ঈমান ও আমালে সালেহার ফসল হলো আখলাকে হাসানা তথা উত্তম চরিত্র। মানব মনের ক্ষেত্রে ঈমানের চারা রোপণ করে ইবাদত-বন্দেগি, রিয়াজত মুজাহাদার সার ও পানি দিলে চারার সঙ্গে একাকার হয়। সুলুকে তরিকতে কামাল বা পূর্ণতা প্রকাশ পায় উন্নত চরিত্রের মাধ্যমে, যার চরিত্র যত উন্নত ও মহত্ তিনি ততবেশি আধ্যাত্মিকতার উচ্চ মর্যাদায় সমাসীন। পবিত্র মাহে রমজানের সওগাত পেয়ে যদি জীবন সৌন্দর্যের বিভাকে প্রোজ্বল করা না যায় তাহলে আমরাই হব সবচেয়ে হতভাগ্য। কুতুবুল আলম শায়খুল ইসলাম হজরত হুসাইন আহমদ মাদানী (রহ.)-এর জীবনাদর্শ নিয়ে যত লেখক কলম ধরেছেন, সবাই তার উত্তম চরিত্রের উচ্চ প্রশংসা করেছেন। বহুজনের মন্তব্য তার বৈচিত্র্যময় জীবনের সর্বাপেক্ষা বড় বৈশিষ্ট্য হলো তার অনুপম চরিত্র মাধুর্য। শত্রু-মিত্র, আত্মীয়-অনাত্মীয় তার মতের ঘোরবিরোধী বা অনুসারী, ছোট-বড় বা সমসাময়িক সবাই এ কথা বলতে বাধ্য হয়েছেন তার চরিত্র অতি উন্নত ও মহান।
সেই উত্তম চরিত্রে টইটুম্বুর ব্যক্তিটি মাহে রমজান এলে কী করতেন। বলতে গেলে পাগল হয়ে যেতেন। সারা মাস ইতেকাফ করতেন। কিয়ামুল লাইল আদায় করতে করতে পা ফুলে যেত। বৃহত্তর সিলেটের মানুষ এর সাক্ষী। ইন্ডিয়া থেকে প্রায়ই ছুটে আসতেন দুনিয়াদার মানুষদের আখেরাতের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করে দেয়ার জন্য। পৃথিবীময় চষে বেড়িয়েছেন। আখলাকে হাসানা বা উন্নত নৈতিক চরিত্রের গুরুত্বের আরেকটি দিক হলো ‘ঈমান-আমালে সালেহা ব্যক্তি জীবনের সঙ্গে সম্পৃক্ত। কিন্তু উন্নত চরিত্রের প্রভাব ব্যক্তি জীবন হতে সামাজিক জীবনে বিস্তৃত হয়। তার আহ্বানে মানুষ সাড়া দেয়। গুণমুগ্ধ হয়ে পড়ে। দীন ইসলামের দাওয়াত তাবলিগ আউলিয়ায়ে কেরামের চরিত্র মাধুর্যের ফলেই ব্যাপকতা লাভ করেছে। বক্তৃতা বা লেখনীর জোরে সাময়িকভাবে মানুষ মুগ্ধ হলেও তার প্রভাব স্থায়ী হয় না। সে বন্য পশুর মতো পলায়ন করে।
পবিত্র রমজান তাকওয়া অর্জনের মাস। গোনাহ ক্ষমা হওয়ার মাস। আমল আখলাকে নিজেকে ভাসিয়ে পূতপবিত্র জীবনের সন্ধানে সংগ্রাম করার মাস। আল্লাহতায়ালা রোজাকে ফরজ করার কথা যে আয়াতে বলেছেন, তার শেষাংশে ‘উদ্দেশ্য’ বর্ণনা করেছেন ‘যাতে করে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পার’ (সূরা : বাকারা, আয়াত : ১৮৩)। তাকওয়া অর্জনের সংগ্রামে আবির্ভূত হয়ে সিয়াম সাধনায় মগ্ন হয়ে রমজানের প্রতিটি আমল হবে আলোকিত আমল। আল্লাহর নৈকট্য লাভের একান্ত উপায়। রহমত, মাকফিরাত ও নাজাতের এ মাসের ফজিলত বর্ণনা করে হাদিসে কুদসিতে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘রোজা হলো একমাত্র আমার জন্য আর আমিই তার প্রতিদান দেব’ (বোখারি ও মুসলিম)। বান্দাকে পবিত্র করার জন্য রমজান হলো সহজ পথ। এ পথ পরিগ্রহ করার জন্য আমাদের অবশ্যই পরিকল্পনা অনুযায়ী এগিয়ে যেতে হবে।
ব্যক্তি জীবনকে ও আখলাকে হাসানা তথা উত্তম চরিত্রে অধিষ্ঠিত করে তাকওয়া অর্জনের পথ পরিগ্রহ করতে হবে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে, ‘আপনি উত্তম চরিত্রে অধিষ্ঠিত’ (সূরা : আল কালাম, আয়াত : ৪)
অপর এক আয়াতে মহান আল্লাহতায়ালা উত্তম চরিত্রে অধিষ্ঠিত নবীকে অনুসরণ করার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। তাছাড়া মহানবী (সা.) নিজেও বলেছেন, ‘আমি উত্তম চরিত্রের বিধানকল্পেই প্রেরিত হয়েছি’ (মুয়াত্তা মালিক)।
তিরমিজি ও আবু দাউদে বর্ণিত হয়েছে, অর্থপূর্ণ ঈমানের অধিকারী ওই ব্যক্তি, যার চরিত্র সবার চেয়ে সুন্দর। এখন কথা হলো, উত্তম চরিত্র গঠনের জন্য একটি সুন্দর উপযোগী সময়ের দরকার। পবিত্র মাহে রমজান ছাড়া এর চেয়ে চমত্কার সময় আর নেই। পাপ-পঙ্কিলতাকে দূরে ঠেলে আদর্শ জীবন গঠনের সংগ্রামে আবির্ভূত হতে হবে। সারা মাসের ধারাবাহিক পরিশ্রমই এনে দিতে পারে সুনির্মল আদর্শের ফল্গুধারা। তাই মাহে রমজান পেয়ে অবশ্যই যেন আমরা ঝাঁপিয়ে পড়ি তাকওয়া অর্জনের জন্য। তাকওয়ার মাধ্যমেই উত্তম চরিত্রের পথ পরিগ্রহ করতে পারব। আল্লাহ আমাদের কবুল করুন।