আল্লাহতায়ালা জীব সৃষ্টি করেছেন। জগতে এমন কোনো প্রাণী নেই যার রিজিক আল্লাহতায়ালা নির্ধারণ করেননি। জল ও স্থলের বিচরণশীল প্রতিটি প্রাণীর জন্য আল্লাহতায়ালা রিজিক নির্দিষ্ট করে রেখেছেন। কোরআনুল কারিমে তিনি এরশাদ করেন,
﴿وَمَا مِن دَابَّةٍ فِي الْأَرْضِ إِلَّا عَلَى اللَّهِ رِزْقُهَا وَيَعْلَمُ مُسْتَقَرَّهَا وَمُسْتَوْدَعَهَا ۚ كُلٌّ فِي كِتَابٍ مُّبِينٍ﴾ هود6 ‘আর পৃথিবীতে কোনো বিচরণশীল নেই, তবে সবার জীবিকার দায়িত্ব আল্লাহ নিয়েছেন, তিনি জানেন তারা কোথায় থাকে এবং কোথায় সমাপিত হয়। সবকিছুই এক সুবিন্যস্ত কিতাবে রয়েছে।’ (সুরা-হুদ, আয়াত-৬)। প্রতিটি জীবজন্তুর আয়ুষ্কাল শেষ না হওয়া পর্যন্ত এক নির্দিষ্ট সময়সীমা পর্যন্ত আল্লাহতায়ালা রিজিকের দায়িত্ব নিয়েছেন। আয়ুষ্কাল শেষ হওয়ামাত্র তাকে মৃত্যুবরণ করে ধরাপৃষ্ট থেকে বিদায় নিতে হবে।
ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, আল্লাহর নির্ধারিত রিজিক পূর্ণমাত্রায় লাভ না করা পর্যন্ত কোনো জীবজন্তুই মারা যায় না। সাবধান! আল্লাহকে ভয় কর এবং বৈধ পন্থায় আয়-উপার্জনের চেষ্টা কর। রিজিক প্রাপ্তিতে বিলম্ব যেন তোমাদের তা উপার্জনে অবৈধ পন্থা অবলম্বনে প্ররোচিত না করে। কেননা আল্লাহর কাছে যা রয়েছে, তা কেবল তার আনুগত্যের মাধ্যমেই লাভ করা যায় (ইবনে মাজা)। সুতরাং রিজিক আল্লাহতায়ালার দায়িত্বে আছে, তবে তা অন্বেষণ করতে হবে।প্রতিটি জীবজন্তুই জীবিকার অন্বেষণে প্রতূ্যষে বেরিয়ে পড়ে। সারাদিন জীবিকা তালাশ করে সন্ধ্যাবেলায় নীড়ে ফিরে আসে। মানব জাতি ও অন্যান্য প্রাণীর মতো রিজিক অন্বেষণ করে থাকে। জীবিকার তাগিদে নানা কাজকর্ম করে থাকে। জীবিকার অন্বেষণে বেরিয়ে পড়ার জন্য স্বয়ং আল্লাহতায়ালা কোরআনে নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহতায়ালা এরশাদ করেন,
﴿فَإِذَا قُضِيَتِ الصَّلَاةُ فَانتَشِرُوا فِي الْأَرْضِ وَابْتَغُوا مِن فَضْلِ اللَّهِ وَاذْكُرُوا اللَّهَ كَثِيرًا لَّعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ) الجمعة 10 ‘অতঃপর নামাজ সমাপ্ত হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর অনুগ্রহ তালাশ কর ও আল্লাহকে অধিক স্মরণ কর, তোমরা সফলকাম হবে।’ (সুরা-আল-জুমা, আয়াত-১০)। আলোচ্য আয়াতে নামাজ সমাপ্ত করার পর হালাল রিজিক অন্বেষণের জন্য নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। নামাজের পাশাপাশি হালাল রিজিক অন্বেষণের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সুতরাং হালাল রিজিক অন্বেষণ নামাজের মতোই ইবাদত হিসেবে গণ্য হবে। আর হালাল-হারামের বিচার-বিশ্লেষণ একমাত্র মানুষের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। কেননা মানুষ আশরাফুল মাখলুকাত তথা সৃষ্টির সেরা জীব।
আল্লাহই রিজিকের মালিক। কে কী উপার্জন করবে তা আল্লাহতায়ালা নির্ধারণ করে রেখেছেন। বান্দার উচিত হবে বৈধ পন্থায় আয়-উপার্জন করার প্রয়াসে নিয়োজিত থাকা। হালাল এবং হারামের পার্থক্য সম্পর্কে সতর্ক থাকা। কোনোভাবেই হারাম পথে প্রলুব্ধ না হওয়া। হারাম পন্থায় জীবিকা উপার্জনের দ্বারা কোনো ইবাদাত কবুল হবে না। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) এরশাদ করেন, কোনো ব্যক্তি হারাম পন্থায় সম্পদ উপার্জন করে, তা থেকে দান-খয়রাত করলে তা কবুল করা হবে না এবং সে তার এ সম্পদে বরকত প্রাপ্ত হবে এরূপ কখনো হতে পারে না। তার পরিত্যক্ত হারাম মাল কেবল তার জন্য দোজখের পাথেয় হতে পারে (তা দিয়ে আখেরাতের সৌভাগ্য ও সাফল্য অর্জন করা যায় না)। আল্লাহতায়ালার নিয়ম হচ্ছে, তিনি মন্দের
দ্বারা মন্দকে নিশ্চিহ্ন করেন না (হারাম মালের দান দ্বারা গুনাহ মাফ করেন না)। বরং ভালো দ্বারা মন্দ নিশ্চিহ্ন করেন (হালাল মালের দান দ্বারা গুনাহ মাফ করেন। নাপাক দ্বারা পবিত্রতা অর্জন করা যায় না। (মুসনাদে আহমাদ)।
হালাল পন্থায় জীবিকা উপার্জন যেমন ইবাদাত ও পুণ্যের কাজ, তেমনি অসৎ পন্থায় জীবিকা উপার্জন গুনাহ ও অন্যায় কাজ। অবৈধ পন্থায় উপার্জনের মাধ্যমে সম্পদের প্রাচুর্যতা যেমন দুনিয়ায় অশান্তির কারণ হয়, তেমনি আখেরাতে তার জন্য অপেক্ষা করছে ভয়াবহ শাস্তি। যারা মনে করে হারাম পথে উপার্জন করে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলে তার অংশ বিশেষ দান-খয়রাত করলেই আল্লাহ মাফ করে দেবেন, তারা ভুল ধারণায় নিমজ্জিত রয়েছে। কেননা হারাম পন্থায় যত উপার্জনই করা হোক না কেন তা সবটাই হারাম ও অবৈধ। তা নিজের জন্য ব্যয় করা হারাম, অন্যকে দেওয়াও হারাম, এমনকি এ থেকে দান-খয়ারত করাও হারাম। অবৈধ উপার্জনের মাধ্যমে অজির্ত সম্পদ থেকে দান-খয়রাত করে সওয়াবের আশা করাও গুনাহ। একজনের হারাম উপার্জনের দ্বারা অন্যের হালাল উপার্জনের দান নষ্ট হয়ে যায়। যেমন শরিকানা কোরবানির কোনো এক শরিকের দেয় টাকার এক অণুু পরিমাণ হারামের মিশ্রণ থাকলে সবার কোরবানিই নষ্ট হয়ে যাবে। সুতরাং হারাম বা অবৈধ পন্থায় উপার্জিত সম্পদ নিজের জন্য যেমন ক্ষতিকর, অন্যের জন্যও তা ক্ষতির কারণ হয়ে থাকে। তখন নিজের গুনাহর সঙ্গে অন্য ব্যক্তির গুনাও যুক্ত হবে। তাই ইবাদতের পাশাপাশি হালাল পথে উপার্জনের দিকেও গুরুত্ব দিতে হবে। কেননা ইবাদত কবুল হওয়ার পূর্বশর্ত হচ্ছে হালাল জীবিকা গ্রহণ। এ কারণে জীবনে আমাদের যেমন সব ধরনের পাপাচার থেকে দূরে থাকতে হবে, তেমনি অসৎ পথে অর্থ বা সম্পদ উপার্জনের পরিণাম সম্পর্কে সজাগ থাকতে হবে। নিজে হারাম বা অবৈধ পন্থায় উপার্জন থেকে বিরত থাকতে হবে এবং সমাজের প্রতিটি সদস্যকে অবৈধ পন্থায় উপার্জনের দুনিয়া ও আখেরাতের ভয়াবয় পরিণাম সম্পর্কে সচেতন করতে হবে। তা হলেই একটি সুখী সমৃদ্ধশালী সমাজ গড়ে উঠবে। আল্লাহতায়ালা আমাদের হালাল উপার্জন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।