আপনারা ইসলাম ধর্মের খুবই কাছাকাছি। কিন্তু আপনাদের ধর্মীয় সংগঠন খুই মজবুত ফলে সত্যকে সত্য বলে মেনে নেয়া আপনাদের জন্যে খুব একটা সহজ ব্যাপার বলে আমি মনে করি না। তবে আপনাদের কারো কারো মধ্যে নিরপেক্ষ চিন্তাভাবনার অভ্যাস আছে বলেই বহু নামী দামী খৃষ্টান ইসলাম গ্রহণ করতে পেরেছেন। এসব দেখেই আপনাদের প্রতি কিছু নিবেদন রাখছি।
আপনাদের অভ্যাস আছে কুরআন বুঝার তাই আমার এ ছোট্ট পুস্তিকায় উত্থাপিত কুরআন আল্লাহর বাণী হওয়ার সপক্ষে যে যুক্তিগুলি পেশ করেছি তা অবশ্যই খেয়াল করেছেন এবং দেখেছেন আল কুরআনের বহু স্থানেই হযরত ঈসা (আঃ) এর কথা উল্লেখ রয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি প্রত্যেক নবীই আল্লাহর প্রেরিত এবং প্রত্যেক নবীর যুগেরই তাঁর অনুসারীরা মুক্তিপাবে। আমরা হযরত ঈসা (আঃ) এর যামানার লোক হলে অবশ্যই তাঁর শরীয়ত মেনে চলতাম, কিন্তু যেহেতু আমরা শেষ নবীর যুগের লোক তাই শেষ নবীরই শরীয়ত মেনে চলি। তাহা ছাড়া আপনারা এটাও লক্ষ্য করেছেন যে, মুসলমান প্রত্যেক নবী রাসূলকে সমান ভাবে মর্যাদা দেয় যেমন যে কোনো নবীর নাম উচ্চারণ করতে গিয়ে মুসলমানদের একটা বাচ্চা ছেলেও নবীর নামের পূর্বে হযরত বলবে এবং নামের শেষে ‘আলাইহিস সালাম’ বলবে। এটা কেন বলি? এই জন্যে যে আমাদের কুরআন ও আমাদের নবী (সাঃ) শিখিয়েছেন যে, “লা নুফার রিকু বাইনা আহাদিম মির রুসুলিহি- আমরা কোনো নবী রাসুলের মধ্যে কোন পার্থক্য করি না।” (আল কুরআন)। এটা কেমন তা একটা উদাহরণ দিয়ে বুঝান হয়েছে যে, আমরা বৃটিশ সরকার, পাকিস্তান সরকার, এ সব সরকারকেই এক কালের সরকার বলে মানি, কিন্তু আইন মেনে চিলি বর্তমান সরকারের। ঠিক তদ্রুপই পূর্বের সব নবী রাসূলগণকে আমরা এক কালের নবী রাসূল হিসেবে মানি, কিন্তু শরীয়ত মানি বর্তমান যুগের নবীর এবং এইটাই বিবেক বুদিধগ্রাহ্য যুক্তি।’ আরও একটা যুক্তি পেশ করছি। মনে করুন, আমাদের মধ্যে এমন বহু গ্রাজুয়েট আছেন যারা ২০ বছর পূর্বের সিলেবাসে পরীক্ষা দিয়ে পাশ করেছেন। আবার এমনও গ্রাজুয়েট আছেন যারা ৫ বছর পূর্বের সিলেবাসে পাশ করেছেন। এই দুই সিলেবাস এক ছিল না, কিন্তু গ্রাজুয়েট হিসাবে মর্যাদা একই। এখন চিন্তা করুন কেউ যদি এই সময়ে দাবী করে যে আমি ২০ বছর পূর্বের সিলেবাস অনুযায়ী পরীক্ষা দিতে চাই তাহলে তা কি যুক্তি সঙ্গত দাবী হবে? আর এ দাবী কি কোনো সরকার মেনে নিতে পারে? আপনি বলবেন অবশ্যই তা পারে না। ঠিক তদ্রুপই এক যামানর সিলেবাস ছিল তৌরাত। এক যামানার সিলেবসা ছিল যাবুর, এক যামানার সিলেবাস ছিল ইনজিল। আর বর্তমান যামানার সিলেবসা হচ্ছে আল-কুরআন। কাজেই আল কুরআনের যুগে যদি আপনি পূর্বের সিলেবাসে অর্থাৎ ইনজিল বা তৌরাতের সিলেবাসে পরীক্ষা দিয়ে পাশ করতে চান তা কি যুক্তি গ্রাহ্য হবে? তা যেমন যুক্তি গ্রাহ্য হবে না তেমন শেষ নবীর (সাঃ) যুগে যদি হযরত ঈসা (আঃ) এর যুগের শরীয়ত মেনে চলতে চান তবে আল্লাহর কাছে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। আপনি যদি গভীরভাবে এক মনে এ সব চিন্তা ভাবনা করেন তাহলে অবশ্যই এ সত্য আপনার জ্ঞান ধরা পড়বেই।
এরপর আপনার মনে বহু প্রকার প্রশ্ন উদয় হবে যে বর্তমান যুগের মুসলমানদের মধ্যে তো সেই চরিত্র দেখতে পাওয়া যায় না যা পূর্ব যুগের মুসলমানদের মধ্যে ছিল। এ ব্যাপারে বক্তব্য হলো এই যে, কোনো মুসলমান চোর হলে সে দোষটা ইসলামের ঘাড়ে চাপান যেতে পারে না। যেমন কোন খৃষ্টান চুরি করলে সে দোষ খৃষ্ট ধর্মের হতে পারে না। ঠিক তদ্রুপ কোনো শিক্ষিত লোক চুরি করলে সে দোষটা শিক্ষার হতে পারে না। এ সব ব্যাপার দোষ যেমন ব্যক্তির ঠিক তদ্রুপ কোনো মুসলমানের চরিত্র দেখে ইসলামকে বিচার করলে চলবে না। বর্তমান বিশ্বে ইসলামী বিরোধী চরিত্রের যে বন্যা শুরু হয়ে গেছে সে বন্যার ঢেউ থেকে উদ্ধার পাচ্ছে না অনেকেই। অনেকে স্রোতের টানে ভেসে যাচ্ছে। তাই বলে এ কথা মনে করা উচিত নয় যে, কেউ কেউ যখন ভেসে যাচ্ছে তকন আমি আর না ভেসে থাকি কন? এটা মনে করা যেমন কোনো বুদ্ধিমানের কাজ হতে পারে না তেমন কে কতোটুকু অন্যায়ের স্রোতে ভেসে যাচ্ছে তা না দেখে আমি কি করছি আমার কি পরিণাম হবে, আমাকে আল্লাহর কাছে কি জবাবদিহি করতে হবে এটাই চিন্তা করতে হবে সর্বাগ্রে। প্রথম কাজ হলো যা মহাসত্য তা আগে নিজে গ্রহণ করা। আপনি যে সত্যকে গ্রহণ করবেন অন্যকে সেই সত্যের পথে আনার চেষ্টা করবেন এটা হবে পরের কাজ। আশা করি নিপেক্ষ মন নিয়ে এসব ভেবে দেখবেন।