New Muslims APP

অপসংস্কৃতি শব্দ সংস্কৃতির ছোবলঃ

অপসংস্কৃতি শব্দ সংস্কৃতির ছোবলঃ অগ্নিকন্যা/অগ্নিপুরুষ

অপসংস্কৃতি
শব্দ সংস্কৃতির ছোবলঃ অগ্নিকন্যা/অগ্নিপুরুষ

অপসংস্কৃতি
শব্দ সংস্কৃতির ছোবলঃ অগ্নিকন্যা/অগ্নিপুরুষ
অপসংস্কৃতি ভয়ঙ্কর এক রূপ নিয়ে আমাদের মুসলিম সমাজের বৃহত্তর অংশকে প্রায় গিলে ফেলেছে। অনেকে জেনে-শুনে আবার অনেকে না জেনে ও বেখেয়ালে হয়েছেন এর খোরাক। যারা এখনও এর শিকার হন নি, এর থেকে বাঁচার চেষ্টা করছেন, কিন্তু তারা জানেন না, শব্দ সংস্কৃতি কিভাবে তাদের ছোবল মারছে। প্রত্যক্ষ্য ও পরোক্ষভাবে। কোন্ কোন্ শব্দকে বাহন করে শব্দ সংস্কৃতি আমাদের নিরন্তর ছোবল মারছে তা জানা না থাকলে এর মুকাবিলা করা যেমন সম্ভব হবে না, তেমনি আত্মরক্ষা করাও সম্ভব হবেনা।
আজকের এ সামান্য প্রয়াস তাঁদের জন্যে নিবেদিত:
-যে সব মুসলিম তরুণ লেখা লেখি করেন বা লেখা লেখির প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
-যারা লেখক ও বক্তা (সম্মানিত খতীব, আলোচক, ওয়ায়েজীন) অথচ তারা লেখা লেখি ও বক্তৃতায় প্রায়ই অপসংস্কৃতিমূলক শব্দ ব্যবহার করেন অথচ জানেন না এ সব শব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ ও ইতিহাস অথবা জানলেও এদিকে খেয়াল করেন না।
– যারা অপসংস্কৃতিমূলক শব্দ ঘৃণা করেন অথচ ব্যবহার করেন আগ্রহসহকারে শয়তানের প্ররোচনাই।
– যারা ইচ্ছে করেই স্বধর্ম ও স্বকীয় সংস্কৃতি ত্যাগ করে পরকীয়া সংস্কৃতিতে বিলীন হতে চলেছেন।
-যারা বেখেয়ালে সর্বদা ভুল করছেন তাঁদের বেখেয়ালের ভুল সংসোধনের জন্যে ।
অগ্নিকণ্যা/অগ্নিপুরুষ: পবিত্র কুরআন ও হাদীস আমাদের শিক্ষা দিচ্ছে মানুষ আগুনের তৈরী নয়, মাটির তৈরী। শয়তানজাতী আগুনের তৈরী। মুসলমানদের মৃত্যুর পর তাকে মাটির কবরে সমাহিত করা হয়। মাটির দেহ মাটিতে মিশে যায়। এজন্য মুসলমানরা কোন লাশকে আগুনে পোড়ায় না। আগুনকে আমরা ব্যবহা করি প্রয়োজনে। যাকে ব্যবহারের প্রয়োজনে ব্যবহার। আগুনকে আমরা পূজা করিনা, এই ‘আগুন’ নামের প্রতি আমাদের কোন আগ্রহ বা মোহ নাই। মুসলমানদের মধ্যে কোন অগ্নিপূজারী নেই। মুসলমানদের ধর্ম বিশ্বাসে নেই কোন অগ্নিদেবতা বা অগ্নি অবতার। সুতরাং আগুনকে ইবাদাতের বস্তু জ্ঞান করে আগুনের বৈশিষ্ট্যকে এবং তার প্রকৃতিকে মানব চরিত্রে চরিত্রায়ণ করে আমাদের কেউ অগ্নিকন্যা বা অগ্নিপুরুষ হতে পারেন না। এমনি তা হওয়ার অভিনয় করাও বিদয়াত (গর্হিত)। কেউ কেউ হয়তো বলবেন. অগ্নিকে আমরা ভাল অর্থে অগ্নি-প্রকৃতি বা এর তেজকে বিক্রমের প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করে থাকি, এতে দোষের এমন কিই বা আছে? এ জিজ্ঞাসার জবাবে আমার কথা হলো, অবশ্যই দোষের আছে। মানব চরিত্রের তেজস্বিতা আগুনের সাথে তুলনা করার মতো নয়, তা তুলনাও করা যায়না। এমনকি অগ্নি উপাসকরা আগুনকে পূজা করে একটি শক্তি জ্ঞান করে, পূজার আগুনে কখনো ভুলেও হাত দেয় না। মুসলমানদের ঈমান হচ্ছে এই, আল্লাহপাক মাটির যে দেহে ঈমানের নূর দিয়েছেন, সেই নূরের তাজাল্লিতে নমরূদের অগ্নিকুণ্ডের আগুন ও  দাহ্য-ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে, নূরধারী দেহ অক্ষত থাকে। জাহান্নামের আগুনও তাদের স্পর্শ করতে পারে না। এমন একটি দ্বীনের ঈমানে ‘অগ্নিকন্যা’ আর ‘অগ্নিপুরুষ’-এর সহ অবস্থান কি যৌক্তিক না সম্ভব? আমরা জাহান্নামের আগুন থেকে পানাহ চাই। সে আগুনের খাছলত চরিত্রে ধারণ করে আমরা হতে চাইনা ‘অগ্নিকন্যা’ বা ‘অগ্নিপুরুষ’। এমনকি কঠিন পরীক্ষার নামে অবতীর্ণ হতে চাইনা কোন ‘অগ্নিপরীক্ষায়ও’ । অগ্নিশর্মা’ হওয়ার প্রয়োজন নাই। শর্মা ব্রাহ্মণদের উপাধি। তাই মুসলমান কি করে অগ্নি শর্মা হতে পারে? শিখা চিরন্তন নামে ঘ্যাস পোড়ানো অগ্নিপূজারই বাংলাদেশী সংস্করণ। এই অপচয়ের উদ্যোক্তারা ও পৃষ্ঠপোষকরা শয়তানেরই ভাই-বোন।
অগ্নিকে আমরা অনেক নামে চিনি। যেমন আগুন, অনল, বহ্নি, পাবক, হুতাশন, বৈশ্বানর। হিন্দু শাস্ত্র মতে ভ্রহ্মার জ্যেষ্ঠপুত্র ও দক্ষ কন্যা স্বাহার স্বামী অগ্নি অবতারও বটে। দশটি দিকের মধ্যে অগ্নিকোণ বলতে যে কোনটি আছে (পূর্ব ও দক্ষিণ দিকের মধ্যবর্তিকোণ) এই কোনের একজন অধিদেবতা আছেন, তিনি অগ্নিদেব, তার নাম বৈম্বানর। বেদে আছে তিন প্রকার অগ্নির নাম। গাহ্যপত্য, আহবনীয় এবং দক্ষিণ। অগ্নিদাতা সেই পুরুষকেই বলে, যে মরদেহে মুখাগ্নি করে। যে নারী মুখাগ্নি করে তাকে অগ্নিদাত্রী বলে। সাগ্নিক ব্রাহ্মণের করণীয় বৈদিকযজ্ঞ বিশেষ হচ্ছে অগ্নিস্টোন আর সাগ্নিকের করণীয় প্রাত্যহিক হোম হচ্ছে অগ্নিহোত্র।
দেবতা বা ব্রাহ্মণের মুখকে বলে অগ্নীমুখ। এই সাস্ত্রেকার্বিকেয়কে বলে অগ্নিকুমার। হিন্দু শাস্ত্র মতে গোটা পৃথিবী একটি অগ্নিকুণ্ড। এবার বলুন, আমরা কি এই দর্শন অনুসরণ করে আগুনের মতো তেজস্বিনী কন্যা আর তেজস্বি পুরুষকে অগ্নিপুরুষ ও অগ্নিকন্যা বলতে পারি? হযরত আদম (আ.) কে সিজদা করার বিষয়ে আল্লাহর নির্দেশের আনুগত্য স্বীকার করেনি ইবলিস যে সব কারণে তার মধ্যে প্রধান কারণটি ছিল এই, সে বলেছিল, “আমি আগুনের তৈরী আর আদম মাটির তৈরী।”
মুসলমানদের মধ্যে যারা অগ্নিপুরুষ ও অগ্নিকন্যা হতে চান বা মুসলিম সমাজে যারা অগ্নিপুরুষ ও অগ্নিকন্যা সৃষ্টি করতে আগ্রহী, উভয়পক্ষের ঈমানের বা বিবেকের পর্দায় কিছু ছায়া ফেললাম এতক্ষণ। আল্লাহ যদি এই ছায়াকে কবুল করে নেন, তা হলে তা কায়ায় রূপান্তরিত হতে পারে। ঈমানের পরীক্ষা যেখানে যথেষ্ট সেখানে ‘ঈমানের অগ্নি পরীক্ষা’ লেখা মানে ঈমানকে আগুনের কাছে নিয়ে যাওয়ার নামান্তর। বীণাকেই যেখানে গ্রহণ করিনা, সেখানে অগ্নিবীণা বা স্বর্ণবীণা হলেই কি? অনেকেই বলবেন, বেশী বাড়াবাড়ি; কেউ বলবেন ‘সংকীর্ণতা; আমি বলি যে যাই বলুন, ঈমান আর তাকওয়ার প্রশ্নে যে কোন গালি বা মন্তব্য শুনতে রাজি আছি, কিন্তু নিজের অবস্থান থেকে একটুও নড়ছি না। হ্যা, এর ফায়সালা আছে, প্রমাণ করতে হবে আমার কথা ভুল। প্রমাণ করতে না পারলে আমার ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ যে সঠিক তা মেনে নিতে হবে। এটাই ফায়সালার একমাত্র শর্ত।

Leave a Reply


This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.