New Muslims APP

শপথ ভঙ্গ তথা জিহ্বার ভয়াবহতা

শপথ ভঙ্গ তথা জিহ্বার ভয়াবহতা

শপথ ভঙ্গ তথা জিহ্বার ভয়াবহতা

পূর্বে প্রকাশিতের পর
(শেষ পর্ব)
আর মুসলমানের আচরণ বা বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে পবিত্র হাদীদের বর্ণনা:
“আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: মুসলমান মুসলমানের ভাই। সে তার উপর জুলুম করবে না এবং তাকে দুশমনের হাতে তুলে দিবে না। যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের প্রয়োজন পূরণ করবে, আল্লাহ তার প্রয়োজন পূরণ করবেন। যে ব্যক্তি কোন মুসলমানের কষ্ট বিপদ লাঘব করবে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তার কষ্ট বিপদ লাঘব করবেন। যে ব্যক্তি কোন মুসলমানের দোষত্রুটি গোপন রাখবে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তার দোষত্রুটি গোপন রাখবেন।” (বুখারী ও মুসলিম)।
অন্য একটি হাদীসের বর্ণনা: “আবু মুসা আশ‘আরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি  রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলাম! হে আল্লাহর রাসূল! মুসলমানদের মধ্যে কোন ব্যক্তি সর্বোত্তম ? তিনি বললেনঃ যার মুখ ও হাতের অনিষ্ট থেকে অন্য মুসলমান নিরাপদ থাকে।” (তিরমিযি)।

অন্য আরো একটি হাদীসের বর্ণনা: “হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আস (রাঃ) বর্ণনা করেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: মুসলমান হচ্ছে সেই ব্যক্তি, যার মুখ ও হাতের ক্ষতি থেকে অন্যান্য মুসলমান নিরাপদ থাকে। আর মুহাজির হলো সেই ব্যক্তি যে আল্লাহর নিষিদ্ধ জিনিস পরিহার করে চলে।” (বুখারী ও মুসলিম)।
তাই বলছি শুধু মুখের কথায় মুসলমান এবং মুনাফিক চিনা যাবে না, কে মুসলমান? আর কে মুসলমানের মহাশত্রু মুনাফিক? সেটা কথা ও কাজের মাধ্যমে বুঝা যাবে। আর সেটা যাচাই বাছাই বা পরীক্ষা করার কষ্টিপাথর হচ্ছে আল্লাহ পাকের পক্ষ থেকে নাযিল করা মহাগ্রন্থ আল-কুরআন এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাদীসের অনুসরণ। মুসলমানদের নেতা হচ্ছেন হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। আর মুনাফিকদের নেতা হচ্ছে কুখ্যাত মুনাফিক আবদুল্লাহ ইবনে উবাই। যিনি যার দলের লোক বা অনুসারী নন, তিনি যদি নিজে নিজে সেই দলের অনসুারী বলে দাবী করেন এবং তার দলনেতার বিপরীত কাজ করেন এবং তাঁর অনুসারীদেরকে নির্যাতন করেন ও কষ্ট দেন। তার চেয়ে আর বড় মিথ্যাবাদী দুনিয়াতে কেউ আছে কী?
উপসংহারঃ পরিশেষে একথাই বলছি যে, মানুষের জিহ্বার ব্যবহার সঠিকভাবে প্রয়োগ করা অপরিহার্য কর্তব্য। কারণ এই জিহ্বার ব্যবহারেই মানুষ এ দুনিয়াতে কল্যাণ ও অকল্যাণ বয়ে আনে এবং জিহ্বার কারণেই পরকালে মানুষের জান্নাত ও জাহান্নাম নির্ধারিত হবে এ ব্যাপারেই হাদীসের বর্ণনাঃ “সাহল ইবনে সাদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যে ব্যক্তি আমাকে তার দু’চোয়ালের মধ্যবর্তী জিনিস (অর্থাৎ জিহ্বা) এবং দু’পায়ের মধ্যবর্তী জিনিস (অর্থাৎ যৌনাঙ্গ)-এর হেফাজতের নিশ্চয়তা দিতে পারবে, আমি তার জান্নাতের জন্যে যামিন হতে পারি।” (বুখারী)।

 অন্য আরো একটি হাদীসের বর্ণনাঃ “হযরত আবু উমামা (রাঃ) বর্ণনা করেন রাসূলে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: যে ব্যক্তি মিথ্যা হলফের (শপথের) মাধ্যমে কোন মুসলমানের হক আত্মসাৎ করবে, আল্লাহ তার জন্যে জান্নাত হারাম করে জাহান্নামের আগুন অনিবার্য করে দিবেন। এক ব্যক্তি প্রশ্ন করলো: হে আল্লাহর রাসূল! সেটা যদি কোন তুচ্ছ জিনিস হয়? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ তা (সামান্য) পিলু গাছের একটি ডাল হলেও।” (মুসলিম)।
অন্য একটি হাদীসের বর্ণনা: “আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছেন। বান্দাহ অনেক সময় কোন বিচার বিবেচনা না করেই এমন কথা বলে ফেলে, যার কারণে সে নিজেকে জাহান্নামের এতদূর গভীরে নিয়ে যায় যা পূর্ব ও পশ্চিমের দূরত্বের সমান।” (বুখারী)।
তাই আসুন আমরা আমাদের জিহ্বার দ্বারা যে কোন ওয়াদা বা অঙ্গীকার করলে সেগুলো পূরণ করি এবং আমরা আমাদের নিজের সামান্য দুনিয়াবী স্বার্থের জন্যে আল্লাহর প্রিয় মুমিন বান্দা-বান্দীদেরকে তথা আমাদের প্রাণ প্রিয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রাণাধিক প্রিয় উম্মতদেরকে সর্বপরী আমাদের মুমিন মুসলিম ভাই-বোনদেরকে আমাদের হাত ও মূখের দ্বারা যে কোন কষ্ট দেওয়া থেকে বিরত থাকি। আল্লাহ আমাদেরকে সে তাওফীক ও শক্তি দান করুন। আমীন ॥

হে আল্লাহর প্রিয় বান্দা-বান্দিগণ! আমাদের প্রাণ প্রিয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর প্রাণাধিক প্রিয় যে উম্মতগুলির কল্যাণের জন্যে নিজের সমস্ত ধন-সম্পদ আল্লাহর পথে বিলিয়ে দিয়েছেন। যে উম্মতগুলির কল্যণের জন্যে অনাহারে থেকে পেটে পাথর বেঁধে দিন- রাত অতিবাহিত করেছেন। যে উম্মতের কল্যাণের জন্যে তায়েফের মাঠে তৎকালীন কাফির-মুশরিক নেতাদের লেলিয়ে দেয়া অবুঝ বাচ্চাদের পাথরের ঢিলের আঘাতে রক্তাক্ত শরীর নিয়ে মাটিতে পড়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলেন। আল্লাহর পক্ষ থেকে অত্যাচারীদের প্রতিশোধ গ্রহণের সুযোগ পেয়েও যিনি তায়েফবাসীদের পক্ষে আল্লাহর কাছে ক্ষমা ভিক্ষা চান এবং তাদের কল্যাণের জন্যে দোয়া করেন। যে উম্মতগুলির নাজাত ও কল্যাণের জন্যে পাহাড়ের গুহায় নির্জনে গিয়ে আল্লাহর কাছে কেঁদে কেঁদে অশ্রুজ্বলে বুক ভাসিয়ে ছিলেন। অনেক খুঁজা-খুঁজির পর তাঁর প্রিয়তম কণ্যা, দুই নাতি, এবং তাঁর প্রাণ প্রিয় সহচর রাযিআল্লাহু আনহুম-গণ তাঁকে কান্নারত অবস্থায় পেয়ে তারা সকলেই সেই নির্জন গুহা থেকে তাঁকে ফিরিয়ে আনতে গিয়ে চেষ্টা করে ব্যর্থ হন, পরবর্তীতে তারা সকলেই তাদের সারা জীবনের নেক কাজের অর্জিত ছওয়াব তাঁর সেই প্রিয় উম্মতদের জন্যে ওয়াকফ করে দিয়েছেন। আর আজ আমরা মুসলমান হয়ে তাঁর সেই প্রাণাধিক প্রিয় উম্মতদেরকে বিনা অপরাধে নির্যাতন করছি। এটা কি আমরা ঠিক কাজ করছি? আমরা আল্লাহর সকল মুমিন মুসলমান বান্দা-বান্দিগণ আমাদের মহাশত্রু অভিশপ্ত শয়তান ইবলীস ও তার দল-বল দ্বারা আক্রান্ত। আর এ মহাসত্যটাকে যাতে আমরা বুঝতে না পারি সেই জন্যেই অভিশপ্ত শয়তান ইবলীসের দল-বল আমাদেরকে বিভিন্ন গোলক ধাঁধাঁয় ফেলে রেখেছে। তাই সকল হৃদয়বান ঈমানদার মুসলমান ভাই-বোনদের কাছে আমার সবিনয় আকুল আবেদন, আসুন আমরা অভিশপ্ত শয়তান ও তার দোসরদের ধ্বংসাত্মক আক্রমনের হাত থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা করি এবং আমাদের মু’মিন ভাই-বোনদেরকেও বাঁচানোর চেষ্টা করি।

দয়াময় পরম দয়ালু সুমহান প্রতিপালক আমাদের সমস্ত মানব জাতিকে জিহ্বার সঠিক ব্যবহার করা এবং সেই সাথে দুনিয়ার সমস্ত মুমিন নর-নারীকে তাদের মহাশত্রু অভিশপ্ত শয়তান ইবলীস ও তার অনুসারী মুসলমান নামধারী মুনাফিক, নাস্তিক, মুরতাদ ও কাফির মুশরিকদেরকে চেনা ও তাদের ধ্বংসাত্মক অপতৎপরতার কবল থেকে বেঁচে থাকার তাওফীক দান করুন। আমীন ॥

Leave a Reply


This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.