কোরআনে কারিম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা

images[6]প্রতিটি মুসলমান একথা বিশ্বাস করেন যে, কোরআনে কারিম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। কোরআন এমন এক জীবন ব্যবস্থা যার ওপর জীবন পরিচালনা করে মানবজাতি দুনিয়া-আখেরাত উভয় জগতে সফলতা এবং নিরাপদ নিরাপত্তার গ্যারান্টি অর্জন করতে পারে। অবশ্য এই দাবির সপক্ষে বিস্তর দলিল-প্রমাণ উত্থাপনের অবকাশ রয়েছে। এর সপক্ষে বিশাল বিশাল কিতাবও রচনা করা যেতে পারে এবং এরই মধ্যে লেখাও হয়েছে। আজকের আলোচনায় আমি একেবারেই সংক্ষেপে এই জীবন ব্যবস্থার কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যের আলোকপাত করার আশা রাখি।কোরআনে কারিম যে জীবন ব্যবস্থার দিকে মানজাতিকে দিকনির্দেশনা দিয়েছে তাকে মাত্র তিনটি সংক্ষিপ্ত শব্দের ভেতর একত্রিত করে দিয়েছে। ইরশাদ হয়েছে: হুকুমের মালিক একমাত্র আল্লাহ তায়ালা।(সূরা আনআম : ৫৭)

এটি কোরআনি জীবন বিধানের সর্বপ্রথম,সর্বব্যাপী এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দফা। এই দফাতে মানব জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে যেসব দিকনির্দেশনা কোরআনে বিদ্যমান, তার সবই এতে অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায় স্বয়ংক্রিয়ভাবেই। এর অর্থ হলো,যে ব্যক্তি কোরআনে কারিমের জীবন ব্যবস্থা দ্বারা উপকৃতি লাভের প্রত্যাশী, সর্বপ্রথম তার অন্তরে বাস্তবিকভাবেই এই বিষয়টি লালন করতে হবে যে, সারা বিশ্বের বিধানের মালিক, নির্দেশদাতার অধিকার একমাত্র এবং শুধু আল্লাহ তায়ালার অর্জিত।

 আর তাঁর বান্দাদের কাজ হলো তাঁর প্রতিটি হুকুমের সামনে, নির্দেশের সামনে নিজের সর্বস্ব বিলিয়ে দেয়া। আল্লাহর সর্বব্যাপী হুকুমদান, নির্দেশদানের বিষয়টি এতই সর্বব্যাপী এবং চিরস্থায়ী যা দুনিয়ার শাসকদের নির্দেশ ও হুকুমদানের সঙ্গে কোনো তুলনাই চলতে পারে না। দুনিয়ার শাসকদের নির্দেশ মানব সম্প্রদায়ের বাহ্যিক বিষয় পর্যন্ত সীমিত, তার অভ্যন্তরীণ বিষয়ে এদের নির্দেশ অকার্যকর। এ কারণে দুনিয়ার বিধিবিধান মানবজীবনের অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে, তার আখলাক-চরিত্র এবং তার চিন্তা-চেতনায় ক্রিয়াশীল নয়। কিন্তু মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালার নির্দেশ, তাঁর বিধিবিধান যেমনিভাবে মানবজীবনের বাহ্যিক বিষয়াসয়ের ওপর প্রয়োগ হয়ে থাকে, তেমনিভাবে তার আখলাক-চরিত্র, তার স্বভাব-বৈশিষ্ট্য,তার অন্তর—অভ্যন্তর, তার চিন্তা-চেতনা সর্বব্যাপী পরিব্যাপ্ত।

জীবনের সামান্য শ্বাস-প্রশ্বাসও তাঁর আওতার বাইরে নয়। আর এর চাহিদা ও দাবি এটিই—মানুষ অফিসে থাকুক, বাজার-কিংবা দোকানে, নেতৃত্বের চেয়ারাসীন হোক কিংবা সাধারণ নাগরিকের আসনে, পরিবারের সঙ্গে হোক বা নির্জন একাকিত্বে, সে যেখানেই হোক, তার প্রতিটি কথায়, প্রতিটি কাজে, প্রতিটি চিন্তা-চেতনায় নিজেকে আল্লাহ তায়ালার অনুসারী বানিয়ে নেবে। অন্তর থেকে এই বিশ্বাস পোষণ করবে : ‘জেনে রাখ! কান, চোখ ও অন্তর এর প্রতিটি সম্পর্কে (তোমাদের) জিজ্ঞাসা করা হবে। (বনি ইসরাঈল : ৩৬) আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কোরআনে কারিমের মাধ্যমে এবং মহানবী সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মাধ্যমে যে বিধান দিয়েছেন, তাকে মৌলিকভাবে ৫টি ভাগে বিভক্ত করা যায়। যথা ১. আকিদা-বিশ্বাস, ২. ইবাদত-বন্দেগি, ৩. লেনদেন, ৪. আচার-আচরণ এবং ৫. আখলাক-চরিত্র।

আকিদা-বিশ্বাসগত যেসব বিধিবিধান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মানবগোষ্ঠীকে দিয়েছেন; এর মাধ্যমে মানুষকে এমন সব বাস্তবতার শিক্ষা দেয়া হযেছে, যা জানা, অন্তরে বিশ্বাস করা মানব সৃষ্টির উদ্দেশ্যের জন্যই একটি জরুরি বিষয়। যেমন তাওহিদ (একত্ববাদ), রিসালাত, আখিরাত, তাকদির, ফেরেশতা এবং ইসলামের অন্যান্য মৌলিক আকিদা-বিশ্বাস যা স্বাভাবিক বিশ্বাসবহির্ভূত বাস্তবতার স্বীকৃতিই নয় বরং তার বুনিয়াদের ওপরই শান্তিময়, নিরাপদ জীবনের গ্যারান্টি বিদ্যমান। যখন মানুষের অন্তরে এসব বিশ্বাস বদ্ধমূল হয়ে যায় এবং মানুষ ভাবতে শুরু করে যে, এই ভূমণ্ডলের প্রকৃত শক্তির আধার একমাত্র এবং কেবলমাত্র আল্লাহ তায়ালাই। তিনি সদা-সর্বদা, প্রতিটি মুহূর্তেই আমাকে, আমার প্রতিটি কথা, প্রতিটি কাজকর্ম দেখছেন, পরিশেষে আমাকে আমার প্রতিটি কাজের জবাবদিহির জন্য দাঁড়াতে হবে তাঁরই দরবারে। এমন আত্মবিশ্বাস যার অন্তরে থাকবে, অবশ্যই তার ভেতর অসত্ ও কুকর্মের প্রতি আকর্ষণ হ্রাস পাবে, আর আকর্ষণ বৃদ্ধি পাবে ভালো কাজের প্রতি।

ইসলামী বিধি-বিধানের দ্বিতীয় বিষয়টি হলো ইবাদত-বন্দেগি। এতে নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত এবং কোরবানি ইত্যাদির মতো বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত। এসব ইবাদতের মূল ও মুখ্য উদ্দেশ্যই হচ্ছে আল্লাহ তায়ালার সঙ্গে বিশেষ সম্পর্ক স্থাপন এবং হৃদ্যতা গড়ে তোলা। আকিদা-বিশ্বাসের মাধ্যমে মানুষ যেসব বিষয় নিজের বিবেক এবং চিন্তার ভাণ্ডারে বদ্ধমূল করেছে, এসব ইবাদত-বন্দেগি তাকে অন্তরাত্মা ও কালব-রুহে এত দৃঢ়ভাবে সম্পৃক্ত করে দেয় যে, পর্যায়ক্রমে এই আকিদা-বিশ্বাসের সঙ্গে তার গভীর ইশক ও প্রেমের সম্পর্কের আকার ধারণ করে থাকে। মানুষের স্বভাবের চাহিদা হচ্ছে যে, সে নিজের সৃষ্টিকর্তা, নিজের মালিকের সঙ্গে মিলিত হবে, তাঁর সামনে নিজের সবকিছু উজাড় করে দেবে। নিজের বিপদ-আপদে তাঁকে স্মরণ করবে এবং তাঁর সামনে নিজের দুর্বলতা-অক্ষমতা তুলে ধরবে। এসব ইবাদতের মাধ্যমেই মানুষের স্বভাবজাত এই চাহিদা নিবারণের ব্যবস্থা করে। তার ভেতর এনে দেয় আত্মিক প্রশান্তি। যার ফলাফল হলো, মানুষ আল্লাহর বিধায়কের বিষয়টিকে বাধ্য হয়ে গ্রহণ করে না বরং প্রেম-ভালোবাসা এবং ইশক-মহব্বতের সুতীব্র আগ্রহেই মানুষ তা গ্রহণ করে থাকে। এই ইশকের জগতে বিভোর হয়েই তখন সে বলে ওঠে : আমার নামাজ, আমার কোরবানি, আমার জীবন এবং আমার মরণ সবকিছুই আল্লাহর জন্য,যিনি সমগ্র বিশ্বজগতের রব।

(সূরা আনআম : ১৬২)

কোরআনি জীবন ব্যবস্থার তৃতীয় বিষয়টি হলো মুআমালাত তথা লেনদেন। ওইসব লেনদেন, যা একজন মুসলমান তার অপর ভাইয়ের সঙ্গে করে থাকে। যাতে বেচাকেনা, ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকরি-বাকরি, শিল্প-কারখানা এবং কৃষিকাজসহ সব লেনদেনই অন্তর্ভুক্ত। এক্ষেত্রে ইসলামের বিধি-বিধান অত্যন্ত ব্যাপক ও বিস্তৃত। কিন্তু এসব বিধি-বিধানের প্রতিপাদ্য হিসেবে কোরআনে কারিম একটি আয়াতে ঘোষণা করেছে : হে মুমিনগণ! তোমরা পরস্পরে একে অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না, তবে পারস্পরিক সন্তুষ্টিক্রমে কোনো ব্যবসায় করা হলে তো জায়েজ হবে। (সূরা নিসা : আয়াত-২৯) এই আয়াতে কারিমায় আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ওই বস্তুবাদী চিন্তা-চেতনায় কুঠারাঘাত করেছেন, যারা নিজেদের বস্তুকেন্দ্রিক উপকারিতা অর্জনে জায়েজ-নাজায়েজ সব পদ্ধতিকেই বৈধতার আওতায় নিয়ে আসতে কুণ্ঠিত নয়। যাদের দৃষ্টিতে পয়সা দ্বারা পয়সা অর্জনের সব রাস্তাই মানুষের অধিকার হিসেবে সাব্যস্ত। অথচ আল্লাহ তায়ালার ঘোষণা হলো, তোমাদের জন্য রুজি-কামাই শুধু বৈধ-ই নয়, বরং তা ওয়াজিবও বটে। কিন্তু রুজি-কামাইয়ের সীমারেখা নির্ধারণের অধিকার তোমাদের নয়, তা একমাত্র আল্লাহর নিয়ন্ত্রণেই।

তোমাদের জন্য শুধু খোদায়ি সীমারেখার ভেতর থেকে আর্থিক উন্নয়নে চেষ্টা-প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা বৈধ। খোদায়ি সীমারেখার বাইরে আর্থিক উন্নয়নের যেসব কলাকৌশল রয়েছে, সেগুলো বাতিল এবং অবৈধ। যদি তোমরা হুকুমদাতা হিসেবে আল্লাহকে মেনেই থাক, তাহলে তোমাদের জন্য এসব পন্থা অবলম্বন জায়েজ নেই। বস্তুগত দিক থেকে এতে উপকারিতা যাই থাকুক না কেন। কেননা এসব বিষয়ে কোরআনের অন্যান্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বিধি-বিধান উল্লেখ করে এবং মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদিসের মাঝে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করে বৈধ আর অবৈধের পন্থাপদ্ধতির বিস্তর বিশ্লেষণ করে মুসলিম উম্মাহকে সতর্ক করেছেন। এসব ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণে কোন কোন পদ্ধতি অবৈধ, তা সাব্যস্ত করা হয়েছে। কেননা এসব প্রথা-পদ্ধতিতে মানুষকে ধোঁকা-প্রতারণার বেড়াজালে আবদ্ধ করার, মানুষের ওপর অন্যায়-অনাচার করার আশঙ্কা রয়েছে। এই পদ্ধতি অবলম্বন করা হলে সমাজের একটি সীমিত গোষ্ঠী ফুলে-ফেঁপে কলাগাছ হওয়ার এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ কষ্টে-বিপদে নিপতিত হওয়ার তীব্র আশঙ্কা রয়েছে।

এই আলোচনার ফলাফল হলো এই, যে সমাজে কোরআন-সুন্নাহর অনুসরণে লেনদেন পরিচালিত হবে, সেখানে পুঁজিবাদের সামাজিক ব্যবস্থার মতো মানুষ মানুষকে লুণ্ঠন করবে না এবং সাম্যবাদী সমাজ ব্যবস্থার মতো নিজের স্বাভাবিক জীবনযাপন প্রণালী থেকে বঞ্চিতও হতে হবে না। এখানে যেহেতু দীর্ঘ আলোচনার সুযোগ নেই, কিন্তু সাধারণ ধারণা দেয়ার জন্য এতটুকু বলে দেয়াই যথেষ্ট যে, উম্মতের ফুকাহায়ে কেরাম কোরআন-সুন্নাহর বিধি-বিধানকে  ইলমে ফিকহ  (ইসলামী আইনশাস্ত্র)-এর যে বিশাল ভাণ্ডার একত্রিত করেছেন, তার মাত্র এক-চতুর্থাংশ  ইবাদত-বন্দেগি  সংক্রান্ত, আর অবশিষ্ট তিন-চতুর্থাংশই  লেনদেন সংক্রান্ত বিষয়ের আলোচনা।

কোরআনি জীবন ব্যবস্থার চতুর্থ বিষয় হলো আচার-আচরণ। এতে একদিকে ব্যক্তি জীবনের ওঠাবসা, চাল-চলন, খানাপিনা, পোশাক-আশাক, শয়ন-জাগরণের নিয়মনীতির কথা বলা হয়েছে; অপরদিকে মাতা-পিতা, ভাই-বোন, স্ত্রী-সন্তান, বন্ধু-বান্ধব, পাড়া-প্রতিবেশী এবং অন্যান্য মানুষের সঙ্গে মেলামেশা ও স্বাভাবিক আচার-আচণের কথাও বলা হয়েছে। এটিও মানব জীবনের একটি বিশাল অধ্যায়। এর বিস্তারিত বিবরণ সংবলিত বহু গ্রন্থাদিও আজকাল পাওয়া যায়। কিন্তু এর বুনিয়াদি নীতি রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর এই ভাষ্যে উল্লেখ করেছেন : প্রকৃত মুসলমান ওই ব্যক্তি, যার হাত ও মুখ থেকে অন্য মুসলমান নিরাপদ।এর সারমর্ম হলো, কোনো মানুষ তার নিজ সত্তা, তার কথা এবং তার কাজকর্ম কিংবা তার যে কোনো আচার-আচরণ দ্বারা অন্য কাউকে যেন কোনো কষ্ট না দেয়। ইসলামের তাবত সামাজিক রীতিনীতি এই মূল ভিত্তির ওপরই ভিত্তিশীল। এ কারণেই কোরআন-সুন্নাহ ওইসব ক্রিয়াকর্মের ওপর বিধি-নিধেষ আরোপ করেছে, যার দ্বারা অন্য কারও অন্যায়-কষ্টের সম্মুখীন হতে হয়। কোরআনে কারিমের ঘোষণা অনুযায়ী, একজন মানুষকে কষ্ট দেয়া সমগ্র মানবজাতিকে কষ্ট দেয়ার অন্তর্ভুক্ত।কোরআনের সুস্পষ্ট ঘোষণা হলো : কেউ যদি অন্য কাউকে হত্যা করে এবং তা অন্য কাউকে হত্যা করার কারণে কিংবা পৃথিবীতে অশান্তি বিস্তারের কারণে না হয়,তবে সে যেন সব মানুষকে হত্যা করল।(সূরা মায়িদাহ :আয়াত-৩২)কোরআনে কারিমের সূরা হুজুরাতে এসব সামাজিক আচার-আচরণ বেশ গুরুত্ব সহকারে বর্ণিত হয়েছে। যাতে গিবত, যুদ্ধ, ঝগড়া-বিবাদ, হাসি-তামাশা এবং তিরস্কার ইত্যাদি বিষয়ে কঠোর ভাষায় নিষিদ্ধতার কথা বলা হয়েছে।

কোরআনি জীবন ব্যবস্থার পঞ্চম এবং সর্বশেষ বিষয় হলো আখলাক-চরিত্র। এক্ষেত্রে মানবিক স্বভাবের ওইসব নাজুক বিষয় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে যেগুলো খুবই সূক্ষ্ম হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই তার বিশাল প্রভাব রয়েছে।
বাস্তবতা হলো, মানুষ তার বাহ্যিক জীবনে যা কিছু করে থাকে, অভ্যন্তরীণ জীবনে থাকে তার সম্পূর্ণ বিপরীত। সুতরাং কোরআনে কারিম মানুষের অভ্যন্তরীণ জীবন সংশোধনে বিস্তর বিধি-বিধান দিয়েছে। ইসলাম মানবজাতির জন্য নম্রতা, ত্যাগ, মানবতা, দানশীলতা, সহিষ্ণুতা, ধৈর্য ধারণের মতো উত্তম বিষয়গুলো অপরিহার্য করেছে। আর পরিহার করতে বলেছে অহঙ্কার, পরশ্রীকাতরতা, স্বার্থপরতা, রাগ, হিংসা-বিদ্বেষ, ঈর্ষা, শত্রুতা কপটতা, কার্পণ্যতা, কাপুরুষতার মতো নিন্দনীয় বিষয়গুলো। এসব নিন্দনীয় বিষয় যেহেতু একেবারেই নাজুক, সূক্ষ্ম, এগুলো শুধু দৃষ্টিভঙ্গির শিক্ষাজগত পাড়ি জমিয়ে অর্জন করা সম্ভব নয়, এজন্য কোরআনে কারিম বলে দিয়েছে যে, এ উদ্দেশ্যেই দুনিয়ার বুকে নবীরা প্রেরিত হয়েছেন, যেন তারা জীবনে এসব নিন্দনীয় দিক বাস্তবজীবনে পরিহার করে মানবজাতিকে হাতে-কলমে শিক্ষা দিতে সক্ষম হন এবং মানবগোষ্ঠীকে আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলে বিশ্ববুকে একটি আদর্শ সমাজ উপহার দেন। নবীদের পর তাঁদের সঠিক অনুসারীরা এই ফরজ দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এজন্য চারিত্রিক সংশোধনের জন্য মানবজাতির অপরিহার্য দায়িত্ব হলো, তারা যেন নবীদের সার্বিক অনুসারীদের সাহচর্য অবলম্বন করে নিজের জীবনকে আদর্শ জীবন হিসেবে গড়ে তুলতে সচেষ্ট হন। এ সম্পর্কে কোরআনে কারিমের ঘোষণা হলো :  হে ঈমানদারগণ! আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের সাহচর্য গ্রহণ গ্রহণ কর। (সূরা তাওবা : আয়াত-১১৯)

সুতরাং এই বিষয়টিকে বাস্তবজীবনে প্রতিফলনের উত্তম পদ্ধতি এটিই যে, মানুষ এমন লোকদের সাহচর্য অবলম্বন করবে, যারা আগে থেকেই তরবিয়্যতপ্রাপ্ত এবং তাদের আখলাক-চরিত্র পূতপবিত্র। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে কোরআনি জীবন ব্যবস্থার ওপর পরিপূর্ণ আমল করার তাওফিক দান করুন এবং এই জীবন ব্যবস্থার ইহ ও পরকালীন তাবত উপকৃতি থেকে উপবৃত্তি লাভের সুযোগ দান করুন। আমিন!

জাস্টিস আলামা মুফতি তাকী উসমানী

Related Post