New Muslims APP

জুমুয়ার খুৎবা

খুৎবাতুল জুমুয়া

জুমুয়ার খুৎবা

সমস্ত প্রশংসার মালিক একমাত্র আল্লাহ তা’আলা। আমরা তার প্রশংসা করি, তার কাছে সাহায্য প্রার্থনা করি। তার নিকট ক্ষমা ও মাগফিরাত প্রার্থনা করি। আমরা আল্লাহ তা’আলার নিকট প্রবৃত্তিজাত অনিষ্ট ও কর্মের কুপ্রভাব হতে আশ্রয় চাই। আল্লাহ তা’আলা যাকে হেদায়েত দান করেন, তার কোন ভ্রষ্টকারী নেই। আর যাকে তিনি ভ্রষ্ট করেন, তার কোন হেদায়েতকারী নেই। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ব্যতীত কোন মাবুদ নেই। তিনি এক, ও একক, তার কোন শরীক নেই। আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি, হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার বান্দা ও রাসূল।
হে আল্লাহ ! সালাত, সালাম ও বরকত অবতীর্ণ করুন তার উপর, তার বংশধর ও সাহাবাদের উপর, এবং কেয়ামত পর্যন্ত যারা তার পথে ধাবিত হবে ও তার আদর্শের অনুসরণ করবে তাদের উপর।
(يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ حَقَّ تُقَاتِهِ وَلَا تَمُوتُنَّ إِلَّا وَأَنْتُمْ مُسْلِمُونَ)
আল্ল¬াহ তা’আলা  ইরশাদ করেন :- হে ঈমানদারগণ! আল্লাহকে যেমন ভয় করা উচিৎ ঠিক তেমনিভাবে ভয় করতে থাক। এবং অবশ্যই মুসলমান না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না। (সূরা আল-ইমরান-১০২)
(يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَآَمِنُوا بِرَسُولِهِ يُؤْتِكُمْ كِفْلَيْنِ مِنْ رَحْمَتِهِ وَيَجْعَلْ لَكُمْ نُورًا تَمْشُونَ بِهِ وَيَغْفِرْ لَكُمْ وَاللَّهُ غَفُورٌ رَحِيمٌ)
আল্ল¬াহ তা’আলা আরো ইরশাদ করেন :- হে ঈমানদারগণ! আল্লাহকে ভয় কর এবং তাঁর রাসুল মুহাম্মাদ (সা)-এর ওপর ঈমান আনো। তাহলে আল্লাহ তোমাদেরকে দ্বিগুণ রহমত দান করবেন, তোমাদেরকে সেই জ্যোতি দান করবেন যার সাহায্যে তোমরা পথ চলবে এবং তোমাদের ত্রুটি-বিচ্যুতি মাফ করে দেবেন। আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও দয়ালু। (সূরা হাদীদ-২৮)
মুসলিম ভাইয়েরা !
হিদায়াতের আলোকবর্তিকা হিসেবে আল্ল¬াহ তা’আলা মহাগ্রন্থ আল-কুরআন অবতীর্ণ করেছেন। আল-কুরআন আল্লাহর বাণী, এর সকল বিষয় সত্য। মিথ্যা এর ধারে কাছেও আসতে পারে না। প্রজ্ঞাময় আল্লাহ তা’আলা তার প্রিয় বান্দা মুহাম্মদ (সা)-এর ওপর কুরআন অবতীর্ণ করেছেন। সংরক্ষণের দায়িত্ব তিনি নিজেই গ্রহণ করেছেন। তার মধ্যে বাড়ানো-কমানোর কোনো অবকাশ নেই। লওহে মাহফুজে তা হুবহু লিপিবদ্ধ রয়েছে। মানুষের অন্তরে সংরক্ষিত ও মুখে মুখে বার বার পঠিত হয়। কুরআনের শিক্ষা গ্রহণ করা ও গবেষণা করা অত্যন্ত সহজ এবং মানুষের জন্য একান্ত প্রয়োজন।

(إِنَّ هَذَا الْقُرْآَنَ يَهْدِي لِلَّتِي هِيَ أَقْوَمُ وَيُبَشِّرُ الْمُؤْمِنِينَ الَّذِينَ يَعْمَلُونَ الصَّالِحَاتِ أَنَّ لَهُمْ أَجْرًا كَبِيرًا ، وَأَنَّ الَّذِينَ لَا يُؤْمِنُونَ بِالْآَخِرَةِ أَعْتَدْنَا لَهُمْ عَذَابًا أَلِيمًا)
আল্লাহ রাব্বুল আ’লামীন ইরশাদ করেন :- আসলে এ কুরআন এমন পথ দেখায় যা একেবারেই সোজা। যারা একে নিয়ে ভাল কাজ করতে থাকে তাদেরকে সে সুখবর দেয় এ মর্মে যে, তাদের জন্য বিরাট প্রতিদান রয়েছে। আর যারা আখেরাত মানে না তাদেরকে এ সংবাদ দেয় যে, তাদের জন্য আমি যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির ব্যবস্থা করে রেখেছি। (সূরা ইস্রা-৯/১০)
(يَا أَهْلَ الْكِتَابِ قَدْ جَاءَكُمْ رَسُولُنَا يُبَيِّنُ لَكُمْ كَثِيرًا مِمَّا كُنْتُمْ تُخْفُونَ مِنَ الْكِتَابِ وَيَعْفُو عَنْ كَثِيرٍ قَدْ جَاءَكُمْ مِنَ اللَّهِ نُورٌ وَكِتَابٌ مُبِينٌ ، يَهْدِي بِهِ اللَّهُ مَنِ اتَّبَعَ رِضْوَانَهُ سُبُلَ السَّلَامِ وَيُخْرِجُهُمْ مِنَ الظُّلُمَاتِ إِلَى النُّورِ بِإِذْنِهِ وَيَهْدِيهِمْ إِلَى صِرَاطٍ مُسْتَقِيمٍ)
আল্ল¬াহ তা’আলা আরো ইরশাদ করেন :- হে আহলে কিতাব! আমার রাসূল তোমাদের কাছে এসে গেছে। সে আল্লাহর কিতাবের এমন অনেক কথা তোমাদের কাছে প্রকাশ করছে যেগুলো তোমরা গোপন করে রাখতে এবং অনেক ব্যাপারে ক্ষমার চোখেও দেখছে। তোমাদের কাছে আল্লাহর পক্ষ থেকে এসে গেছে এক জ্যোতি এবং আমি একখানি সত্য দিশারী কিতাব, যার মাধ্যমে আল্লাহ তাঁর সন্তোষকামী লোকদেরকে শাস্তি ও নিরাপত্তার পথপ্রদর্শন করেন এবং নিজ ইচ্ছাক্রমে তাদেরকে অন্ধকার থেকে বের করে আলোকের দিকে নিয়ে আসেন এবং সরল-সঠিক পথের দিকে পরিচালিত করেন। (সূরা মায়েদা-১৫/১৬) পবিত্র কুরআন শাশ্বত, তার বাণী চিরন্তন এবং এটি সর্বকালের সর্ব শ্রেষ্ঠ মূ‘জেযা। এ কুরআন দিয়েই সর্ব শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সা)-কে প্রেরণ করা হয়েছে, শক্তিশালী করা হয়েছে তার নবুওয়াতকে। এ কুরআনই হচ্ছে ইসলাম ধর্মের প্রথম প্রমাণ। বর্তমান বৈজ্ঞানিক যুগে মানুষ তার মধ্য থেকে নতুন নতুন অনেক তত্ত্ব ও উপাত্ত আবিষ্কার করছে, যা তার নবুওয়াতের সত্যতার অকাট্য প্রমাণ। কী সাহিত্যের উপাদান, কী সামাজিক নীতি ও আদর্শ, কী চমৎকার নীতি ও সুন্দর চরিত্র, কী রাজনৈতিক দিকনির্দেশনা, এ কুরআনের মধ্যেই সব কিছু রয়েছে। তাই প্রত্যেক মুসলিমকে কুরআন পড়া জানতে হবে। যে নিজেকে মুসলিম হিসেবে দাবী করবে তাকে অবশ্যই কুরআন শিক্ষা করতে হবে। কুরআন শিক্ষা করা এতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যে, আল্লাহ তা’আলা কুরআন শিক্ষা করা ফরজ করে দিয়েছেন। আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন :- পড়, তোমার রবের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন। (সূরা আলাক-১)
কুরআন তিলাওয়াতকারীর পক্ষে সুপারিশ করবে : কিয়ামতের ভয়াবহ অবস্থায় কুরআন তিলাওয়াতকারীর পক্ষে সুপারিশ করবে, এটা বিরাট সৌভাগ্যের বিষয়। আবূ উমামাহ (রা) থেকে বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন : তোমরা কুরআন তিলাওয়াত কর, কারণ, কুরআন কিয়ামতের দিন তিলাওয়াতকারীর জন্য সুপারিশ করবে। (সহীহ মুসলিম)
কুরআন পাঠকারী প্রত্যেক হরফের জন্য সাওয়াব লাভ করে : কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে বিরাট সাওয়াব অর্জন করার সুযোগ রয়েছে। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন :- যে ব্যক্তি কুরআনের একটি অক্ষর পড়বে তার জন্য একটি পূণ্য আর প্রত্যেকটি পূণ্য দশগুণ বৃদ্ধি করে দেয়া হবে। তিনি আরো বলেন, আমি বলব না আলিফ-লাম-মিম, একটি অক্ষর বরং আলিফ একটি অক্ষর, লাম একটি অক্ষর ও মিম আরেকটি অক্ষর। (তিরমিযী)
জান্নাতে যাওযার জন্য কুরআন শিক্ষা : প্রত্যেক মুমিনের সর্বোচ্চ কামনা হলো জান্নাতে যাওয়া, তাই জান্নাতে যাওয়ার জন্য কুরআন শিক্ষা করতে হবে। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন : সিয়াম ও কুরআন কিয়ামতের দিন মানুষের জন্য এভাবে সুপারিশ করবে যে, সিয়াম বলবে হে আমার রব, আমি দিনের বেলায় তাকে (এ সিয়াম পালনকারীকে) পানাহার ও যৌনতা থেকে বিরত রেখেছি। তাই তার ব্যাপারে তুমি আমার সুপারিশ কবূল কর। অনুরূপভাবে কুরআন বলবে, হে আমার রব, আমাকে অধ্যয়নরত থাকায় রাতের ঘুম থেকে আমি তাকে বিরত রেখেছি। তাই তার ব্যাপারে তুমি আমার সুপারিশ কবূল কর। রাসুলুল্লাহ (সা) বলেন : অতঃপর উভয়ের সুপারিশই কবূল করা হবে। (মুসনাদ আহমাদ)
মু’মিন ভাইয়েরা!
আল্লাহ তা’আলা মানব জাতির হেদায়াতের জন্য যুগে যুগে নবী ও রাসূলদের দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন। সর্বশেষ রাসূল মুহাম্মদ (সা) তার সাথে কিতাব মহাগ্রন্থ আল-কুরআন দেয়া হয়েছে। মহাগ্রন্থ আল-কুরআন মানবতার মূক্তির সনদ, আল্লাহ তা’আলার পক্ষথেকে সর্বশেষ কিতাব উম্মতে মুহাম্মদীদের জন্য নাযিল করা হয়েছে।
(لَقَدْ أَنْزَلْنَا إِلَيْكُمْ كِتَابًا فِيهِ ذِكْرُكُمْ أَفَلَا تَعْقِلُونَ)
আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন :- আমি তোমাদের প্রতি একটি কিতাব অবর্তীর্ণ করেছি; এতে তোমাদের জন্যে উপদেশ রয়েছে। তোমরা কি বোঝ না ? (সূরা, আম্বিয়া-১০)
হযরত আয়েশা (রা)-কে রাসূল (সা)-এর চরিত্র সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি সংক্ষিপ্ত অথচ অত্যান্ত ব্যাপক অর্থবহ শব্দে উত্তর দিলেন : নিশ্চয় তোমাদের নবীর চরিত্র সম্পূর্ণ কুরআন। (সহীহ মুসলিম) কুরআনুল করীমের শিষ্টাচার ধারণ করা প্রত্যেক ঈমানদারদের একান্ত প্রয়োজন। মানুষের জীবনাচরণ ও চিন্তাধারায় যে ভাব পরিলক্ষিত হয়, তা-ই চরিত্র। চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার। চরিত্র মানুষকে ন্যায়, সত্য, সংযম ও শ্রদ্ধাবোধ শিক্ষা দেয় এবং সৎ পথে চলতে উদ্বুদ্ধ করে। আল-কুরআনের চরিত্র হলো, সত্যন্যায়কে অবলম্বন করা, ভাল আচরণ, শ্রেষ্ট স্বভাব, চমৎকার নীতি, সুন্দর চরিত্র ধারণ করা, যার মধ্যে রয়েছে সহিষ্ণুতা, সহনশীলতা, ধীর-স্থিরতা, দানশীলতা, বদান্যতা, ক্ষমা, মার্জনা, দয়া, নম্রতা, ধৈর্য, স্থিতিশীলতা, অবিচলতা, ন্যায়-পরায়ণতা, ইনসাফ, সত্যবাদিতা, সুন্দর ব্যবহার,প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করা, অঙ্গীকার পালন করা, আত্মত্যাগ, করুণা, মমতাবোধ, মনুষ্যত্ব বোধ, সাহসিকতা, আমানতদারী, ঐকান্তিকতা, এগুলো যা উল্লেখ করা হলো তা সুন্দর চরিত্র নামে আখ্যায়িত।

মানব চরিত্রের স্বরূপ উন্মোচন : পবিত্র কুরআনের অসংখ্য আয়াতে মানুষের ¯¦ভাব চরিত্র সম্পর্কে বিশদ বর্ণনা প্রদান করা হয়েছে।
(وَإِذَا مَسَّ الْإِنْسَانَ الضُّرُّ دَعَانَا لِجَنْبِهِ أَوْ قَاعِدًا أَوْ قَائِمًا فَلَمَّا كَشَفْنَا عَنْهُ ضُرَّهُ مَرَّ كَأَنْ لَمْ يَدْعُنَا إِلَى ضُرٍّ مَسَّهُ كَذَلِكَ زُيِّنَ لِلْمُسْرِفِينَ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ)
যেমন আল্ল¬াহ তা’আলা ইরশাদ করেন :- যখন মানুষ কোনো বিপদ-মসিবতে নিমজ্জিত হয় তখন সে দাঁড়িয়ে, শুয়ে, বসে এবং সর্বাবস্থায় আমাকে ডাকতে থাকে। (সূরা ইউনূস-১২)
(وَإِذَا قِيلَ لَهُمْ لَا تُفْسِدُوا فِي الْأَرْضِ قَالُوا إِنَّمَا نَحْنُ مُصْلِحُونَ)
অন্যত্র পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টিকারী এক দল লোক সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে : আর যখন তাদের বলা হয়, তোমরা পৃথিবীতে ফিতনা-ফাসাদ সৃষ্টি করো না। তারা বলে আমরা তো সংস্কার কাজ করছি। জেনে রাখো, প্রকৃতপক্ষে তারাই বিপর্যয় সৃষ্টিকারী। (সূরা বাকারাহ-১১)
জ্ঞান সাধনা ও সত্যানুসন্ধানে কুরআনের আহ্বান : পৃথিবীতে উন্নতি সাধন এবং জীবনকে সার্থক ও ফলপ্রসূ করার নিমিত্তে পবিত্র কুরআন গোটা বিশ্ব মানবতাকে জ্ঞান সাধনা এবং সত্যানুসন্ধানের প্রতি আহ্বান জানিয়ে মানবজীবনে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধন করেছে। বস্তুত কুরআনের প্রথম নির্দেশনাই হলো জ্ঞান আহরণ করা, পবিত্র কুরআন এমন এক গ্রন্থ, যা মানবজাতির সব জিজ্ঞাসার অবসান ঘটিয়েছে। মানুষের জীবন সম্পর্কে কুরআনের বাস্তব দৃষ্টিভঙ্গি ও পথনির্দেশনা মানবজাতিকে একটি সুনির্ধারিত জীবন পদ্ধতি অবলম্বনে উৎসাহিত করেছে। যে জীবন পথের যথাযথ অনুসরণের মাধ্যমে মানবতা মুক্তি এবং শান্তির পথে পরিচালিত হতে পারে। মানবজীবনের সব সমস্যার সমাধান পবিত্র কুরআনে প্রদান করা হয়েছে। তাই মানবজীবনকে সার্থক ও সাফল্যমণ্ডিত করতে হলে কুরআনের দিকনির্দেশনা অনুসরণের কোনো বিকল্প নেই। আল্লাহ রাব্বুল আ’লামীন আমাদের সবাইকে আল-কুরআনের চরিত্র ধারণ করে আ’মল করার তাওফীক দান করুন। আমীন ….

Leave a Reply


This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.