কুরআন-সুন্নায় কবর আজাবের বিবরণ

imagesCAGGN46P

আল্লাহ তায়ালা ফিরাউনের ব্যাপারে বলেছেন, ‘ফিরাউন ও তারঅনুচরদের শোচনীয় আজাব গ্রাস করে ফেলল। সকাল-সন্ধ্যায় তাদের আগুনের সামনে পেশ করাহয়। আর যে দিন কিয়ামত সংঘটিত হবে, সেই দিন আদেশ করা হবে, ফিরাউন ও তার দলবলকেকঠিনতর আজাবে দাখিল করো।’ (সূরা আল মুমিন : ৪৫-৪৬) আল্লাহ তায়ালা আরো এরশাদকরেছেন, তাদের ছেড়ে দিন সেই দিন পর্যন্ত, যেদিন তাদের মাথায় বজ্রাঘাত পতিত হবে।সেই দিন তাদের চক্রান্ত তাদের কোনো উপকারে আসবে না এবং তারা সাহায্যপ্রাপ্তও হবেনা। গুনাহগারদের জন্য এ ছাড়াও শাস্তি রয়েছে, কিন্তু তাদের বেশির ভাগই তা জানেনা।’ (সূরা আত্তুর : ৪৫-৪৭)

আর কবরে সওয়াল জওয়াবের প্রতি ইঙ্গিত করে আল্লাহতায়ালা এরশাদ করেন, ‘আল্লাহ তায়ালা ঈমানদারদের মজবুত বাক্য দিয়ে দুনিয়া ওআখিরাতের মজবুত রাখেন এবং জালিমদের পথভ্রষ্ট করেন। আর আল্লাহ যা চান তা করেন।’ (সূরা ইবরাহিম : ২৭)। বুখারি ও মুসলিমের হাদিসে এসেছে এ আয়াতে আখিরাত বলতে বরজখঅর্থাৎ কবরের জগৎ বোঝানো হয়েছে (দেখুন, মা’আরেফুল কুরআন, পৃ: ৭১৭, শারহুল ফিকহুলআকবর, পৃ: ১৭০)। আল্লাহ তায়ালা মুনাফিকদের শাস্তির ব্যাপারে আরো এরশাদ করেছেন, ‘আমি তাদের দুইবার আজাব প্রদান করব। তার পর তাদের নিয়ে যাওয়া হবে বৃহত্তম আজাবেরদিকে।’ (সূরা তাওবা : ১০১)।

ইবনে আব্বাস রা: বর্ণনা করেন, নবী করিম সা: দুটো কবরেরপাশ দিয়ে যাওয়ার সময় বলছিলেন, তাদের কবর আজাব চলছে। তবে তেমন কোনো বিরাট কারণেতাদের এ আজাব হচ্ছে না। একজন প্রস্রাব করার পর ভালো করে পবিত্র হতেন না। আরদ্বিতীয়জন চোগলখুরি করে বেড়াতেন। তার পর একটা তাজা ডাল নিয়ে দুই ভাগ করে দুইকবরে গ্রোথিত করে বললেন, আশা করছি এ দুটো ডাল না শুকানো পর্যন্ত তাদের আজাব কিছুলঘু করা হবে। (বুখারি ও মুসলিম) আনাস বিন মালেক রা: বর্ণনা করেন, নবী করিম সা:এরশাদ করেছেন, যদি তোমরা দাফন-কাফন ছেড়ে না দিতে, তা হলে আল্লাহর কাছে চাইতাম, তিনি যেন তোমাদের সরাসরি কবর আজাব শোনার ব্যবস্থা করে দেন; যা আমাকে শোনানো হয়েছে। (মুসলিম, নাসাঈ, আহমদ) নবী করিম সা: এরশাদ করেছেন, বান্দাকে যখন কবরে রেখে তারসাথীরা বিদায় নিয়ে চলে যায়, সে তাদের পায়ের জুতা বা স্যান্ডেলের আওয়াজও শুনতেপায়। ওই সময়েই দু’জন ফেরেশতা এসে তাকে বসিয়ে দেন। জিজ্ঞেস করেন, ‘এ লোকটি অর্থাৎমুহাম্মদ সা: সম্পর্কে তোমার ধারণা কী? মুমিন ব্যক্তি তখন বলে, আমি স্যা দিচ্ছিতিনি আল্লাহর বান্দা ও রাসূল। তখন তাকে বলা হয়, তাকিয়ে দেখ, ওই যে জাহান্নামেতোমার আসনটি,সেটির পরিবর্তে আল্লাহ তোমাকে জান্নাতের আসন বরাদ্দ করে দিয়েছেন।উভয় আসনই সে দেখতে পাবে। মুনাফিক বা কাফিরকে যখন প্রশ্ন করা হবে, তুমি কি বলতেপারো এ লোকটি সম্পর্কে? সে বলবে, আমি তো কিছু জানি না। লোকেরা যা বলত, আমিও তাইবলতাম। তখন তাকে বলা হবে, তুমি তো জানতে চাওনি, অনুসরণও করোনি। আর ওই মুহূর্তেইবিশাল এক লৌহ হাতুড়ি দিয়ে তার মাথায় আঘাত করা হবে। আঘাতের ফলে সে বিকট স্বরেআর্তচিৎকার করে উঠবে, যা তার আশপাশে জিন, ইনসান এ দুই সৃষ্টি ছাড়া আর সবাই শুনতেপাবে। (বুখারি)

অন্যান্য হাদিসে এসেছে, প্রথম প্রশ্ন হবে, তোমার রব কে? দ্বিতীয়প্রশ্ন হবে, তোমার দ্বীন কী? তৃতীয় প্রশ্ন থাকবে রাসূলুল্লাহ সা: সম্পর্কে। এব্যাপারে এত প্রচুরসংখ্যক সহিহ হাদিস রয়েছে, সবগুলোর উল্লেখ এ সংপ্তি পরিসরে সম্ভবনয়। প্রচুর সহিহ হাদিস এসেছে নবী করিম সা: নামাজের ভেতরে সালাম ফেরানোর আগেআল্লাহর কাছে যে ক’টি বিষয় থেকে সব সময় পানাহ চাইতেন এবং উম্মতকে পানাহ চাইতেতাকিদ করে গেছেন, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে কবরের আজাব। হাশরের ময়দানে বিচারের আগেদুনিয়াতে মৃত্যুর আগে ও মৃত্যুর পর বরজখি জিন্দেগিতে যেকোনো অপরাধীকে যেকোনোঅবস্থায় শাস্তি দেয়ার অধিকার ও মতা আল্লাহর অবশ্যই আছে। ওপরের আলোচনায় তাসুস্পষ্টভাবে প্রমাণ হলো। কাজেই ওপরের যুক্তিটির অসারতা একেবারেই দিবালোকের মতোসুস্পষ্ট। যুক্তিবাদীদের আরেকটি যুক্তি হলো, কবর আজাবসংক্রান্ত দৃশ্যগুলো শুধু কবরেসমাহিত ব্যক্তির সাথেই সামঞ্জস্যশীল। কিন্তু যেসব মানুষের মৃতদেহ সমাহিত করা হয়নি, চিতায় ভস্মীভূত করা হয়েছে অথবা বাঘের পেটে বা হাঙরের উদরে হজম হয়ে গেছে, তাদেরতো কবরই নেই, কবর আজাব হবে কোথায়? আর ফেরেশতা এসে প্রশ্নগুলো করবেন কিভাবে, কোথায়? এসব প্রশ্নের সৃষ্টি হচ্ছে কবরের জিন্দেগিকে দুনিয়ার জিন্দেগির মতো মনেকরায়। কবর অর্থাৎ বরজখ এক অন্য জগৎ। পার্থিব জগতের সাথে এর কোনো মিল নেই। বরজখেরজিন্দেগি সবার জীবনেই ঘটবে। যাকে কবর দেয়া হয়েছে তার জীবনে যেমন বরজখের জিন্দেগিহবে, যে বাঘের পেটে হজম হয়ে গেছে তার জন্যও একই বরজখের জিন্দেগি অনুষ্ঠিত হবে। সেইজিন্দেগির প্রকৃত অবস্থা দুনিয়ার বস্তুগত প্রক্রিয়ার মতো হবে না। কাজেই দুনিয়ারপ্রক্রিয়া ও উপায় উপকরণ হুবহু যেমন আখিরাতের জন্য প্রযোজ্য নয়, তেমনি তা বরজখেরজিন্দেগির জন্যও প্রযোজ্য নয়। এ তিন জগতের প্রতিটির রয়েছে আলাদা সিস্টেম। একজগতের সিস্টেম দিয়ে অন্য জগৎকে বিচার করাই বড় ভুল। এমনকি যাদের কবর দেয়া হয়েছে, তাদের লাশও তো পচে গলে শেষ হয়ে যাবে। তখন তাদের বরজখের জিন্দেগি যেভাবে হবে, যাদেরকবর দেয়া হয়নি, তাদের বরজখের জিন্দেগি সেই প্রক্রিয়ায়ই হবে। একজন নেক বান্দা আরএকজন কাফির, মুনাফিক বা পাপিষ্ঠের কবর যদি একদম পাশাপাশি থাকে, তা হলে হাদিসেরভাষানুযায়ী একজনের কবর হবে জান্নাতের টুকরার মতো। অনেক প্রশস্ত করে দেয়া হবে, আলোকিত করে দেয়া হবে, বইতে থাকবে জান্নাতের সুবাতাস। আর আরেকজনের কবরকে সঙ্কুচিতকরে দেয়া হবে, তা হবে জাহান্নামের গর্তসদৃশ। সেখানে চলতে থাকবে আজাবের বিভীষিকা।পাশের কবরের এ বিভীষিকা তার প্রতিবেশীর শান্তিতে এতটুকুও বিঘœতা সৃষ্টি করবে না।দুনিয়ার হিসাবে এটি কী করে সম্ভব! মৃত্যু-পরবর্তী জিন্দেগি, চাই সেটি বরজখ হোক আরআখিরাতপুরোটাই গায়েবের (অদৃশ্য) অন্তর্ভুক্ত। এসব গায়েবের খবরের ব্যাপারেআল্লাহ বলেছেন, (তারাই প্রকৃত মুত্তাকি) যারা গায়েবের প্রতি বিশ্বাস করে। এমন কোনোযুক্তিপ্রমাণ ও বিজ্ঞান নেই, যা দিয়ে বরজখ ও আখিরাতের সব কিছুকে বুঝে তার পর ঈমানআনা যাবে, না হলে নয়। তা হলে গায়েবের ওপর ঈমান আনার দরকার কি? তবে সময়মতো সবইবুঝে আসবে যখন প্রকৃত পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে। যখন গায়েবগুলো প্রকাশিত হয়েপড়বে। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, তোমার (চুর) পর্দা সরিয়ে দিয়েছি, আজকে তোমারদৃষ্টি সুতী। (সূরা কাফ : ২২)

 

Related Post