Main Menu

কুরআন ও হাদীসের আলোকে সাংবাদিকতা

Originally posted 2013-02-07 05:51:44.

app_sphere_news

ইসলামের দৃষ্টিতে সাংবাদিকতা

সংবাদ বলতে মুদ্রণজগৎ, সম্প্রচার কেন্দ্র, ইন্টারনেট অথবা তৃতীয় পক্ষের মুখপাত্র কিংবা গণমাধ্যমে উপস্থাপিত বর্তমান ঘটনাপ্রবাহের একগুচ্ছ নির্বাচিত তথ্যের সমষ্টি যা যোগাযোগের আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে। আর ইসলামী সংবাদ হলো; মানবিক ও মনের কুপ্রবিত্তির বশীভূত না হয়ে মানব কল্যাণের জন্য সত্য সংবাদ পৌঁছে দেওয়া। এই মর্মে আল্লাহ তায়ালা বলেন;

 ثُمَّ جَعَلْنَاكَ عَلَى شَرِيعَةٍ مِّنَ الْأَمْرِ فَاتَّبِعْهَا وَلَا تَتَّبِعْ أَهْوَاء الَّذِينَ لَا يَعْلَمُونَ

তারপর আমি তোমাকে দ্বীনের এক বিশেষ বিধানের উপর প্রতিষ্ঠিত করেছি। সুতরাং তুমি তার অনুসরণ কর এবং যারা জানে না তাদের খেয়াল খুশীর অনুসরণ করো না।(সূরা জাসিয়া: ১৮)

মহান আল্লাহ অন্যত্র বলছেন:

فَلِذَلِكَ فَادْعُ وَاسْتَقِمْ كَمَا أُمِرْتَ وَلا تَتَّبِعْ أَهْوَاءَهُمْ

এ কারণে তুমি আহবান কর এবং দৃঢ় থাক যেমন তুমি আদিষ্ট হয়েছ। আর তুমি তাদের খেয়াল-খুশির অনুসরণ করো না (সূরা শুরা: ১৫)

সংবাদ সংগ্রহের সময় দৃষ্টিশক্তি প্রখর রাখতে হবে। যেনতেন লোক থেকে সংবাদ গ্রহণ করা যাবে না। এই মর্মে  আল্লাহ তায়ালা বলেন:

 إِنْ جَاءَكُمْ فَاسِقٌ بِنَبَأٍ فَتَبَيَّنُوا أَنْ تُصِيبُوا قَوْمًا بِجَهَالَةٍ فَتُصْبِحُوا عَلَى مَا فَعَلْتُمْ نَادِمِينَ (6﴾   الحجرات

মুমিনগণ! যদি কোন পাপাচারী ব্যক্তি তোমাদের কাছে কোন সংবাদ আনয়ন করে, তবে তোমরা পরীক্ষা করে দেখবে, যাতে অজ্ঞতাবশত: তোমরা কোন সম্প্রদায়ের ক্ষতিসাধনে প্রবৃত্ত না হও এবং পরে নিজেদের কৃতকর্মের জন্যে অনুতপ্ত না হও। (সূরা হুজুরাত: ৬)

আল্লাহর রাসূল বলেন:

  عن أبي هريرة عن النبي  كفى بالمرء كذباً أن يحدث بكل ما سمع “

فالحديث رواه مسلم في  “مقدمة صحيحه ” ( 1 / 107  نووي ) ، وأبوداود ( 4 / 298 / 4992 ) ، ابن حبان

মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য ইহাই যথেষ্ট, যা শুনবে তা যাচাই ছাড়া বর্ণনা করা। মুসলিম শরীফের ভূমিকা আবু দাউদ ৪/২৯৮ ইবনে হিব্বান, ১/২১৩ )

 সংবাদের রোকনসমূহ

১। দর্শক বা শ্রতা 

২। সংবাদ

৩। সাংবাদিক

৪। মাধ্যম, (কাগজ, টেলিভিশন, ইন্টারনেট ইত্যাদি।

 উৎপত্তি রহস্য

একটি সূত্র দাবী করছে যে,চতুর্দশ শতাব্দীতে নিউ শব্দের বহুবচন হিসেবে নিউজ বা সংবাদ শব্দটি বিশেষভাবে ব্যবহার করা হতো। মধ্যযুগীয় ইংরেজী হিসেবে নিউজ শব্দটির সমার্থক ছিল নিউইজ (newes), ফরাসী শব্দ নোভেলেজ (nouvelles) এবং জার্মান শব্দ নিউয়েজ (neues)।

লোকমুখে’নিউজ’শব্দটিকে বিশ্লেষণ করা হয়-এন (নর্থ) উত্তর, ই (ইষ্ট) পূর্ব, ডব্লিউ (ওয়েস্ট) পশ্চিম এবং এস (সাউথ) দক্ষিণ।

 ইতিহাস

সপ্তদশ শতকের শুরুর দিকে সংবাদপত্রের সূচনা ঘটে। এর পূর্বে সংক্ষিপ্ত সরকারী ঘোষণা বা ইস্তেহার এবং রাজার আজ্ঞা প্রধান-প্রধান নগরগুলোতে প্রকাশিত হতো। প্রথম লিখিতভাবে সংবাদ বা খবরের ব্যবহার মিশরে সু-সংগঠিতভাবে প্রবর্তন হয়েছিল। খ্রীষ্ট-পূর্ব ২৪০০ বছর পূর্বে ফারাও শাসন আমলে বর্তমানকালের জনপ্রিয় সংবাদ মাধ্যম কুরিয়ার সার্ভিসের আদলে রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রসারনের উদ্দেশ্যে ডিক্রী বা আদেশনামা প্রচারের ব্যবস্থা করা হতো।

আধুনিক ইউরোপের শুরুর দিকে আন্তঃসীমান্ত এলাকায় পারস্পরিক সম্পর্ক বৃদ্ধিকল্পে তথ্য বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে হস্তলিখিত সংবাদের কাগজ ব্যবহার করা হয়েছিল। ১৫৫৬ সালে ভেনিস প্রজাতন্ত্রীয় সরকার প্রথমবারের মতো মাসিক নটিজি স্ক্রিট প্রকাশ করে।

১৮৪৭ সালের আগস্টের শেষভাগে রংপুর থেকে প্রকাশিত হয় সংবাদপত্র ‘রঙ্গপুর বার্তাবহ’। কুণ্ডির জমিদার কালী চন্দ্র রায় চৌধুরীর অর্থায়নে প্রকাশিত হয় এই পত্রিকা। সম্পাদক ছিলেন গুরুচরণ রায়। এটাই বাংলাদেশের বর্তমান প্রথম সংবাদপত্র। ১৮৫৭ সালের ১৩ জুন গভর্নর লর্ড ক্যানিং জারি করেন ১৫নং আইন। মুদ্রণ যন্ত্রের স্বাধীনতানাশক এ আইনে ১৮৫৯ সালে বন্ধ করে দেয়া হয় ‘রঙ্গপুর বার্তাবহ’। প্রকাশিত হওয়ার সময় থেকে পরের একযুগ সময় রঙ্গপুর বার্তাবহ মানুষকে সচেতন করার ক্ষেত্রে যে বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছিল, তা সত্যিই গর্ব করার মতো।

বিশ্বের প্রথম সংবাদ পত্র

১৬০৫ সালে প্রকাশিত রিলেশন অলার ফুর্নেমেন আণ্ড গেডেনঙ্কুরডিগেন হিস্টোরিয়েনকে বিশ্বের ১ম সংবাদপত্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে।

 

 

সংবাদ চার প্রকার

১। ব্যক্তি নিজেই নিজের সম্পর্কে জানার চেষ্টা করবে। এটাকে ইত্তেসালে জাতি বলা হয়। যেমন

ويتفكرون في خلق السماوات والأرض ربنا ما خلقت هذا باطلا سبحانك فقنا عذاب النار

আসমানসমূহ ও যমীনের সৃষ্টি সম্পর্কে চিন্তা করে। (বলে) “হে আমাদের রব, তুমি এসব অনর্থক সৃষ্টি করনি। তুমি পবিত্র মহান। সুতরাং তুমি আমাদেরকে আগুনের আযাব থেকে রক্ষা কর।”

و في أنفسكم أفلا تبصرون

তোমাদের নিজদের মধ্যেও। তোমরা কি চক্ষুষ্মান হবে না?

سَنُرِيهِمْ آيَاتِنَا فِي الْآفَاقِ وَفِي أَنفُسِهِمْ حَتَّى يَتَبَيَّنَ لَهُمْ أَنَّهُ الْحَقُّ

বিশ্বজগতে ও তাদের নিজদের মধ্যে আমি তাদেরকে আমার নিদর্শনাবলী দেখাব যাতে তাদের কাছে সুস্পষ্ট হয় যে, এটি (কুরআন) সত্য;

فلينظر الإنسان مم خلق

অতএব মানুষের চিন্তা করে দেখা উচিৎ, তাকে কী থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে ?

أفلا يتدبرون القرآن

তবে কি তারা কুরআন নিয়ে গভীর চিন্তা-ভাবনা করে না?

 ২। ব্যক্তি অন্য ব্যক্তির সাথে যোগাযোগ করবে। এটাকে ইত্তেসালে শাখসী বলা হয়। যেমন

و تعاونوا على البر و التقوى و لا تعاونوا على الإثم و العدوان

 সৎকর্ম ও তাকওয়ায় তোমরা পরস্পরের সহযোগিতা কর। মন্দকর্ম ও সীমালঙ্ঘনে পরস্পরের সহযোগিতা করো না।

يا أيها الذين آمنوا قوا أنفسكم و أهليكم نارا و قودها الناس و الحجارة *

হে ঈমানদারগণ, তোমরা নিজেদেরকে ও তোমাদের পরিবার-পরিজনকে আগুন হতে বাঁচাও যার জ্বালানি হবে মানুষ ও পাথর;

كلكم راع و كلكم مسؤول عن رعيته

৩।আমরা সকলেই জানি যখন আল্লাহ তায়ালা  وَأَنذِرْ عَشِيرَتَكَ الْأَقْرَبِينَ অবতীর্ণ করলেন,তখনই রাসূল (সা.) হযরত খাদিজা, আলী, যায়েদ ইবনে হারেসা, ও আবু বরকরের নিকট সংবাদটি পৌঁছায়ে দিলেন। এমন সংবাদকে ইত্তেসালে জামঈ বলা হয়।

  ৪। অতঃপর আল্লাহ তায়ালা অবতীর্ণ  করলেন  وأعرض عن المشركين فاصدع بما تؤمر  সুতরাং তোমাকে যে আদেশ দেওয়া হয়েছে, তা ব্যাপকভাবে প্রচার কর এবং মুশরিকদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নাও। তখন রাসূল (সা.) সাফা পর্বতে চড়ে মক্কার কাফেরদের দাওয়াত দেন।বাজারে বাজারে ঘুরে ঘুরে দাওয়াত দেন। তায়েফের ময়দানে দাওয়াত দেন। বাইয়াতে আকাবাতে দাওয়াত দেন। মক্কা-মদীনায় সারা জীবন দাওয়াত দেন। এমন দাওয়াত বা সংবাদকে ইত্তেসালে জামাহীর বলা হয়।

 মিথ্যা সংবাদ প্রচারের পরিণতি:

وَالَّذِينَ يَرْمُونَ الْمُحْصَنَاتِ ثُمَّ لَمْ يَأْتُوا بِأَرْبَعَةِ شُهَدَاءَ فَاجْلِدُوهُمْ ثَمَانِينَ جَلْدَةً وَلَا تَقْبَلُوا لَهُمْ شَهَادَةً أَبَدًا وَأُولَئِكَ هُمُ الْفَاسِقُونَ [النور : 4

আর যারা সচ্চরিত্র নারীর প্রতি অপবাদ আরোপ করে, তারপর তারা চারজন সাক্ষী নিয়ে আসে না, তবে তাদেরকে আশিটি বেত্রাঘাত কর এবং তোমরা কখনই তাদের সাক্ষ্য গ্রহণ করো না। আর এরাই হলো ফাসিক।

فَاجْتَنِبُوا الرِّجْسَ مِنَ الأَوْثَانِ وَاجْتَنِبُوا قَوْلَ الزُّورِ) [الحج: من الآية 30

সুতরাং মূর্তিপূজার অপবিত্রতা থেকে বিরত থাক এবং মিথ্যা কথা পরিহার কর।

  وَلا تَكْتُمُوا الشَّهَادَةَ وَمَنْ يَكْتُمْهَا فَإِنَّهُ آثِمٌ قَلْبُهُ )(البقرة/283)

আর তোমরা সাক্ষ্য গোপন করো না এবং যে কেউ তা গোপন করে, অবশ্যই তার অন্তর পাপী।

 وقال تعالى في صفات المؤمنين:وَالَّذِينَ لا يَشْهَدُونَ الزُّورَ وَإِذَا مَرُّوا بِاللَّغْوِ مَرُّوا كِرَاماً[الفرقان:72].

আর যারা মিথ্যার সাক্ষ্য দেয় না এবং যখন তারা অনর্থক কথা-কর্মের পাশ দিয়ে চলে তখন সসম্মানে চলে যায়।

وقال النبي صلى الله عليه وسلم: “ألا أنبئكم بأكبر الكبائر –ثلاثاً- قلنا: بلى يا رسول الله. قال : “الإشراك بالله وعقوق الوالدين” وكان متكئاً فجلس فقال: “ألا وقول الزور، ألا وشهادة الزور فما زال يكررها حتى قلنا: ليته سكت. يعني قال الصحابة: ليته سكت”. رواه البخاري ومسلم

রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: আমি কি তোমাদেরকে কবীরা গুনাহ সম্পর্কে সংবাদ দেব না? (কথাটি রাসূল (সা.) তিনবার বলেছেন) সাবাহায়ে কেরামগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! বলুন, তিনি বললেন: আল্লাহর সঙ্গে শরীক করা, মাতা পিতার অবাধ্য হওয়া, কথাগুলো বসার সময় রাসূল (সা.) হেলান দিয়ে বসেছিলেন, অতঃপর সোজা হয়ে বসলেন এবং বললেন, মিথ্যা সংবাদ প্রচার করা, মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া। কথাগুলো বারবার বলতেছিলেন। আমরা (সাহাবাগণ) মনে মনে বলতেছিলাম, হায়! যদি তিনি চুপ হতেন। (বুখারী ও মুসলিম)

 من قال علّيَّ ما لم أقل ، فلْيتبوَّأ مقعده من النار (مسلم)

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন: নিজে বলে, এ কথা বলা যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  বলেছেন, সে যেন তার ঠিকানা জাহান্নাম বানিয়ে নিলো। (মুসলিম)

মিথ্যা সংবাদ প্রচারকারীর ঠিকানা জাহান্নাম:

  شهادة الزور توجب لصاحبها النار

সহীহ সনদে ইমাম হাকেম বর্ণনা করেন: মিথ্যা সংবাদ পরিবেশনকারীর ঠিকানা জাহান্নাম।

মহান আল্লাহ আমাদের সকলকে মিথ্যা সংবাদ পরিবেশন করা ও শুনা থেকে হিফাযত করুন। আমীন

Related Post