১. জাহান্নামের ৭০টি লাগাম থাকবে এবং প্রতিটি লাগামে ৭০ হাজার ফেরেস্তা থাকবে তারা তা টেনে আনবে। (মুসলিম- ইবনে মাসউদ [রা.])
২. দুনিয়ার ব্যবহৃত আগুনের উত্তাপ জাহান্নামের আগুনের উত্তাপের ৭০ ভাগের ১ ভাগ। (বুখারী, মুসলিম- আবু হুরায়রা [রা.])
৩. আগুনের জুতা পরিয়ে শাস্তি দেয়ার ফলে তার মগজ টগবগ করে ফুটতে থাকবে, যা হবে জাহান্নামের সবচেয়ে কম শাস্তি। (বুখারী, মুসলিম- নুমান ইবনে বাশীর [রা.])
৪. জাহান্নামীদের মধ্যে সবচেয়ে কম শাস্তি হবে আবু তালিবের। তার পায়ে দু’খানা আগুনের জুতা পরিয়ে দেয়া হবে, ফলে তার মাথার মগজ ফুটতে থাকবে। (বুখারী- ইবেন আব্বাস [রা.])
৫. দুনিয়ার সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিকে জাহান্নামের আগুনে ঢুকিয়ের বের করা হবে। তাকে বলা হবে, তুমি দুনিয়াতে কখনো সুখ ভোগ করেছিলে? সে বলবে না, আমি কখনো সুখ ভোগ করিনি। (মুসলিম- আনাস [রা.])
৬. জাহান্নামের সবচেয়ে কম ও সহজতর শাস্তি প্রাপ্ত ব্যক্তি পৃথিবী পরিমাণ সম্পদ থাকলেও তার বিনিময়ে এ আযাব থেকে মুক্তি পাওয়ার চেষ্টা করতো। ( বুখারী, মুসলিম- আনাস [রা.])
৭. জাহান্নামীদের মধ্যে জাহান্নামের আগুন কারো টাখনু, কারো হাটু, কারো কোমর, কারো গর্দান পর্যন্ত পৌঁছবে। ( বুখারী, মুসলিম- সামুরা বিন জুনদুব [রা.])
৮. জাহান্নামের মধ্যে কাফেরের এক একটি দাঁত হবে ওহুদ পাহাড়ের সমান, তার গায়ের চামড়া হবে ৩ দিনের সফরের পরিমাণ পুরু। (বুখারী, মুসলিম- আবু হুরায়রা [রা.])
৯. জাহান্নামের আগুনকে ১ হাজার বছর তাপ দিয়ে লাল, ১ হাজার বছর তাপ দিয়ে সাদা আর ১ হাজার বছর তাপ দিয় কালো করা হয়েছে। এখন তা ঘোর কালো অন্ধকার অবস্থায় রয়েছে। (তিরমিজী- আবু হুরায়রা [রা.])
১০. জাহান্নামের মধ্যে কাফেরের গায়ের চামড়া হবে ৪২ হাত মোটা, দাঁত হবে ওহুদ পাহাড়ের সমান এবং বসার স্থান হবে মাক্কা-মাদীনার মধ্যবর্তী ব্যবধানের পরিমাণ। (তিরমিজী- আবু হুরায়রা [রা.])
১১. জাহান্নামে কাফেরের জিহবা ১/২ ক্রস পর্যন্ত বের হয়ে হেঁচড়িয়ে চলবে এবং লোকেরা তা মাড়িয়ে চলবে। (আহমাদ- ইবনে ওমার [রা.])
১২. জাহান্নামীদের মুখের কাছে যায়তুন তেলের নিচের তপ্ত গাদ নিয়ে আসা হবে এবং সেটা উত্তাপে তার মুখের চামড়া-গোশত খসে পড়বে। (তিরমিজী- আবু সাঈদ [রা.])
১৩. জাহান্নামে সাউদ নামক পাহাড়ে কাফেরদের ৭০ বছরে তার উপর উঠানো হবে এবং নিক্ষেপ করা হবে। এ অবস্থায় সব সময় উঠানামা চলতে থাকবে। (তিরমিজী- আবু সাইদ [রা.])
১৪. জাহান্নামীদের মাথার উপর ফুটন্ত গরম পানি ঢালা হবে তা তার পেটের মধ্যে প্রবেশ করে পেটের সব কিছু বিগলিত করে পায়ের দিক দিয়ে বেরিয়ে যাবে। এর পর পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসলে পুনরায় তা আবার ঢালা হবে। (তিরমিজী, আবু সাঈদ [রা.])
১৫. জাহান্নামীদেরকে তাদের রক্ত-পুুঁজ পান করানো হবে। এগুলো মুখের কাছে আনলে তারা তা অপছন্দ করবে- তাদের চেহারা দগ্ধ হয়ে মাথার চামড়া খসে পড়বে। এগুলো যখন বাধ্য হয়ে পান করবে, তখন নাড়িভুড়ি খ- খ- হয়ে মলদ্বার দিয়ে নির্গত হবে। (তিরমিজী- আবু উমামা [রা.])
১৬. জাহান্নাম ৪টি প্রাচীর দ্বারা বেষ্টিত। প্রত্যেক প্রাচীর ৪০ বছর দূরত্ব পরিমাণ পুরু বা মোটা। (তিরমিজী- আবু সাঈদ [রা.])
১৭. জাহান্নামীদের এক বালতি ভর্তি পুঁজ যদি দুনিয়াতে ফেলা হতো তাহলে গোটাদুনিয়াবাসীকে দুর্গন্ধময় করে দিত। (তিরমিজী- আবু সাঈদ খুদরী [রা.])
১৮. যদি জাক্কুম গাছের একটি ফোটা এই দুনিয়ায় পড়ে, তবে দুনিয়াবাসীর জীবন ধারনের উপকরণসমূহ নষ্ট হয়ে যাবে। সেই জাক্কুমই হবে জাহান্নামীদের খাবার। (তিরমিজী- ইবনে আব্বাস [রা.])
১৯. জাহান্নামীদের মুখ আগুনে তাপে ভাজাপোড়া হয়ে উপরের ঠোট সংকুচিত হয়ে মাথার মধ্যস্থলে এবং নিচের ঠোঁট ঝুলে নাভির সাথে এসে লাগবে। (তিরমিজী- আবু সাঈদ খুদরী [রা.])
২০. জাহান্নামীদের চোখের পানি কাঁদতে কাঁদতে প্রবাহিত হবে। এক সময় অশ্রু শেষ হয়ে চোখ দিয়ে রক্ত প্রবাহিত হতে থাকবে। ফলে চোখে এমন ক্ষতের সৃষ্টি হবে যে, যদি তাতে নৌকা চালাতে চাও তবে তাও চলবে। (শরহে সুন্নাহ, আনাস [রা.])
২১. জাহান্নামীরা সরাসরি আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করে বলবে, তাদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করার জন্য। আল্লাহ বলবেন: হে হতভাগার দল! দূর হও। জাহান্নামে পড়ে থাক। তোমরা আমার সাথে আর কথা বলবে না। এরপর হতাশ হয়ে জাহান্নামীরা বিকটভাবে চিৎকার. হাহুতাশ ও নিজের উপর ধিক্কার দিতে থাকবে। (তিরমিজী- আবু দারদা [রা.])
২২. রাসূল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, “আমি তোমাদেরকে জাহান্নামের আগুন থেকে ভয় প্রদর্শন করছি”- কথা গুলো উচ্চস্বরে বলতে থাকলেন। (দারেমী, সুনান, ইবনে বশীর [রা.])
২৩. আসমান থেকে কোন গোল পাথর যমীনের দিকে ফেলে দিলে তা একটি রাত শেষ হওয়ার আগেই যমীনে পৌঁছে যাবে। কিন্তু জাহান্নামের কিনার থেকে নিচ দিকে কোন পাথর ছেড়ে দিলে ৪০ বছরেও তা তার তলদেশে পৌঁছতে পারবে না। (তিরমিজী- আবদুল্লাহ ইবনে আমর [রা.])
২৪. জাহান্নামের হাবহাব নামক গর্তে প্রত্যেক স্বৈরাচারী অহংকারীকে রাখা হবে। (দারেমী, আবু বুরদাহ [রা.])
২৫. জাহান্নামের সাপ (যা খোরাসানী উটের মতো বিরাট) একবার দংশন করলে তার বিষ ব্যথা জাহান্নামীরা ৪০ বছর পর্যন্ত অনুভব করবে। (আহমদ, আবদুল্লাহ ইবনে হারেস [রা.])
২৬. কিয়ামতের দিন সূর্য ও চাঁদ দু’টোকে পনীরের আকৃতি করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। কারণ জিজ্ঞেস করলে আবু হুরায়রা (রা) বলেন, নবী রাসূল (সা.) এর কাছে যা শুনেছি তাই বর্ণনা করলাম। এর অধীক কিছু জানি না। এতে হাসান বাসরী (রহ.) নিরব হয়ে গেলেন।- (বায়হাকি, হাসান বসরী [রা.])
২৭. হতভাগ্য ব্যক্তি ছাড়া কেউ জাহান্নামে যাবে না। হতভাগ্যের সংজ্ঞায় বলা হলো যে, যে আল্লাহর সন্তষ্টি লাভের জন্য আনুগত্য করে না এবং তার নাফরমানীর কাজ পরিত্যাগ করে না। (ইবেন মাজাহ, আবু হুরায়রা [রা.])
২৮. কুরআন যাদেরকে আটকিয়ে রাখবে তাদের জন্য জাহান্নাম চিরস্থায়ী হয়ে গেছে। তারা ছাড়া জাহান্নামে আর কেউ থাকবেন না। (বুখারী মুসলিম- আনাস [রা.])
২৯. যখন কিয়ামত সংঘঠিত হবে, তখন একজন ঘোষক ঘোষণা দিবে, প্রত্যেক উম্মত (দল) যে যার ইবাদাত (গোলামী) করত সে যেন তার অনুসরণ করে। তখন যারা আল্লাহ ছাড়া মুর্তি প্রতিমার ইবাদাত করত, তাদের একজনও অবশিষ্ট থাকবে না বরং সবাই জাহান্নামের মধ্যে গিয়ে পড়বে। (বুখারী মুসলিম, আবুসাঈদ খুদরী [রা.])
৩০. আল্লাহ বলবেন, যার অন্তরে সরিষার দানা পরিমাণ ঈমান আছে তাকে জাহান্নাম থেকে বের করে আনো। তাদেরকে এমন অবস্থায় বের করা হবে যে, তারা (জাহান্নামের আগুনে) পুড়ে কালো কয়লায় পরিণত হয়ে গেছে। (বুখারী মুসলিম, আবুসাঈদ খুদরী [রা.])
৩১. কিছু সংখ্যক লোক তাদের গুনাহর কারণে তার শাস্তি স্বরূপ জাহান্নামের আগুনে ঝলসিত হবে। অতঃপর আল্লাহ তার রহমত ও করুণায় তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। তবে সেখানে তাদেরকে জাহান্নামী বলে ডাকা হবে। (বুখারী- আনাস [রা.])
৩২. একদল লোককে রাসূল (সা.) এর সুপারিশে জাহান্নাম থেকে বের করা হবে। অতঃপর তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং তাদের নাম রাখা হবে জাহান্নামী। (বুখারী- ইমরান ইবনে হুসাইন [রা.])
৩৩. জাহান্নাম থেকে সর্বশেষ মুক্তিপ্রাপ্ত এবং সর্বশেষ জান্নাতপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলবেন, জান্নাতে প্রবেশ কর, তোমাকে জান্নাতে দুনিয়ার সমপরিমাণ এবং তার দশগুন জায়গা দেয়া হলো- এ ব্যক্তি হবে মর্যাদার দিক দিয়ে জান্নাতীদের সর্বনি¤œ স্তরের। (বুখারী ও মুসলিম- আবদুল্লাহ ইবেন মাসউদ [রা.])
৩৪. সর্বশেষ জাহান্নামী যে সর্বশেষে জান্নাতে প্রবেশকারী হবে তাকে বলা হবে, তোমার প্রতিটি গুনাহের স্থলে তোমাকে এক একটি করে নেকী দেয় হলো। তখন সে বলবে, হে রব! আমিতো এমন কিছু বড় বড় রগানাহও করেছিলাম, যে গুলো এখানে দেখতে পাচ্ছিনা। এ সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এমনভাবে হাসতে দেখলাম যে, তাঁর মাড়ির দাঁত পর্যন্ত প্রকাশিত হয়ে পড়েছে। (মুসলিম, আবু যর [রা.])
৩৫. চার ব্যক্তিকে জাহান্নাম থেকে বের করে আবার জাহান্নামে প্রেরণের নির্দেশ দেয়া হবে। তখন তাদের একজন পিছন ফিরে বলবে, হে রব! আমি তো এ আশায় ছিলাম যে, যখন তুমি একবার আমাকে জাহান্নাম থেকে বের করে এনেছ, তখন সেখানে আর ফেরৎ পাঠাবে না। তখন আল্লাহ তাকে জাহান্নাম থেকে নাজাত দিয়ে দিবেন। (মুসলিম, আনাস [রা.])
৩৬. কোন জাহান্নামীকে জাহান্নামে প্রবেশ কররানো হবে না, যে পর্যন্ত ভাল কাজ করলে তার জান্নাতে যে স্থান হতো তা সে না দেখবে। যেন তার অনুসোচনা ও আফসোস বৃদ্ধি পায়। (বুখারী- আবু হুরায়রা [রা.])
৩৭. সারিবদ্ধভাবে দণ্ডায়মান জাহান্নামীদের মধ্য থেকে- এক জাহান্নামী ব্যক্তি এক জান্নাতী ব্যক্তিকে দেখে বলবে, হে অমুক! আমি সেই এক ব্যক্তি, যে তোমাকে পানি পান করিয়ে ছিলাম। আর একজন বলবে, আমি সে এক ব্যক্তি যে একদিন তোমাকে ওজুর জন্য পানি দিয়ে ছিলাম। তখন জান্নাতী ব্যক্তি তার জন্য সুপারিশ করবে এবং তাকে জান্নাতে নিয়ে যাবে। (ইবনে মাযাহ- আনাস [রা.])
৩৮. সকল মানুষ (পুলসিরাত অতিক্রম করার সময়) জাহান্নামে উপস্থিত হবে এবং আমলের অনুপাতে নাযাত পাবে। (তিরমিযী- আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ [রা.])
৩৯. যে ব্যক্তি এমন কথা আমার উপর আরোপ করে যা আমি বলিনি, সে যেন তার স্থান জাহান্নামে করে নেয়। (বুখারী- সালাম বিন আমর [রা.])
৪০. কাফেরের মৃত্যুর পর কবরে তার রুহ ফিরিয়ে দেয়া হয়। দুইজন ফেরেস্তা তাকে উঠিয়ে জিজ্ঞেস করবেন, তোমার রব কে? সে উত্তর দেয়, হায় হায়! আমি জানি না। তারা জিজ্ঞেস করবেন, কে এই ব্যক্তি যিনি তোমাদের মাঝে প্রেরিত হয়েছিলেন? সে উত্তর দেয়, হায় হায়! আমি জানি না। তখন আকাশ থেকে একজন ঘোষণাকারী- ঘোষণা দেয়, সে মিথ্যা বলেছে। তার জন্য জাহান্নামের একটি বিছানা বিছিয়ে দাও, তাকে জাহান্নামের পোশাক পড়িয়ে দাও এবং তার জন্য জাহান্নামের একটি দরজা খোলে দাও। রাসূল (সা.) বলেন, ফলে তার দিকে জাহান্নামের ভীষণ তাপ উত্তপ্ত বায়ূ আসতে থাকে। (আহমদ, আবু দাউদ- বারা বিন আযেব [রা.]
জাহান্নাম থেকে বাঁচার জন্য শিরকমুক্ত ঈমান ও বিদয়াতমুক্ত আমল অর্থাৎ রাসূল (সা.) এর দেখানো পদ্ধতিতে আমল প্রয়োজন। জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচার জন্য মাগিরব ও ফজর এই দুই ওয়াক্তে সাতবার করে নিম্নের দোয়াটি পড়ার জন্য শিক্ষা দিয়ে গেছেন।
(আল্লাহুম্মা আজরিনী মিনান্নার- হে আল্লাহ! আমাকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাও) (আহমদ ও আবু দাউদ)
পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ শিক্ষা দিয়েছেন: রাব্বানা আ-তিনা ফিদ্দুনইয়া হাসানাতাওঁ ওয়াফিল আ-খিরাতি হাসানাতাওঁ ওয়াক্বিনা আযাবান নার। (সূরা বাকারা: ২০১)