বনি আদম হিসেবে আমি আপনার ভাই। আর ভাই হিসেবেই একটা কথা গভীর মনোনিবেশ সহকারে চিন্তা- ভাবনা করতে অনুরোধ করবো। চিন্তা করুন, ধর্মের সম্পর্ক হলো বিশ্বাসের সঙ্গে। আর (আমি পূর্বেও বলেছি) বিশ্বাসের সম্পর্ক রক্তের সঙ্গে নয়, এ সম্পর্ক হচ্ছে জ্ঞান ও বিদ্যা বুদ্ধির সঙ্গে।
১। চিন্তা করুন, আপনার ধর্মগ্রন্থ বলেঃ
বৃহস্পতিবার স্ত্রী তারার আপত্তি সত্ত্বেও তার সাথে ব্যাভিচার করার কারণে চন্দ্রকে তারা অভিশাপ দেয়। আর এই অভিশাপের কারণে চাঁদ মাঝে মাঝে রাহুগ্রস্ত হয়। যার ফলে চন্দগ্রহণ হয়। আপনি কি এটা বিশ্বাস করেন?
২। চিন্তা করুন, যে মন্ত্রে পাপ খন্ডন হয় সে-মন্ত্র হচ্ছে ঃ
অহলা দ্রৌপদি কুন্তি তারা মন্দোদরী যথা-
পঞ্চ কন্যা স্মরনেন্নিতাং মহাপাতক নাশমন।
অর্থাৎ অহল্যা, দ্রৌপদি, কুন্তি, তারা এবং মন্দোদরী, এই পাঁচ কন্যার নাম প্রত্যহ স্মরণ করলে মহাপাপও মা’ফ হয়ে যায়। যাদের প্রত্যেকের যৌন জীবন সম্পর্কে আপনাদের জানা আছে। তাদের স্মরণে যে ধর্মের পাপ মা’ফ হয়ে যায় সে ধর্ম কি আজকের সভ্য যুগে চলতে পারে?
৩। চিন্তা করুন, আপনার ধর্মে যে উত্তরাধিকার আইন রয়েছে যাতে মেয়েরা পিতার সম্পত্তিতে কোন অংশ পায় না। ধর্মীয় আইন কি এইরূপ হওয়া উচিত? চিন্তা করুন, কোন একটা মেয়ে যদি অল্প বয়সে বিধবা হয়ে যায় তাহলে তার জীবন যাপনের অবস্থাটা কিরূপ হয়? এটা কি সৃষ্টি কর্তার পক্ষ থেকে কোন ন্যায় সঙ্গত আইন? যার পরিবর্তনের জন্যে হিন্দুরাই এখন উঠে পড়ে লেগেছেন?
৪। চিন্তা করুন, আপনার ধর্মে বিধবাদের জীবন যাপনের যে আইন কানুন রয়েছে এটা কোনো সভ্য সমাজের আইন হতে পারে। শেষ পর্যন্ত তাদের অনেকেই কদুর বস হাতে নিয়ে রাস্তায় নেমে পড়ে অনিশ্চিত জীবন যাপনের পথ বেছে নেয়া ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না। ধর্মীয় আইন কি এরূপ হওয়া উচিত?
৫। চিন্তা করুন, মানুষের মর্যাদা তার অর্জিত গুণগত কারণে হওয়া উচিত, নাকি জন্মগত কারণে হওয়া উচিত? হিন্দু ধর্মে যেমন-একশ্রেণীর মানুষ অন্য শ্রেণীর মানুষের নিকট ঘৃণার পাত্র। এটা কি ধর্মীয় বিধানের নামে বা ধর্মীয় বিধানে হওয়া উচিত?
৬। আমি কোন দিন শ্মশানের স্বচক্ষে মারা পোড়ান দেখতে যাইনি। এটা দেখলাম সর্ব প্রথম যেদিন টেলিভিশনের মাধ্যমে ইন্দ্রিরা গান্ধীর মৃতদেহ পোড়ান হলো সেই দিন। আহা! সেকি মর্মান্তিক দৃশ্য। দু’দিন আগেও সারা পৃথিবীতে যার এতবড় মান মর্যাদা, এত শান শওকত, আল্লাহর পৃথিবীর এক বিরাট ভূ-খন্ডের প্রায় ৮০ কোটি মানুষের দন্ড মুন্ডের মালিক। ভারত ছাড়াও অন্যান্য দেশের কত হাজার হাজার বনি আদমের নিকট যে নারী সম্মানের পাত্রী। তার মৃত দেহকে কি নির্মভাবে পুড়িয়ে ফেলা হল। তার মৃত দেহকে কি নির্মমভাবে পড়িয়ে ফেলা হল। আর কি করে তার নিজের পেটের সন্তান তা দেখে সহ্য করল, আর সহ্য করল শুধুমাত্র ধর্মীয় আইনের খাতিরে। যে- যা-ই মনে করুক এ মর্মান্তিক দৃশ্যটা দেখে আমার নিকট খুবই খারাপ লেগেছিল। অথচ এটাও হল ধর্মীয় আইন। কেন? তাকে কি সসম্মানে কবরস্থ করা যেত না?
৭। এই ধরনের আরও বহু প্রশ্নকে সামনে রেখে আপনি চিন্তা করুন, হিন্দুধর্ম কি আসলে ইহকাল ও পরকালের মুক্তির কোনো পথ দেখাতে পারে?
দেখুন, আপনি যখন বলেছেন যে, আমি একজন হিন্দু, তখন ঐ সব চরিত্রহীনদের সঙ্গে হয়ে পড়ছে আপনার ধর্মীয় সম্পর্ক; আর যখনই বিশ্বাস শুদ্ধ করে নিয়ে আপনি বলছেন যে ‘আমি একজন মুসলমান’ তখনই আপনার সম্পর্ক হয়ে যাচ্ছে কুরআন হাদীস ও নবী রাসূলগণের সঙ্গে।