Originally posted 2013-04-28 06:13:17.
আল্লাহ তা’আলা মানবজাতিকে সৃষ্টি করেছেন একমাত্র তার দাসত্ব করার জন্য। যে ব্যক্তি তার মুনিবের কাজ পূর্ণাঙ্গরূপে পালন করবে সে তার দাসত্বের পুরস্কার পাবে। মানব হিসেবে আমরা আল্লাহর গোলাম বা দাস। জীবনের সর্বক্ষেত্রে আল্লাহর হুকুম মেনে চলতে পারলেই আল্লাহ আমাদের ওপর সন্তুষ্ট থাকবেন। মানবজীবনে অনেকগুলো ধাপ বা স্তর অতিক্রম করতে হয়। যথা, শৈশবকাল, কৈশোরকাল, যৌবনকাল, পারিবারিক জীবন ইত্যাদি।
পারিবারিক জীবনে প্রবেশ করার মাধ্যমেই মনুষ্যত্বের পূর্ণতা ঘটে। স্ত্রী, সন্তান, মা-বাবা সকলেই পারিবারিক জীবনের সদস্য। সকলের সাথে সুসম্পর্ক ও অধিকার নিশ্চিত করার ওপরই পারিবারিক জীবনের সফলতা ও ব্যর্থতা নির্ভর করে। মহান সৃষ্টিকর্তার মর্জি মোতাবেক যারা এ জীবনটাকে পরিচালনা করতে পারেন তাদের জন্য রয়েছে ইহকালীন শান্তি ও পরকালীন মুক্তি। এক্ষেত্রে যার পদচারণা ও দর্শন আমাদেরকে অনুপ্রাণিত করে তিনি হচ্ছেন প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) তার গোটা জীবনের সকল ক্ষেত্রেই মানবজীবনের আদর্শ বিরাজমান। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে তার সম্পর্কে স্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছেন : তোমাদের জন্য রাসূল (সা.)-এর মাঝে রয়েছে উত্তম আদর্শ। (সূরা আহযাব: ২১ ) রাসূল (সা.) ২৫ বছর বয়সে পারিবারিক জীবনে প্রবেশ করে পৃথিবীতে পারিবারিক জীবনের মহান আদর্শ ব্যক্তি হিসেবে উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন। নিজে যেমন পরিবারিক জীবনে সকলের অধিকার বাস্তবায়ন করেছেন। তেমনি অন্যকে এ অধ্যায়ে সফলতা অর্জনে উদ্বুদ্ধ করেছেন।
পারিবারিক জীবন পরিচিতি : স্বামী-স্ত্রী, সন্তান-সন্ততি, পিতামাতা, ভাইবোন প্রভৃতি একান্নভুক্ত ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা সংক্ষিপ্ত মানব পরিমণ্ডলকে পরিবার বলে। সমাজ জীবনের প্রথম ভিত্তি ও বুনিয়াদ হলো পরিবার। মানবজীবনের যাত্রা থেকেই এই পরিবারসূত্রের শুভ সূচনা। আদি পিতা হযরত আদম (আ) ও আদি মাতা হযরত হাওয়া (আ)-এর মাধ্যমেই এর প্রথম বিকাশ। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে : হে আদম! তুমি ও তোমার স্ত্রী জান্নাতে বসবাস কর এবং যা ইচ্ছা আহার কর, কিন্তু এই গাছের কাছেও যেও না। তাহলে তোমরা জালিমদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে পড়বে। (সূরা আরাফ: ১৯) এতে স্পষ্ট প্রতিভাত হয় যে, মানবজীবনের যাত্রা শুরু হয়েছিল পারিবারিক সূত্রের পথ ধরেই। যে পরিবারের প্রথম বিন্যাস ছিল স্বামী-স্ত্রীর মাধ্যমে। তারপর তা ধীরে ধীরে বিস্তৃতি লাভ করেছে। পারিবারিক সম্পর্কের মাধ্যমেই যেহেতু একটি সুন্দর ও সুষ্ঠু জীবন গড়ে ওঠে, তাই পরিবারিক পবিত্রতা ও সুস্থতার ওপরই নির্ভর করে সমাজ, রাষ্ট্র ও বিশ্বময় মাবনজাতির পবিত্রতা ও সুস্থতা। রাসূল (সা)-এর পারিবারিক জীবন ছিল ন্যায় ও ইনসাফের ওপর প্রতিষ্ঠিত। নিম্নে রাসূল (সা)-এর পারিবারিক জীবনের কতিপয় দৃষ্টান্ত ও তার দর্শন সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
বিয়ের প্রয়োজনীয়তা: সন্দেহাতীতভাবে সত্য যে, বিয়ে একজন সুস্থ মানুষের প্রাকৃতিক প্রয়োজন। মানুষের স্বভাবগত পরিচ্ছন্নতা, মানসিক ভারসাম্যতা ও চারিত্রিক পবিত্রতার অন্যতম উপায় বিবাহ। এ কারণেই অনিন্দ্য সুখের বাসর জান্নাতে বসেও যখন হযরত আদম (আ.) অতৃপ্তিতে ভুগছিলেন তখনই আল্লাহ তা’আলা মা হাওয়া (আ)-কে সৃষ্টি করলেন তাঁর জীবন সঙ্গিনীরূপে। নর-নারীর যুগল বাঁধনে শুরু হলো মানবজীবন। রক্তমাংসে সৃষ্টি এই মানুষের মধ্যে যে প্রভূত যৌনুধা জমে ওঠে তা মহান আল্লাহর বিধান মোতাবেক সমাধান করাই কাম্য। আর তা হলো বিয়ে। আল কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে: হে মানব! তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে ভয় কর যিনি তোমাদেরকে এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন ও যিনি তা থেকে স্ত্রীকে সৃষ্টি করেছেন, যিনি তাদের দু’জন থেকে বহু নর-নারী ছড়িয়েছেন এবং আল্লাহকে ভয় কর যার নামে তোমরা একে অপরের কাছে যাচনা কর এবং সতর্ক থাক জাতি বন্ধন সম্পর্কে, নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের প্রতি তীকক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখেন। (সূরা নিসা-১) আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন: আর মহান আল্লাহর নিদর্শনাবলির মধ্যে রয়েছে যে, তিনি তোমাদের জন্যই তোমাদের থেকেই তোমাদের সঙ্গিনীদেরকে সৃষ্টি করেছেন যাতে তোমরা তাদের নিকট শান্তি পাও এবং তিনি সৃষ্টি করেছেন তোমাদের মধ্যে পরস্পরে ভালোবাসা ও দয়া। (সূরা রুম: ২১) রাসূল (সা) ইরশাদ করেছেন: হে যুবক সম্প্রদায়! তোমাদের মধ্যে যারা বিবাহ করতে সক্ষম তারা যেন বিয়ে করে নেয়। কারণ, বিয়ে দৃষ্টি অবনত রাখতে ও গুপ্তাঙ্গের হিফাযতে অধিক কার্যকর। আর যে ব্যক্তি বিবাহ করতে অক্ষম সে যেন রোজা রাখে। কেননা, রোজা তার যৌনক্ষমতাকে অবদমিত করে। (বুখারী ও মুসলিম)
বৈবাহিক জীবন: রাসূল (সা.)-এর বৈবাহিক জীবনে প্রথমে হযরত খাদিজা (রা)-কে এবং তার মৃত্যুর পর আরও ১০ জন স্ত্রী গ্রহণ করেন। একাধিক স্ত্রী থাকা সত্ত্বেও তাদের সকলের ন্যায্যপ্রাপ্য দেয়ার ব্যাপারে তিনি ছিলেন উদাহরণ। আল্লাহর ঘোষণা মোতাবেক: তাদের সাথে সুন্দর আচরণ কর। (সূরা নিসা) তিনি সকলকে সমানভাবে তাদের খাদ্য, বস্ত্র ও বাসস্থানের ব্যবস্থা করেন। এমনকি রাত কাটানোর ক্ষেত্রেও তিনি সর্বাধিক সচেতনতা অবলম্বন করেন। মৃত্যুর পূর্বেও রাসূল (সা.) সকলের অধিকার প্রদানে দৃঢ়বদ্ধ ছিলেন। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় যে, বার্ধক্যজনিত কারণে হযরত সাওদা (রা.) তার ভাগে থাকা রাতগুলো হযরত আয়েশা (রা)-কে প্রদান করত রাসূল (সা.)-কে তিনি এ ব্যাপারে অনুরোধ করেন। রাসূল (সা.) তার এ অনুরোধের ফলে হযরত আয়েশা (রা.)-কে তার নির্ধারিত রাতগুলো তাকে দিয়েছেন। কোন গনিমতের মাল এলে রাসূল (সা.) সমান ভাগে ভাগ করে স্ত্রীদের প্রদান করতেন। ন্যায় ও ইনসাফের ক্ষেত্রে সমান্যতম কোন ব্যবধান সৃষ্টি করতেন না।
পারিবারিক বন্ধন সূদৃঢ় করার উপায় : হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) কর্তৃক বর্ণিত- রাসূল (সা.) বলেছেন: দুনিয়ার সকল বস্তুই উপভোগের সামগ্রী। তন্মধ্যে ধার্মিক ও সতী-সাধ্বী স্ত্রী-ই শ্রেষ্ঠতম সম্পদ। (বুখারী) হযরত ইবনে আব্বাস (রা) কর্তৃক বর্ণিত রাসূল (সা) বলেছেন: চারটি সম্পদ যাকে দেয়া হয়েছে, ইহজীবন ও পরজীবনের সমস্ত প্রকার মঙ্গলই সে লাভ করেছে।
১. আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ হৃদয়।
২. আল্লাহর নামোচ্চারণে মুখের জিহবা।
৩. স্বাস্থ্যবান অটুট শরীর যা বিপদের মুখে ধৈর্যশীল ও স্থির থাকে।
৪. সতী-স্ত্রী যার দ্বারা স্বামীর কোন প্রকার আশঙ্কার কারণ না থাকে অথবা তার ধন-সম্পত্তির কোন ক্ষতি না হয়।
হযরত আবু হুরাইরা (রা.) কর্তৃক বর্ণিত রাসূল (সা.) বলেছেন: বিশ্বাসী মুসলমান যেন বিশ্বাসী নারীর সম্বন্ধে মনে কোন প্রকার বিদ্বেষভাব পোষণ না করে। যদি সে স্ত্রীর এক দোষের জন্য অসন্তুষ্ট হয়, তবে অন্য গুণের জন্য সে যেন সন্তুষ্ট থাকে। (মুসলিম শরীফ)
স্ত্রীর অধিকার প্রদান: রাসূল (সা.) তার স্ত্রীগণের ভরণ পোষণের ব্যবস্থাসহ স্ত্রীর শারীরিক চাহিদা পূরণ করার ক্ষেত্রে অধিক গুরুত্বারোপ করেছেন। এক্ষেত্রে স্বামী ব্যর্থ হলে আল্লাহর নিকট জবাবদিহি করতে হবে। মোহরানা আদায় করা ইসলামের অন্যতম একটি ফরজ কাজ। আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করেছেন: আর তোমরা স্ত্রীদের মোহরানা পরিশোধ কর। (সূরা নিসা: ৪) স্বামী এ সকল দায়িত্ব পূরণে ব্যর্থ হলে তার পারিবারিক জীবনে অশান্তি সৃষ্টি হবে। পৈতৃক সম্পত্তি ও স্বামীর মৃত্যুর পর তার সম্পদের ওয়ারিশ হিসেবে প্রাপ্য সম্পদ বণ্টন ও স্ত্রীর অধিকারের মধ্যে অন্যতম। নারীর প্রাপ্য অংশ কুরআনের বিধান মোতাবেক তার ভাইয়ের অর্ধেক। সুতরাং এক্ষেত্রে বর্তমান কতিপয় মানুষের মনগড়া বিধান যে নারী-পুরুষের সমান অংশ পাবে তা অগ্রহণীয়। কুরআন ও হাদীসে নারীর অধিকার বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে যে সকল নীতিমালা বর্ণিত হয়েছে তা যথার্থ। ভাই তার বোনের ন্যায্য হিস্যা দেবে। স্বামী তার স্ত্রীর প্রাপ্য অধিকার ও মোহরানা প্রদান করবে। পিতা তার কন্যার ন্যায্য অংশ প্রদান করবে। এ সকল দায়িত্বে যারা অবহেলা করে তারাই নারীদের সমান অধিকারের বুলি আওড়াচ্ছে। মূলত নারীদের পূর্ণ অধিকার ইসলামই দিয়েছে।
স্ত্রীদের সাথে সদ্ব্যবহার: স্ত্রীগণ পারিবারিক জীবনের অন্যতম অংশ। তাদের সাথে সদভাব বজায় রাখা ও সদাচরণ করা ঈমানের অংশ পারিবারিক শৃঙ্খলা বজায় রাখার অন্যতম উপায়। রাসূল (সা.) বলেছেন : পূর্ণাঙ্গ মুমিন সে যার চরিত্র ভালো এবং তার স্ত্রীর নিকট প্রিয়। হযরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (সা) নিজের স্ত্রীদের মাঝে রাত্রীবাস, ভরণ-পোষণের ব্যয় সমানভাবে ভাগ করে দিতেন এবং উহাতে ন্যায় বিচার করতেন। তিনি বলতেন, হে আল্লাহ! যা আমার আয়ত্তাধীন করেছেন আমি তা ন্যায্যভাবে ভাগ করে দিচ্ছি। আমার আয়ত্তে নয় এমন বিষয়ে আমাকে দোষী সাব্যস্ত কর না।
কন্যাসন্তানকে পাত্রস্থকরণ: কন্যাসন্তানকে জাহেলি যুগে বোঝাও সমস্যা মনে করা হতো। রাসূল (সা.) কন্যা সন্তানের প্রতিপালন ও তাদেরকে সুপাত্রস্থ করার লক্ষ গুরুত্ব প্রদান করেছেন। তিনি বলেছেন, যার নিকট তিনটি কন্যাসন্তান থাকবে তাদেরকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করলো ও সুপাত্রস্থ করলো কিয়ামতের দিন সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। রাসূল (সা.) নিজের ৪টি কন্যা সন্তান ছিল তাদেরকে ভাল পাত্র দেখে বিবাহ দিয়েছেন এবং বিবাহোত্তর সময়ে তাদের খোঁজখবর রাখতেন, তাদের সহায়তা করতেন। ভালো খাবার দাবার হলে কন্যা সন্তানদের নিকট পাঠিয়ে দিতেন। উত্তম আদর্শের এ উদাহরণ রাসূল (সা.) আমাদের জন্য রেখেছেন যাতে আমরা তা নিজেদের জীবনে গ্রহণ করতে পারি।
সন্তানকে শিক্ষা প্রদান: ভবিষ্যত প্রজন্মকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত না করলে জাতির উন্নতি হবে না। তাই সন্তানকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করা অতীব জরুরি। আল্লাহ তা’আলা তার রাসূল (সা.) কে বলেছেন: পড় তোমার প্রভূর নামে যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন। অন্যত্র এরশাদ হয়েছে : যারা জ্ঞানী ও যারা জ্ঞানী নয় তারা কি কখনো সমান হতে পারে? রাসূল (সা) বলেছেন : সকল মুসলমানের ওপর জ্ঞান অর্জন করা ফরজ। অতএব প্রতিটি পরিবারে প্রতিটি সন্তান যাতে সুশিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারে সেদিকে অতীব গুরুত্ব দিতেই তিনি ঘোষণা করেছেন : তোমরা তোমাদের সন্তানকে শিষ্টাচার শিক্ষা দাও, যখন বয়স সাত বছর হয় তাকে সালাতের আদেশ দাও, যখন তার বয়স ১০ বছর হয় তাকে সালাতের জন্য প্রহার করো এবং বিছানা আলাদা করে দাও।
মা-বাবার প্রতি সদাচরণ: পারিবারিক জীবনের সাথে ওতোপ্রোতভাবে জড়িত রয়েছে মা-বাবার অধিকার। আল্লাহ তা’আলা বলেছেন: পিতা-মাতার সাথে সদাচরণ কর। অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে: পিতার সন্তুষ্টিতে আল্লাহ সন্তুষ্টি পিতার অসন্তুষ্টিতে আল্লাহর অসন্তুষ্টি। পারিবারিক সুখ-শান্তির ক্ষেত্রে রাসূল (সা) ঐ বিষয়গুলোর প্রতি অত্যধিক গুরুত্বারোপ করেছেন।
বড়দের সম্মান ও ছোটদের স্নেহ করা: পারিবারিক জীবনে বড়দের শ্রদ্ধা করা ও ছোটদের স্নেহ করা অতীব গুরত্বপূর্ণ বিষয়। যে পরিবারে বড়কে শ্রদ্ধা ও ছোটকে স্নেহ দেখায় না সে পরিবারে শান্তি বিরাজ করতে পারে না। রাসূল (সা.) বলেছেন: যে বড়কে শ্রদ্ধা করে না ও ছোটকে স্নেহ করে না সে আমার উম্মত নয়। রাসূল (সা.) এর নিকট হযরত আনাস (রা.) ১০ বছর বয়সে খাদেম হিসেবে যোগদান করেন। তিনি এক হাদীসে উল্লেখ করেছেন যে, রাসূল (সা.) আমাকে কোন দিন বলেননি যে, তুমি এ কাজ কেন করলে বা এ কাজ কেন করলে না। এ ছিল রাসূল (সা.) এর আদর্শ। রাসূল (সা.)-এর পালক পুত্র যায়েদ ইবনে হারেছার ক্ষেত্রেও একই রকম বর্ণনা রয়েছে যে, তিনি ছোট বেলায় রাসূল (সা.) এর কাছে আসে তার জন্মদাতা পিতা-মাতার থেকেও তাকে অধিক ভালোবাসা দিয়েছেন।
হালাল রুজির ব্যবস্থা করা: রাসূল (সা) নিজে অপরের ক্ষেত্রে কাজ করেও হালাল রুজির ব্যবস্থা করেছেন। তিনি অন্যকে ও হালাল রুজি অর্জনে উপদেশ দিয়ে বলেছেন: হালাল রুজি অর্জন করা অন্যান্য ফরজ কাজের ন্যায় ফরজ। আল্লাহ তা’আলা বলেছেন : আর পিতার দায়িত্ব হলো নারীদের ন্যায়সঙ্গতভাবে খাবার ও ভূষণের ব্যবস্থা করা।
পর্দাপ্রথা চালু করা: পর্দা ইসলামের আদর্শের অন্যতম। পৃথিবীর যাবতীয় নারীঘটিত অপরাধের অন্যতম কারণ হচ্ছে পর্দাহীনতা। নারীদের ক্ষেত্রে পর্দার ব্যবস্থা করার ক্ষেত্রে আল্লাহর ঘোষণা হচ্ছে: মুমিন নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখে ও তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করে। তারা যা সাধারণত প্রকাশ থাকে তা ব্যতীত তাদের আভরণ প্রদর্শন না করে। তাদের গ্রীবা ও বক্ষদেশ যেন মাথার কাপড় দ্বারা আবৃত রাখে। (সূরা নূর: ৩১)
প্রত্যেকের হক আদায় করা: সন্তান তার মাতা-পিতার, পিতা-মাতা তার সন্তানের, স্বামী তার স্ত্রীর এবং স্ত্রী তার স্বামীর অধিকার আদায় করলে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় থাকবে। রাসূল (সা.) এর গোটা জীবন ছিল উম্মতের জন্য অনুকরণীয়। রাসূল (সা.) এর বিষয়ে আল্লাহর ঘোষণা হচ্ছে: নিশ্চয়ই আপনি মহান আর্দশের উপর প্রতিষ্ঠিত। (সূরা কলম: ৪) রাসূল (সা.) সর্বপ্রথম পারিবারিক জীবনে ইসলামের বিষয়াদি প্রতিষ্ঠা করেন। হযরত খাদিজা (রা.) এর সাথে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে পারিবারিক আদর্শ বাস্তবায়ন করার প্রতি সচেষ্ট হন। পরিবারের সকলের হক আদায়ে উদ্বুদ্ধ করেন। সন্তান হিসেবে পিতা-মাতার শ্রদ্ধা দেখাবে এবং পিতা-মাতা হিসেবে সন্তানকে উত্তম আদর্শ ও শিষ্টাচার শিক্ষা দেবেন। স্বামী তার স্ত্রীর অধিকার দেবেন এবং স্ত্রী তার স্বামীর খেদমতসহ তার অধিকার বাস্তবায়ন করবেন। রাসূল (সা) বলেছেন: তোমরা সকলেই দায়িত্বশীল। সকলকে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। (বুখারী ও মুসলিম)
পরিবারে সালাত প্রতিষ্ঠা করা: আল্লাহ তা’আলা মানুষের সে সকল বিধান ফরজ করেছেন তার মধ্যে সালাত অন্যতম। পরিবারের সকলের ক্ষেত্রে এ মহান দায়িত্ব যাতে আদায় করতে পারে সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা আবশ্যকীয়। আল্লাহ তা’আলার ঘোষণা হচ্ছে : তোমরা উত্তম জাতি, তোমাদেরকে সত, কাজের আদেশ ও অসত কাজের নিষেধ করার লক্ষে সৃষ্টি করা হয়েছে। অন্য আয়াতে আল্লাহ তা’আলা বলেছেন: তোমরা সালাত আদায় কর ও জাকাত প্রদান কর।
পরিশিষ্ট : রাসূল (সা.) ছিলেন পৃথিবীর সর্বোত্তম ব্যক্তি। তিনি নিজেই ঘোষণা করেছেন: আমি প্রেরিত হয়েছি উত্তম চরিত্রের পূর্ণতা দানকারী হয়ে। পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক সকল ক্ষেত্রে রাসূল (সা.) ছিলেন আমাদের জন্য অনুকরণের একমাত্র নমুনা। তার অনুকরণেই রয়েছে আমাদের নাজাতের মাধ্যম। আল্লাহ তা’আলা বলেছেন: বলুন! যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাস তাহলে আমার অনুকরণ কর, আল্লাহ তোমাদেরকে ভালোবাসবেন। পারিবারিক জীবন থেকেই সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনের সূচনা হয়। পারিবারিক জীবনে যারা সফলতা অর্জনে সক্ষম হবে তারা অন্য সকল স্তরেও কামিয়াব হতে পারবে। আল্লাহ তা’আলার মহিমান্বিত বাণী: আমি মানব ও জিন জাতি সৃষ্টি করেছি একমাত্র আমার এবাদত করার লক্ষে। এবাদতের একটি অন্যতম স্থান হচ্ছে পারিবারিক জীবন। এ জীবনের সকল ক্ষেত্রে রাসূলের আনুগত্য করা আমাদের আবশ্যকীয় কর্তব্য। আল্লাহ তা’আলা আমাদেরকে তার বিধান ও রাসূল (সা.) এর জীবন মোতাবেক চলার তাওফীক দান করুন। আমীন!