৯ম পর্ব
আরেকটি চিন্তার বিষয়
কোন ধর্ম কি কোন আঞ্চলিক ধর্ম হতে পারে? প্রত্যেকেই বলবেন তা পারে না। এবার চিন্তা করুন হিন্দু ধর্মের যাবতীয় ইতিহাস আর কর্মকান্ড সবই ভারত কেন্দ্রিক। তাহলে প্রশ্নঃ হিন্দুদের ভগবান কি শুধু ভারতই চেনেন এবং অন্যান্য দেশ সম্পর্কে কি তিনি কোনো খোঁজ খবর রাখেন না। আর তা যদি রাখতেনই তবে অন্য দেশ সম্পর্কে কিছু না কিছু কথাতো বেদ পুরাণে থাকতো। যেমন মুসলমানদের ধর্মগ্রন্থ অর্থাৎ আল কুরআনে শুধু পৃথিবীর বিভিন্ন তথ্য দিয়ে ক্ষ্যান্ত হয়নি-মাটির নীচের সমুদ্রের তলদেশে, আকাশে, সাত তবক আকাশের ওপরে কোথায় কি আছে, না আছে তার কেনো তথ্য দিতেও ভুল করেনি। শিক্ষিত জ্ঞানীগুণী হিন্দু ভাইয়েরা কি এসব বিষয় নিয়ে কখনও কোনো চিন্তা ভাবনা করেন না? আমার একান্ত অনুরোধ পরকালের মুক্তির জন্য যার যার নিজের স্বার্থে আমার কথাগুলি খুবই গুরুত্ব সহকারে চিন্তা ভাবনা করবেন। দেখুন মৃত্যুর পর এমন একটা সময় আসবে যখন আর চিন্তার সময় থাকবে না এবং ঐ জীবনের কোনো শেষও হবে না। তাই বলি অত্যন্ত সরল নিরপেক্ষ মন নিয়ে গভীর ভাবে চিন্তা করে দেখুন যে, সত্যই আপনার গোঁড়ামীর কারণে যদি আপনার অনন্তকালের জীবনকে জ্বলন্ত আগুনে নিক্ষেপ করতে হয় তবে সেটাই কি ভালো হবে? না কি এখন থেকে সময় থাকতে হুঁশিয়ার হওয়া ভালো হবে। এরপর অবশ্যই এমন একটা দিন আসবে, যে দিন প্রত্যেকটি ভ্রান্ত লোক অস্থির হয়ে কাঁদবে এবং বলবে ‘লাওকুন্না নাসমায়ু আও না’কিলু মা কুন্না ফি আসহাবিস, সায়ীর-হায় সেই দিন যদি মনোযোগ সহকারে কথাগুলি শুনতাম এবং নিরপেক্ষ মন নিয়ে সুস্থ জ্ঞানে বুঝে দেখতাম তা হলে আজ আমাকে এই জাহান্নামের অধিবাসী হতে হতো না” এই বলেছেন আল্লাহ। কাজেই আসুন আমারও যিনি সৃষ্টিকর্তা ও প্রতিপালক এবং আপনারও যিনি সৃষ্টিকর্তা প্রতিপালক অন্ততঃ ত৭ার কতারন গুরুত্ব দিয়ে আমরা সঠিক ধর্ম কোনটা তা বুঝার ও গ্রহণ করার চেষ্টা করি।
অতঃপর আমি পূর্ণ ইমান ও আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে দাবী করছি যে, মৃত্যুর পর অবশ্যই এমন একটা মুহূর্ত আসবে যে দিন চোখের সামনে বেহেশতও থাকবে এবং দোজখও থাকবে। তখন অবশ্যই মনে করতে হবে যে, আহ কতই না ভালো হতো যদি দুনিয়ার জীবন সঠিক ধর্ম সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করতাম এবং সুস্থ বিবেকের বুঝ মানতাম।
আমি আল্লাহকে সাক্ষ্য রেখে বলছি যে, বনি-আদম হিসেবে অর্থাৎ একই আদি পিতার সন্তান হিসেবে আপনাদের যেহেতু আমি ভাই বলে মনে করি তাই আপনাদের প্রতি আমার ভাই হিসেবে দায়িত্ব রয়েছে আপনাকে আগুনের পথ থেকে ফেরানো ও সত্যের দিকে ডাকা। আমি সেই দায়িত্ব পালন করলাম। আমার ডাকে আপনি সাড়া দিবেন কি-না সে দায়িত্ব আপনার।
শিক্ষিত হিন্দু ভাইদের প্রতি একটি নিবেদন
বনি আদম হিসেবে আমি আপনার ভাই। আর ভাই হিসেবেই একটা কথা গভীর মনোনিবেশ সহকারে চিন্তা- ভাবনা করতে অনুরোধ করবো। চিন্তা করুন, ধর্মের সম্পর্ক হলো বিশ্বাসের সঙ্গে। আর (আমি পূর্বেও বলেছি) বিশ্বাসের সম্পর্ক রক্তের সঙ্গে নয়, এ সম্পর্ক হচ্ছে জ্ঞান ও বিদ্যা বুদ্ধির সঙ্গে।
১। চিন্তা করুন, আপনার ধর্মগ্রন্থ বলেঃ
বৃহস্পতিবার স্ত্রী তারার আপত্তি সত্ত্বেও তার সাথে ব্যাভিচার করার কারণে চন্দ্রকে তারা অভিশাপ দেয়। আর এই অভিশাপের কারণে চাঁদ মাঝে মাঝে রাহুগ্রস্ত হয়। যার ফলে চন্দগ্রহণ হয়। আপনি কি এটা বিশ্বাস করেন?
২। চিন্তা করুন, যে মন্ত্রে পাপ খন্ডন হয় সে-মন্ত্র হচ্ছে ঃ
অহলা দ্রৌপদি কুন্তি তারা মন্দোদরী যথা-
পঞ্চ কন্যা স্মরনেন্নিতাং মহাপাতক নাশমন।
অর্থাৎ অহল্যা, দ্রৌপদি, কুন্তি, তারা এবং মন্দোদরী, এই পাঁচ কন্যার নাম প্রত্যহ স্মরণ করলে মহাপাপও মা’ফ হয়ে যায়। যাদের প্রত্যেকের যৌন জীবন সম্পর্কে আপনাদের জানা আছে। তাদের স্মরণে যে ধর্মের পাপ মা’ফ হয়ে যায় সে ধর্ম কি আজকের সভ্য যুগে চলতে পারে?
৩। চিন্তা করুন, আপনার ধর্মে যে উত্তরাধিকার আইন রয়েছে যাতে মেয়েরা পিতার সম্পত্তিতে কোন অংশ পায় না। ধর্মীয় আইন কি এইরূপ হওয়া উচিত? চিন্তা করুন, কোন একটা মেয়ে যদি অল্প বয়সে বিধবা হয়ে যায় তাহলে তার জীবন যাপনের অবস্থাটা কিরূপ হয়? এটা কি সৃষ্টি কর্তার পক্ষ থেকে কোন ন্যায় সঙ্গত আইন? যার পরিবর্তনের জন্যে হিন্দুরাই এখন উঠে পড়ে লেগেছেন?
৪। চিন্তা করুন, আপনার ধর্মে বিধবাদের জীবন যাপনের যে আইন কানুন রয়েছে এটা কোনো সভ্য সমাজের আইন হতে পারে। শেষ পর্যন্ত তাদের অনেকেই কদুর বস হাতে নিয়ে রাস্তায় নেমে পড়ে অনিশ্চিত জীবন যাপনের পথ বেছে নেয়া ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না। ধর্মীয় আইন কি এরূপ হওয়া উচিত?
৫। চিন্তা করুন, মানুষের মর্যাদা তার অর্জিত গুণগত কারণে হওয়া উচিত, নাকি জন্মগত কারণে হওয়া উচিত? হিন্দু ধর্মে যেমন-একশ্রেণীর মানুষ অন্য শ্রেণীর মানুষের নিকট ঘৃণার পাত্র। এটা কি ধর্মীয় বিধানের নামে বা ধর্মীয় বিধানে হওয়া উচিত?
৬। আমি কোন দিন শ্মশানের স্বচক্ষে মারা পোড়ান দেখতে যাইনি। এটা দেখলাম সর্ব প্রথম যেদিন টেলিভিশনের মাধ্যমে ইন্দ্রিরা গান্ধীর মৃতদেহ পোড়ান হলো সেই দিন। আহা! সেকি মর্মান্তিক দৃশ্য। দু’দিন আগেও সারা পৃথিবীতে যার এতবড় মান মর্যাদা, এত শান শওকত, আল্লাহর পৃথিবীর এক বিরাট ভূ-খন্ডের প্রায় ৮০ কোটি মানুষের দন্ড মুন্ডের মালিক। ভারত ছাড়াও অন্যান্য দেশের কত হাজার হাজার বনি আদমের নিকট যে নারী সম্মানের পাত্রী। তার মৃত দেহকে কি নির্মভাবে পুড়িয়ে ফেলা হল। তার মৃত দেহকে কি নির্মমভাবে পড়িয়ে ফেলা হল। আর কি করে তার নিজের পেটের সন্তান তা দেখে সহ্য করল, আর সহ্য করল শুধুমাত্র ধর্মীয় আইনের খাতিরে। যে- যা-ই মনে করুক এ মর্মান্তিক দৃশ্যটা দেখে আমার নিকট খুবই খারাপ লেগেছিল। অথচ এটাও হল ধর্মীয় আইন। কেন? তাকে কি সসম্মানে কবরস্থ করা যেত না?
৭। এই ধরনের আরও বহু প্রশ্নকে সামনে রেখে আপনি চিন্তা করুন, হিন্দুধর্ম কি আসলে ইহকাল ও পরকালের মুক্তির কোনো পথ দেখাতে পারে?
দেখুন, আপনি যখন বলেছেন যে, আমি একজন হিন্দু, তখন ঐ সব চরিত্রহীনদের সঙ্গে হয়ে পড়ছে আপনার ধর্মীয় সম্পর্ক; আর যখনই বিশ্বাস শুদ্ধ করে নিয়ে আপনি বলছেন যে ‘আমি একজন মুসলমান’ তখনই আপনার সম্পর্ক হয়ে যাচ্ছে কুরআন হাদীস ও নবী রাসূলগণের সঙ্গে।
খৃষ্টান ভাই-বোনদের প্রতি আমার আবেদন
আপনারা ইসলাম ধর্মের খুবই কাছাকাছি। কিন্তু আপনাদের ধর্মীয় সংগঠন খুই মজবুত ফলে সত্যকে সত্য বলে মেনে নেয়া আপনাদের জন্যে খুব একটা সহজ ব্যাপার বলে আমি মনে করি না। তবে আপনাদের কারো কারো মধ্যে নিরপেক্ষ চিন্তাভাবনার অভ্যাস আছে বলেই বহু নামী দামী খৃষ্টান ইসলাম গ্রহণ করতে পেরেছেন। এসব দেখেই আপনাদের প্রতি কিছু নিবেদন রাখছি।
আপনাদের অভ্যাস আছে কুরআন বুঝার তাই আমার এ ছোট্ট পুস্তিকায় উত্থাপিত কুরআন আল্লাহর বাণী হওয়ার সপক্ষে যে যুক্তিগুলি পেশ করেছি তা অবশ্যই খেয়াল করেছেন এবং দেখেছেন আল কুরআনের বহু স্থানেই হযরত ঈসা (আঃ) এর কথা উল্লেখ রয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি প্রত্যেক নবীই আল্লাহর প্রেরিত এবং প্রত্যেক নবীর যুগেরই তাঁর অনুসারীরা মুক্তিপাবে। আমরা হযরত ঈসা (আঃ) এর যামানার লোক হলে অবশ্যই তাঁর শরীয়ত মেনে চলতাম, কিন্তু যেহেতু আমরা শেষ নবীর যুগের লোক তাই শেষ নবীরই শরীয়ত মেনে চলি। তাহা ছাড়া আপনারা এটাও লক্ষ্য করেছেন যে, মুসলমান প্রত্যেক নবী রাসূলকে সমান ভাবে মর্যাদা দেয় যেমন যে কোনো নবীর নাম উচ্চারণ করতে গিয়ে মুসলমানদের একটা বাচ্চা ছেলেও নবীর নামের পূর্বে হযরত বলবে এবং নামের শেষে ‘আলাইহিস সালাম’ বলবে। এটা কেন বলি? এই জন্যে যে আমাদের কুরআন ও আমাদের নবী (সাঃ) শিখিয়েছেন যে, “লা নুফার রিকু বাইনা আহাদিম মির রুসুলিহি- আমরা কোনো নবী রাসুলের মধ্যে কোাে পার্থক্য করি না।” (আল কুরআন)। এটা কেমন তা একটা উদাহরণ দিয়ে বুঝান হয়েছে যে, আমরা বৃটিশ সরকার, পাকিস্তান সরকার, এ সব সরকারকেই এক কালের সরকার বলে মানি, কিন্তু আইন মেনে চিলি বর্তমান সরকারের। ঠিক তদ্রুপই পূর্বের সব নবী রাসূলগণকে আমরা এক কালের নবী রাসূল হিসেবে মানি, কিন্তু শরীয়ত মানি বর্তমান যুগের নবীর এবং এইটাই বিবেক বুদিধগ্রাহ্য যুক্তি।’ আরও একটা যুক্তি পেশ করছি। মনে করুন, আমাদের মধ্যে এমন বহু গ্রাজুয়েট আছেন যারা ২০ বছর পূর্বের সিলেবাসে পরীক্ষা দিয়ে পাশ করেছেন। আবার এমনও গ্রাজুয়েট আছেন যারা ৫ বছর পূর্বের সিলেবাসে পাশ করেছেন। এই দুই সিলেবাস এক ছিল না, কিন্তু গ্রাজুয়েট হিসাবে মর্যাদা একই। এখন চিন্তা করুন কেউ যদি এই সময়ে দাবী করে যে আমি ২০ বছর পূর্বের সিলেবাস অনুযায়ী পরীক্ষা দিতে চাই তাহলে তা কি যুক্তি সঙ্গত দাবী হবে? আর এ দাবী কি কোনো সরকার মেনে নিতে পারে? আপনি বলবেন অবশ্যই তা পারে না। ঠিক তদ্রুপই এক যামানর সিলেবাস ছিল তৌরাত। এক যামানার সিলেবসা ছিল যাবুর, এক যামানার সিলেবাস ছিল ইনজিল। আর বর্তমান যামানার সিলেবসা হচ্ছে আল-কুরআন। কাজেই আল কুরআনের যুগে যদি আপনি পূর্বের সিলেবাসে অর্থাৎ ইনজিল বা তৌরাতের সিলেবাসে পরীক্ষা দিয়ে পাশ করতে চান তা কি যুক্তি গ্রাহ্য হবে? তা যেমন যুক্তি গ্রাহ্য হবে না তেমন শেষ নবীর (সাঃ) যুগে যদি হযরত ঈসা (আঃ) এর যুগের শরীয়ত মেনে চলতে চান তবে আল্লাহর কাছে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। আপনি যদি গভীরভাবে এক মনে এ সব চিন্তা ভাবনা করেন তাহলে অবশ্যই এ সত্য আপনার জ্ঞান ধরা পড়বেই।
এরপর আপনার মনে বহু প্রকার প্রশ্ন উদয় হবে যে বর্তমান যুগের মুসলমানদের মধ্যে তো সেই চরিত্র দেখতে পাওয়া যায় না যা পূর্ব যুগের মুসলমানদের মধ্যে ছিল। এ ব্যাপারে বক্তব্য হলো এই যে, কোনো মুসলমান চোর হলে সে দোষটা ইসলামের ঘাড়ে চাপান যেতে পারে না। যেমন কোন খৃষ্টান চুরি করলে সে দোষ খৃষ্ট ধর্মের হতে পারে না। ঠিক তদ্রুপ কোনো শিক্ষিত লোক চুরি করলে সে দোষটা শিক্ষার হতে পারে না। এ সব ব্যাপার দোষ যেমন ব্যক্তির ঠিক তদ্রুপ কোনো মুসলমানের চরিত্র দেখে ইসলামকে বিচার করলে চলবে না। বর্তমান বিশ্বে ইসলামী বিরোধী চরিত্রের যে বন্যা শুরু হয়ে গেছে সে বন্যার ঢেউ থেকে উদ্ধার পাচ্ছে না অনেকেই। অনেকে স্রোতের টানে ভেসে যাচ্ছে। তাই বলে এ কথা মনে করা উচিত নয় যে, কেউ কেউ যখন ভেসে যাচ্ছে তকন আমি আর না ভেসে থাকি কন? এটা মনে করা যেমন কোনো বুদ্ধিমানের কাজ হতে পারে না তেমন কে কতোটুকু অন্যায়ের স্রোতে ভেসে যাচ্ছে তা না দেখে আমি কি করছি আমার কি পরিণাম হবে, আমাকে আল্লাহর কাছে কি জবাবদিহি করতে হবে এটাই চিন্তা করতে হবে সর্বাগ্রে। প্রথম কাজ হলো যা মহাসত্য তা আগে নিজে গ্রহণ করা। আপনি যে সত্যকে গ্রহণ করবেন অন্যকে সেই সত্যের পথে আনার চেষ্টা করবেন এটা হবে পরের কাজ। আশা করি নিপেক্ষ মন নিয়ে এসব ভেবে দেখবেন। (চলবে)