New Muslims APP

বিয়ের দিন করণীয় ও বর্জনীয় কাজসমূহ

বিয়ের দিন করণীয় ও বর্জনীয়

বিয়ের দিন করণীয় ও বর্জনীয়

গত পর্বে আমরা বিয়ের পূর্বে আমাদের দেশে যেসব শরীয়ত বিরোধী কমকাণ্ড সংগঠিত থাকে বিয়ের পূর্বে দেশাচার শিরোনামে তা নিয়ে আলোচনা করেছি, এখন বিয়ের দিন আমাদের সমাজে এমন কিছু কর্মকাণ্ড চালু রয়েছে যা ইসলামী শরীয়ত সমর্থন করে না। সে বিষয় আলোচনা করবো ইনশা আল্লাহ।
বিবাহ বন্ধন মজলিসের জন্য বর, কনে ও অভিভাবক ছাড়া আর মাত্র দুটি লোকের প্রয়োজন। তাও তো মিনিট কয়েকের ব্যাপার। কিন্তু এত বিপুল আয়োজন, এত ঘটা কিসের? এগুলো লোক প্রদর্শন নয় কি? ১০/২০টা ডুলার বিবি, ১৫০-২০০ বরযাত্রী, তাতে মুসলিম, অমুসলিম সব ধরণের লোক থাকতে হবে! এত লোকের রাখা ও খাওয়ানোর দায়িত্ব পাত্রীপক্ষের ঘাড়ে। কোন অধিকারে? এতজন পারবো না বললেও উপায় নেই। সমস্ত কুটুম্বের মান রাখতেই হবে। জোর করে যাবে ২০০ জন বরযাত্রী। পাত্রীপক্ষ বাধ্য হয়েই রাজি হয়। এটা কি জুলুম নয়? জুলুম করে কারো বাড়িতে দাওয়াত খাওয়া চালে? এমন পেটুকেরা কি লুটেরা নয়? কুটুম বুঝাতে নিজে খাওয়াও। পরের ঘাড়ে কেন কুটুমের মান রাখ? নকি ‘পরের লেজে পা পড়লে তুলোপানা ঠেকে, আর নিজের লেজে পড়লে ক্যাঁক করে ডাকে।’ তাই না?
জোরের বরযাত্রী ভোর থেকেই প্রস্তুত। গতকাল পাত্র-পাত্রী সোদা ও আটা মেখে গায়ের হলুদ তুলে (আমপাতা দেওয়া) পানিতে গোসল করেছে। আজ তাদের নব জীবনের নতুন প্রভাত। চারিদিক কুমিতে ডগমগ। কিন্তু খেয়াল থাকে যে, ‘কারো পৌষ মাস আবার কারো বা সর্বনাশ।’ ‘কারো মোজ হয় কেউ আমাশয় যায়।’
বর সাজানোর ধুম চলছে বাড়ির এক প্রান্তে। ভাবীরা বরকে ঘিরে পরম আদরে কপালে চুন-কুমকুমের ফোটা, মাথায় মুকুট, গলায় ফুলের মালা, আঙ্গুলে সোনার অঙ্গুরীয়, গলায় সোনার হার, জামায় সোনার বোতাম, গায়ে রেশমের বা হলুদ কিংবা জাফরানী রঙের রোমাল বাঁধা হচ্ছে। যার প্রত্যেকটিই হারাম।
অন্যদিকে শাড়ি দেওয়া হয়নি বলে বড় ভাবী রাগ করেছে; তাই ডুলার বিবি যাবে না। ছোট বুনুইকে জামা প্যান্ট দেওয়া হয়নি বলে রাগ করেছে, তাই সেও বরযাত্রীতে যাবে না। বন্ধুকে বরযাত্রী না নিয়ে গেলে সেজো ভাইও বিয়েতে যাবে না বলেছে। ও পাড়ার সাজু রাগ করেছে, সেও বরযাত্রী যাবে না, কারণ তার চাচাকে বরযাত্রী বলা হয়নি তাই! ওদের সকলের রাগ মানাবার চেষ্টা চলছে।
বরকে কোলে তুলে পাল্কি বা গাড়িতে বসালো তার বুনাই অথবা চাচাতো ভাই। মা এল তেলের ভাঁড় ও পানির বদনা হাতে ছেলের কাছে। কয়জন মেয়ে মা- ছেলেকে দিল কাপড় ঢেকে। মা ছেলের পায়ে তেল দিয়ে পানি দ্বারা পা ধুয়ে দিল! “তোমার জন্য দাসী আনতে যাচ্ছি মা!” এরপর গাড়ি বা পাল্কি ছুটে পাত্রীর গ্রাম বা শহরের দিকে।
বলাই বাহুল্য যে, পূর্বের ঐ কীর্তিগুলো ইসলামের কিছু নয়। পরন্তু পয়সা নিয়ে দাসী আনার প্রভাব বহু সংসারেই বহু বধূর উপর পরে থাকে।
বরযাত্রীর গাড়ি পূর্বেই ছুটেছিল। থামল গ্রামের বাইরে। কেউ কোত্থাও নেই। ব্যাপার কি? এত অসামাজিক পাত্রীপক্ষ! নিমন্ত্রণ করতে বা আগে বাড়িয়ে (সংবর্ধনা জানিয়ে) নিতে আসে নি কেউ! দাওয়াত না দিলে কি কারো বাড়ি মেহমান যাওয়া হয়। এত নীচ ও ছোঁচা নয় বরপক্ষ। তবে জালেম নিশ্চয় বটে। করণ জোরপূর্বক তো এত লোক সঙ্গে এনেছে তারা। জোর করে মেহমান এসে আবার দাওয়াতের অপেক্ষা কেন? জালেমের মত ঢুকে পড়, আর লুটেরার মত পেটে ভর। দোষ কি তাতে? দেশাচার তো! নির্মম শোষণ হলেই বা ক্ষতি কি?
রাগ নিয়ে প্রবেশ করে বরযাত্রী। কনেপক্ষ ভুল স্বীকার করে কত কষ্টে রাগ মানায়। তবুও অসংগত মন্তব্য থেকে রেহাই পায়না। আবার এখানে তো ‘বাবু যত বলে পারিষদ দলে বলেতার শতগুণ।’ কে কার মুখে হাত দেবে? যদি বিয়ে ঘুরে যায়!
বরানুগমন হলে সসম্মানে তাকে কোলে করে নামানো হয়। প্রথমে মসজিদে সালাম (?) অথবা দুই রাকাত নামায পড়ানো হয়। (এটি বিদআত, অবশ্য মসজিদে গেলে বা মসজিদে বিয়ে রাখলে সকলকেই দুখুল মসজিদ দু’রাকাত পড়তে হয়। প্রকাশ থাকে যে, মসজিদে বিয়ে রেখে বরযাত্রীদের ধুমপান, অসঙ্গত কথা-বার্তা প্রভৃতি দ্বারা তার পবিত্রতা হানি করা অবশ্যই হারাম।) এরপর পীরতলায়, ইমামতলায় সালাম (?) কারানো হয়। তারপর (কোন কোন এলাকায়) শ্বশুর বাগিতে নিয়ে গিয়ে বরাসন সাত চক্র তওয়াফ করিয়ে বসানো হয়। কিন্তু এ সময় নাকি কলে লুকিয়ে ফাঁক থেকে বরকে দেখে (পছন্দ করে) থাকে। কিন্তু এ সময় অপছন্দ হলেও কি বিয়ে ফিরিয়ে দিতে পারবে?
অতঃপর বর আসে বিবাহ মজলিসের ‘আমতলায়।’ বড় বিনীত হয়ে রুমাল হাতে নিয়ে ঝুঁকে সালাম (?) করে। কি জানি ‘আস্সলামু আলাইকুম’ বলে সালাম হয়তো জানেও না। এরপর কেবলা মুখে নামাযে বসার মত (প্রায় সর্বদাই বসে)।
এ সময় অনেক জায়গায় প্যান্ডেলের গেটে দাঁড়িয়ে দুই প্রসাধিকা যুবতী কপালে চন্দনের ফোটা দিয়ে এবং গলায় ফুলের মালা পরিয়ে বর ও বরযাত্রী বরণ করে!
তারপর শুরু খাওয়া-দাওয়া ও ভুরিভোজন; অর্ধেক খাওয়া, অর্ধেক ফেলা। মিষ্টিখোরের দল তো গোনা-গাঁথা ৭০/৮০ টা রসগোল্লা খাবেই। (হয়ত ইদানীং মিষ্টি খাওয়ার প্রবনতা কমে গেছে ডায়াবেটিকসের ভয়ে) না পারলে নিংড়ে-নিচুড়ে চুরি করে লঙ্কা কামড়ে বা লেবু চুসেও পেটে ভরবে। পরে বমি হয়ে গেলেও ছাড়বে কেন? পয়সা তো লাগছে না।
এর পরেও যদি কিছু আনতে বা দিতে একটু বিলম্ব হয় তাহলে প্লেট উবুর হবে অথবা ফেলা হবে ছুঁড়ে। আরো কত অশালীন আচরণ এই বদযাত্রীদের! কিসের এত দাপ, কেন এত বাপুত্তি অধিকার ফলানো? কারণ হয়তো পাত্রীর বাপ চোরের দায়ে ধরা পড়েছে তাই। কন্যাদায় থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য বরপক্ষের এ পায়ে ধরা। খাইয়ে-দাইয়েও যদি তারা গালে চড়ও মারে, তবুও গাল পেতে নীরবে সহ্য করে নিতে হবে। নচেৎ যদি বিয়ে ঘুরে যায়! অত্যন্ত অপারগ পাত্রীপক্ষ।
মহান আল্লাহ বলেন: وَكُلُوا وَاشْرَبُوا وَلَا تُسْرِفُوا ۚ إِنَّهُ لَا يُحِبُّ الْمُسْرِفِينَ ﴿٣١﴾
“ তোমরা পানাহার কর, কিন্তু অপচায় করো না। তিনি অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না। (সূরা আ‘রাফ: ৩১)
অনত্র আল্লাহ বলেন : وَآتِ ذَا الْقُرْبَىٰ حَقَّهُ وَالْمِسْكِينَ وَابْنَ السَّبِيلِ وَلَا تُبَذِّرْ تَبْذِيرًا ﴿٢٦﴾ إِنَّ الْمُبَذِّرِينَ كَانُوا إِخْوَانَ الشَّيَاطِينِ ۖ وَكَانَ الشَّيْطَانُ لِرَبِّهِ كَفُورًا ﴿٢٧﴾
আত্মীয়-¯¦জনকে তার হক দান কর এবং অভাবগ্রস্ত ও মুসাফিরকেও। এবং কিছুতেই অপব্যয় করো না। নিশ্চয় অপব্যয়কারীরা শয়তানের ভাই। শয়তান ¯¦ীয় পালনকর্তার প্রতি অতিশয় অকৃতজ্ঞ। (সূরা বনি ইসরাইল: ২৬-২৭)
মহান আল্লাহ আরো বলেন:
إِنَّمَا السَّبِيلُ عَلَى الَّذِينَ يَظْلِمُونَ النَّاسَ وَيَبْغُونَ فِي الْأَرْضِ بِغَيْرِ الْحَقِّ ۚ أُولَـٰئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ ﴿٤٢﴾
অভিযোগ কেবল তাদের বিরুদ্ধে, যারা মানুষের উপর অত্যাচার চালায় এবং পৃথিবীতে অন্যায়ভাবে বিদ্রোহ করে বেড়ায়। তাদের জন্যে রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। (সূরা শূরা: ৪২)
إِنَّهُ لَا يُحِبُّ الظَّالِمِينَ ﴿٤٠﴾
নিশ্চয় তিনি অত্যাচারীদেরকে পছন্দ করেন নাই। (সূরা শূরা: ৪০)
দয়ার নবী রাসূল মুহাম্মাদ (সা.) বলেন: “এক মুসলিম অপর মুসলিমের ভাই। কেউ কারো উপর যুলুম করবে না এবং কেউ কাউকে অসহায় ছেড়ে দেবে না। তাকওয়া হলো হৃদয়ের জিনিস। আর কোন মানুষের মন্দের জন্য এতটুকু যথেষ্ট যে, সে তার মুসলিম ভাইকে ঘৃণা করে। পরন্তু প্রত্যেক মুসলিমের জান, মাল ও ইজ্জত প্রত্যেক মুসলিমের জন্য হারাম করা হয়েছে। মুসলিম: ২৫৬৪)
পাঠক মাত্রই আশা করি বুঝতে পেরেছেন যে, উপর্যক্ত কর্মকা- ও বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠানের সপক্ষে কোন সমর্থন ইসলামে নেই। তাছাড়া পাত্রীপক্ষের প্রতি এমন অভদ্র আচরণ শুধু ইসলাম বিরোধীই নয়; বরং অমানবিকও।
এখানে পাত্রীপক্ষের উচিত নয় কষ্ট স্বীকার করে নাম কিনতে যাওয়া এবং অপব্যয় করে বিভিন্ন খাদ্যের ভ্যারাইটিজ প্রস্তুত করা। কারণ, “অপব্যয়কারী শয়তানের ভাই।” (সূরা বনি ইসরাইল: ২৭) যেমন মেহমানদের অসম্মান না হতে দেওয়াও তাদের কর্তব্য।
ওদিকে ডুলার (দোলার) বিবিরাও পর্দার ডুলি থেকে বের হয়ে বেগানা পুরুষের হাতে খাওয়া-দাওয়ার কর্তব্য (?) পালন করছে। আর মনে মনে চিন্তা করছে ‘ কে কেমন কাপড় পাবে।’ কাপড় খারাপ হলে তো রেহাই নেই।

1 Star2 Stars3 Stars4 Stars5 Stars (No Ratings Yet)
Loading...

Leave a Reply


This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.