Main Menu

স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক কেমন হবে

Originally posted 2013-07-27 15:34:29.

স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক কেমন হবে?

স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক কেমন হবে?

৯ম পর্ব

মানুষের পারিবারিক জীবন একটা বহতা নদীর মত। নদীতে কখনও চর জাগে, কখনও ঝড় ওঠে। আর নিত্য জোয়ার ভাটাতো রয়েছেই। এই বিচিত্র উত্তাল তরঙ্গের মাঝে যথার্থভাবে টিকে থেকে নিজস্ব গন্তব্যে পৌঁছুতে হলে প্রয়োজন সুস্পষ্ট দিক-নির্দেশনা। ইসলাম এ ক্ষেত্রে যে যুগান্তকরী নির্দেশনা দিয়েছে তা ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষেরই জীবন-কল্যাণের জন্যে সুপ্রযুক্ত। ইসলামের এই জীবন বিধানের আলোকেই আমরা পরিবারের প্রধান দুটি স্তম্ভ স্বামী ও স্ত্রীর পারস্পরিক কর্তব্য নিয়ে কথা বলছিলাম। গত পর্বে স্বামীর প্রতি স্ত্রীর কর্তব্য সম্পর্কে খানিকটা ধারণা দেয়ার চেষ্টা করেছি। এবারের পর্বে আমরা তারি ধারাবাহিকতায় আলোচনা অব্যাহত রাখবো।

মানুষকে সৃষ্টি করেছেন আল্লাহ। ফলে মানুষের বাহ্যিক যেই রূপ, তা তার নিজস্ব নয়, তা আল্লাহরই দান। তাই এই রূপ নিয়ে কারো গর্ব-অহঙ্কার করার কিছু নেই। অথচ দুঃখজনক ব্যাপার হলো অনেক সুন্দরী মহিলাই তাদের রূপের অহঙ্কারে বুঁদ হয়ে এমন সব অযৌক্তিক ও অপ্রত্যাশিত আচরণ করে বসেন, যা পারিবারিক কাঠামোকে নড়বড়ে করে দেয়। স্বামী যদি এরকম কোন সুন্দরী স্ত্রীর রূপশ্রীর তুলনায় পিছিয়ে থাকেন, তাহলে ঐ স্ত্রী কথায় কথায়, উঠতে-বসতে, চলতে-ফিরতে স্বামীকে এমন অবমাননাকর ভাষায় তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে থাকেন, যাতে স্বামীর জীবন হয়ে পড়ে দুর্বিসহ। স্ত্রীর কাছে উপেক্ষিত হয়ে সংসারের প্রতিই একরকম উদাসীন হয়ে পড়েন হতভাগ্য ঐ স্বামী। যার ফলে সংসার আর সংসার থাকে না, সংসার হয় মোটামুটি একটা অশান্ত দোযখে। এখন কথা হলো, স্বামী যদি স্ত্রীর কাছ থেকে নিরন্তর উপেক্ষার যন্ত্রণায় ভুগতে থাকে, তাহলে সংসারতো আর টিকবে না। তাই জীবনের প্রয়োজনে পারিবারিক শৃঙ্খলার প্রয়োজনে, স্ত্রীর উচিত গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা করে সুষ্ঠু একটা সিদ্ধান্ত নেয়া। ইসলাম যেকোন রকম সিদ্ধান্ত নেয়ার স্বাধীনতা তাকে দিয়েছে। তবে স্ত্রী যদি অন্যায়ভাবে কোন সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে সেজন্যে পরকালে তাকে আল্লাহর দরবারে জবাবদীহি করতে হবে। যাই হোক স্ত্রীর যেহেতু সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার রয়েছে, সেহেতু স্বামীর সংসারে অবস্থান করে স্বামীকে অযথা উৎপীড়ন করার কোন মানে হয় না। কারণ কোন স্বামীই স্ত্রীর কাছ থেকে দুর্বিনীত আচরণ প্রত্যাশা করে না। স্বামীর সংসারে বসবাস করার অন্যতম দাবী হলো-দুটি জীবনকে একই স্রোতে প্রবাহিত করার প্রচেষ্টা চালানো। স্বামীর প্রতি সশ্রদ্ধ ভালোবাসা প্রদান স্ত্রীর একটা প্রাথমিক দায়িত্ব। এটি হলো বিশাল সংসার বৃক্ষের বীজ। শ্রদ্ধা মেশানো ভালোবাসার মধ্য দিয়ে অনাবিল শান্তির ধারা বয়ে যায় জীবনে, সংসারে। স্বামীর প্রতি এই শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শন স্ত্রীকে কখনো খাটো করবে না বরং উন্নততর জীবনে প্রবেশের যুদ্ধে স্ত্রীর এই শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা স্বামীকে আরো শক্তি ও উৎসাহ জোগাবে।

কথার ভেতরে কথা বলা মানুষের একটা বদ-অভ্যাস। এই বদ-অভ্যাস ভদ্রতা বিরোধী। ব্যক্তিগত আচার-আচরণে এই গুনটিকে পরিহার করতে না পারলে ব্যক্তিত্বের প্রতি আঘাত আসতে পারে। ছোট-বড় সবার ক্ষেত্রেই এ বিষয়টি লক্ষ্য রাখতে হবে। স্বামী-স্ত্রীর ক্ষেত্রেও মৌলিক এই আচরণবিধিটি অনুসরণ করা উচিত। স্বামী যখন কোন কথা বলবে, তখন হুট করে তার কথার ভেতরে অন্যকোন প্রসঙ্গ টানা ঠিক হবে না। স্বামীর সাথে কথা বলার সময় বিনীতভাবে উচ্চকণ্ঠ পরিহার করা মঙ্গলজনক। এই বিনীত শ্রদ্ধাবোধের কারণে স্বামীও স্ত্রীর প্রতি সম্মানজনক আচরণ করতে বাধ্য হবে। পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের ফলে ঐ পরিবারে শান্তির সোনালী পরিবেশ বিরাজ করবে-যা সবারই আন্তরিক প্রত্যাশা। শ্রদ্ধা-সম্মান হতে হবে আন্তরিক। কৃত্রিম শ্রদ্ধা বা লোকদেখানো শ্রদ্ধায় কোন কল্যাণ নেই। নিজে যেমন স্বামীর প্রতি শ্রদ্ধেয় মনোভাব পোষণ করবেন, তেমনি ছেলে-মেয়েদেরকেও বলতে হবে যেন বাবাকে শ্রদ্ধা করে। এটাই আন্তরিকতার বহি:প্রকাশ। আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব বা পাড়া-প্রতিবেশীর সামনে স্বামীকে হেয় প্রতিপন্ন করে কথা বলা ঠিক নয়। সাময়িকভাবে তারা হয়তো আপনার বক্তব্যের প্রতি সমর্থন যোগাবে। কিন্তু পরবর্তী পর্যায়ে তারাই আপনার সমালোচক হয়ে উঠবে। আর দুষ্টেরা এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে আপনাদের সম্পর্কে টানাপোড়েন সৃষ্টি করার চেষ্টা চালাবে। তাই স্বামীর ভালোগুনগুলোই তুলে ধরুন, এতে কল্যাণ রয়েছে।
মোটকথা স্বামীর প্রতি মনযোগী হোন, তার ভালো লাগা মন্দ লাগার ব্যাপারগুলোকে আবিস্কার করার চেষ্টা করুন, অমায়িক ব্যবহার করুন। সবসময় হাসিখুশী থাকার চেষ্টা করুন। হাসিমুখে কথা বলার চেষ্টা করুন। আপনার ক্লান্ত পরিশ্রান্ত স্বামী মানুষটিকে কাজের শেষে এক বুক অবসাদ নিয়ে যখন ঘরে ফেরে, তখন আপনার সুন্দর একটু হাঁসি তার সকল ক্লান্তি দূর করে দিতে পারে। দরজায় কলিংটা বাজতেই আপনি যদি গোমড়া মুখে দরজা খুলে দিয়ে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করেন, তাহলে স্বামী মানুষটির ক্লান্তির ওপরে বাড়তি একটা টেনশন বা উদ্বেগ যুক্ত হবে। ফলে এরকম আচরণ না করে তার প্রতি সদয় ও বিনম্র আচরণ করুন। জগত সংসারে এমন অনেক নারী রয়েছেন, যারা তাদের অভিলাষ মেটাতেই ব্যস্ত থাকেন। এদের অধিকাংশই পরশ্রীকাতর হয়ে থাকেন। প্রতিবেশীদের ঘরে এটা আছে, সেটা আছে আমাদের কেন নেই-আমাদের অবশ্যই সেটা থাকতে হবে। স্বামীর আয় রোজগারের কথা না ভেবেই এরকম চিন্তা করেন। স্বামী যদি তাঁর আর্থিক সমস্যার কথা জানান, তাহলে উল্টো বলে বসেন-অন্যদের থাকলে তোমার কেন নেই, তুমি একটা বুদ্ধু, হাবা ইত্যাদি। এতে করে স্বামী পুরুষটি ভীষণভাবে মর্মাহত হন, হতাশায় ভোগেন। সব সময় তার মনে স্ত্রীর তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের বিষয়টি কাজ করে। স্ত্রীর কাছে নিজেকে নতজানু মনে হতে হতে সকল আগ্রহ-উদ্দীপনা হারিয়ে ফেলেন-যার পরিণতি খুবই অপ্রত্যাশিত। ফলে স্ত্রীদের উচিত পরশ্রীকাতরতা পরিহার করে স্বামীর আয় রোজগারে সন্তুষ্ট থেকে এমনভাবে আচরণ করা, যাতে স্বামী মানুষটি নিজে থেকেই অনুভব করে যে, “আমার স্ত্রীকে যদি অমুক জিনিসটা কিনে দিতে পারতাম।” একদিন ঠিকই দেখা যাবে তার অনুভূতি বাস্তব রূপ পেয়েছে। স্ত্রীও যে এতে মহা খুশী হবে-তাতে কোন সন্দেহ নেই। এই আত্মতৃপ্তি আর সন্তুষ্টির ফলে দু’জনের পারস্পরিক ভালোবাসা দৃঢ় থেকে দৃঢ়তর হবে। আর সংসার ভরে উঠবে সুখের সুরভিত আমেজে। সবশেষে ইমাম জাফর সাদেক (আঃ)এর একটি বাণী উদ্ধৃতি করছি। তিনি বলেছেন, “সেই রমনী সৌভাগ্যবতী ও সফল যে তার স্বামীকে শ্রদ্ধা করে এবং তাকে কখনো খাটো করে না।”

প্রথম পর্ব  দ্বিতীয় পর্ব  তৃতীয় পর্ব   চতুর্থ পর্ব  পঞ্চম পর্ব ৬ষ্ঠ পর্ব ৭ম পর্ব   ৮ম পর্ব

Related Post