Main Menu

মুসলমানদের আদাব বা শিষ্টাচার

Originally posted 2013-03-20 09:02:41.

islami 1

হাফেজ ইমদাদুল হক

ইসলাম এমন কিছু উন্নত শিষ্টাচার, সুন্দর স্বভাব ও বৈশিষ্ট্যের উপর মুসলিম সন্তানদের গড়ে তোলার উপর গুরুত্বারোপ করেছে, যেটা মুসলিম প্রজন্মের শিক্ষা প্রশিক্ষণ, লালন-পালন ও তাদের চরিত্র বিনির্মাণে ভূমিকা পালন করে থাকে। কথা কাজের ক্ষেত্রে উন্নত পন্থা অবলম্বন, সত স্বভাব গ্রহণ ও ঘৃণিত তথা মন্দ স্বভাব পরিত্যাগে নির্দেশনা দিয়ে থাকে।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মতের জন্য আদাব তথা শিষ্টাচারের সকল দিকগুলোই বর্ণনা দিয়েছেন। এমনকি যুদ্ধের ময়দানের শিষ্টাচার কি হবে, তাও বলে দিয়েছেন। তিনি তাদেরকে যুদ্ধের সময় নারী-শিশু এবং যে সকল বৃদ্ধ যুদ্ধ করে না তাদেরকে হত্যা করতে নিষেধ করেছেন। বারণ করেছেন গির্জা ও আশ্রমে আশ্রয় গ্রহণকারী পাদ্রী, ধর্মযাজক ও সন্নাসী এবং শষ্যক্ষেত্রে চাষাবাদরত চাষীকে হত্যা করতে। এবং মৃতের দেহ বিকৃত করতে ও নিষেধ করেছেন। এমনিভাবে আরো অনেক আদাব রয়েছে।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বলে দেয়া শিষ্টাচার তথা আদাবের মধ্যে রয়েছে খাদ্য-পানীয় গ্রহণ, পোষাক-পরিচ্ছদ, নিদ্রা, স্ত্রী মিলন ও দাম্পত্য জীবনের আদব ছাড়াও অনেক বিষয়। এমনকি তিনি প্রশ্রাব-পায়খানায় প্রবেশের আদাব ও বলে দিয়েছেন, যেমন : সালমান ফারসী (রাঃ) থেকে বর্ণনীত তিনি বলেন, ‘মুশরিকরা আমাদেরকে বলে, এ কেমন কথা তোমাদের নবী তোমাদেরকে সকল কিছুই শিক্ষা দেন, এমনকি প্রশ্রাব-পায়খানা করার নিয়মও?! তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ! তিনি আমাদেরকে পায়খানা-পেশাবের সময় কেবলা মূখী অথবা কেবলাকে পিছনে দিয়ে বসতে বারণ করেছেন। ডান হাতে ঢিলা-কুলুখ ব্যবহার, তিনটির কম পাথর ঢিলা হিসাবে ব্যবহার অথবা হাড় কিংবা গোবর দিয়ে ঢিলা ব্যবহার থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। (মুসলিম)

ইসলামই হচ্ছে একমাত্র জীবন ব্যবস্থা যা সমগ্র মানব জীবনের জন্য একটি নির্ভুল পদ্ধতি এঁকে দিয়েছে। যার মাঝে রয়েছে জীবনের প্রতিটি স্তর ও বিভাগের সুষ্ঠু সমাধান। এটা মানব রচিত কোন জীবন বিধান নয় যে, তার মাঝে সত্য মিথ্যার সম্ভাবনা থাকবে, বরং এটা হচ্ছে আল্লাহ প্রদত্ত জীবন বিধান, যা তার অনুসারীদের জন্য দুনিয়ার জীবনে বয়ে নিয়ে আসে কল্যাণ, শান্তি ও মানুষিক স্বস্তি, আর কিয়ামতের কঠিন দিনে পুরস্কৃত করে তার চিরস্থায়ী সুখের জান্নাত। আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন : আমরা কিতাবে (কুরআনে) কোন কিছুই বাদ দেইনি। (সূরা আনআম-৩৮)

আত্মার সুষ্ঠু গঠন ও পরিশুদ্ধি এবং সুন্দর চরিত্র বিনির্মাণে নবুওয়তী আদবের একটি সুন্দর প্রভাব ও সুদূর প্রসারী ফলাফল রয়েছে। নবুওয়তী আদব তথা ইসলামী শিষ্টাচার জাতির জন্য এমন কিছু ধারাবাহিক প্রজন্ম উপহার দিয়েছে, সত্যবাদিতা, আমানতদারিতা, চারিত্রিক নিষ্কুলুষতা, পবিত্রতা, আদল ইনসাফ, ব্যক্তিত্ব, লজ্জাশীলতা, দয়া দাক্ষিণ্য এবং শক্তি-সামর্থ ও বীরত্বে যাদের তুলনা ইতিহাসে বিরল। হতাশাগ্রস্থ মজলুমের সহযোগিতায় ও তাদের জুড়ি নেই। ইসলামী শিষ্টাচার ও নবুয়তী চরিত্র থেকে দূরে সরে যাওয়াই হচ্ছে বর্তমান মুসলিম উম্মার দুর্বলতার কারণ। মুসলিম উম্মাহ যদি অপর জাতির দাস সূলভ অনুসরণ থেকে বেরিয়ে আসতে পারে, যদি ফিরে আসে তাদের সক্বীয়তা এবং সত্যিকার ইসলামী শিষ্টাচারের দিকে, তাহলে অবশ্যই তাদের হারানো গৌরব, সম্মান ও মর্যাদা ফিরে আসবে। মুসলিম জাতি কি এ ব্যাপারটি অনুধাবন করবে?

আমরা সামনের পৃষ্ঠাগুলোতে আল্লাহ, তাঁর রাসূল এবং দ্বীনের সাথে মুসলিমের আদব সম্পর্কে জানতে পারবো, জানতে পারবো তার নিজের সাথে এবং প্রতিবেশীদের সাথে তার আচরণবিধি এমনকি অমুসলিম ও অন্যান্য জীব-জন্তুর সাথে ও তাদের আচরণ কেমন হওয়া উচিত, সে সম্পর্কে জানতে পারবো।

১. নিয়্যাতের আদাব : প্রতিটি মুসলিমই অবগত যে, নিয়্যাতের একটি অসাধারণ গুরুত্ব রয়েছে। নিয়তের বিশুদ্ধতার উপর নির্ভর করে কাজের গ্রহণযোগ্যতা। নিয়ত শুদ্ধ না হলে আমল তথা কাজও বাতিল হয়ে যায়। নিয়ত হচ্ছে কোন কাজের জন্য প্রগাঢ় ইচ্ছা পোষণ। যখন এই ইচ্ছাটা আল্লাহর সন্তুষ্টি ও তাঁর আদেশ পালনার্থে হয়, তখনই তা হয় বিশুদ্ধ এবং এর থেকে বেরিয়ে আসে উত্তম ও গ্রহণযোগ্য আমল। যখন এই নিয়ত হবে দুনিয়ার জন্য, অথবা মানুষের প্রশংসা ও বাহবা অর্জনের জন্য, অথবা খ্যাতির জন্য অথবা আলোকিত বিশ্বে নিজেকে প্রকাশ করার জন্য, অথবা অপর কোন অসত উদ্দেশ্যের জন্য, তখন নিয়তও বাতিল হয়ে যাবে এবং তার ফলে অগ্রহণযোগ্য ও বাতিল যোগ্য কাজই বের হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন : নিশ্চয়্ই সকল আমলই নিয়্যাতের উপর নির্ভরশীল। আর প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য সেটাই রয়েছে যার জন্য সে নিয়ত করেছে। (বুখারী ও মুসলিম)

২. আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সাথে শিষ্টাচার :

১. একজন মুসলিম এটা ভালভাবে অবগত যে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনই তাকে সৃষ্টি করেছেন এবং তিনিই তাকে রিযিক দিয়েছেন, তিনিই তাকে সকল নিআমাত দিয়েছেন এবং তার উপর থেকে সকল প্রকার কষ্ট বিদূরিত করেছেন। সুতরাং তাকে অবশ্যই তার রবের সাথে সর্বোচ্চ শিষ্টাচার প্রদর্শন করতে হবে।

২. আল্লাহর সাথে শিষ্টাচারের অন্যতম একটি দিক হলো তাঁর শরীয়তের পরিপূর্ণ অনুসরণ, আর তা হবে আদিষ্ট বিষয়াবলী পালন এবং নিষেধকৃত বিষয়াবলী বর্জনের মাধ্যমে।

৩. আল্লাহর সাথে আদবের মধ্যে শরীয়ত বিধৃত কোন কাজের বিপক্ষে যুক্তি পেশ করা থেকে বিরত থাকা। আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন : কোন মুমিন পুরুষ কিংবা নারীর উচিত নয় যে, আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের দেয়া ফায়সালার উপর নিজস্ব সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা। (সূরা আল-আহযাব-৩৬)

৪. আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আরো ইরশাদ করেন : মুমিনদের কথাতো এমনই হবে যে, যখনই তাদের মধ্যকার কোন ফায়সালার জন্য তাদেরকে আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের দিকে আহ্বান করা হবে, তখন তারা বলবে : শুনলাম এবং মানলাম। (সূরা-নূর-৫১)

৫. আল্লাহর সাথে আদব রক্ষার অপর একটি দিক হলো : তার নেআ’মাতের শুকরিয়া আদায় করা এবং তার স্তুতি করা, তাঁকে বেশী বেশী স্মরণ করা এবং অধিক পরিমাণে দো’আ করা এবং তাঁর সকল কাজেই তাঁর কাছে আশ্রয় গ্রহণ করা, তাঁকে ভালবাসা, তাঁর সম্পর্কে সুধারণা পোষণ করা, তাঁর শাস্তিকে ভয় করা, তাঁর কাছে সওয়াব তথা পূণ্যের আশা করা, তাঁর মহান কিতাব পবিত্র কোরআন অধিক তেলাওয়াত করা, সকল প্রকার কবীরা ও সগীরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা।

৩. কোরআনের সাথে আদব বা শিষ্টাচার :

একজন মুসলিম আল্লাহ তাআ’লার কিতাব কোরআনে কারীমের সাথে ও আদব রক্ষা করে চলবে, উহাকে সম্মান করবে, সকল কথার উপর এ কালামকে প্রাধান্য দিবে। এমনিভাবে সে কোরআনে বর্ণিত বিভিন্ন আহকাম, আদাব ও আখলাক অনুসরণ করে চলবে। কোরআন তেলাওয়াতের সময় নিন্মউক্ত বিষয়গুলো লক্ষ্য রাখবে।
১. পরিপূর্ণ পবিত্রতার সাথে, কিবলার দিকে বসে অত্যন্ত সম্মানের সাথে তেলাওয়াত করা।
২. কোরআনের আয়াত এবং তার অর্থ নিয়ে চিন্তা ও গবেষণা করা।
৩. শুধু জানা বা আমলের জন্য নয় বরং ইবাদতের নিয়তে তেলাওয়াত করা।
৪. অত্যন্ত ধীরে তারতীল সহকারে তেলাওয়াত করা, তাড়াহুড়া না করা।
৫. স্বতন্ত্র আহকাম হিসেবে কোরআন তেলাওয়াত ও অধ্যয়নের নিয়ম শিক্ষা করা।
৬. সুন্দর স্বরে তেলাওয়াত করা এবং কিতাবের মর্যাদা বিবেচনায় বিনম্র ও ভদ্রভাব তথা খুশু ও খুজু বজায় রাখা।

আল্লাহ তা’আলা আমাদেরকে মুসলমানদের আদাব বা শিষ্টাচার অনুযায়ী চলার তাওফীক দান করুন। আমীন…

Related Post