তাওহীদের সংজ্ঞা: তাওহীদ হলো প্রভূত্ব, ইবাদাত এবং পরিপূর্ণ নাম ও গুণাবলীর ক্ষেত্রে আল্লাহকে এক-অদ্বিতীয় হিসেবে স্বীকার করে সে অনুযায়ী আমল করা।
তাওহীদের প্রকার: তাওহীদ তিন প্রকার:
১- প্রভূত্বের ক্ষেত্রে আল্লাহর একত্ববাদ,
২- ইবাদাতের ক্ষেত্রে আল্লাহর একত্ববাদ এবং
৩- নাম ও গুণাবলীর ক্ষেত্রে আল্লাহর একত্ববাদ।
১- তাওহীদুর রুবুবিইয়াহ্ বা প্রভূত্বের ক্ষেত্রে আল্লাহর একত্ববাদ: আর তা হলো আল্লাহর কর্মে তাঁর একত্ববাদ, যেমন: সৃষ্টি করা, রিযিক্ব দেওয়া, সকল কার্যাদি পরিচালনা করা, জীবন-মৃত্যু দেওয়া ইত্যাদী। অতএব, আল্লাহ্ ছাড়া কোন সৃষ্টিকারী নাই। যেমন আল্লাহ্ (তা‘আলা) বলেন:
اللَّهُ خَالِقُ كُلِّ شَيْءٍ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ وَكِيلٌ * الزمر : 62
অর্থ: আল্লাহ (তা‘আলা) প্রত্যেক বস্তুর সৃষ্টিকর্তা এবং তিনি প্রত্যেক বস্তুর ওপর দায়িত্বশীল। সূরা আয্যুমার – ৬২। আল্লাহ্ ছাড়া কোন রিযিকদাতা নাই, আল্লাহ্ (তা‘আলা) বলেন:
وَمَا مِنْ دَابَّةٍ فِي الْأَرْضِ إِلَّا عَلَى اللَّهِ رِزْقُهَا * هود : 6
অর্থ: যমীনে এমন কোন বিচরণশীল প্রাণী নেই যার জীবিকার দায়িত্ব আল্লাহর ওপর নেই। সূরাহ্ হুদ – ৬। আল্লাহ্ ছাড়া (আসমান যমীনের) কোন পরিচালনাকারী নেই। আল্লাহ্ (তা‘আলা) বলেন:
يُدَبِّرُ الْأَمْرَ مِنَ السَّمَاءِ إِلَى الْأَرْضِ* السجدة : 5
অর্থ: তিনি আসমান থেকে যমীন পর্যন্ত সকল কাজ পরিচালিত করেন। সূরাহ্ আস্সাজদাহ্ আয়াত ৫। আল্লাহ্ ছাড়া জীবন ও মৃত্যু দানকারী কেউ নেই। আল্লাহ্ (তা‘আলা) বলেন:
هُوَ يُحْيِي وَيُمِيتُ وَإِلَيْهِ تُرْجَعُونَ *يونس : 56
অর্থ: তিনিই (আল্লাহ্ (তা‘আলা) জীবন ও মৃত্যু দান করেন। আর তোমরা তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তীত হবে। সূরাহ্ ইউনুস আয়াত ৫৬।
এ প্রকার তাওহীদ (তাওহীদুর রুবূবিয়াহ্ ) রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সময়কালীন কাফেররা স্বীকার করেছিল। কিন্তু এ স্বীকারোক্তি তাদেরকে ইসলামে প্রবেশ করেনি। যেমন আল্লাহ্ তায়ালা বলেন:
وَلَئِنْ سَأَلْتَهُمْ مَنْ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ لَيَقُولُنَّ اللَّهُ * لقمان 25
অর্থ: আপনি যদি তাদেরকে জিজ্ঞেস করেন যে, আসমানসমূহ্ ও যমীন কে সৃষ্টি করেছেন? তাহলে তারা অবশ্যই বলবে যে, আল্লাহ্ তায়ালা। সূরাহ্ লুক্বমান আয়াত ২৫।
২- তাওহীদুল উলুহিইয়াহ্ (ইবাদাতের ক্ষেত্রে আল্লাহর একত্ববাদ: আর তা হলো বান্দার ঐ সকল কর্মে আল্লাহর একত্ববাদ, যে সকল কাজের ব্যাপারে তিনি (আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালাম) মানুষকে আদেশ দিয়েছেন। অতএব, সকল প্রকার ইবাদাত লাশারীক, এক-অদ্বিতীয় আল্লাহর জন্যই করতে হবে। যেমন: দুয়া’ (প্রার্থনা বা আহ্বান করা), ভয়, ভরসা, সহযোগীতা কামনা করা এবং আশ্রয় চাওয়া ইত্যাদী। তাই আমরা আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কাউকে আহ্বান করব না। তিনি বলেন:
وَقَالَ رَبُّكُمُ ادْعُونِي أَسْتَجِبْ لَكُمْ * غافر : 60
অর্থ: তোমাদের পালনকর্তা বলেন, তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দিব। সূরাহ্ গাফির (মু’মিন) আয়াত ৬০। আমরা আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কাউকে ভয় করিনা। আল্লাহ্ (তা‘আলা) বলেন:
فَلَا تَخَافُوهُمْ وَخَافُونِ إِنْ كُنْتُمْ مُؤْمِنِينَ * آل عمران : 175
অর্থ: (শয়তান তার বন্ধুদেরকে ভয় দেখায়) অতএব, তাদেরকে ভয় করো না, বরং আমাকে ভয় কর, যদি তোমরা মু’মিন হও। সূরাহ্ আলি ইমরান আয়াত ১৭৫। আমরা আল্লাহর উপরই ভরসা করি। আল্লাহ্ (তা‘আলা) বলেন:
وَعَلَى اللَّهِ فَتَوَكَّلُوا إِنْ كُنْتُمْ مُؤْمِنِينَ * المائدة 23
অর্থ: বস্তুতঃ তোমরা যদি মু’মিন হও, তাহলে তোমরা আল্লাহর উপরই ভরসা কর। সূরাহ্ আল মায়েদাহ্ আয়াত ২৩। আমরা আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কারও নিকটে সাহায্য প্রার্থনা করি না। তিনি মানুষের ভাষায় বলেন
إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ الفاتحة : 5
অর্থ: আমরা আপনারই ইবাদাত করি এবং আপনারই নিকটে সাহায্য প্রার্থনা করি। সূরাহ আল ফাতিহাহ্ আয়াত ৫।
আমরা আল্লাহর নিকটেই আশ্রয় প্রার্থনা করি, আল্লাহ্ (তা‘আলা) বলেন:
قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ النَّاسِ অর্থ: আপনি বলুন: আমি আশ্রয় গ্রহণ করছি মানুষের পালন কর্তার। সূরাহ্ আন্নাস আয়াত ১। আর এ প্রকার তাওহীদ (তাওহীদুল উলুহিয়্যাহ্) নিয়েই নবীগণের (আলাইহিমুস্ সালাম) আগমণ ঘটেছিল। আল্লাহ্ (আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালাম) বলেন:
وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِي كُلِّ أُمَّةٍ رَسُولًا أَنِ اعْبُدُوا اللَّهَ وَاجْتَنِبُوا الطَّاغُوتَ * النحل : 36
অর্থ: আর আমি প্রত্যেক জাতির মধ্যে রাসূল পাঠিয়েছি (এ সংবাদ দিয়ে) যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদাত কর এবং ত্বাগুত (আল্লাহ্ ব্যতীত যা কিছুর ইবাদাত করা হয়) থেকে দূরে থাক। সূরাহ্ আন্নাহল আয়াত ৩৬।
এ প্রকার তাওহীদকেই কাফিররা প্রাক ও আধুনিক যুগে অস্বীকার করেছে। যেমন আল্লাহ্ (তা‘আলা) কাফেরদের ভাষায় বলেন:
أَجَعَلَ الْآلِهَةَ إِلَهًا وَاحِدًا إِنَّ هَذَا لَشَيْءٌ عُجَابٌ * ص : 5
অর্থ: মুহাম্মাদ (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কি বহু ইলাহের পরিবর্তে এক ইলাহ্ বানিয়ে নিয়েছেন? এতো এক অত্যাশ্চর্য ব্যাপার। সূরাহ্ সোয়াদ আয়াত ৫।
৩- তাওহীদুল আসমা ওয়াসসিফাত:
আর তা হলো কুরআন এবং সহীহ্ হাদীসে আল্লাহ্ ও রাসূল (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কর্তৃক আল্লাহর যে সকল নাম ও গুণাবলী উল্লেখ করা হয়েছে তা বাস্তবে ও মূল অর্থে বিশ্বাস করা। আল্লাহ্ তায়ালার অনেক নাম রয়েছে। যেমন: আর-রহ্মান (অসীম দয়ালু), আস্-সামী’ (সর্বশ্রোতা), আল-বাসীর (সর্বদ্রষ্টা)। আল-আযীয (মহাপরাক্রমশালী) এবং আল-হাকীম (মহাজ্ঞানী) ইত্যাদী। আল্লাহ্ তায়ালা বলেন:
لَيْسَ كَمِثْلِهِ شَيْءٌ وَهُوَ السَّمِيعُ الْبَصِيرُ * الشورى : 11
অর্থ: কোন বস্তুই তাঁর অনুরুপ নয়। বস্তুতঃ তিনি সব কিছু শোনেন ও দেখেন। সূরাহ্ আশ্শুরা : ১১
কৃতকার্যগণের গুণাবলী:
আল্লাহ্ (তা‘আলা) বলেন:
وَالْعَصْرِ (1) إِنَّ الْإِنْسَانَ لَفِي خُسْرٍ (2) إِلَّا الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ وَتَوَاصَوْا بِالْحَقِّ وَتَوَاصَوْا بِالصَّبْرِ * العصر
অর্থ: যুগের ক্বসম (অথবা আসরের সময়ের ক্বসম)। নিশ্চয়ই সমস্ত মানুষই ক্ষতির মধ্যে পতিত রয়েছে। কিন্তু যারা ঈমান এনেছে, সৎ আমল করেছে, পরস্পর একে অন্যকে সত্য সম্পর্কে সদুপদেশ দিয়েছে এবং পরস্পর একে অন্যকে ধৈর্য ধারণের উপদেশ দিয়েছে, (তারা ক্ষতির মধ্যে নেই)।সূরাহ্ আল্-আসর : ১-৩
অত্র সূরায় আল্লাহ্ (তা‘আলা) যুগ বা আসরের সময়ের শপথ করে বলেছেন: সকল মানুষ ক্ষতি ও ধ্বংসের মধ্যে রয়েছে। তবে যারা চারটি গুণে গুণান্বিত হবেন তারা ব্যতীত।
সে চারটি গুণ হল:
১- আল-ঈমান: আর তা হল: আল্লাহ্ (তা‘আলা) , তাঁর নাবী মুহাম্মাদ (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং দ্বীন ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করা।
২- আল-আ‘মালুস্সালিহ্ (সৎকর্ম): যেমন: সালাত (নামায), যাকাত, সিয়াম (রোযা), সত্যবাদীতা এবং পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করা ইত্যাদী।
৩- পরস্পরকে সদুপদেশ দেওয়া: আর তা হলো, মানুষকে ঈমান ও সৎকর্মের প্রতি আহ্বান করা এবং এ ব্যাপারে উৎসাহ দেওয়া।