতি ছাড়া হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। স্বামীর মৃত্যু হলে বা স্বামী তাকে তালাক দিলে সে স্বাধীন। কেউ তাকে কোনো ব্যাপারে বাধ্য করতে পারবে না। সেও তার নিকটাত্মীয়ের পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে তেমনি অংশীদার হয় যেমন হয় পুরুষেরা, তাদের সন্তুষ্টি বিধানকেও ইসলাম ধর্মে এবাদতের মর্যাদা দান করা হয়েছে। স্বামী তার ন্যায্য অধিকার না দিলে, সে আইনের সাহায্যে তা আদায় করে নিতে পারে। অথবা তার বিবাহ-বন্ধন ছিন্ন করে দিতে পারে। এসব অধিকারই ইসলাম নারীকে দিয়েছে। কিন্তু তাই বলে পাশ্চাত্যের নারী স্বাধীনতার শ্লোগান বা নারীকে সমান অধিকার দেয়ার নামে পুরুষের পাশাপাশি এনে দাঁড় করানো, এটাকে ইসলাম কখনো সমর্থন করে না। বরং এটাকে জাতি ও সমাজের অধঃপতনের কারণ বলে মনে করে। নারীদের তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করা জঘন্য অন্যায়। ইসলাম এ অন্যায় প্রতিরোধ করেছে। তাই বলে তাদের বল্গাহীনভাবে ছেড়ে দেয়া এবং পুরুষের কর্তৃত্বের আওতা থেকে সম্পূর্ণভাবে মুক্ত করে দেয়াও নিরাপদ নয়। সন্তান-সন্ততির লালন-পালন ও ঘরের কাজকর্মের দায়িত্ব প্রকৃতিগতভাবেই তাদের ওপর ন্যস্ত করা হয়েছে। তারা এগুলোই বাস্তবায়নের উপযোগী, তা ছাড়া স্ত্রীলোককে বৈষয়িক জীবনে পুরুষের আওতা থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত করে দেয়াও নিতান্ত ভয়ের কারণ। এতে পৃথিবীতে রক্তপাত, ঝগড়া-বিবাদ ও নানা রকম ফেৎনা-ফাসাদের সৃষ্টি হয়। এই জন্যই কুরআনে পাকে ইরশাদ হচ্ছে, ‘পুরুষের মর্যাদা স্ত্রীলোকের অপেক্ষা একস্তর ঊর্ধ্বে’।
অন্য কথায় বলা যায়, পুরুষ তাদের তত্ত্বাবধায়ক ও জিম্মাদার। ইসলাম পূর্ব জাহেলিয়াতের যুগে দুনিয়ার মানুষ নারী জাতিকে ঘরের আসবাবপত্র ও চতুষ্পদ জন্তু হিসেবে গণ্য করে যে ভুল করেছিল আজ মুসলমানদের পতনের পর সেই জাহেলিয়াতের দ্বিতীয়পর্যায় শুরু হয়েছে। এতে প্রথম ভুলের সংশোধন আরেকটি ভুলের মাধ্যমে করা হচ্ছে। নারীকে পুরুষের সাধারণ কর্তৃত্ব থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত করে দেয়ার প্রচেষ্টা চলছে।
ফলে লজ্জাহীনতা ও অশ্লীলতা একটা সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। সমগ্র বিশ্ব ঝগড়া বিবাদ ও ফেৎনা-ফাসাদের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন এত বেড়ে গেছে যে, সে বর্বরতার যুগকেও হার মানিয়েছে। যে জাতিগুলো নারীসমাজকে একসময় মানুষ বলেও গণ্য করতে রাজি ছিল না, সেই জাতিগুলোই আজ এমনপর্যায়ে এসে উপনীত হয়েছে, পুরুষদের যে কর্তৃত্ব নারীসমাজ তথা গোটা দুনিয়ার জন্য কল্যাণকর ছিল, সে কর্তৃত্ব বা তত্ত্বাবধায়কের ধারণাটুকুও একেবারে ঝেড়ে মুছে ফেলে দেয়া হচ্ছে। যার অশুভ পরিণতি প্রতিদিনই দেখা যাচ্ছে। বলাবাহুল্য যত দিন ধরে আল কুরআনের এ আদেশ যথাযথভাবে পালন না করা হবে তত দিন ধরে এ ধরনের ফেৎনা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেতেই থাকবে।
বর্তমান বিশ্বের মানুষ শান্তির অন্বেষায় নিত্যনতুন আইন প্রণয়ন করে চলেছে। নতুন নতুন প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে, অগণিত অর্থ ব্যয় করছে, কিন্তু যে উৎস থেকে ফেৎনা-ফাসাদ ছড়াচ্ছে তা বন্ধ করার কেউ নেই। আজ যদি ফেৎনা-ফাসাদের মূল কারণ উদঘাটন করার জন্য নিরপে কোনো তদন্ত পরিচালনা করা হয় তাহলে দেখা যাবে, শতকরা পঞ্চাশ ভাগেরও বেশি সামাজিক অশান্তির কারণ নারী জাতির বেপরোয়া চালচলন। কিন্তু বর্তমানে বিশ্ব অহং পূজার প্রভাব বড় বড় বুদ্ধিমান, দার্শনিকের চুকেও ধাঁধিয়ে দিয়েছে।
ইসলাম প্রকৃতিগতভাবে স্ত্রী জাতির আসল কর্মস্থল ঘরকে সাব্যস্ত করেছে। কুরআনে কারিমে ইরশাদ হচ্ছে “আর তোমরা গৃহাভ্যন্তরে অবস্থান করবে জাহেলিয়াতের যুগের মতো নিজেদের প্রদর্শন করবে না।” (সূরা আহজাব-৩৩)
মনুষ্য জীবনে কাজের দু’টি ময়দান রয়েছে, একটি হচ্ছে গৃহস্থালি কাজের ময়দান আর অপরটি গৃহের বাইরের ময়দান। ইসলাম গৃহাভ্যন্তরের কাজের দায়িত্ব নারীদের দিয়েছে ও গৃহের বাইরের কাজের দায়িত্ব পুরুষের ওপর অর্পণ করেছে। এটা একটা প্রাকৃতিক বণ্টন ও জন্মগত দায়িত্ব, যা উভয়ের মেধা, মস্তিক, শরীর ও স্বাস্থ্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। অন্দর মহলে নারী জাতি যে দায়িত্ব সম্পাদন করে ও ইসলাম তাদের অন্দর মহলে যে জিম্মাদারি সোপর্দ করেছে তার গুরুত্ব বাইরের জনসেবা, রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের চেয়ে কোনো অংশেই কম নয়।
ইন্টারনেট সুত্র