এম আলমগীর
মানব ইতিহাসকে গৌরবময় করার জন্য আল্লাহপাক তার ঐশীগ্রন্থ পবিত্রতম আল কুরআনকে পাঠালেন যে মাসটিতে সে মাসের নাম রমযান। আল্লাহ বলেন: এটি রমযান মাস যে মাসে কুরআন অবতীর্ণ করা হয়েছে, এতে হেদায়াত রয়েছে মানব মন্ডলীর জন্য এবং সুস্পষ্ট নির্দশনাবলীসহ হক এবং বাতিলের পার্থক্য (সত্য ও মিথ্যার) সুচিতকারী এই কুরআন। (সূরা বাকারা: ১৮৫)
কুরআন নাযিলের প্রেক্ষাপট আমাদের জানা দরকার, তখন আরবের ইতিহাস বর্বরাতার জঘন্যতম ইতিহাস, চুরি, ডাকাতি, খুন, ধর্ষণ, জুলুম নির্যাতন, নিত্যনৈমত্তিক ব্যাপার ছিল। নারীদের কোন মর্যাদা ছিল না, ছিল না কোন নিরাপত্তা, স্বয়ং নবী মুহাম্মাদ (সা.) ছিলেন উদ্বিগ্ন। তিনি হেরা গুহায় আশ্রয় নিয়ে দীর্ঘ দিন যাবৎ প্রার্থনা করেন। আল্লাহপাক তাঁর সৃষ্টির সেরাজীব মানবজাতীকে কলঙ্ক মুক্ত করার জন্য সুসভ্যজাতি হিসেবে পৃথিবীতে দাঁড়াবার জন্য বিশ্ব মানবতাকে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য তিনি রমযান মাসেই তাঁর প্রিয় হাবীব জনাবে মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর উপর এই কুরআন অবতীর্ণ করা শুরু করলেন। এই কুরআন এমন এক কিতাব, যার মধ্যে ভুলের এবং সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। এতে হেদায়েত রয়েছে, মুত্তাকীদের (আল্লাহভীতি) জন্য। (বাকারা: ২)
রমযান মাস কুরআন নাযিলের মাস। যে রাতটিতে কুরআন নাযিল করেছেন, সেই রাত্রির মর্যাদা আল্লাহপাক এত বেশি গৌরবময় করেছেন, তা অন্য কোন রাত্রির নেই। আল্লাহ বলেন: আমি এই কুরআনকে ক্বদরের রাত্রিতে নাযিল করেছি, তুমি কি জানো ক্বদরের রাত্রিটি কি? ক্বদরের রাত সে রাত যে রাত হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। (সূরা ক্বদর: ১-৩) যে রাত্রে কুরআন নাযিল করেছেন, সে রাত হাজার মাসের রাত্রির চেয়েও অধিক উত্তম। পৃথিবীর ইতিহাসে এ রাতের চেয়ে মর্যাদাময় আর কোন রাত নেই। এ রাতের ইবাদত থেকে কেউ বঞ্চিত হলে সে সকল কল্যাণ থেকেই বঞ্চিত হলো। (নাসাঈ ১২৯/৪ আহমদ ২৩০/২)
মহান আল্লাহ বলেন: এই রাতে সব ব্যাপারে জ্ঞানগর্ভ ফায়সালা প্রকাশ করা হয়ে থাকে। (সূরা দুখান: ৪)
কুরআন নাযিলের কারণে এই একটি রাত্রে এত বড় নেকী ও কল্যাণের কাজ হয়েছে, যা মানবতার সুদীর্ঘ ইতিহাসে কোন দীর্ঘতম কালেও হয়নি। আল্লাহ পাক আরো বলেন: অবশ্যই এই কুরআনকে আমি একটি বরকতপূর্ণ রাত্রিতে অবতীর্ণ করেছি। (সূরা দুখান: ৩)
রাসূল (সা.) বলেছেন: যে ব্যক্তি ক্বদরের রাতে ঈমান ও ইহতিসাবের (সাওয়াবের নিয়তে) ইবাদত করবে আল্লাহ তার পূর্বের সকল গোনাহ মাফ করে দিবেন। (বুখারী)
আর এই পবিত্র কুরআন যে মাসটিতে অর্থাৎ রমযান মাসে নাযিল করেছেন তার মর্যাদা অন্য সকল মাসের চেয়ে উত্তম। এই মাস সকল মাসের সরদার অর্থাৎ সায়্যিদুস শাহর।
এই মর্যাদা একমাত্র কুরআন কারীমের বদৌলতে, আর যার উপর এই কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে, তাঁর মর্যাদা ভেবে দেখুন! পৃথিবীর ইতিহাসে সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব, মহান নেতা, যার কথা, কাজ, সমর্থন আমাদের তথা মানবমন্ডলীর জন্য অনুকরণীয়, অনুসরণীয়, আল্লাহ সুবাহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন: আমার রাসূল যা কিছু নিয়ে এসেছেন, তা গ্রহণ করো, আর যা কিছু নিষেধ করেছেন, তা বর্জন করো। (সূরা হাশর: ৭) তিনিই হচ্ছেন বিশ্ব মানবতার জন্য সর্বত্তোম আদর্শ।
আসহাবে রাসূল (সা.) তথা সাহাবীগণ মা আয়েশা সিদ্দীকা (রা.)-এর কাছে জিজ্ঞাস করলেন, আমাদেরকে রাসূল (সা.)-এর চরিত্র সম্পর্কে কিছু বলুন, জবাবে তিনি বললেন, কুরআনই হচ্ছে আল্লাহর রাসূলের চরিত্র। (সহীহ মুসলিম) কুরআন পাঠিয়েছেন, মানবজাতির চরিত্র সংশোধন করার জন্য, কুরআনই পারে মানুষের চারিত্রিক সংশোধন, নৈতিকতাবোধ সম্পন্ন, সুনাগরিক তৈরী করতে। যারা পারে পৃথিবীর ইতিহাস পাল্টে দিতে, এবং তাদের পক্ষেই সম্ভব ডিজিটাল দেশ তথা পৃথিবী গড়তে। চরিত্রহীন মানুষের পক্ষে দেশ গড়া তো দূরের কথা একটি গ্রামও প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। আল কুরআনই পারে চরিত্রবান সুনাগরিক তৈরী করতে আর কোন বিকল্প পথ নেই। আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন: তোমাদের কাছে আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি আলোকময় জ্যোতি এসেছে এবং তা একটি সুস্পষ্ট কিতাব তথা আল কুরআন। তা দ্বারা আল্লাহ এরূপ লোকদেরকে শান্তির পন্থাসমূহ বলেদেন, যারা তার সন্তুষ্টি অন্বেষণ করে এবং তিনি তাদেরকে নিজ তাওফীকে ও করুণায় (কুফরীর) অন্ধকার থেকে বের করে (ঈমানের) আলোর দিকে নিয়ে আসেন। এবং তাদেরকে সরল (সঠিক) পথে প্রতিষ্ঠিত রাখেন। (সূরা মায়েদা: ১৫-১৬)
আল্লাহ এই কুরআন যে রাত্রিতে নাযিল করেছেন, সেই রাত্রির মর্যাদা বৃদ্ধি পেয়েছে। যার উপর এই কুরআন নাযিল করেছেন, তার মর্যাদা বেড়েছে এবং তাকে পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব বানিয়েছেন। যারা এই কুরআনের শিক্ষা গ্রহণ করেছেন, তাদের মর্যাদাও আল্লাহ বাড়িয়েছেন। যেভাবে সাহাবায়ে কেরামগণের মর্যাদা বাড়িয়েছেন। রাসূলে কারীম (সা.) বলেছেন: আমার যুগের মানুষই সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ। (বুখারী ও মুসলিম) যা কুরআনের কারণেই সম্ভব হয়েছিলো।
আসুন এই কুরআন নাযিলের মাসে কুরআনের শিক্ষা গ্রহণ করি, কুরআনই দিতে পারে শান্তির গ্যারাণ্টি কেননা কুরআনই হলো আল্লাহ প্রদত্ত নির্ভুল আসমানী সংবিধান। আল্লাহ আমাদেরকে কুরআন বুঝার তাওফীক দান করুন। আমীন