সম্মানিত সাহাবী সামুরা ইব্ন জুনদুব
রাদি আল্লাহু আনহু সম্পর্কে উত্থাপিত সংশয়সমূহ
ভূমিকা:-
মহান সাহাবী সামুরা ইব্ন জুনদুব রাদি আল্লাহু আনহুর ব্যাপারে উত্থাপিত সংশয়সমূহ পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে আমরা একে দুটি অনুচ্ছেদে আলোচনা করব:-
প্রথম অনুচ্ছেদ: চরিত্রগত সংশয়, এটি নিম্নোক্ত বিষয়গুলো অর্ন্তভুক্ত করবে:
ক) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে তাঁর আচরণ সংশ্লিষ্ট সংশয়।
খ) মানুষের সাথে তাঁর আচরণ সংশ্লিষ্ট সংশয়।
গ) নিজের প্রতি তাঁর আচরণ সংশ্লিষ্ট সংশয়।
দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ: বিচ্ছিন্ন সংশয়, এটি পূর্বোক্ত সংশয়সমূহের ফলাফল ও উপসংহার স্বরূপ।
আমরা এসব সংশয় নিরসনে সবটুকু শ্রম ও প্রচেষ্টা ব্যয় করব, যাতে পাঠকগণ অবহিত হতে পারেন যে, এসব সংশয়ের কোন ভিত্তি নেই বা বাস্তবতার সাথে এর সামান্যতম কোন সম্পর্কও নেই।
মহান আল্লাহই একাজে তাওফীক, সাহায্য ও পূর্ণতা প্রদানের একমাত্র মালিক, তিনি আমার জন্য যথেষ্ট এবং উত্তম প্রতিপালনকারী।
অতএব চলুন সংশয়গুলো নিয়ে আলোচনা করি।
প্রথম অনুচ্ছেদ: চরিত্রগত সংশয়
ক- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে সামুরার আচরণ সংশ্লিষ্ট সংশয়।
এ প্রসংগে একটি সংশয় রয়েছে:
সামুরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিরোধিতা করেছিলেন
সামুরা রাদি আল্লাহু আনহু সম্পর্কে সংশয় সৃষ্টিকারীরা প্রমাণ পেশ করেন যে, ইমাম আবু দাউদ (রহ) তাঁর সুনানে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমাদেরকে হাদীস বর্ণনা করেছেন সোলাইমান ইব্ন দাউদ আল আতকী, আমাদেরকে হাদীস বর্ণনা করেছেন, হাম্মাদ আমাদেরকে হাদীস বর্ণনা করেছেন, আবু ইয়াইনার মুক্ত গোলাম ওয়াসেল, তিনি বলেন, আমি আবু জাফর মুহাম্মদ ইব্ন আলীকে সামুরা ইব্ন জুনদুব সম্পর্কে আলোচনা করতে শুনেছি, এক আনসারীর প্রাচীরের মধ্যে সামুরার একটি খেজুর বাগান ছিল, তিনি বলেন, ঐ ব্যক্তির সাথে তাঁর পরিবারও ছিল। তিনি বলেন, সামুরা তাঁর খেজুরের বাগানে প্রবেশ করতেন যা ঐ ব্যক্তিকে কষ্ট দিত এমনকি এটি তাঁর জন্য র্দুভোগ হয়ে দাঁড়ায়। তিনি সামুরাকে ঐ অংশটুকু বিক্রয় করতে বললে তিনি অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করেন, অতঃপর তিনি তাঁর থেকে উক্ত ভূমি বদলী করার আবেদন জানান, কিন্তু তাও তিনি নাকচ করে দেন। অগত্যা ঐ ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে আগমন করে ঘটনা খুলে বলেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সামুরাকে জমিটি বিক্রয় করে দিতে বলেন, কিন্তু তিনি তাতেও অসম্মতি প্রকাশ করেন। এরপর তিনি তা বদলী করার প্রস্তাব দিলে তাও নাকচ করে দেন। অতঃপর তিনি বললেন, তবে তা তাকে দান করে দাও এর বিনিময়ে তুমি এই এই পাবে অর্থাৎ দানের প্রতি উৎসাহ প্রদান করলেন। কিন্তু তিনি তাতেও অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে বললেন, তুমি অনিষ্টকারী এবং আনসারী ব্যক্তিকে বললেন, যাও ও তার খেজুর গাছ উপড়ে ফেল।
শায়খ আলবানী (রহ.) এই হাদীস বিশ্লেষণ করতে যেয়ে বলেন, হাদীসটি দুর্বল।
হাদীসটি দুর্বল হওয়ার কারণ আবু জাফর বাকের ও সামুরা ইব্ন জুনদুব রাদি আল্লাহু আনহুর মধ্যকার বর্ণনাসূত্রের কর্তন বা বিচ্ছিন্নতা।
হাফিজ ইব্ন হাজর ইমাম বাকেরের জীবনী বর্ণনা করতে যেয়ে উল্লেখ করেছেন, তার জন্ম সন নিয়ে মতভেদ রয়েছে। অতঃপর তিনি অগ্রাধিকার প্রদান করে বলেন, তা ৫৬ হি: থেকে ৬০ হিজরীর মধ্যে।
ইতিপূর্বে আমরা জেনেছি, সামুরা রাদি আল্লাহু আনহু ইন্তিকাল করেছেন ৫৮ হিজরী থেকে ৬০ হিজরীর মধ্যে। (সঠিকভাবে তাঁর মৃত্যুসন নির্ধারণের ক্ষেত্রে আলিমগণের মতপার্থক্যের ভিত্তিতে এটিই বলা যায়)। যা থেকে আমাদের কাছে প্রমাণিত হয় আবু জাফর সরাসরি সামুরা থেকে হাদীস বর্ণনা করতে পারেন না। কেননা আবশ্যকীয়ভাবে আবু জাফরের জন্ম ৫৬ হিজরীর পূর্বে নয় আর সামুরার মৃত্যু ৬০ হিজরীর পরে নয়। যদি এই সাল ধরা হয় তবে সামুরার ইন্তিকালের সময় আবু জাফরের বয়স ৪ বছর। অতএব তিনি কিভাবে তাঁর থেকে হাদীস বর্ণনা করবেন?
এ কারণে হাফিজ ইব্ন হাজর বলেন, বলা হয়েছে, সাহাবী বলতে যাঁদেরকে বুঝায় তাঁদের মধ্য থেকে ইব্ন আব্বাস, জাবির ইব্ন আব্দুল্লাহ ও আব্দুল্লাহ ইব্ন জাফর ইব্ন আবু তালিব ছাড়া অন্য কারও থেকে মুহাম্মদ অর্থাৎ আবু জাফর বাকেরের বর্ণনা “মুরসাল” হিসেবে গণ্য।
“আওনুল মা’বুদ” গ্রন্থকার মানজারী থেকে সামুরা রাদি আল্লাহু আনহুর এই হাদীস বিশ্লেষণের উপর তাঁর মন্তব্য বর্ণনা করেছেন, বাকের কর্তৃক সামুরা থেকে হাদীস শোনার বিষয়টি বিতর্কিত। তাঁর জন্ম ও সামুরার মৃত্যু সাল সম্পর্কে যে বর্ণনা পাওয়া যায় তাতে প্রমাণিত হয় তাঁর থেকে বাকেরের হাদীস শ্রবণ অসম্ভব। এ সম্পর্কে বলা হয়েছে, তাঁর থেকে শ্রবণ করা সম্ভব নয়, আল্লাহই ভাল জানেন।
এটি প্রথম কথা
দ্বিতীয় কথা হল, যদি হাদীসের বিশুদ্ধতা সাব্যস্ত হয়ও তবে তা ফিক্হী বিধানের বিপরীত। সামুরার এ ধারণা ছিল, নিজের খেজুর বাগানে যে কোন সময় প্রবেশের অধিকার তাঁর রয়েছে। তিনি খেজুর বাগান বিক্রয়ের প্রস্তাব নাকচ করে দেন। কেননা এটি তাঁর অধিকারভুক্ত অন্য কেউ তা বিক্রয় করতে বাধ্য করতে পারে না। এটিই তাঁর বদ্ধমূল ধারণা ছিল ততক্ষণ পর্যন্ত যতক্ষণ না রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে জানালেন যে তোমার এই কাজে আনসারীর ক্ষতি হচ্ছে যার কোন অধিকার তোমার নেই হে সামুরা!
এটিই হাদীসের মূল প্রতিপাদ্য যদি এটি সহীহ হয়, এর চেয়ে বেশি কিছু হাদীসটি ধারণ করে না।
অতঃপর এটিও বলা যায় যে, সামুরা এ ধারণা করেছিলেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ বাণী অকাট্য নির্দেশ স্বরূপ নয় বরং তা সুপারিশ স্বরূপ। আর তিনি সে সুপারিশ গ্রহণ করতে বাধ্য নয়। যেমনটি বর্ণিত হয়েছে হাদীসে বারীরায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে তাঁর পূর্বের স্বামী মুগাইয়াসের কাছে ফিরে যাওয়ার জন্য সুপারিশ করলে তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি আমাকে নির্দেশ দিচ্ছেন? তিনি বললেন, না, বরং আমি সুপারিশ করছি। তখন তিনি বললেন, তার কাছে আমার আর প্রয়োজন নেই।
আলিমগণের নিকট স্বীকৃত যে, শাসকের সুপারিশ বিবাদ মিমাংসা ও ক্ষতি দূর করার জন্য, এটি বাধ্যতামূলক নির্দেশ নয়। যদি কেউ তা অমান্য করে তবে তাকে তিরস্কারও করা যাবে না বা তার উপর রাগান্বিত হওয়া যাবে না, তাই সুপারিশকারীর মর্যাদা যত বেশিই হোক। সামুরা রাদি আল্লাহু আনহু এটাই ধারণা করেছিলেন, নতুবা তিনি তিরস্কার ও নিন্দার মুখমুখী হতেন, যদি এখানে ক্ষতিকারক কিছু থাকত। এ কারণে সামুরা রাদি আল্লাহু আনহু যখন অবগত হলেন যে তাঁর এ কর্মকা-ে আনসারী সাহাবীর ক্ষতি হচ্ছে এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আনসারীকে তাঁর খেজুর গাছ উপড়ে ফেলার নির্দেশ দিলেন, তখন সামুরা রাদি আল্লাহু আনহু নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হুকুমের কোন বিরোধিতা করেননি, বরং চুপ ছিলেন, আর এটিই মুমিনের পদ্ধতি।
কেউ কেউ এ সম্পর্কে উল্লেখ করেছেন, সামুরা রাদি আল্লাহু আনহু আনসারীর বাড়ীতে হঠাৎ হঠাৎ প্রবেশ করতেন তার পরিবারকে দেখার জন্য এটি এক চরম মিথ্যা ও অপবাদ। তিনি এ থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত।
খ) মানুষের সাথে তাঁর আচরণ সংশ্লিষ্ট সংশয়,
এখানে একটি সংশয় রয়েছে
সামুরা অনেক মানুষ হত্যা করেছিলেন
নিম্নোক্ত বর্ণনাগুলো এটি প্রমাণ করে:-
ক) তাবারী হিজরী ৫ম সনের ঘটনাপ্রবাহে মুহাম্মদ ইব্ন সালীম থেকে বর্ণনা করেন তিনি বলেন, আমি আনাস ইব্ন সীরীনকে জিজ্ঞেস করলাম, সামুরা কি কাউকে হত্যা করেছিল? তিনি বললেন, সামুরা কত জনকে হত্যা করেছিল তাদের কি গণনা করা সম্ভব? তাঁকে যিয়াদ বসরার শাসক নিযুক্ত করেন ও কুফায় আসেন। তখন তিনি আট হাজার মানুষ হত্যা করেন!! যিয়াদ তাকে বললেন, তুমি কি এ আংশকা কর না যে, কোন নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করেছ? তিনি বললেন, আমি যদি তাদের মত কাউকে হত্যা না করি তবে কিসের ভয় করব? অথবা তিনি যেমন বলেছিলেন।
খ) আবু সাওয়ার আদয়ী থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, সামুরা আমার গোত্রের সাতচল্লিশ ব্যক্তিকে একদিনে হত্যা করে যারা কুরআন সংকলন করেছিলেন!
গ) আউফ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, সামুরা মদীনা থেকে বের হয়ে যখন বনী আসাদ গোত্রের কাছে এলেন তখন কতিপয় লোক বের হলেন। ঘোড়ার বহরের অগ্রভাগ আকস্মিক এসে পড়ায় গোত্রের একজন তার কবলে পড়ে। তারা তাকে সন্দেহ করে তীর নিক্ষেপ করে। অতঃপর বহর চলতে থাকে ও এক পর্যায়ে সামুরা আগমন করেন। তখন ঐ ব্যক্তি তার রক্তের মধ্যে হাবুডুবু খাচ্ছে, তিনি বললেন, তার কী হয়েছে? তাঁকে বলা হল, আমীরের বহরের অগ্রভাগ তাকে হত্যা করেছে। তিনি বললেন, যখন শুনবে আমরা বহরে আরোহণ করেছি তখন আমাদের বর্শার ফলার ভয় কর।
ঘ) তারিখে তাবারীতে আরও উল্লেখ আছে, মুসলিম আল-আজলী বলেন, আমি মসজিদের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম। এক ব্যক্তি সামুরার কাছে আগমন করে তার সম্পদের যাকাত আদায় করল, অতঃপর মসজিদে প্রবেশ করে নামায আদায় করতে লাগলেন। এমতাবস্থায় এক ব্যক্তি আগমন করে তার ঘাড়ে আঘাত করে যাতে তার মাথা থেকে দেহ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এমনকি তার মস্তক মসজিদে থাকে এবং দেহ বাইরে চলে যায়। এমন সময় আবু বকরাহ তার পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন তখন তিনি বললেন, আল্লাহ বলেন, “ঐ ব্যক্তি সফল হয়েছে যে পবিত্রতা অর্জন করেছে, তাঁর প্রভূর নাম স্মরণ করেছে ও নামায আদায় করেছে।” সামুরাকে প্রবল শৈত্য রোগে (ধনুষ্টংকার) আক্রমণ করে এবং নিকৃষ্টভাবে মৃত্যুবরণ করে। তিনি বলেন, আমি তাকে প্রত্যক্ষ করেছি, তিনি অনেক মানুষের মধ্যে আগমন করলেন এবং একজনকে বললেন, তোমার দ্বীন কী? সে বলল, আমি স্বাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই, তিনি এক তাঁর কোন শরীক নেই এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর বান্দা ও রাসূল। আমি হারুরীদের থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত। অতঃপর তিনি তার দিকে আগমন করলেন এবং তাকে হত্যা করলেন। এভাবে তিনি বিশোর্ধ মানুষকে হত্যা করেন।
সামুরা ইব্ন জুনদুব রাদি আল্লাহু আনহুর প্রতি সম্পৃক্ত বিভিন্ন বর্ণনার সারসংক্ষেপ এই যে, তিনি রক্ত পিপাসু ও খুনে আসক্ত ছিলেন। ছোট, বড় কাউকে হত্যা করতে দ্বিধা করতেন না, এটিই সংশয়ের মূলকথা।
দুভাবে আমরা এ সংশয়ের উত্তর প্রদান করব:
১. প্রতিটি বর্ণনার স্ব স্ব পরিসরের উপর বিস্তারিত উত্তর।
২. সংশয়টির উপর পূর্ণাঙ্গভাবে সামগ্রিক উত্তর।
প্রতিটি বর্ণনার উপর বিস্তারিত উত্তর ক্ষেত্রে আমরা বলব ঃ
ক) প্রথম বর্ণনা:
মুহাম্মদ ইব্ন সালীম বলেন, আমি আনাস ইব্ন সীরীনকে জিজ্ঞেস করলাম, সামুরা ইব্ন জুনদুব কি কাউকে হত্যা করেছিল ?……….
আমরা বলব,
১- এই বর্ণনাটি তাবারী তার ইতিহাস গ্রন্থে এভাবে বর্ণনা করেছেন যে, উমর আমার কাছে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, ইসহাক ইব্ন ইদরীস আমাকে বর্ণনা করেছেন, তিনি মুহাম্মদ ইব্ন সালীম থেকে বর্ণনা করেন…………
এই বর্ণনাসূত্রে বর্ণনাকারী ইসহাক ইব্ন ইদরীসের অবস্থার কারণে জাল না হলেও জালের কাছাকাছি। প্রকৃতপক্ষে (আল্লাহই অধিক জ্ঞাত) তিনি ছিলেন, আসওয়ারী বসরী আবু ইয়াকুব তার থেকে তাবারীর ওস্তাদ উমর ইব্ন শাবহ এই সনদে বর্ণনা করেছেন।
হাফেজ ইব্ন হাজর বলেন, ইব্ন মাদাঈনী তাকে পরিত্যাগ করেছেন, আবু যারআহ বলেন, দুর্বল।
বুখারী বলেন, মানুষ তাকে পরিত্যাগ করেছে।
দারু কুতনী বলেন, হাদীসের মুনকার বর্ণনাকারী।
ইব্ন মুঈন বলেন, মিথ্যাবাদী, জাল হাদীস রচয়িতা।
আবু হাতিম বলেন, হাদীসের দুর্বল বর্ণনাকারী।
ইব্ন হাব্বান বলেন, সে হাদীস চুরি করত।
মুহাম্মদ ইব্ন আল মুছান্না বলেন, ভিত্তিহীন বর্ণনাকারী।
নাসায়ী বলেন, আমার দৃষ্টিভঙ্গি সে মাতরুক (পরিত্যক্ত)।
ইব্ন আদী বলেন, তাঁর বর্ণিত অনেক হাদীস রয়েছে। সে দুর্বলের অধিক নিকটবর্তী।
মুহাম্মদ ইব্ন সালীম যার থেকে ইসহাক ইব্ন ইদরীস বর্ণনা করেছেন, তার সম্পর্কে আমরা কিছু জানি না।
২- যদি বর্ণনাটি শুদ্ধ হয়ও তবে সেক্ষেত্রে বলব, সামুরা রাদি আল্লাহু আনহু নিশ্চিত ছিলেন যে, তিনি নির্দোষ কাউকে হত্যা করেননি। বরং তিনি যাদেরকে হত্যা করেছেন তাদের হত্যা করার অধিকার তার ছিল। এর বর্ণনা সামগ্রিক উত্তরে আলোচিত হবে।
৩- আমাদের ধারণা মতে (আল্লাহই ভাল জানেন) বর্ণনায় উল্লেখিত সংখ্যা অনেক বেশি করে দেখানো হয়েছে।
খ) দ্বিতীয় বর্ণনা:
আবু সাওয়ার আদয়ী থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, সামুরা আমার গোত্রের ……….
১- এই বর্ণনাটি তাবারী তার ইতিহাসে বর্ণনা করে বলেন, উমর আমার কাছে বর্ণনা করেছে যে, মুসা ইব্ন কায়েস আমাদের কাছে আশআস হাদ্দানী থেকে তিনি আবু সিওয়ার আদয়ী থেকে বর্ণনা করেছেন।
এই বর্ণনা পরম্পরার দিকে দৃষ্টিনিবন্ধ করলে প্রতীয়মান হয় যে, এর সনদ উত্তম অর্থাৎ এটি গ্রহণযোগ্য। যাকে বলা যায় জ্ঞানগত আমানত। আমরা আলহামদুলিল্লাহ দলীল প্রমাণ পেলে তার উপর নির্ভর করি, নিজেদের পক্ষ থেকে কারও উপর মিথ্যার অপবাদ দেই না বা প্রকৃত বাস্তবতা থেকে পালিয়ে যাই না এটা প্রথম কথা।
২- হাদীস শাস্ত্রের শিল্প অনুযায়ী বর্ণনাটি গৃহীত হয়ে থাকলে সামুরার এ কাজের উত্তর কি?
আমরা বলব, এর জবাব সামগ্রিক উত্তরে আসবে প্রতিটি বর্ণনার স্বতন্ত্র আলোচনা শেষে। যা থেকে পাঠক জানতে পারবেন, সামুরা রাদি আল্লাহু আনহু যাদেরকে হত্যা করেছেন তাঁরা আসলেই হত্যার উপযুক্ত ছিল।
গ) তৃতীয় বর্ণনা:
আউফ থেকে বর্ণিত, সামুরা মদীনা থেকে আগমন করেন…..
এই বর্ণনাটি তাবারী তাঁর ইতিহাসে বর্ণনা করে বলেন, উমর আমার কাছে বর্ণনা করেছেন যে, আলী ইব্ন মুহাম্মদ আমার কাছে জাফর আস্সাদফী থেকে তিনি আউফ থেকে বর্ণনা করেছেন।
উত্তর ঃ
১। এই বর্ণনাটি নিঃসন্দেহে দুর্বল, এর কারণ:
ক) ইরসাল এই বর্ণনাসূত্রে বর্ণিত আউফ ছিলেন আউফ ইব্ন আবু জামিলা আরাবী। তার জন্ম সনের দিকে লক্ষ্য করলে আমরা দেখতে পাই তার পক্ষে সামুরা রাদি আল্লাহু আনহু থেকে সরাসরি বর্ণনা করা সম্ভব নয়। ইব্ন হাব্বান আউফের জন্ম সন সম্পর্কে বলেন, তার জন্ম হয়েছিল ৫৯ হিজরীতে। আর আমরা ইতিপূর্বে অবগত হয়েছি সামুরা রাদি আল্লাহু আনহুর মৃত্যু হয়েছে ৫৮-৬০ হিজরীর মধ্যে। অতএব অন্য কোন বর্ণনাকারীর মধ্যস্ততা ছাড়া আউফ সামুরা থেকে বর্ণনা করতে পারেন না। সেই মধ্যবর্তী বর্ণনাকারী সনদ থেকে পতিত হয়েছে। মহান আল্লাহই এই বর্ণনার অধিকারী সম্পর্কে অধিকজ্ঞাত রয়েছেন। এই কারণটি উক্ত বর্ণনার বিশুদ্ধতা সাব্যস্ত হওয়া থেকে বের করে দেয়।
খ) জাফর সাদফীর যিনি আউফ থেকে বর্ণনা করেছেন, অথচ তার কোন জীবনী আমরা কোথাও খুঁজে পাইনি।
গ) বর্ণনার এক সূত্র আলী ইব্ন মুহাম্মদ। তিনি হলেন, ইব্ন আব্দুল্লাহ আবু সাইফ আবুল হাসান মাদঈনী ইখবারী। তাঁর রচিত অনেক গ্রন্থ রয়েছে। অনেকে তার প্রশংসা করেছেন। যেমন যাহাবী, তিনি বলেন, যথার্থ সংরক্ষণকারী, সত্যবাদী………তিনি যুদ্ধ বিগ্রহ, আরবের ইতিহাস ও বংশবিদ্যা জানার ক্ষেত্রে এক আশ্চর্য ব্যক্তি ছিলেন, তাঁর ঊর্ধ্বতন বর্ণনাকারী তার কাছে যা বর্ণনা করতেন তার সত্যায়নকারী।
তার বিশ্বস্ততা ইব্ন মুঈন থেকে বর্ণিত হয়েছে।
তার ব্যাপারে কেউ কেউ মন্তব্য করেছেন, যেমন ইব্ন আদী বলেন, তিনি হাদীসে শক্তিশালী নন। ইব্ন জাওযী তাকে তাঁর কিতাবুদ দুআফা গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন।
একারণে তারিখে তাবারীর সহীহ ও দুর্বল বর্ণনা বিশ্লেষণকারী আল বারযানজী এ বর্ণনাটিকে দুর্বল বলেছেন।
২- দ্বীনের প্রশ্নের বাইরে মানুষের সাধারণ বিবেক কি এটা সমর্থন করে যে, একজন সাহাবী সম্পর্কে অপবাদ দেয়া হবে, তাকে নিন্দা করা হবে এবং এ জাতীয় বর্ণনা ও সনদের মাধ্যমে সাধারণ ও বিশেষক্ষেত্রে তাঁর ন্যায়পরায়ণতা কর্তন করা হবে।
সাহাবীগণের সম্পর্কে বিশেষ কোন তথ্য প্রদান করতে হলে সেক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত নীতি হচ্ছে, বর্ণনাটি শুদ্ধতা ও গ্রহণযোগ্যতার দিক থেকে উচ্চ পর্যায়ের হতে হবে। অতএব এ জাতীয় বর্ণনা বা সনদের ভিত্তিতে আমরা পবিত্র কুরআন ও সহীহ সুন্নাহে এই প্রজন্মের উদ্দেশ্যে যে প্রশংসা এসেছে তার বিন্দুমাত্র কর্তন করতে পারি না বা বাদ দিতে পারি না।
এটি কোন প্রকার ন্যায়পরায়ণতা নয়।
অতঃপর বলা যায় কোন কোন সময় এই সাহাবী থেকে ঐ সব মানুষ অথবা অন্যান্যদেও ক্ষেত্রে যদি এ জাতীয় আচরণ তথা শক্ত কথা, রূঢ় ব্যবহার ইত্যাদি প্রকাশ পেয়ে থাকে সেটা পেতে পারে। কিন্তু এর অর্থ কি এই যে সে বর্ণনাটি আসবে নিরপরাধ ব্যক্তিকে হত্যা, তাও আবার বিকৃত পদ্ধতিতে, ঠা-া মাথায় এবং তা একজন সম্মানিত সাহাবীর সাথে সম্পৃক্ত করা হবে এসব দুর্বল বর্ণনার ভিত্তিতে? নিঃসন্দেহে এটি একটি বড় জুলম। এ বর্ণনার ভিত্তিতে যদি কিছু প্রমাণিত হয় তা হল, যে এটি বর্ণনা করেছে তার কুউদ্দেশ্য ও খারাপ ইচ্ছা। আমরা আল্লাহর কাছে এ থেকে পরিত্রাণ চাই।
ঘ) চতুর্থ বর্ণনা ঃ
মুসলিম আল আজলী বলেন, আমি একদা মসজিদের পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলাম এক ব্যক্তি সামুরার কাছে এসে তার সম্পদের যাকাত……………।
আমরা বলব:
১. তাবারী এই বর্ণনাটি তার ইতিহাস গ্রন্থে উল্লেখ করে বলেন, উমর আমাকে বর্ণনা করেছেন যে, মুসা ইব্ন ইসমাঈল আমাকে বর্ণনা করেছেন যে, সোলাইমান ইব্ন মুসলিম আল-আজমী আমাকে বর্ণনা করেছেন যে, আমি আমার পিতাকে বলতে শুনেছি….. এই কাহিনীর বর্ণনা পরম্পরায় দৃষ্টিপাত করলে আমরা নিম্নোক্ত বিষয়গুলো পাই:
ক. সোলাইমান ইব্ন মুসলিম আল আজলী তিনি ছিলেন আবুল মাআলা খিযায়ী, আকিলী বলেন, আমার দৃষ্টিভঙ্গিতে সে অজ্ঞাত। সোলাইমান তাইমী থেকে বর্ণিত, তিনি নাফে থেকে বর্ণনা করেন, তার হাদীসের উপর আমল করা যাবে না।
ইব্ন আদী বলেন, এই সোলাইমান ইব্ন মুসলিম অল্প কিছু হাদীস বর্ণনা করেছেন, সে মূলত অজ্ঞাত বর্ণনাকারী। পূর্ববর্তী কোন আলিমকে তার সম্পর্কে কোন মন্তব্য করতে দেখিনি। তবে আমি তার সম্পর্কে কিছু বলা ভাল মনে করছি। তার বর্ণনার তুলনায় তার হাদীসগুলো অনসুরণযোগ্য নয়।
ইব্ন হাব্বান বলেন, সোলাইমান ইব্ন মুসলিম এমন এক শায়খ যিনি সোলাইমান আত্ তায়মী থেকে বর্ণনা করেছেন যা তার হাদীস নয়। বিশেষজ্ঞদের পদ্ধতিতে নিরীক্ষা করে ছাড়া তার বর্ণিত হাদীস বর্ণনা বৈধ নয়।
ইব্ন আবু হাতিম তার নাম উল্লেখ করেছেন কিন্তু তার ব্যাপারে জারহ ওয়া তাদীল উল্লেখ করেননি।
খ) মুসলিম আল-আজলী: ইব্ন আবু হাতেম তার নাম উল্লেখ করেছেন কিন্তু তার জারহ ও তাদীল উল্লেখ করেননি। অতএব উপরোক্ত বিভিন্ন মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, এ বর্ণনার সনদ শুদ্ধ নয় এবং এ দ্বারা কোন প্রমাণ সাব্যস্ত হবে না।
২- সামুরা ইব্ন জুনদুব রাদি আল্লাহু আনহু যিনি রাসূলুল্লাাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের একজন সাহাবী তাঁর সম্পর্কে কিভাবে এ ধারণা পোষণ করা যায় যে, তিনি একজন মুসলিমকে হত্যা করবেন, শুধু মুসলিম নয় বরং যিনি কিছুক্ষণ পূর্বে তাঁর যাকাত আদায় করেছেন এবং তাকে নামাযরত অবস্থায় হত্যা করা হয়? এর মাধ্যমে কি সামুরার ক্ষেত্রে অপরাধের চরম মাত্রা ও রক্ত পিপাসা প্রমাণ করা হয়েছে? নাকি এটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাহাবীগণের ব্যাপারে হিংসা-বিদ্বেষ ও ঘৃণার প্রমাণ?
আমরা বলব,
এ জাতীয় বর্ণনা যদি ঐসব মানুষের প্রতি সম্পৃক্ত করা হত যারা মানুষ হত্যাকারী হিসাবে পরিচিত যেমন হাজ্জাজ ইব্ন ইউসুফ প্রমূখ। তবুও বর্ণনার শুদ্ধতা সাব্যস্ত করা আবশ্যক হত। অতএব কিভাবে এ জাতীয় অপরাধের বর্ণনা মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের একজন সাহাবীর প্রতি সম্পৃক্ত করা হয়?
মহান আল্লাহ আমাদের বিবেককে সংরক্ষণ করুন।
৩- সাহাবীগণের ব্যাপারে আমাদের মৌলিক নীতি হল, তারা তাকওয়া আল্লাহভীতি, আল্লাহর সীমানা রক্ষা ইত্যাদিতে অনঢ় ছিলেন। যদি তাঁদের কারও ব্যাপারে এর বিপরীত কোন বর্ণনা আসে তবে প্রথমে সে বর্ণনার সনদ বা বর্ণনাপরম্পরার দিকে লক্ষ্য করতে হবে। যদি বর্ণনাপরম্পরা শুদ্ধ না হয় আলহামদুলিল্লাহ। যদি বাহ্যিক দৃষ্টিতে তা শুদ্ধ হয় তবে মতন বা মূল ভাষ্যের দিকে দৃষ্টিপাত করতে হবে। যদি তা সাহাবীগণের সাধারণ অবস্থা তথা তাকওয়া, আল্লাহর অবাধ্য হওয়ার ভয় ইত্যাদির বিপরীত হয় তবে বিশেষজ্ঞদের মতে এই বর্ণনা গ্রহণযোগ্য হবে না।
এ নীতিমালার আলোকে উক্ত বর্ণনার মূলভাষ্যের দিকে দৃষ্টিদানকারী অবশ্যই দৃঢ় সিদ্ধান্ত নিবে এ বর্ণনা বাতিল ও অশুদ্ধ। কেননা তাতে বর্ণিত হয়েছে, সামুরা রাদি আল্লাহু আনহু এমন সব মানুষকেও হত্যা করতেন যারা দুই শাহাদত উচ্চারণ করতেন এবং নিজেদেরকে খারিজী হওয়া থেকে মুক্ত ঘোষণা করতেন। এ এমন এক গর্হিত কাজ যা থেকে সাধারণ একজন মুসলমানকেও আমরা পবিত্র রাখতে চাই। আর তা কিভাবে একজন সম্মানিত সাহাবীর ক্ষেত্রে ঘটতে পারে যিনি মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাহচর্য পেয়েছেন, তাঁর সাথে জিহাদ করেছেন, তাঁর থেকে অনেক হাদীস বর্ণনা করেছেন?
এটি কখনই সত্য হতে পারে না। সাহাবীগণ সকলেই ন্যায়পরায়ণ এটাই আমাদের বিশ্বাস।
এছাড়া বর্ণনাটি সামুরা যে জন্য বিশেষভাবে পরিচিত ও প্রসিদ্ধ ছিলেন তার বিপরীত। কেননা তার জীবনীকার সম্মানিত আলিমগণ বলেছেন, তিনি খারেজীদের ব্যাপারে খুবই কঠোর ছিলেন। তাঁর কাছে তাদের কাউকে আনা হলেই তিনি তাকে হত্যা করতেন ঐ সব মানুষও হত্যা করতেন যারা নিজেদেরকে খারেজী ও তাদের মতাদর্শ থেকে মুক্ত ঘোষণা করতেন। এটি এক চরম বৈপরীত্য যা বর্ণনাটির শুদ্ধতাকে কর্তন করে।
৪- যিয়াদ ইব্ন আবিহির কুফায় গমন কালের যে সময়টিতে সামুরা রাদি আল্লাহু আনহু বসরার আমীর ছিলেন তখন মানুষ খুবই আন্দোলিত ছিল, সময়টি ফেতনার যুগ ছিল। অতএব সে সময়ে একজন অপরজনের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করা অস্বাভাবিক কিছু নয়। সাথে সাথে বিপক্ষদলের বিভৎস আকৃতি তুলে ধরার জন্য বিভিন্ন বর্ণনা ও কাহিনীর আশ্রয় গ্রহণ করা মামুলী বিষয়। একারণে ঐ সময়ের কোন বর্ণনা বিচার-বিশ্লেষণ, পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়া গ্রহণ না করাই আবশ্যক। অন্যথায় ইচ্ছামত যে যা বলেছে তাই গ্রহণ করতে হবে।
সামগ্রিক উত্তর:
পূর্বোক্ত বর্ণনাগুলো থেকে আগত সংশয়ের সামগ্রিক উত্তর প্রদানের ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো সাহায্য করবে:
প্রথমত:
সামুরা রাদি আল্লাহু আনহু যাদেরকে হত্যা করেছিলেন, যেমনটি বর্ণিত হয়েছে আবু সিওয়ার আদয়ীর বর্ণনায় যার সনদ গ্রহণযোগ্য অথবা অন্যান্য বর্ণনায়ও যা এসেছে, সেগুলোর অবস্থা আমরা বর্ণনা করেছি। বর্ণনায় উল্লেখিত নিহত খারেজীদের সংখ্যার ব্যাপারে আপত্তি সহকারে (আল্লাহই অধিক জ্ঞাত) এর দলীল:
ক. যারা সামুরা ইব্ন জুনদুব রাদি আল্লাহু আনহুর জীবনী আলোচনা করেছেন যেমন ইব্ন আব্দুল বার, ইব্ন আমীর, ইব্ন হাজর, যাহাবী প্রমূখ তারা সকলেই একমত যে, সামুরা খারেজীদের উপর প্রচ- কঠোর ছিলেন। এ বিষয়ে তারা তাদের গ্রন্থে এভাবে উল্লেখ করেছেন যে, সামুরা খারেজীদের ব্যাপারে কঠোর ছিলেন, তাদের কাউকে তার কাছে আনা হলে তিনি তাকে হত্যা করতেন অথচ তাকে বলতেন না বরং বলতেন, আকাশের নিচে এ হত্যা সবচেয়ে নিকৃষ্ট হত্যা। তারা মুসলমানদেরকে কাফের বানায় ও রক্তপাত করে। অতঃপর তারা তাঁর জীবনীতে খারেজীদের উপর এত কঠোর হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে বলেন, হারুরী এবং মাযহাবগত দিক থেকে তাদের নিকটতমরা তাঁর উপর বিভিন্ন অপবাদ দিত ও তাঁকে নিন্দা করত।
ইমাম জাহাবী বলেন, তিনি অর্থাৎ সামুরা খারেজীদের ব্যাপারে কঠোর ছিলেন, তাদের অনেককেই তিনি হত্যা করেছেন।
এসব বর্ণনা জানার পর নিঃসন্দেহে প্রতীয়মান হল, সামুরা রাদি আল্লাহু আনহু কাদেরকে হত্যা করেছিলেন, যদি তার হাতে নিহতের সংখ্যা যা ঐসব বর্ণনায় এসেছে তাই ধরেই নেই।
আরো স্পষ্ট হয় যে, সামুরা রাদি আল্লাহু আনহু সম্পর্কে অন্য যে সব বর্ণনা এসেছে তাতে খারেজীদেরকে ভাল মানুষ, মাজলুম বা নির্যাতিত হিসেবে প্রকাশ করা হয়েছে। সামুরা রাদি আল্লাহু আনহু বিরাট সংখ্যক মানুষকে বিনা অপরাধে হত্যা করেন মর্মে বর্ণিত বর্ণনাগুলোতে ইচ্ছাপূর্বক নিহতদের ত্রুটিগুলো গোপন করা হয়েছে বা এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে, আল্লাহই সর্বাধিক জ্ঞাত।
খ) ইতিহাস গ্রন্থে আগত বর্ণনার ভিত্তিতেই প্রমাণিত হয় যে, ঐ সব নিহত ব্যক্তি খারেজীই ছিল। সেসব বর্ণনা প্রমাণ কওে যে, সামুরা রাদি আল্লাহু আনহুর সময়কাল বিশেষত বসরায় শাসনামলে সেখানে খারেজী আন্দোলনের প্রভাব বেশি ছিল। যে কারণে সামুরা ও যিয়াদকে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর হতে হয়েছিল।
ঐ সব ঐতিহাসিক বর্ণনার মধ্যে রয়েছে:
১. ইব্ন আসীর ৫০ হিজরী সনের ঘটনা প্রবাহ বসরায় কারীব আযদী ও যুহাব তাঈ এর আত্মপ্রকাশ ও তার প্রভাব বর্ণনার পর বলেন, যিয়াদ খারেজীদের ব্যাপারে কঠোর হন ও তাদেরকে হত্যা করেন এবং সামুরাকেও একই কাজ করার নির্দেশ দেন। ফলত তিনি অনেক মানুষ হত্যা করেন।
২. তাবারী তার ইতিহাসে কারীব আযদী ও যুহাফ তাঈ এর প্রকাশ সম্পর্কে আলোচনান্তে বলেন, যুহাইর আমাদেরকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, ওয়াহাব আমাদের নিকট বর্ণনা করে বলেন, আমার পিতা আমার নিকট বর্ণনা করেন কারীব ও যুহাফের ঘটনার পর যিয়াদ হারুরীদের ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে যান ও তাদেরকে হত্যা করেন এবং সামুরাকে অনুরূপ নির্দেশ দেন। কেননা তিনি তার বসরার প্রতিনিধি ছিলেন অতঃপর তিনি যখন কুফায় চলে যান তখন সামুরা অনেক মানুষ হত্যা করেন।
৩. ইয়াকুবী তার ইতিহাসে কারীব ও যুহাফের কর্মকা- বর্ণনা করে বলেন, কারীব ও যুহাফ এই দুই খারেজী বসরায় আত্মপ্রকাশ করে খারেজীদের মধ্যে। তারা শর্ত প্রদর্শন করে এবং তাদের মধ্যকার অনেক মানুষ হত্যা করে। অতঃপর মসজিদের দিকে আগমন করে এবং সেখানে অনেক মানুষ হত্যা করে। সর্বশেষ তারা জনবসতি তথা বিভিন্ন গোত্রে এসেও একই আচরণ করে।
৪.ইব্ন হাজর খারেজী সংক্রান্ত হাদীস ব্যাখ্যা করতে যেয়ে কখন তাদের প্রকাশ ঘটে, কখন তারা লুকায়িত ছিল এসব বিষয় বর্ণনা করে বলেন, তারা অর্থাৎ খারেজীরা আলী রাদি আল্লাহু আনহুর খিলাফত আমলে লুকায়িত ছিল। তাদের মধ্যে আব্দুর রহমান ইব্ন মুলজেমও ছিল, যে ফজরের নামাযের সময় আলী রাদি আল্লাহু আনহুকে হত্যা করে। অতঃপর যখন হাসান ও মুআবিয়া রাদি আল্লাহু আনহুর মধ্যে সন্ধি স্থাপিত হয় তখন তাদের একদল প্রকাশিত হয়। সিরিয়ার সেনাবাহিনী নাজিলাহ নামক স্থানে আক্রমণ করে। এরপর তারা যিয়াদ ও তার পুত্র উবায়দুল্লাহর ইরাক শাসনামলে অর্থাৎ মুয়াবিয়া ও ইয়াযিদের খিলাফাতামলে প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে ওঠে। যিয়াদ ও তার পুত্র তাদের মধ্যকার বিরাট সংখ্যক মানুষ হত্যা করে। তাদেরকে হত্যা, দীর্ঘ কারাবাস ইত্যাদির মাধ্যমে ধ্বংস করে দেয়।
এসব মন্তব্যের ব্যাপারে নিরপেক্ষ পাঠক হিসাবে আপনার মতামত কি?
যদি বলা হয়, ধরে নিলাম তারা খারেজী, তাই বলে কি তাদের হত্যা করা বৈধ? তারা কি মুসলমান নয়?
এ প্রশ্নের উত্তরে আমরা বলব:
১। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খারেজীদেরকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছেন এবং বর্ণনা করেছেন যে, তিনি যদি তাদেরকে পেতেন তবে নিজেই হত্যা করতেন। বুখারী ও মুসলিম আলী রাদি আল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, শেষ যামানায় এমন এক জাতির আবির্ভাব হবে যারা বয়সে হবে তরুণ, চিন্তা ভাবনায় হবে স্থুল বুদ্ধির অধিকারী, মুখে উত্তম নীতিবাক্য আওড়াবে তবে তারা ইসলাম থেকে এমনভাবে বের হয়ে যাবে যেভাবে তীর ধনুক থেকে বের হয়ে যায়। তাদের ঈমান তাদের কণ্ঠনালীকে অতিক্রম করবে না। অতএব তোমরা যেখানেই তাদেরকে পাবে হত্যা করবে। কেননা যে ব্যক্তি তাদেরকে হত্যা করবে কিয়ামতের দিন তার জন্য রয়েছে পুরস্কার।
তাদের হত্যার নির্দেশ ও হত্যা করলে পুরস্কারের বর্ণনা সম্বলিত হাদীসের সংখ্যা অনেক বেশি। জ্ঞাতব্য যে, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যাদেরকে হত্যা করতে বলেছেন তাদের কিছু বৈশিষ্ট্য ও আচরণ বর্ণনা করেছেন, যা দেখলে তাদের হত্যা করাতো দূরের কথা তাদের সম্পর্কে গালি দিতেও একজন মুসলিমের বিবেকে বাধা দেয়। এতদসত্ত্বেও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বর্ণনা করেছেন এই উম্মতের মধ্যে এমন এক গোষ্ঠী বের হবে যারা তাদের নামাযের তুলনায় তোমাদের নামাজকে তুচ্ছ মনে করবে, তারা এমনভাবে কুরআন তেলাওয়াত করবে যে, তাদের কণ্ঠনালী বা গলা থেকে বের হবে না।”
এ জাতীয় অনেক বড় বড় গুণ এবং অশুদ্ধ বুঝ ও ভুল অনুধাবনের ভিত্তিতে ইবাদাতের ক্ষেত্রে ইজতিহাদ।
প্রিয় পাঠক! আপনি হয়তো বিষয়টি অনুবাধন করতে পারবেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খারেজীদের গুণাবলী বর্ণনা করেছেন যে, তারা কুরআন তিলাওয়াত করবে তার সাথে আবু সিওয়ার বর্ণিত সামুরা রাদি আল্লাহু আনহু কর্তৃক নিহত ব্যক্তিদের গুণাবলী তারা কুরআন সংকলন করেছিল এ দুয়ের মধ্যেকার সামঞ্জস্যতা অন্তরকে আশ্বস্ত করে যে, ঐ সব নিহত ব্যক্তি খারেজীই ছিল। বিধায় হাদীসের আলোকে সামুরা রাদি আল্লাহু আনহুর দৃষ্টিতে তারা হত্যার যোগ্য ছিল।
২- হাসান ও হুসাইনের পিতা আমীরুল মুমিনীন আলী ইব্ন আবু তালিব রাদি আল্লাহু আনহুম খারেজীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলেন এবং তাদের অনেককে হত্যা করেছিলেন। এমনকি তিনি তাদের হত্যার নির্দেশ সম্বলিত হাদীসের একজন বর্ণনাকারী যা সামান্যপূর্বে আমরা আলোচনা করেছি। আলী রাদি আল্লাহু আনহু ঐ ব্যক্তিকে হত্যার উদ্দেশ্যে খোঁজ করেছিলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যার বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করেছিলেন এভাবে, এমন একটি কাল মানুষ যার দুপেশীর একটি মেয়ে লোকের স্তনের ন্যায় অথবা মাংস টুকরার ন্যায় নড়াচড়া করবে। অতঃপর যখন ঐ ব্যক্তিকে পেয়ে যান তখন আল্লাহর উদ্দ্যেশে শুকরিয়া নামায আদায় করেন। যেহেতু তিনি জানতেন তিনি সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত আছেন। বর্ণিত হয়েছে আলী রাদি আল্লাহু আনহু এক হাজার খারেজী হত্যা করেন।
প্রশ্ন: তাদের হত্যা করা কি আলী রাদি আল্লাহু আনহুর জন্য হালাল ও সামুরা রাদি আল্লাহু আনহুর জন্য হারাম ছিল? খারেজীদের হত্যা করা কি আলী রাদি আল্লাহু আনহুর সম্মানের অংশ আর অন্যদের যেমন সামুরা রাদি আল্লাহু আনহুর জন্য কি দূষণীয় অপরাধ ?
যদি খারিজীদের হত্যা করা আলী রাদি আল্লাহু আনহুর কৃতিত্ব হয় তবে তা সামুরা রাদি আল্লাহু আনহুর জন্যও সম্মানের বিষয়। পক্ষান্তরে যদি তা সামুরা রাদি আল্লাহু আনহুর জন্য দূষণীয় হয় তবে আলী রাদি আল্লাহু আনহুর জন্যও তা দূষণীয় আল্লাহ তাদের দুজনকেই এ থেকে রক্ষা করুন।
দ্বিতীয়ত:
সামুরা রাদি আল্লাহু আনহু এমন অনেককে হত্যা করেছেন, যারা হত্যার যোগ্য ছিলেন না, একথা যদি প্রমাণিত ও বিশুদ্ধ হয় তবে আমাদের উত্তর:
তিনি ঐসব হত্যার ব্যাপারে তাবিল তথা বিশ্লেষণ করেছিলেন, তিনি এই ধারণা করেছিলেন যে, তারাও খারেজী। একে বলা হয় সাহাবীগণের উত্তম ধারণার অংশ। প্রতিটি মুসলিমের মৌলিক বিশ্বাস এমন হবে যে, তাদের অন্তর সাহাবীগণের ভালবাসায় পূর্ণ থাকবে, তারা তাঁদের যথার্থ সম্মান প্রদান করবেন। কতিপয় সাহাবী সম্পর্কে যা বর্ণিত হয়েছে তা উত্তমভাবেই গ্রহণ করবে। এ পবিত্র দলটির প্রতি ঘৃণা ও অন্তরে বিদ্বেষপোষণ, মুখে সেসব আওড়ানো ও তা লিখে কাগজ কালো করবে না। যাতে ঐগুলো কিয়ামতের দিন তাদের সাক্ষী হয়ে যায়। নিশ্চয় যে ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথীদের প্রতি বিদ্বেষ রাখে, তাদের সাথে শত্রুতাপোষণ করে, তাঁদের থেকে মুক্ত থাকতে চায় তার হিসাব নেয়ার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। তিনি এমন ন্যায়বিচারক যিনি অণু পরিমাণ জুলুম করেন না। যারা ঐ সব তাকওয়াবান, পূণ্যবানদের বিষয়ে ঝগড়া করে আল্লাহর নির্দেশে তাদের জন্য নিকৃষ্ট সংবাদ ও নিকৃষ্ট অবাস্থল।
অতএব হে আল্লাহ! আমাদের উপর তোমার রহমত বর্ষণ কর।
গ) নিজের প্রতি সামুরা রাদি আল্লাহু আনহুর আচরণ সংশ্লিষ্ট সংশয়।
এ অংশ দুটি সংশয় অর্ন্তভুক্ত করে।
প্রথম সংশয়:-
সামুরা রাদি আল্লাহু আনহু শক্ত কথা বলতেন
তাবারী বর্ণনা করেন, মুয়াবিয়া রাদি আল্লাহু আনহু যিয়াদের পর সামুরাকে ৬ মাসের জন্য বসরার শাসনকর্তা নিযুক্ত করেন। অতঃপর তাঁকে অপসারণ করেন। তখন সামুরা বলেন, মুআবিয়াকে আল্লাহ লানত দিক। আল্লাহর শপথ! আমি মুআবিয়াকে যতটকু আনুগত্য করেছি ততটুকু যদি আল্লাহর আনুগত্য করতাম তবে তিনি কখনই আমাকে আযাব দিতেন না।
এ বর্ণনা থেকে প্রতীয়মান হয় সামুরা আল্লাহর আনুগত্যের চেয়ে মুআবিয়ার আনুগত্যকে বড় করে দেখেছিলেন। যা মূলত মহান আল্লাহর সাথে কুফরীর শামিল। এ জাতীয় কথা শুধুমাত্র তার পক্ষেই সম্ভব যার অন্তর ঈমান থেকে মুক্ত হয়ে দুনিয়ার ধ্বংসশীল সম্পদ ও এর অস্থায়ী চাকচিক্যের সাথে সংযুক্ত হয়েছে।
এর উত্তর:
১। এ বর্ণনাটি তাবারী তার ইতিহাসে বর্ণনা করে বলেন, উমর বলেন, জাফর ইবন সোলাইমান আদ দাবরীর ব্যাপারে আমার কাছে পৌঁছেছে যে, তিনি বলেন, মুআবিয়া রাদি আল্লাহু আনহু যিয়াদের পর….।
এ বর্ণনার সনদের ব্যাপারে মন্তব্য: উমর ইবন সাবাহ ও জাফর ইব্ন সোলায়মানের মধ্যকার বিচ্ছিন্নতা। এমনকি তিনি আমার কাছে পৌঁছেছে, শব্দ ব্যবহার করেছেন। মহান আল্লাহই উভয়ের মধ্যকার পতিত ব্যক্তির সম্পর্কে ভাল জানেন। অতঃপর এই বর্ণনার বর্ণনাকারী জাফর ইব্ন সোলাইমান তাবে তাবেঈগণের মধ্যকার মধ্যস্তরের। অতএব মুআবিয়া সামুরা থেকে বর্ণনা করা তার জন্য অসম্ভব। এ দৃষ্টিকোণ থেকে বর্ণনাটি দুর্বল।
একারণে ইমাম ইব্ন কাসীর (রহ.) সামুরা রাদি আল্লাহু আনহু সম্পর্কিত এই বর্ণনাটি উল্লেখ করে বলেন, এটি তার থেকে সহীহ নয়।
২। সামুরা রাদি আল্লাহু আনহু সম্পর্কে এ ধারণা করা যায় না যে, এ জাতীয় অবাঞ্ছিত কথা তাঁর থেকে প্রকাশ পাবে যা কুফরীর পর্যায়ের। নাউজুবিল্লাহ, তিনি কখনোই আল্লাহর আনুগত্যের চেয়ে মুআবিয়া রাদি আল্লাহু আনহুকে বেশি আনুগত্য করতে পারেন না।
হে আল্লাহ! আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথীগণের থেকে এ জাতীয় অপরাধ প্রকাশ পাওয়া থেকে তোমার কাছে মুক্ত ঘোষণা করছি।
দ্বিতীয় সংশয়:-
সামুরা মদ বিক্রয় করেন
ইমাম বুখারী সহীহ বুখারীতে ইব্ন আব্বাস রাদি আল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, উমর রাদি আল্লাহু আনহুর নিকট এ খবর পৌঁছায় যে, অমুকে মদ বিক্রয় করেছে। তখন তিনি বলেন, আল্লাহ অমুককে অভিশাপ দিন। সে কি জানে না রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ ইয়াহুদীদেরকে অভিশপ্ত করেছেন কারণ তাদের জন্য চর্বি হারাম করেছিলেন, কিন্তু তারা তা জ্বালিয়ে অতঃপর বিক্রি করত।
ইমাম মুসলিমের বর্ণনায় মদ বিক্রয়কারীর নাম স্পষ্টভাবে এসেছে তিনি হলেন, সামুরা রাদি আল্লাহু আনহু।
এর উত্তরে আমরা বলব:
সামুরা রাদি আল্লাহু আনহু কর্তৃক মদ বিক্রয়ের পদ্ধতি নিয়ে আলিমগণ চারটি মতামতের উপর মত পার্থক্য করেছেন। ইব্ন হাজর (রহ.) তা বর্ণনা করেছেন।
১. সামুরা আহলে কিতাব থেকে জিযিয়্যাহর মূল্য বাবদ মদ গ্রহণ করেন। অতঃপর তাদের কাছেই তা পুনরায় বিক্রয় করেন এই বিশ্বাস নিয়ে যে এটি বৈধ।
ইব্ন জাওযী ইব্ন নাসের থেকে এ বর্ণনা করেছেন এবং এ মতকে প্রাধান্য দিয়েছেন। তিনি বলেন, তাঁর উচিৎ ছিল আহলে কিতাবের কাউকে তা বিক্রয়ের প্রতিনিধি বানানো। তবেই তিনি নিষিদ্ধ কাজের মধ্যে অনুপ্রবেশ করতেন না এবং পরবর্তীতে তাদের থেকে এর মূল্য নিয়ে নিতেন। কেননা তিনি হারাম গ্রহণ করেননি।
২. খাত্তাবী বলেন, যে মদ তৈরি করে তার কাছে রস বিক্রয় করা বৈধ। কোন কোন অঞ্চলে আসীর বা রসকেও মদ নামে অভিহিত করা হয়। একইভাবে আঙ্গুরকেও মদ নামে অভিহিত করা হয় কেননা তা মদের কাঁচামাল হিসেবে গণ্য।
খাত্তাবী আরও বলেন, সামুরার ক্ষেত্রে এরূপ ধারণা করা যাবে না যে, মদ হারাম হওয়ার পর তিনি তা বিক্রয় করেছেন বরং তিনি রস বিক্রি করেছেন।
৩. তা ছিল মদের মিশ্রণ। এ কারণে তিনি তা বিক্রয় করেন। উমর রাদি আল্লাহু আনহুর বিশ্বাস ছিল এটিও বৈধ নয় অধিকাংশ আলিমেরও একই মত। কিন্তু সামুরা রাদি আল্লাহু আনহুর বিশ্বাস ছিল এটি বৈধ।
৪. ইসমাঈলী তার আল মাদখালে বর্ণনা করেন, সামুরা রাদি আল্লাহু আনহু মদের নিষেধাজ্ঞা অবগত ছিলেন কিন্তু তার ক্রয় বিক্রয়ের নিষেধাজ্ঞা অবগত ছিলেন না। এ কারণে উমর রাদি আল্লাহু আনহু কোন প্রকার শাস্তি না দিয়ে তাকে শুধুমাত্র তিরস্কার করেছেন। এ চারটি মতই ফাতহুল বারীতে বর্ণিত হয়েছে।
হাফেজ ইব্ন হাজর বলেন, এটাই তাঁর সম্পর্কে ধারণা। (চলবে)