আমার জীবনে মহাগ্রন্থ আল-কুরআন

 

মহাগ্রন্থ আল-কুরআন

মহাগ্রন্থ আল-কুরআন

পর্ব: ২

কুরআনের আলোকে দাওয়াতী কাজের অনুভুতিঃ দয়াময় পরম দয়ালু সুমহান প্রতিপালক সেই পবিত্র সংক্ষিপ্ত বাংলা তাফসীর খানার মাধ্যমে আমাকে এমনভাবে কুরআন বুঝালেন, যার মাধ্যমে আমি আমার আল্লাহর নাযিল করা পবিত্র কুরআনের উদ্দেশ্য ও বাস্তবতার সাথে পরিচিত হলাম। পবিত্র আল-কুরআনের আয়নায় আমার প্রাণপ্রিয় রাসূল মুহাম্মাদ সাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে নতুন করে পরিচয় ঘটলো। তাঁর কুরআনের দাওয়াতের উদ্দেশ্যকে বুঝলাম। কুরআন পড়তে পড়তে কখন কোনদিক দিয়ে যে আমার সময়গুলো অতিবাহিত হয়ে যেত, সেটা টেরই পেতাম না। কুরআনের যে এত স্বাধ আর পরিতৃপ্তি, সেটা শুধু অন্তঃকরণে অনুভব করা যায়, কিন্তু কাগজে লিখে বা মুখের ভাষার মাধ্যমে কাউকে বুঝানো সম্ভব নয়। সারা দিন-রাত কুরআনের প্রভাব আমার দেহ মনে লেগেই থাকতো। যতই কুরআনের গভীরে প্রবেশ করে কুরআনকে বুঝার চেষ্টা করছিলাম, ততই যেন নিত্য-নতূন নিদর্শণ আর তথ্য-উপাথ্যের সাথে পরিচিত হচ্ছিলাম। মহাগ্রন্থ আল-কুরআন এমন এক মোযেজাপূর্ণ কিতাব, যে ব্যক্তিই এর সংস্পর্শে এসে পূত পবিত্র অন্তঃকরণ নিয়ে কুরআনকে বুঝার চেষ্টা করবেন, পবিত্র কুরআন তাকেই নিজের দিকে প্রবল বেগে আকর্ষণ করে নিত্য-নতুন নিদর্শণের সাথে পরিচিয় করাবে। তখন আল-কুরআন এবং পাঠকের অন্তঃকরণ পরস্পরের সাথে মিলে-মিশে একাকার হয়ে অন্যরকম এক রোমাঞ্চকর ও প্রশান্তময় অনুভূতি সৃষ্টি করে। এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ তায়ালাই বলছেনঃ “আল্লাহ অবতীর্ণ করেছেন সর্বোত্তম বাণী সম্বলিত কিতাব (আল-কুরআন) যা সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং যা পূনঃ পূনঃ আবৃত্তি করা হয়। এতে যারা তাদের প্রতিপালককে ভয় করে তাদের গাত্র হয় রোমাঞ্চিত (শিহরীত); অতঃপর তাদের দেহ মন প্রশান্ত হয়ে আল্লাহর স্মরণে ঝুকে পড়ে; এটাই আল্লাহর পথ-নির্দেশ, তিনি যাকে ইচ্ছা ওটা দ্বারা পথ-প্রদর্শন করেন। আল্লাহ যাকে বিভ্রান্ত করেন তার কোন পথ-প্রদর্শক নেই।” (সূরা: যুমার: ২৩)।

সে সময় আমার মনে হচ্ছিলো আমাদের প্রাণপ্রিয় রাসূল হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র তৎকালীন মাক্কা-মাদিনায় ইসলাম প্রচারের তৎপরতাগুলি যেন আমার চোখের সামনেই ঘটে যাচ্ছে। পবিত্র কুরআন পড়তে পড়তে কখনও কখনও এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হতো, মনে হতো যেন আমাকে লক্ষ্য করেই আমার মহান আল্লাহ তাঁর কথাগুলো বলছেন। এ সময় আমার শরীরের লোমগুলো দাঁড়িয়ে গিয়ে এক রোমাঞ্চিত হতো। মনে হতো এতদিন পর্যন্ত কেন আমি এ পবিত্র কুরআন থেকে দূরে ছিলাম? সে জন্যে নিজেকে অত্যন্ত অপরাধী মনে হতো, আর অনুসূচনায় চোখ দিয়ে অঝর ধারায় অশ্রু নির্গত হতে থাকতো। এ সময় কুরআনের আলোকে দুনিয়ার সামাজিক অবক্ষয়গুলোর কারণ ও তার সমাধানগুলিও আল্লাহ বুঝতে সাহায্য করলেন। তখন মনে হলো চিৎকার করে সারা দুনিয়ার মানবজাতিকে সেই কুরআনের কথাগুলো শুনাতে থাকি, তারা সেইভাবে সংশোধন হয়ে সকলেই আল্লাহর মহা অনুগ্রহ ও মহাকল্যাণ লাভ করে ধন্য হোক। কুরআন বুঝলে কাউকে দাওয়াত বা তাবলীগের কথা শিখিয়ে দিতে হয় না। পবিত্র আল-কুরআন নিজেই তখন তার পাঠক-ছাত্রদের অন্তঃকরণে দাওয়াতের অনুভূতি জাগিয়ে তুলে বলতে থাকেনঃ “হে বস্ত্রাচ্ছাদিত ! (তোমার রব কুরআন থেকে তোমাকে যে জ্ঞান শিক্ষা দিয়েছেন, সেই জ্ঞান অর্জন করে কাঁথা-কম্বল গায়ে মাথায় মুড়ি দিয়ে শুয়ে থেকো না) ওঠো, (অতঃপর সারা দুনিয়ার মানব জাতির কাছে আল্লাহর) সতর্কবাণী প্রচার কর। এবং তোমার রবের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা কর। তোমার পোশাক-পরিচ্ছদ পবিত্র রাখো, অপবিত্রতা হতে দূরে থাকো, (দুনিয়ার মানুষের কাছে) অধিক লাভের প্রত্যাশায় দান কর না। এবং (তোমার যে কোন চাহিদা বা সমস্যার জন্যে) তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে ধৈর্যধারণ কর।” (সূরা: মুদ্দাসস্রি: ১-৭)। সুমহান আল্লাহ উপর্যুক্ত সূরা মুদ্দাসসিরের আয়াতের কথাগুলো যদিও সর্বপ্রথমে তাঁর প্রিয় রাসূল (সা:)-কে বলেছিলেন, কিন্তু আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতায়ালা প্রকৃত পক্ষে তাঁর মাধ্যমে সকল মুমিন নর-নারীর প্রতিও সেই একই নির্দেশ জারি করেছেন। আয়াতগুলোকে একটু গভিরভাবে পর্যবেক্ষণ করলে প্রকৃত অর্থ তাই মনে হবে। তার কারণ, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতায়ালা ইসলামকে আগত ও অনাগত সকল মানবজাতির জন্যেই পরিপূর্ণ জীবন বিধান হিসেবে প্রদান করে, রাসূল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র সমস্ত উম্মতকে দা’ঈ (ধর্ম প্রচারক) নিযুক্ত করে মধ্যপন্থী উম্মত হিসেবে তাদের মর্যাদাও বাড়িয়ে দিয়েছেন। এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ বলছেনঃ “এভাবে আমি তোমাদেরকে মধ্যপন্থী সম্প্রদায় করেছি যেন তোমরা মানবগণের জন্য সাক্ষী হও এবং রাসূল (সাঃ)-ও তোমাদের জন্যে সাক্ষী হয়… (সূরা: বাকারা: ১৪৩)।

কিয়ামত পর্যন্ত দুনিয়াতে নতুন করে আর কোন নবী বা রাসূল আগমন না করার কারণও এটাই। এ ব্যাপারে সুমহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতায়লা আরো বলছেনঃ “{হে মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর অনুসারী মু’মিনগন!} তোমরাই মানবজাতির জন্যে শ্রেষ্ঠতম সম্প্রদায়রূপে সমু™ভূত হয়েছ; (তোমাদের সর্বশ্রেষ্ঠ কাজ হলো তোমাদের রাসূল (সাঃ)-এর অনুপস্থিতিতে তাঁর পক্ষ থেকে) তোমরা (সারা দুনিয়ার মানব জাতিকে) ভাল কাজের আদেশ কর ও মন্দ কাজের নিষেধ কর এবং আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন কর…।”(সূরা: আল-ইমরান:১১০)। আল-কুরআন বুঝার পর থেকে আমার অন্তঃকরণে দাওয়াতি কাজ করার জন্যে তীব্র অনুভূতি জাগ্রত হলো। দাওয়াতী কাজের জন্যে একটার পর একটা কৌশলপূর্ণ নিদর্শণ সুমহান আল্লাহ আমার অন্তঃকরণে প্রক্ষিপ্ত করতে শুরু করলেন। সেগুলি মানুষের কাছে প্রচার করতে আমার অন্তঃকরণ ব্যাকুল হয়ে উঠলো। আমি সেগুলো নিয়ে ভাবছিলাম যে, আমার দেশের লোকজনকে কথাগুলো জানানো দরকার, যাতে সকলেই উপকৃত হতে পারি। আমি দাওয়াতের কলা-কৌশলগুলি নিয়ে আমার সাথের এক সহকর্মী ভাই’র সাথে মাঝে মধ্যেই আলোচনা করতাম। তাকে দেখতাম সে মসজিদে বসে প্রায় সময় কুরআন পড়তো। সে আমার কথাগুলো শুনে অবাক দৃষ্টিতে আমার মূখের দিকে তাকিয়ে থেকে বলতো যে, আপনার ঐ কথাগুলো তো আমি কিছু বই পড়ে জানতে পেরেছি। কিন্তু আপনি তো সে বইগুলো পড়েন নি, তাহলে এ কথাগুলো আপনি কীভাবে জানলেন? তখন আমি তাকে বললাম যে, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতায়ালা কথাগুলো একটার পর একটা ধারাবাহিকভাবে আমার অন্তঃকরণে সার্বক্ষনিকভাবেই উদ্ভাসিত করছেন এবং সেই ধারাবাহিকতায় মানুষের কাছে কুরআনকে পৌছে দেয়ার ইচ্ছাও জাগ্রত করছেন। তাকে বললাম যে, তুমি যে বইগুলিতে আমার কথাগুলো জানতে পেরেছ, সেই বইগুলি কী তোমার কাছে আছে? সে তখন বললঃ যে, সবগুলো নেই, তবে দুই একটা থাকতে পারে। আমি তখন তাকে বললাম ঐ বইগুলো আমাকে সংগ্রহ করে দেখাবে। সে তখন ক’একজন লেখকের ক’একটা বই আমাকে দিলো, আমি বইগুলো পড়ে দেখলাম যে, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতায়ালা আমার অন্তঃকরণে যে কথাগুলো বার বার প্রক্ষিপ্ত করছেন, হুবহু সে কথাগুলোই বইগুলির পাতায় পাতায় লিখা রয়েছে। সেই বইগুলির মধ্যে ক’একটির নাম যেমন: কালেমা তাইয়্যেবা, ঈমান, ইসলাম, নামায, রোযা, হজ্জ যাকাতের হাকিকত, ভাঙ্গা গড়া, ভ্রান্তির বেড়াজালে ইসলাম, ইসলামী শিষ্টাচার, আন-নবীর চল্লিশ হাদীস, মুমিন জীবনের বৈশিষ্ট, মুমিনদের দৈনন্দিন কাজ, রাসূল (সা:)-এর বিপ্লবী জীবন, কুরআনের আয়নায় বিম্বীত রাসূল (সা:), দাওয়াত ইলাল্লাহ, ইসলামী আন্দোলন ও সংগঠন, ইসলামী আন্দোলনে কর্মীদের পারস্পারিক সম্পর্ক, ইসলামী আন্দোলন সাফল্যের শর্তাবলী, সত্যের স্বাক্ষ্য, চরিত্র গঠনে মৌলিক উপাদান ইত্যাদি ইত্যাদি। তখন আমার মনের সমস্ত বিভ্রান্তি এবং সংশয় কেটে গেল, সাথে সাথে এ কথাই বুঝলাম যে, আমি মূর্খ মানুষ হিসেবে কুরআনের বুঝে ভুল হতে পারে, কিন্তু এতগুলো প্রজ্ঞাবান মানুষের তো আর একই ভুল হওয়ার কথা নয়। আমার মনের মধ্যে যে কথাগুলো দিন-রাত তোলপাড় সৃষ্টি করছে সে কথাগুলো ঐ বইগুলোতেও লিখা রয়েছে। নিশ্চয় এটাই কুরআনের সঠিক পথ ও পন্থা। তারপর থেকে আমি কিছু কিছু দাওয়াতী তৎপরতা শুরু করলাম। সিদ্ধান্ত মোতাবিক সর্বপ্রথম দেশে রেখে আসা পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধবের কাছে ব্যক্তিগত চিঠি-পত্রের মাধ্যমে দাওয়াতী কাজ শুরু করলাম। আমার ছেলে মেয়েকে কুরআন শিখার ব্যবস্থা করলাম এবং আমার এলাকার লোকজনের ইসলাম শিক্ষার জন্যে স্থানীয় বাজারে একটি ইসলামী পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করে দিলাম। পত্রিকায় প্রকাশিত একটি প্রবন্ধের প্রতিবাদ এবং পত্র-পত্রিকায় দাওয়াতী কাজের তৎপরতাঃ এক সময় আমাদের দেশের তৎকালীন জনপ্রিয় একটা সাপ্তাহিক পত্রিকা আজকের সূর্যোদয়ের ২১-২৭ সেপ্টেম্বর’২০০৪ সংখ্যার ১৫ পৃষ্ঠায় গ্রুপ ক্যাপ্টেন মুহাঃ কামালউদ্দিন আহাম্মদ একটি প্রবন্ধ লিখেন, যার শিরনাম ছিলো “ইসলাম ও ধর্মনিরপেক্ষ”। আমি সেই প্রবন্ধটি মনযোগসহকারে পড়ে বুঝলাম যে, আমার দয়াময় প্রতিপালক তাঁর পবিত্র কুরআন’র মাধ্যমে যেভাবে আমাকে ইসলামকে বুঝতে সাহায্য করেছেন, ঐ প্রবন্ধে তার বিপরীতভাবে কুরআনের কিছু আয়াতের বাংলা অনুবাদ এক তরফাভাবে উপস্থাপন করে ইসলামের সাথে তথাকথিত ধর্মনিরোপেক্ষতাবাদকে গুলিয়ে ফেলানো হয়েছে। এখানে একটি কথা বলতে চাই যে, পবিত্র কুরআনের আয়াতগুলো পরস্পর একটির সাথে অপরটির সম্পর্কযুক্ত। অর্থাৎ আয়াতগুলো চেইন বা শিকলের মত সাজানো। কুরআনের একটি আয়াতকে বুঝতে হলে তার পূর্বের বা পরের আয়াতকে বুঝতে হবে। যেমন আমাদের দেশের অনেক মুসলমান (?) তাদের সুবিধাজনক একটি আয়াত মানুষের কাছে প্রচার করে মানুষকে বিভ্রান্ত করেন। কিন্তু সেই সকল আয়াতের ব্যাখ্যা যে তার পূর্বের বা পরের আয়াতে লিখা রয়েছে, সেকথা আর জনগনকে বলেন না। যেমন বলা হয় “লা-কুম দ্বীনুম ওয়ালিয়াদ্বীন” “তোমার ধর্ম তোমার কাছে এবং আমার ধর্ম আমার কাছে”। কিন্তু এই বাক্যটি যে কারনে বলা হয়েছে, তার ব্যাখ্যা উপরের আয়াতগুলোতে বর্নণা করা হয়েছে। তেমনিভাবেই “লা-ইকরাহা ফি-দ্দ¦ীন” অর্থঃ ধর্ম সম্পর্কে কারো উপর জোড় জবরদস্তি নেই” আর কেন নেই? এর ব্যাখ্যাও তার পরের আয়াতেই লিপিবদ্ধ রয়েছে। কাজেই কুরআনের মাঝখান থেকে নিজের সুবিধামত একটি বা দুইটি আয়াত মানুষের সামনে উপস্থাপন করে অজ্ঞ মানুষকে বিভ্রান্ত করা ঠিক নয়। তাতে নিজেরও ক্ষতি এবং যারা তার মাধ্যমে বিভ্রান্ত হচ্ছেন তাদেরও ক্ষতি। তাই আমি কুয়েত থেকে সাপ্তাহিক আজকের সূর্যোদয়ের সম্মানিত সম্পাদক খন্দোকার মোজাম্মেল হক সাহেব’র সাথে ঢাকায় টেলিফোনে যোগাযোগ করে তাকে সবিনয় অনুরোধ সহকারে বলিঃ যে, আপনারা হলেন জাতির পথপ্রদর্শক, আপনাদের লিখার মাধ্যমে আমরা সাধারণ অজ্ঞ মানুষরা জীবন চলার সঠিক রাস্তা খুঁজে পাবো। কিন্তু আপনারাই যদি বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেন, তাহলে আমরা কোথায় যাবো? আমার কথাগুলি শুনে তিনি আমার কাছে ঘটনার বর্ণনা জানতে চাইলেন। আমি তখন ঐ প্রবন্ধটির প্রতিবাদ জানালাম। তিনি তখন আমাকে জবাব দিয়ে বললেনঃ যে দেখুন, লেখকগন যা লিখেন সেটাই আমরা ছাপিয়ে দেই, কাজেই লিখার ব্যাপারে, লেখকরাই দায়ী। তখন আমি তার পত্রিকায় আমার একটি লিখা পাঠিয়ে ঐ লিখাটির প্রতিবাদ জানানোর জন্যে লিখাটি কিভাবে পাঠাবো সে সম্পর্কে তার পরামর্শ চাইলাম।

তখন তিনি আমাকে জানালেন যে আমাদের দুইজন প্রতিনিধি কুয়েতে থাকেন, লিখাটি তার কাছেই পৌছে দেন। তিনি আমাকে পত্রিকার পাতায় প্রকাশিত কুয়েত প্রতিনিধিদ্বয়ের নাম ও তাদের ফোন নম্বর দেখিয়ে দিলেন। তখন তার কাছে একটি অনুরোধ জানালাম যে, আল-কুরআনকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করলে মানুষ বিভ্রান্তিতে পড়বে, আর তার জন্যে কাল কিয়ামতের মাঠে আপনাদেরকেও আল্লাহর আদালতে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। যদি সম্ভব হয়, আপনারা শুধুমাত্র কুরআনের বাংলা অর্থগুলিই হুবহু ধারাবাহিকভাবে প্রতি সংখ্যায় প্রচার করুন, তাহলে সেখান থেকে আমরা সাধারণ মানুষও কুরআন থেকে সঠিক শিক্ষা পেয়ে উপকৃত হতে পারবো ইনশা-আল্লাহ । তারপর আমি কুয়েতে সাপ্তাহিক সূর্যোদয়ের চেয়ারম্যান জনাব মোস্তাফিজুর রহমান এবং ব্যুরো প্রধান মুহাঃ ইয়াকুব আলী ভাই’র সাথে ফোনে যোগাযোগ করি। তারা আমাকে লিখাটি কুয়েত সিটির হোটেল রাজধানীতে পৌছে দিতে বলেন। আমি লিখাটি নির্দিষ্টস্থানে পৌছে দেই। পরে খবর নিয়ে জেনেছি যে, তারা আমার লিখাটি ঢাকা পত্রিকা অফিসে পৌছে দিয়েছেন। কিন্তু লিখাটি পত্রিকায় প্রকাশ করা হয় নাই। তবে আমার সেই লিখাটি তাদের পত্রিকায় না ছাপলেও একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব বাস্তবায়িত হয়েছে। আর তা হলো, যে সংখ্যার লিখায় প্রতিবাদ করেছি, তার এক অথবা দুই সংখ্যা পর হতে সাপ্তাহিক আজকের সূর্যোদয়ে পবিত্র কুরআনুল কারীম এবং বুখারী শরীফের বঙ্গানুবাদগুলি ধারাবাহিকভাবে নিয়মিত প্রচার করা হচ্ছে, যা ইতিপূর্বে করা হয় নাই। সেই প্রতিবাদ লিপিটাই ছিলো পত্র-পত্রিকায় প্রকাশের জন্যে পাঠানো আমার প্রথম লিখা। তারপর থেকে দেশের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় ইসলামী বিভিন্ন বিষয়ে কবিতা লিখে পাঠানো শুরু করলাম। সাপ্তাহিক পূর্ণিমায় সর্বপ্রথম আমার লিখা “কালেমা তাইয়্যেবার ইসলামী দাওয়াত” কবিতাটি ছাপানো হলো। এরপর সাপ্তাহিক সোনার বাংলায় পর পর ক’একটি ইসলামী কবিতা ছাপা হলো এগুলো দেখে আরো নতূন উদ্দ্যোমে শুরু হলো নিয়মিত ইসলামী কবিতা লিখা। (চলবে) 

পর্ব: ১

Related Post