তিনি ছিলেন উম্মতের প্রতি অনুরাগী। ছোট-বড় সবাইকে সালাম দিতেন। কেউ তাকে আগে সালাম দেয়ার সুযোগ পেত না। সালামকালে মুখে মিষ্টি হাসির রেখা লেগে থাকত। আরবি প্রবাদ আছে, ‘আগে সালাম পরে কালাম’। এ ছাড়া কথা বলার আগে সালাম বিনিময় করার প্রতি রাসূল সা: সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছেন।সালামে রয়েছে অনেক ফজিলত। যে ব্যক্তি দৈনিক ২০ জনকে সালাম দেবে ওই দিন সে ইন্তেকাল করলে তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব। যে ব্যক্তি আগে সালাম দেবে তার জন্য জান্নাতে একটিআমাদের সমাজে যত অনাচার, অনিয়ম রয়েছে তার মূলে কাজ করছে অহঙ্কার, যা একজন মানুষের হায়াতকে ছোট করে দেয়। আর এই সালাম অহঙ্কারকে জ্বালিয়ে দেয়। সালামের দ্বারা দুই ব্যক্তির মধ্যে গভীর মোহাব্বত সৃষ্টি হয়। সালামের গুণে শত্র“র অন্তরে মিত্র ভাব সৃষ্টি হয়। কাউকে বন্ধুতে পরিণত করার মাধ্যম হলো তাকে বেশি বেশি সালাম দেয়া। সালামের বরকত যার মধ্যে প্রবেশ করবে সেই আল্লাহর কাছে প্রিয়পাত্র হিসেবে পরিণত হবে। এ জন্য সালাম দেয়ার ক্ষেত্রে রাসূল সা:-এর কাছে দলমত শ্রেণী বিভক্তি এক সমান ছিল। রাসূল সা: ছোটদের সালাম দিতেন যেন তারা সালাম শেখে। পরওয়ানা লেখা হবে। আগে সালাম দেয়ার দ্বারা অহঙ্কার (বড়ত্ব ভাব) দূর হয়।বড়রাও ছোটদের সালাম দেয়ার দ্বারা তাদের কিশোর মন সুন্নত শ্র“তিতে আপ্লুত হয়ে ওঠে। এ জন্য সালামের েেত্র মুসলমানদের মধ্যে কোনো ভেদাভেদ বা দেয়াল নেই।
অথচ আমাদের অবস্থা চৌদ্দ শ’ বছরের সেই সুন্নতি রাজ্য থেকে অনেক দূরে। অন্যান্য সুন্নত অনাস্থাশীলতার হাওয়া সালামকেও গ্রাস করে নিয়েছে। ফলে আমরা পিছিয়ে পড়েছি এ সুন্নত পালনের আগ্রহ উদ্দীপনা থেকে। এখন কেউ কাউকে তেমন সালাম দিতে চায় না। কাছে এলেও একটা ভাব নিয়ে সালামের অপোয় থাকে। অথচ তার নিজের প থেকে সালাম বিনিময় হলেই আগন্তুক সালাম দিয়ে মোসাফাহাও করতেন।অথবা আগন্তুক নিজেই সালাম দিতেন। কারণ সালামের প্রতি মানুষ ভীষণ দুর্বল। এ কারণে খুব সহজ উপায়ে কাউকে কাছে টানতে হলে সালামকে মাধ্যম বানাতে হয়। এভাবে এক দিন, দু’দিন করে সালামের বরকতে দূরবর্তী ব্যক্তিও অনায়াসে কাছে ভিড়ে যায় ।
আর বর্তমান যুগের মেজাজ বা স্টাইল হলো সালামের পরিবর্তে ‘হ্যালো’ বলে সম্বোধন করা। উপস্থিত কারো সাথে কথা বলার আগে সালাম না দিয়েও বলা হয় ‘হ্যালো’। সালাম দিলেও শুদ্ধতার প্রতি তেমন গুরুত্ব দেয়া হয় না। অনেকে স্টাইল করতে গিয়ে বলে ফেলে স্লামালেইকুম। সালাম বিকৃত ছাড়া এর কোনো অর্থ হয় না। ইচ্ছা করলে সহজেই শুদ্ধটি বলা যায়, ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ’।অথবা শেষ অংশসহ পুরোটা একত্রে বলা যায়, ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ ওয়াবারাকাতুহু’। এ শুদ্ধ সালাম কত শ্র“তিমধুর। শুদ্ধভাবে সালাম দেয়ার দ্বারা রাসূলের সুন্নতি বরকত সহজে অর্জন করা যায়। গৃহে প্রবেশ করার আগে সালাম দেয়া সুন্নত। চাই তা নিজের ঘর হোক বা অন্যের ঘর হোক। কোথাও সফরে বের হলে গন্তব্যে পৌঁছে আগে স্থানীয়দের সাথে সালামের মাধ্যমে কুশল বিনিময় করা ।
সালামের ব্যপারে ছোটদের বেশি বেশি তাকিদ দেয়া। স্বামী স্ত্রীকে সালাম দেবেন। ভাই বোনকে সালাম দেবেন। ছোট বড়কে সালাম দেবে। বক্তা ভাষণ দেয়ার আগে শ্রোতাকে সালাম দেবেন। ক্রেতা-বিক্রেতাকে সালাম দেবেন। ছাত্ররা শিককে সালাম দেবে। সন্তান মা-বাবাকে সালাম দেবে। শাগরেদ উস্তাদকে সালাম দেবেন। সর্বোপরি বৃদ্ধাদের সবাই সালাম দেবেন। সালাম মানবাত্মায় গভীর মোহাব্বত তৈরিতে অনেক বড় সহায়ক। সালাম দেয়ার দ্বারা অন্তরের কালি দূূর হয়।সালাম মানুষের ময়দানে সম্প্রীতি দুর্গ তৈরি করে। এ জন্য একনিষ্ঠভাবে তাৎপর্যপূর্ণ সালামের এই সুন্নতকে জিন্দা করার ব্যাপারে যত্নশীল হওয়া প্রয়োজন ।