New Muslims APP

আমি কেন ইসলাম গ্রহণ করলাম?

১৯তম পর্ব এখানে

২০তম পর্ব

আমি কেন ইসলাম গ্রহণ করলাম?

আল্লাহুল মুস্তায়ান

আল্লাহুল মুস্তায়ান

একজনকেই খুঁজতে চেষ্টা করবে?
পত্র-শীর্ষে লিখিত দেব-দেবীদের নাম সম্পর্কে যে জিজ্ঞাসা ঠাকুরমার কথায় ‘বড় হয়ে জানার জন্যে’ এতদিন চেপে রেখেছিলাম, পন্ডিত সাহেবের স্নেহের আবেশে তা আর চেপে রাখা সম্ভব হচ্ছিল না। একদিন বিষয়টা তাঁর কাছে খুব খুলে বলায় তিনি কয়েকটি প্রশ্নের মাধ্যমে তাঁর বক্তব্যকে ধরেছিলেন। তাঁর প্রশ্ন এবং আমার উত্তর নিম্নরূপ ছিল-
পন্ডিত সাহেবঃ তোমাদের বাড়ীর কর্তা কে?
আমিঃ আমার ঠাকুরদাদা।
পন্ডিত সাহেবঃ তিনি ছাড়া আর কেউ কর্তা আছে কি?
আমিঃ তা কি করে থাকবে? কর্তা বেশী হলে বাড়ীর লোক কার কথা মানবে? বেশী কর্তা মানতে গিয়ে বাড়ীর লোকের মধ্যে ঝগড়া লাগবে না? আর কর্তারাও তো কে বড় আর কে ছোট তা নিয়ে ঝগড়া বাঁধিয়ে বসবেন।
পন্ডিত সাহেবঃ এইতো সুন্দর বুঝতে পেরেছ। অতএব জুঝতেই পারছ যে, বাড়ীর কর্তা একজন হয়- দেশের রাজাও একজনই হয়ে থাকেন। বাপ মারা গেলে তার ছেলেরা সবাই কর্তা হতে চায় বলে তখন ভাই আর ভাই থাকে না- শত্রুতে পরিণত হয়। কর্তা বেশী হলে এটা হওয়াই স্বাভাবিক। আর এ থেকে বুঝতে পারা সহজ যে, সারা পৃথিবীর কর্তাও একজনই; আমরা মুসলমানের সব কিছুর মূল হিসাবে একজন কর্তাকেই মানি।
আমার কথার প্রসঙ্গ তুলে তিনি একথাও বলেছিলেন যে, ‘আমি হিন্দুধর্ম সম্পর্কে বলতে গেলে কিছুই জানি না। তবে মোটামুটি একথা জানি যে, সে ধর্ম মতে ব্রহ্মা সৃষ্টিকর্তা, বিষ্ণু পালনকর্তা এবং মহাদেব সংহার কর্তা- এতব তিন জনই বড়। একজনকে গ্রহণ করা হলে অন্য দু’জনকে অবহেলা করা হয়।
‘আবার মহাদেবের স্ত্রী দুর্গা, ছেলে গনেশ, মেয়ে সরস্বতী বা বাকদেবী। বাপকে বাদ দিয়ে স্ত্রী ছেলে-মেয়েদের কারো একজনের নাম লিখলে সেটা ভাল দেখায় না। স্ত্রী এবং ছেলে-মেয়েদেরকে বাদ দিয়ে স্বয়ং মহাদেবের নাম লিখলে হয়তো বা তিনি অসন্তুষ্ট হবেন। সব দিক দিয়েই মুশকিল। প্রভুর সংখ্যা বেশী হলে এমনটা-ই- হয়ে থাকে। তবে আমার মনে হয় তোমাদের শাস্ত্রেও এমন একজন প্রভুর কথা লেখা রয়েছে যিনি সর্বশক্তিমান এবং সকলের চেয়ে বড়। বড় হয়ে যখন শাস্ত্র পড়বে তখন সেই শক্তিমানকে খুঁজতে চেষ্টা করবে। জানি না কেন এই বলেই পন্ডিত সাহেব হঠাৎ আমার মাথায় হাত রেখে বলেছিলেন- ‘আমি আর্শীবাদ করি তুমি যেন তাঁর সন্ধানপাও।”
আজ পাড়াগাঁয়ের দরিদ্র এবং অল্প শিক্ষিত সেই স্নেহশীল পন্ডিত সাহেব বহু পূর্বেই গত হয়েছেন। পাঠশালায় পড়া শেষ করেই রংপুর চলে যেতে হয়েছিল বলে তাঁর সাথে আর দেখা করার সৌভাগ্য আমার হয়নি। কিন্তু সারা জীবন তাঁর মমতা মাখা কথা, স্নেহভরা চোখ এবং আর্শীবাদ হাত খানার কথা আমি ভুলতে পারিনি; শুধু তাই নয় আজও মনে হয় তাঁর সেই হাতখানা যেন অদৃশ্যভাবে আমার মাথার উপরে থেকে আর্শীবাদ বর্ষণ করে চলেছে।

 

Leave a Reply


This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.