Originally posted 2013-06-03 07:16:37.
আল কুরআন আল্লাহ তায়ালার খোলা চিঠি। পাঠিয়েছেন মানুষের কাছে। এটি এক অকল্পনীয় ব্যাপার। একটু ধ্যান করে দেখুন সমগ্র বিশ্বের স্রষ্টা, মহান রাব্বুল আলামিন চিঠি পাঠিয়েছেন তাঁরই নগণ্য সৃষ্টি, তাঁরই দাস বনি আদমের কাছে! আকাশ-বাতাস, আসমান-জমিন, আগুন-পানি, সাগর-পাহাড়, নদী-নালা, বন-জঙ্গল, পশু-প্রাণী সব কিছুর সৃষ্টিকর্তা মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ তায়ালা। তিনি কারো মুখাপেক্ষী নন। দুনিয়ার সব কিছুই তাঁর মুখাপেক্ষী। সবাই আল্লাহর করুণার ভিখারি। আল্লাহ তায়ালা মহান মর্যাদায় অধিষ্ঠিত হয়েও তাঁরই নগণ্য বান্দা মানুষের কাছে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন। সমগ্র বিশ্বের অধিকর্তা হয়ে নগণ্য গোলামের কাছে চিঠি পাঠিয়ে আল্লাহ মানুষকে সম্মানিত করেছেন। করেছেন ধন্য। এ চিঠির মাধ্যমে মানুষের প্রতি আল্লাহর অসীম দরদ ফুটে উঠেছে।
আল কুরআন নামক এ চিঠিখানার প্রতিটি লাইনে রয়েছে বান্দার কল্যাণের কথা। একজন মানুষ কিভাবে দুনিয়া ও আখেরাতে সফলকাম হতে পারে, রয়েছে তার বয়ান। কোন কাজ করলে অনন্তকাল লেলিহান অগ্নিশিখায় জ্বলতে হবে আর কঠিন বেদনাদায়ক শাস্তি ভোগ করতে হবে, রয়েছে তার বর্ণনা। কোন কাজ বান্দার জন্য বৈধ আর কোন কাজ অবৈধ, রয়েছে তার সুন্দর দিকনির্দেশনা। কোনটি সিরাতুল মুস্তাকিমের পথ আর কোনটি ভ্রান্ত পথ, তাও জানা যাবে এ কুরআন নামক চিঠি থেকে। কে মানুষের প্রকাশ্য ও গোপন শত্র“, রয়েছে তার কথা। শুধু তাই নয়, অতীতকালে যারা আল্লাহ ও তাঁর নবী-রাসূলের নাফরমানি করেছে, রয়েছে তাদের করুণ পরিণতির কথা।
দুনিয়ার সবচেয়ে মর্যাদাবান চিঠি হলো আল্লাহর চিঠি আল কুরআন। এটি সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ও রাসূল হজরত মুহাম্মদ সা:-এর ওপর নাজিল করা হয়েছে। মহাগ্রন্থ আল কুরআন আল্লাহর পক্ষ থেকে সর্বশেষ নাজিলকৃত কিতাব। কিয়ামত পর্যন্ত আর কোনো নবীও আসবেন না এবং কোনো কিতাবও নাজিল হবে না। কুরআনই সর্বশেষ ও চূড়ান্ত গ্রন্থ, যার মাধ্যমে পূর্ববর্তী সব গ্রন্থকে রহিত করা হয়েছে। কুরআন আল্লাহর বাণী। কুরআন সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী তথা ফুরকান। কুরআন হিদায়াতগ্রন্থ। অসংখ্য নাম, উপাধি ও বিশেষণ আছে কুরআনের। কুরআন নিয়ে যত আলোচনা হয়েছে এবং ভবিষ্যতে হবে, পৃথিবীর অন্য কোনো গ্রন্থ এভাবে আলোচিত হয়নি, হবেও না।
আল্লাহ তায়ালা কুরআন নামক চিঠিটি রাসূলের মাধ্যমে মানবের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন। এ চিঠি কখনো ফুরিয়ে যাবে না। এটি য় হবে না কখনো। এ চিঠি উন্মুক্ত। এ চিঠি কিয়ামত পর্যন্ত সব মানবের। ধনী-গরিব, শিতি-অশিতি, রাজা-বাদশাহ, ধর্ম-বর্ণ-গোত্র সবার কাছে প্রেরিত হয়েছে। যিনি এ চিঠি পড়বেন, পরিপালন করবেন এর নির্দেশনায় তিনি ধন্য হবেন; ধন্য হবে তার দুনিয়া ও আখেরাত। ইহকাল ও পরকালে কোনো দুঃখ-কষ্ট তাকে স্পর্শ করবে না। ক্ষুদ্র বান্দা হয়েও সমগ্র জাহানের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে পাঠানো অতি মহিমান্বিত এই চিঠিখানাকে আমরা অনেকেই যথাযথ মূল্যায়ন করতে পারিনি। আমরা সাধারণত যেকোনো চিঠি পাওয়া মাত্র এক নিমিষেই পড়ে ফেলি। কেউ চিঠি পাঠ করতে না পারলে অন্যের দ্বারস্থ হয়ে পড়িয়ে নিই। বিশেষ করে চিঠিটি যদি কোনো রাজা-বাদশাহর কাছ থেকে আসে, তাহলে আমরা তা বিশেষ মর্যাদা দিয়ে পাঠ করি এবং চিঠির নির্দেশনা অনুসরণ করার চেষ্টা করি। কিন্তু আমরা কি বাদশাহর বাদশা, মহান রাব্বুল আলামিনের প থেকে আসা চিঠি আল কুরআনকে পুরোপুরি অর্থসহকারে পড়ার চেষ্টা করেছি। বরং আমরা কখনো কখনো আল্লাহর এই চিঠিটিকে একটি বারের জন্যও না খুলে, একে না তেলাওয়াত করে গিলাফ দিয়ে পেঁচিয়ে আলমিরা বা বুকসেলফের মধ্যে রেখে দিয়ে ধৃষ্টতা প্রদর্শন করি। আমার প্রভু আমার কাছে একটি চিঠি পাঠালেন অথচ আমি তা খুলেও দেখলাম না! এর চেয়ে জঘন্য ধৃষ্টতা আর কী হতে পারে ।
আমাদের দেশের প্রায় সব নাগরিকের কাছে এখন মোবাইল আছে। আমাদের অনেক অশিক্ষিত ভাইবোন, বন্ধু ও আত্মীয়স্বজনও মোবাইল ব্যবহার করেন। ওইসব অশিক্ষিত মূর্খ মানুষের কাছে যদি কারো কাছ থেকে ইংরেজি ভাষায় মেসেজ আসে তাহলে তিনি কিন্তু মোবাইলটি হাতে নিয়ে চুমু খান না, বরং তিনি মেসেজে কী লেখা রয়েছে তা অন্যের সহযোগিতা নিয়ে হলেও বোঝার চেষ্টা করেন। সেই মেসেজে যদি এমন খবর থাকে যে, অমুকের কাছে গেলে পাঁচ হাজার টাকা পাওয়া যাবে, তাহলে তিনি কালবিলম্ব না করে ওই টাকা গ্রহণ করার জন্য ছুটে যাবেন।
কুরআন আরবি ভাষায় নাজিল হলেও মুসলিম মাত্র সে যে ভাষাভাষীরই হোক না কেন, তা তাকে পড়তে ও বুঝতে হবে। ১১৪ ভাগের এ বিশাল চিঠিখানার এক ভাগও যদি কেউ একবারও বুঝে পড়ার চেষ্টা করত তাহলে তার জীবনে বিপ্লব সাধিত হতো। মনিবের সাথে গোলামের ভালোবাসার বন্ধন অটুট হতো। কুরআন পড়ে কোনো বান্দাহ যখন বুঝত যে, আল্লাহ তায়ালা জিনা-ব্যভিচার, চুরি-ডাকাতি, হত্যা-রাহাজানি, সুদ-ঘুষ, মদ-জুয়ার জন্য কত ভয়াবহ শাস্তি বরাদ্দ রেখেছেন তাহলে সে কখনো ওইসব পাপাচারে লিপ্ত হতে পারত না। আবার কোনো বান্দাহ কুরআন তেলাওয়াত করে যদি বুঝতে পারত যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্যে কত পুরস্কার তাহলে সে সারা জীবন কুরআনের নির্দেশিত পথেই চলত। আমরা অনেকেই কুরআনকে খুব শ্রদ্ধা করি এবং কুরআন তিলাওয়াতও করি, কিন্তু অর্থ না বুঝে কুরআন পড়ার কারণে আমাদের জীবন পরিবর্তন হয় না। পাপাচার করলে অনুতপ্ত হই না। অথচ কুরআন বুঝে পড়লে এ রকমটি হতো না।
সব মানবসমাজকে তাই আল্লাহর দেয়া এ চিঠিখানা জীবনে একবারের জন্য হলেও বুঝে পড়ার করজোড় অনুরোধ করছি। আরবি ভাষা না বুঝলেও কোনো সমস্যা নেই। দুনিয়ার প্রায় সব ভাষায় আল কুরআনের অনুবাদ পাওয়া যায়। নিজ ভাষায় কুরআনকে একবারের জন্য পড়ে হলেও মহান আল্লাহকে সম্মান করুন। দেখুন মহামহিম আল্লাহ তায়ালা কত চমৎকারভাবে আপনাকে কল্যাণের পথে ডাকছেন। গোলাম হয়ে একটুও কি মন চায় না মনিবের সাথে আপনার সম্পর্ক গড়ে উঠুক আপনার মন কি চায় না আল্লাহর দিদার লাভে আপনি ধন্য হোন দুনিয়া ও আখেরাতে আশরাফুল মাখলুকাত ও ইনসানে কামেল হয়ে নিজেকে সুখী করতে একবারো কি মন চায় না আপনার. আসুন আমরা সবাই মিলে আল্লাহর দেয়া এই চিঠিখানা মনোযোগ সহকারে পাঠ করে এর অর্থ অনুধাবন করে জীবন সাজাই। জীবনকে রঙিন করি ইসলামের রঙে। সুখী হই দুনিয়া ও আখেরাতে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিক বুঝ দিন। – আমিন