New Muslims APP

১৪ ফেব্রুয়ারী বিশ্ব বেহায়া দিবস

১৪ ফেব্রুয়ারী বিশ্ব বেহায়া দিবস

১৪ ফেব্রুয়ারী বিশ্ব বেহায়া দিবস

বড় হাস্যকর বিষয় ভালবাসতে ও নাকি আবার দিবস লাগে! কিন্ত আজ এসব বাদরের দল ভালবাসা দিবসের নামে যতসব নোংরামি করে পবিত্র ভালবাসার অপমান করছে। এটা কি আমাদের মুসলমানদের কোন রীতি-নীতি ? আমরা মুসলমানরা কেন বিধর্মীদের অনুসরণ করব ? আজ এই ভালবাসা দিবসের নামে যে নোংরামি করা হচ্ছে ইসলাম তাকে সমর্থন করে না । আমাদের এই মুসলিম দেশে তা এখন একটি ভাইরাস হয়ে দাঁড়িছে । এ থেকে আমাদের অবশ্যই বেঁচে থাকতে হবে । আপনি হয়তো ১৪ ই ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবস পালন করবেন।কিন্তু আপনি জানেন কি ভালোবাসা দিবসের পূর্ব ইতিহাস?না জানা থাকলে জেনে রাখুন এই দিবসের ইতিহাস গাথা সেই কথা।

ভালোবাসা দিবস বা সেন্ট ভ্যালেন্টাইন’স ডে (ইংরেজি: Valentine’s Day) একটি বার্ষিক উৎসবের দিন যা ১৪ই ফেব্রুয়ারি প্রেম এবং অনুরাগেরমধ্যে উদযাপিত করা হয়।

ইতিহাস গবেষকদের লিখনী থেকে যা পাওয়া যায়- যীশু খ্রিস্টের জন্মের আগে চতুর্থ শতকে পৌত্তলিক, মূর্তি পূজারীদের সমাজে বিভিন্ন অনুষ্ঠান প্রচলিত ছিল। তারা বিভিন্ন দেবতাকে পূজা করত। তাদের বিভিন্ন দেবতা ছিল। পশু-পাখির জন্য একটি দেবতাকে তারা কল্পনা করত। জমির উর্বরতার জন্য একটি দেবতাকে তারা বিশ্বাস করত। দেবতার নাম হচ্ছে লুপারকালিয়া। এই দেবতার সম্মানে তারা একটি অনুষ্ঠান করত। এই অনুষ্ঠানের একটি কর্মসূচি ছিল, যুবতীদের নামে লটারি ইস্যু করা হত। লটারিতে যে যুবতী যে যুবকের ভাগে পড়ে আগামী বছর এ দিন আসা পর্যন্ত সে যুযবতীকে যুবক ভোগ করত। অর্থাৎ লটারির মাধ্যমে যুবতীদের বণ্টন করা হত। আগামী বছর লটারি না দেয়া পর্যন্ত যুবতী এ যুবকের কাছে থাকবে। সেদিন দেবতার নামে পশু উৎসর্গ ও জবাই করা হত। জবাইকৃত ছাগলের চামড়া তুলে যুবতীর গায়ে জড়িয়ে দেয়া হত। তারপর ছাগলের রক্ত এবং কুকুরের রক্ত রঞ্জিত একটি চাবুক যুবকের হাতে দেয়া হত। যুবক সে চাবুক দিয়ে চামড়া পরিহিতা যুবতীকে আঘাত করত। তারা মনে করতো, এই চাবুকের আঘাতের কারণে এ যুবতীটি সন্তান জন্ম দেয়ার উপযুক্ত হবে। আর এ অনুষ্ঠানটি পালিত হত ১৪ ফেব্রুয়ারি। এরপরে খ্রিস্টধর্র্ম আবির্ভূত হলো। খ্রিস্টধর্ম ছিল আহলে কিতাবের ধর্ম। ইঞ্জিলের ধর্ম। কাজেই এ জাতীয় পৌত্তলিক কুসংস্কারকে আসমানী ধর্ম হিসেবে খ্রিস্টানধর্ম সমর্থন করতে পারে না। এ জন্য তারা এ প্রথা ও সংস্কৃতির বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করল। কিন্তু তারা এ প্রথাকে রোধ করতে পারল না। তখন তারা এ অনুষ্ঠানটি বিশুদ্ধ করার চেষ্টা শুরু করল। অনুষ্ঠান ঠিক থাকবে, তবে একে একটু বিশুদ্ধ করা হবে। কিভাবে বিশুদ্ধ করা যায়? তারা বলল যে, আগে অনুষ্ঠানটি ছিল দেবতার নামে। এখন হোক পাদ্রীর নামে। যুবতীর নামে লটারি বন্ধ করা হল। পাদ্রীর নামে লটারি দেয়া হল, যে যুবকের ভাগে যে পাদ্রীর নাম আসে সে যুবক পাদ্রীর সোহবতে বা সংস্পর্শে এক বছর অতিবাহিত করবে। অনুষ্ঠানের ধরন পরিবর্তন হল। আগে ছিল যুবতীকে লটারির মাধ্যমে যুবকদের মাঝে বণ্টন করা হত এবং যুবক ভোগ করত। এবার অনুষ্ঠানকে পবিত্র করার জন্য পাদ্রীর সোহবতে যুবকদের দেয়া হত। যাতে পাদ্রীর কারণে যুবকদের চরিত্র ভাল হয়। ৪৭৬ সনে পোপ জেলিয়াস বললেন, দিবসের নাম পরিবর্তন করা দরকার। আগে ছিল একজন দেবতার নামে, এটা পরিবর্তন করে তাদের একজন যাজক যার নাম ছিল সেন্ট ভ্যালেন্টাইন। তার সম্মানে দিবসটি পালন করা হোক। ৪৯৬ ইংরেজিতে এ দিবসের নাম করণ করা হল ‘ভ্যালেন্টাইনস ডে’। খ্রিস্টানদের ইতিহাসে পঞ্চাশ জনের মতো ভ্যালেন্টাইন নামক ব্যক্তির নাম পাওয়া যায়। তাদের মধ্যে দুজন অত্যন্ত বিখ্যাত। একজন ভ্যালেন্টাইনকে রোমান রাজারা কারাবন্দি করেছিল। তিনি অন্তরীণ হওয়ার পর কারাগারের প্রধান রক্ষকের মেয়ের প্রেমে পড়েন। মেয়ের সাথে ঘণ্টার পর ঘণ্টা গল্প করতেন। মৃত্যুর পূর্বে তার জন্য যাজক একটি চিরকুট লিখে যান। এ জন্য সে খ্রিস্টান সমাজে প্রেমিকদের যাজক হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন। প্রেমিকদের যাজক ভ্যালেন্টাইন ১৪ ফেব্রুয়ারি মারা যাওয়ার পর তার মৃত্যুবার্ষিকী পালন করা হয়। আর এ দিনের নাম রাখা হয় ভ্যালেন্টাইনস ডে। (শাহ আবদুল হান্নান : দৈনিক নয়া দিগন্ত ২০০৫) ভ্যালেন্টাইনস দিবসের ইতিহাস জানার পর কোন মুসলিম যুবক যুবতী এ দিবসটি পালন করতে পারে না। কারণ এ দিবসের সাথে কুসংস্কার জড়িত। এ দিবসের সাথে দেবতার নাম জড়িত। এ দিবসের প্রচলন করে পৌত্তলিকরা, মুশরিকরা। যে দিবসের সাথে ঈমান বিরোধী এতগুলো উপকরণ যুক্ত সে দিবস একজন মুসলিম কিভাবে পালন করতে পারে?
মুমিনকে স্মরণ করতে হবে এবং মেনে চলতে হবে তার রবের সে ঘোষণা যা তিনি প্রদান করেছেন স্বীয় কালামে পাকে, “তোমরা ব্যভিচারের কাছেও যেও না। নিশ্চয় এটা অশ্লীল কাজ এবং মন্দ পথ।” -সূরা বনী ইসরাঈল-৩২ আর ভ্যালেন্টাইনস ডে যুবক-যুবতীকে নিয়ে যায় ব্যভিচারের স্পর্শে। মহান আল্লাহ আরো বলেন, ‘মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গের হেফাজত করে। এতে তাদের জন্য খুব পবিত্রতা আছে। নিশ্চয়ই তারা যা করে আল্লাহ তা অবহিত আছেন। ঈমানদার নারীদের বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গের হেফাজত করেন। তারা যেন যা সাধারণত প্রকাশমান তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার উড়না বক্ষদেশে ফেলে রাখে।’ -সুরা নুর-৩০-৩১
মা-বাবার সঙ্গে সন্তানের প্রেম, ভাইবোনের প্রেম, স্বীয় স্বামী ও সন্তানের প্রেম, মানবতার প্রেমই পবিত্র হতে পারে। এছাড়া অন্য নর-নারী, যুবক-যুবতী, ছাত্র-ছাত্রীর বিবাহ পূর্ব প্রেম এটা পবিত্র প্রেম হতে পারে না। এটা অন্যায়, মহাপাপ। এ প্রেম খেলায় মেতে উঠে আমাদের সভ্যতার ভিত ধসে গেছে। মানুষের সমাজ পশুর সমাজে পরিণত হয়েছে। আবার প্রেমিক খুন করছে তার প্রেমিকাকে। এসিডে ঝলসে দিচ্ছে প্রেম প্রত্যাহারের কারণে অসংখ্য তরুণীকে। কিন্তু আমাদের বুদ্ধিজীবীদের মগজে পচন ধরেছে। তারা জাতির এ করুণ দশা দেখেও আমাদের মানব সমাজের ধ্বংসাত্মক পরিণতি উপলব্ধি করে না। এ সুকৌশলে আমাদের যুব সমাজের চরিত্রে আঘাত করেছে প্রেমকে পবিত্র আখ্যা দিয়ে। লেখা-লেখিতে, বক্তব্য-বিবৃতিতে বিশ্ব ভাসবাসা দিবস নামে বেহায়া দিবসকে উস্কে দিয়েছে।

 এদেরকে বুদ্ধিজীবী বলা যায় না। এরা মানবতার শত্রু। সভ্যতার দুশমন। প্রাশ্চাত্যে এ দিবসটি শত শত বছর ধরে পালিত হয়ে আসলেও আমাদের দেশে কিন্তু এর বিষবাষ্প ছড়িয়েছে বহু পরে। আমাদের দেশে দিবসপ্রিয় একজন সাংবাদিক তার নাম শফিক রেহমান। সে ১৯৯৩ সালে সাপ্তাহিক যায়যায়দিন পত্রিকার মাধ্যমে দিবসটির আমদানি করে। বাঙালিদের একটি নতুন দিবসের সাথে মূলত সেই প্রথমে পরিচয় করিয়ে দেয়। তবে সে একটু চালাকি করে দিবসটিকে ভ্যালেন্টাইনস ডে নাম না দিয়ে ‘বিশ্ব ভালবাসা দিবস’ হিসেবে বিবৃত করে। এতে বাংলাদেশের তরুণ-তরুণীদের কাছে দিবসটি প্রিয় হয়ে উঠে। শফিক রেহমানের দেখা দেখি অন্যান্য পত্রিকাগুলোও শুরু করল দিবসটি নিয়ে আলাদা আয়োজন। পূর্ণ কভারেজ দিতে থাকল ভালবাসা দিবসকে। এভাবে ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে উঠে ভালবাসা দিবস।
আবার অনেকে জেনে বুঝেও শুধুমাত্র বাণিজ্যিক কারণে এ দিবসটি নিয়ে অতি বাড়াবাড়ি করে থাকে। তারা ১৪ ফেব্রুয়ারির কয়েকদিন আগ থেকে শুরু করে তার কয়েকদিন পর পর্যন্ত এ দিবসকে ঘিরে নানা রকম প্রচারণা চালায়। বিভিন্ন কোম্পানী এ দিবস উপলক্ষে নানা অফার দিয়ে তরুণদেরকে আকর্ষণ করে। বড় বড় হোটেলগুলোর হলরুমে তারুণ্যের মিলন মেলা অনুষ্ঠিত হয়। নানা রঙের বেলুন আর অসংখ্য ফুলে স্বপ্নিত করা হয় হলরুমের অভ্যন্তর। অনুষ্ঠানের সূচিতে থাকে লাইভ ব্যান্ড কনসার্ট এবং উদ্দাম নাচ। তরুণ-তরুণী থেকে শুরু করে বয়স্ক পর্যন্ত আগতদের সিংহ ভাগই অংশ নেয় সে নাচে। এভাবে নাচতে নাচতে হায়া মায়া, সভ্যতা-শালীনতা সব হারিয়ে আমাদের প্রজন্ম ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। সভ্যতা, সংস্কৃতি, মনুষত্ব ও মানব সমাজকে রক্ষা করতে উদ্যোগ নিতে হবে। আমাদের সুশীল, সুলেখক ও বোদ্ধাদেরকে। সচেতন হতে হবে অভিভাবকদের। সরকার ও প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে হবে বেহায়াপনা ও বাণিজ্য বন্ধের। সিদ্ধান্ত নিতে হবে কঠিনভাবে।

Leave a Reply


This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.