New Muslims APP

কুরআনের আলোকে দুনিয়া ও আখেরাতে কল্যাণের কিছু আমল

00[1]ফালাহ ও সফলতা শব্দ দুটি কোরআন ও হাদিসের বহু ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়েছে। দুনিয়াবি দৃষ্টিকোণ থেকে সফলতা হচ্ছে সব মনোবাঞ্ছা পূরণ হওয়া, সব ধরনের দুঃখ-কষ্ট থেকে বেঁচে থাকা এবং কোনো অবাঞ্ছিত অবস্থার সম্মুখীন না হওয়া। তবে মানুষের প্রকৃত সফলতা হচ্ছে ইহলৌকিক ও পারলৌকিক সফলতা। আর এই সফলতা অর্জনের জন্য সাতটি গুণ অর্জনের ভূমিকা অনেক বড়।
প্রথম গুণ : নামাজে খুশু-খুজু তথা বিনয়, নম্রতা ও স্থিরতা অর্জন করা। নামাজের অন্য রুকনগুলো হচ্ছে দেহের সমতুল্য, আর ইখলাস ও খুশু-খুজু হচ্ছে প্রাণতুল্য। তাই নামাজের খুশু-খুজুকে মুমিনের সফলতার সর্বপ্রথম শর্ত হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
দ্বিতীয় গুণ : বেহুদা কাজ থেকে বিরত থাকা। এ সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘মানুষ যখন অনর্থক কার্যকলাপ বর্জন করে তখন তার ইসলাম সৌন্দর্যমণ্ডিত হয়। বেহুদা কার্যকলাপ বলতে অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা, খাদ্য গ্রহণ, নিদ্রা যাওয়া, গৃহ নির্মাণ, কাপড়চোপড় তৈরি—সবকিছুই বোঝানো হয়েছে। হায়াতে জিন্দেগির প্রতিটি মুহূর্ত অমূল্য সম্পদ। যারা সফল হতে চায়, তারা কখনও অহেতুক কাজে সময় ব্যয় করতে পারে না।
তৃতীয় গুণ : জাকাত প্রদান করা। জাকাতের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে পবিত্র করা। পরিভাষায় জাকাত বলতে বোঝায়, যারা নেসাব তথা নির্দিষ্ট পরিমাণ মালের মালিক, তাদের নির্দিষ্ট পরিমাণ মাল থেকে শরিয়ত অনুযায়ী একটি নির্দিষ্ট অংশ গরিব-দুঃখীদের দান করা। জাকাত হচ্ছে ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের অন্যতম স্তম্ভ। এ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কালামে পাকে ইরশাদ করেন, ‘যে নিজের আত্মাকে পরিশুদ্ধ করেছে সে সফলকাম হয়েছে, যে নিজের আত্মাকে কলুষিত করেছে সে ব্যর্থ হয়েছে।’
চতুর্থ গুণ : যৌনাঙ্গকে হারাম থেকে হেফাজত করা। নিজ স্ত্রী ছাড়া সব পরনারী থেকে নিজেকে হেফাজত করা। অতএব বৈধ ক্ষেত্রেও অস্বাভাবিক পন্থায় বা নিষিদ্ধ সময়ে কামবাসনা পূর্ণ করা হারাম।
পঞ্চম গুণ : আমানতদারি রক্ষা করা। ‘আমানত’ শব্দ দিয়ে ওই দায়িত্ব বোঝায়, যা এমন কোনো ব্যক্তি বহন করে যার ওপর আস্থা ও ভরসা করা হয়। আমানত শব্দটি বহুবচন ব্যবহৃত হওয়ায় সব ধরনের আমানত এর অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেছে। এই আমানত আল্লাহ তায়ালার হক সংক্রান্তও হতে পারে। যেমন—ফরজ, ওয়াজিব বিধিবিধানগুলো আদায় করা। হারাম ও মাকরূহ বিষয়াদি থেকে বিরত থাকা। বান্দার হক সংক্রান্তও হতে পারে। যেমন, কেউ কারও কাছে অর্থ-সম্পদ আমানত রাখল। তাহলে এই আমানত মালিকের কাছে ফিরিয়ে দেয়া পর্যন্ত হেফাজত করা আমানতদারের দায়িত্ব ও কর্তব্য। এ ছাড়া কেউ কারও কাছে কোনো গোপন কথা বললেও কথাটি তার কাছে আমানত হিসাবে থাকে। শরিয়তসম্মত কারণ ছাড়া কারও গোপন কথা ফাঁস করাও আমানাতের খেয়ানতি।
ষষ্ঠ গুণ : অঙ্গীকার পূর্ণ করা। অঙ্গীকার বলতে এমন দ্বিপক্ষীয় চুক্তি বোঝায়, যা কোনো ব্যাপারে উভয় পক্ষ নিজের ওপর অপরিহার্য করে নেয়। এ ধরনের দ্বিপক্ষীয় চুক্তি ভঙ্গ করা বিশ্বাসঘাতকতা ও হারাম। একজন অন্যজনকে কিছু দেয়ার কিংবা কোনো কাজ করে দেয়ার একতরফা যে অঙ্গীকার করে, তাও পূর্ণ করা ওয়াজিব। এ সম্পর্কে হাদিসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ওয়াদা হচ্ছে এক ধরনের ঋণ। ঋণ আদায় করা যেমন ওয়াজিব, ওয়াদা পূর্ণ করাও তেমনি ওয়াজিব।
সপ্তম গুণ : নামাজের প্রতি যত্নবান হওয়া। প্রতি নামাজ মুস্তাহাব ওয়াক্তে আদায় করা। ‘সালাত’ শব্দটি বহুবচন ব্যবহার করে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ বোঝানো হয়েছে।
সাতটি গুণের আলোচনা নামাজ দিয়ে শুরু করা হয়েছে এবং নামাজ দিয়েই শেষ করা হয়েছে। উল্লিখিত সাতটি গুণের মধ্যে কিছু গুণ আল্লাহ তা’আলার হকসংক্রান্ত, কিছু গুণ বান্দার হক সংক্রান্ত। আর এই সাতটি গুণের মধ্যে শরিয়তের প্রায় মৌলিক বিধিবিধানগুলো এসে গেছে।
উল্লিখিত সাতটি গুণে গুণান্বিত লোকদের জান্নাতুল ফিরদাউসের উত্তরাধিকারী বলা হয়েছে। তবে তাদের জান্নাতুল ফিরদাউসের উত্তরাধিকারী বলে এই দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে, মৃত ব্যক্তির সম্পদ যেমন উত্তরাধিকারীদের হাতে আসার বিষয়টি সুনিশ্চিত, অনুরূপ এই সাতটি গুণের অধিকারী ব্যক্তিদেরও জান্নাত লাভের বিষয়টি সুনিশ্চিত। আল্লাহ তা’আলা আমাদের আমল করার তাওফিক দিন।

Leave a Reply


This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.