আজকের আলোচনায় আমরা ইসলামের সর্বাপেক্ষা মৌলিক আকিদা ‘তাওহিদ’ সম্পর্কে কিছু জরুরি আলোচনা করতে চাই। প্রতিটি মুসলিম জানে, ইসলামের ভিত্তি স্থাপিত হয়েছে কালেমায়ে তাওহিদের ওপর। কোনো ব্যক্তি ইসলামের সীমারেখার ভেতর প্রবেশ করতে পারে কেবল কালেমায়ে তাওহিদ অর্থাত্ ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ’-এর সাক্ষ্যদানের মাধ্যমে। তাই এ কালেমার বৈপ্লবিক গুরুত্বও প্রতিটি মুসলিম জানে। জানে এই কালেমা পড়ার ফলে মানুষের জীবনে এক মহাবিপ্লব সাধিত হয়। এ কালেমা পড়ার আগে যে ছিল কাফের, সে এই কালেমা পড়ামাত্র মুসলিম হয়ে যায়। আগে যে ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালার কাছে ছিল ঘৃণিত, এ কালেমা পড়ার পর সে হয়ে যায় তাঁর প্রিয়। আগে যে ব্যক্তি ছিল জাহান্নামের উপযুক্ত, এ কালেমা পড়ার পর সে জান্নাতের উপযুক্ত ও রহমত লাভের যোগ্য হয়ে যায়। আমি যদি বলি মোটেই অত্যুক্তি হবে না যে, এটা এমনই এক কালেমা, যা মানুষকে এক লহমার মধ্যে জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তর থেকে উদ্ধার করে জান্নাতুল ফিরদাওসের সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছিয়ে দেয়। আর এটা কোনো কবিসুলভ অতিরঞ্জন নয়; বরং এক অনস্বীকার্য বাস্তবতা।
বাস্তবতা হলো, এটা কোনো মন্ত্রও নয় এবং জাদুও নয়। প্রকৃতপক্ষে কালেমা ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ’ একটি অঙ্গীকার ও একটি স্বীকারোক্তি, যা মানুষ নিজ প্রতিপালকের সঙ্গে করে থাকে। কেউ যখন বলে ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’, তার মানে সে স্বীকার করে নেয় আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই, অন্য কোনো মাবুদের সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই এবং আমি সব রকম মাবুদের দাসত্ব অস্বীকার করছি। আর আমি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আল্লাহ তায়ালার সত্য রাসুল বলে স্বীকার করছি। এভাবে সে অঙ্গীকার করছে, আমি আমার সমগ্র জীবন আল্লাহ তায়ালার পছন্দমত, তাঁর বিধানমত ও তাঁর সন্তুষ্টি অনুযায়ী কাটানোর চেষ্টা করব। এই অঙ্গীকারের বদৌলতেই তার জীবনে এই মহাবিপ্লব ঘটে যায় যে, আগে সে আল্লাহ তায়ালার অপ্রিয় ছিল, এখন তাঁর প্রিয় হয়ে গেছে; আগে সে কাফের ছিল, এখন মুসলিম হয়ে গেছে এবং আগে জাহান্নামি ছিল, এখন জান্নাতি হয়ে গেছে। এসব পরিবর্তন তার ওই অঙ্গীকারের কারণেই সাধিত হয়। শরিয়তে ওই অঙ্গীকারেরই নাম ‘তাওহিদ’।
আপনারা জানেন, হজরত আদম আলাইহিস-সালাম থেকে নিয়ে মহানবী নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পর্যন্ত যত নবী-রাসুল এসেছেন, সবাই এই বুনিয়াদি দাওয়াত দিয়েছেন। তাওহিদের দাওয়াত দিয়েছেন। আগে যত সম্প্রদায়ের ওপর আজাব নাজিল হয়েছিল, তা এই তাওহিদ থেকে মুখ ফেরানোর কারণেই হয়েছিল। আম্বিয়া আলাইহিমুস-সালাম যত কষ্ট-ক্লেশ ভোগ করেছিলেন, তা কেবল এই তাওাহদের প্রচার-প্রসারের জন্য ভোগ করেছিলেন। এটা এক বুনিয়াদি আকিদা, যাকে আল্লাহ তায়ালার দ্বীন-ইসলামের ভিত্তিপ্রস্তর বলাই সঙ্গত। ইসলামের সারকথাই হলো আল্লাহ তায়ালাকে মাবুদ স্বীকার করে নিয়ে অন্যসব মাবুদকে অস্বীকার করা, সব মাবুদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করা এবং আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও হুকুম মান্য না করা।
উলামায়ে কিরাম লিখেছেন, তাওহিদ দুই ধরনের। বিশ্বাসগত তাওহিদ ও কর্মগত তাওহিদ। বিশ্বাসগত তাওহিদের অর্থ হলো, মানুষ এ কথার পূর্ণ বিশ্বাস রাখবে, এ বিশ্বজগতের আল্লাহ ছাড়া কোনো স্রষ্টা ও মাবুদ নেই, তিনি ছাড়া ইবাদতের উপযুক্ত আর কেউ নেই। সেই সঙ্গে আল্লাহ তায়ালার সত্তা ও গুণাবলীতে কাউকে শরিক করবে না। আল্লাহর সত্তায় শরিক না করার অর্থ আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে মাবুদ সাব্যস্ত না করা আর তাঁর গুণাবলীতে শরিক না করার অর্থ যেসব গুণ কেবল আল্লাহ তায়ালারই বৈশিষ্ট্য ও তাঁরই সঙ্গে সম্পৃক্ত, তাতে অন্য কাউকে শরিক না করা।
উদাহরণত আল্লাহ তায়ালা রাজ্জাক—তিনি রিজক দান করেন। এই রিজক দানের গুণে অন্য কাউকে অংশীদার মনে করবে না অর্থাত্ এই ধারণা রাখবে না যে, অমুক-অমুকও রিজক দেয়ার ক্ষমতা রাখে। সব মানুষের উপকার-অপকার আল্লাহ তায়ালারই হাতে। কাজেই বিশ্বাস রাখবে যে, উপকার-অপকার কেবল তিনিই করতে পারেন। অন্য কাউকে এ গুণের অধিকারী মনে করবে না। রোগ ও আরোগ্য দানের মালিক কেবলই আল্লাহ তায়ালা। কাজেই অন্য কাউকে রোগদাতা ও আরোগ্যদানকারী মনে করবে না। এভাবে তাঁর আরও যত গুণ আছে, তাতে অন্য কাউকে অংশীদার সাব্যস্ত করবে না।
এ বিষয়টা পরিষ্কার করার প্রয়োজন এ কারণে যে, আল্লাহ তায়ালার সত্তায় শরিক না করার বিষয়টা দুনিয়ার সব ধর্মে অবিসংবাদিত। এমনকি যে কাফের ও মুশরিকদের প্রতি মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রেরিত হয়েছিলেন এবং যাদের তিনি তাওহিদের দাওয়াত দিয়েছিলেন, তারাও স্বীকার করত—সৃষ্টিকর্তা কেবল আল্লাহ তায়ালাই, অন্য কেউ নয়। তারাও মানত, এ বিশ্ব চরাচর আল্লাহ তায়ালারই সৃষ্টি এবং আমাদেরও তিনিই সৃষ্টি করেছেন। তারপরও তো তারা মুশরিক। তাহলে তাদের শিরক কী ছিল? তাদের শিরক ছিল এই যে, তারা আল্লাহ তায়ালার গুণাবলীতে কিছু দেবতাকে শরিক মানত। তারা বলত, আল্লাহ তায়ালা রিজকের বিভাগ অমুক দেবতার ওপর ন্যস্ত করে রেখেছেন। বৃষ্টিদানের দায়িত্ব অমুক দেবতার ওপর এবং আরোগ্যদানের কাজ অমুক দেবতার ওপর ন্যস্ত করেছেন। এভাবে আল্লাহ তায়ালার গুণাবলীতে তারা দেব-দেবীকে শরিক করত। আর এ কারণেই তাদের মুশরিক বলা হয়েছে। নচেত্ খোদ কোরআন মাজিদই বলছে—‘আপনি যদি তাদেরকে জিজ্ঞেস করেন, কে আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছে? তারা বলবে, আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন।’ (সূরা যমুার : আয়াত ৩৮)
অন্যত্র আল্লাহ তায়ালা বলেছেন—‘আল্লাহর সঙ্গে আর কোনো মাবুদ আছে কি?’ অর্থাত্ তোমরা তো স্বীকার করছ আল্লাহ ছাড়া কোনো সৃষ্টিকর্তা নেই, তা সত্ত্বেও তোমরা তাঁর গুণাবলীতে অন্যদের শরিক মানছ? এটা তো কোনো বুদ্ধির কথা নয়।
এ কারণেই বিশ্বাসগত তাওহিদ তখনই পূর্ণতা লাভ করে, যখন আল্লাহ তায়ালার সত্তায় কাউকে শরিক না মানার সঙ্গে সঙ্গে তাঁর গুণাবলীতেও কাউকে শরিক না মানা হবে। অর্থাত্ মানুষ ইবাদত করবে তো কেবল আল্লাহ তায়ালারই করবে, মাবুদ মানবে তো কেবল আল্লাহকেই মানবে, কিছু চাবে তো আল্লাহরই কাছে চাবে। কেবল আল্লাহ তায়ালাকেই সঙ্কট মোচক, রিজিকদাতা ও অরোগ্যদানকারী বলে বিশ্বাস করবে, অন্য কাউকে নয়। এটাই পরিপূর্ণ তাওহিদ, যার দাওয়াত হজরত আদম আলাইহিস সালাম থেকে নিয়ে হজরত মুহাম্মাদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পর্যন্ত সব নবী-রাসুল দিয়েছেন।
তাওহিদের দ্বিতীয় প্রকার হলো আমলি বা কর্মগত তাওহিদ। অর্থাত্ আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই— এই বিশ্বাস মানুষের বাস্তব ও ব্যবহারিক জীবনের সঙ্গে সংলিপ্ত হয়ে যাবে। প্রতিটি মুহূর্তে এর তাত্পর্য তার চেতনায় জাগ্রত থাকবে। সে অনুক্ষণ এই বিশ্বাসে উজ্জীবিত থাকবে যে, আল্লাহ ছাড়া কেউ আমার কোনো ক্ষতি করারও সামর্থ্য রাখে না, উপকার করারও না। আল্লাহ ছাড়া এমন কোনো সত্তা নেই যার আনুগত্য করা আমার অবশ্যকর্তব্য। আমাকে আনুগত্য করতে হবে কেবলই আল্লাহর। তাঁর আনুগত্য করতে গিয়ে আমাকে যত বড় ত্যাগই স্বীকার করতে হোক না কেন, তাতে আমি দ্বিধাবোধ করব না। এ বিশ্বাস যখন কারও বাস্তব জীবনের সঙ্গে নিবিড়ভাবে মিশে যায়, তখন সুফি-সাধকদের পরিভাষায় বলা হয়, সে ‘আমলি তাওহিদ’-এর স্তরে পৌঁছে গেছে।
কারও আমলি তাওহিদ অর্জিত হয়ে গেলে সে তার জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আল্লাহ তায়ালার হুকুমকে সামনে রেখে কাজ করে। সে চিন্তা করে, আমার এই পদক্ষেপে আল্লাহ তায়ালা খুশি হবেন না অখুশি হবেন? এমন তো নয় যে, আমার এ কাজের ফলে আল্লাহ তায়ালার নাফরমানি হয়ে যাবে? নাফরমানির আশঙ্কা থাকলে সে সেই কাজ থেকে নিবৃত্ত থাকে। সে আল্লাহ ছাড়া আর কাউকে ভয় করে না। সে আল্লাহ ছাড়া কারও কাছে কিছু আশা করে না।
আল্লাহ তায়ালা হুকুমের খেলাফ জগতের সমগ্র সম্পদও যদি তার পায়ের ওপর রেখে দেয়া হয়, তবুও সে সম্পদ তার সংকল্পকে টাল খাওয়াতে পারে না। কোনো রকম প্রলোভনই তাকে আল্লাহর হুকুম থেকে বিমুখ করতে পারে না। কেউ যদি তার ওপর চূড়ান্ত পর্যায়ের চাপ সৃষ্টি করে, এমনকি মৃত্যুর ভয়াল নৃত্যও যদি তার দৃষ্টিগোচর হয়, তবুও সে আল্লাহর হুকুম থেকে মুখ ফেরাতে প্রস্তুত হয় না। কারণ সে তো জানে জীবন-মরণ, রোগ ও আরোগ্য আল্লাহ তায়ালারই হাতে। তিনি এই মুহূর্তকে আমার মৃত্যুর জন্য স্থির করে থাকলে কেউ তা টলাতে পারবে না। আর যদি আমার আয়ু আরও অবশিষ্ট থাকে তবে কারও পক্ষে আমার মৃত্যু ঘটানো সম্ভব হবে না। এ বিষয়টাকেই শায়খ সাদি (রহ.) এভাবে ব্যক্ত করেছেন—
একজন তাওহিদে বিশ্বাসীর অবস্থা তো এই যে, তুমি যদি তার পায়ের ওপর সারা দুনিয়ার সব সোনা এনে ঢেলে দাও কিংবা তার মাথার ওপর সুতীক্ষষ্ট তরবারি উঁচিয়ে ধর, তবু সেদিকে ভ্রূক্ষেপ করবে না। কারণ সে তো আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও কাছে কিছু আশা করে না এবং তাঁকে ছাড়া অন্য কাউকে ভয় করে না। বস্তুত এরই ওপর তাওহিদের ভিত্তি (গুলিস্তাঁ : পৃষ্ঠা-২৪৩)
মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ঘটনা আপনি শুনে থাকবেন। এক যুদ্ধের সফরে দুপুর বেলা তিনি একটি গাছের ছায়ায় বিশ্রাম করছিলেন। তাঁর তরবারিখানি গাছের ঢালে লটকানো ছিল। এ সময় হঠাত্ করে শত্রুদলের এক ব্যক্তি সেখানে এসে পৌঁছল এবং গাছ থেকে তরবারিটি হাতে নিয়ে নিল। তারপর মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জাগিয়ে বলল, এবার আমার হাত থেকে তোমাকে কে বাঁচাবে? চিন্তা করে দেখুন কেমন দৃশ্য! মৃত্যু সামনে নৃত্য করছে! নাঙা তরবারি হাতে শত্রু দণ্ডায়মান। সে তাঁর রক্তের পিপাসু। তার বাহুতে বল আছে। আক্রমণের উদ্দেশ্যেই সে এসেছে। আপাতদৃষ্টিতে কোনো বাধাও তার সামনে নেই। কিন্তু তা সত্ত্বেও মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শান্ত সমাহিত কণ্ঠে জবাব দিলেন, আল্লাহই আমাকে রক্ষা করবেন। অর্থাত্ এই ক্ষণে আমার মৃত্যুই যদি আল্লাহ তায়ালার অভিপ্রায় হয়, তবে দুনিয়ার কোনো শক্তি আমাকে বাঁচাতে পারবে না। পক্ষান্তরে আল্লাহ তায়ালা যদি আমার আয়ু আরও অবশিষ্ট রেখে থাকেন, তবে তোমার তরবারি ও তোমার শত্রুতা আমার কেশাগ্র স্পর্শ করতে পারবে না। এমনই বিশ্বাস ও আস্থার সঙ্গে তিনি এ জবাব দিয়েছিলেন যে, শত্রুর শরীরে কাঁপন ধরে গেল এবং সেই কাঁপনে তার হাত থেকে তরবারি নিচে পড়ে গেল। এবার সেই তরবারি মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাতে নিলেন। তারপর বললেন, বল এবার তোমাকে কে রক্ষা করবে? লোকটির কাছে এর কোনো উত্তর ছিল না। সে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সেই বিশ্বাস ও আস্থা দেখে এমনই প্রভাবিত হলো যে, তখনই ইসলাম গ্রহণ করল। (সহিহ বুখারি, জিহাদ অধ্যায়, হাদিস নং ২৬৯৪; সহিহ মুসলিম অধ্যায় : মুসাফিরদের সালাত ও কসর প্রসঙ্গ, হাদিস নং ১৩৯১; মুসনাদে আহমাদ, হাদিস নং ১৩৮১৬)
বোঝানো উদ্দেশ্য ছিল যে, আমলি তাওহিদ বলা হয় মানুষের এই অবস্থাকে যে, সে তার জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু’র তাত্পর্যকে নিজ চেতনায় জাগ্রত রাখবে। সে চিন্তা করবে, এ কালেমার মাধ্যমে সে তার প্রতিপালকের সঙ্গে এক অঙ্গীকারে আবদ্ধ হয়েছে। সে অঙ্গীকারের দাবি হলো, আমি আমার জীবনের কোনো পদক্ষেপেই আল্লাহর কোনো হুকুম অমান্য করব না। আমলি তাওহিদের এ অবস্থাই মূলত মানুষের জীবনে আমূল পরিবর্তন ঘটায় এবং এটাই সে জিনিস, যা মানুষকে জাহান্নাম থেকে উদ্ধার করে জান্নাতি বানিয়ে দেয় এবং আল্লাহর কাছে ঘৃণিত থাকার পর তাকে তাঁর প্রিয় বান্দায় পরিণত করে।
‘আমলি তাওহিদ’ অর্জন করার উপায় এই যে, মানুষ সর্বপ্রথম জানার চেষ্টা করবে, কালেমার প্রতিশ্রুতি গ্রহণের পর তার ওপর শরিয়তের পক্ষ থেকে কী কী দায়িত্ব অর্পিত হয়। আল্লাহ তায়ালা তার ওপর কী কী বিধান আরোপ করেছেন। কোন্ কোন্ কাজ তাকে করতে বারণ করেছেন। সর্বপ্রথম কাজ হলো এসব বিষয় সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করা। এ কারণেই নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন—‘ইলম অন্বেষণ করা প্রতিটি মুসলিমের ওপর ফরজ।’ (সুনানু ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ২২০)
অর্থাত্ ঈমান আনার পর প্রত্যেক মুসলিমের কর্তব্য হলো এই জ্ঞান অর্জন করা যে, আল্লাহ তায়ালা কী পছন্দ করেন? কী করলে তাঁর নাফরমানি হয়। এসব বিষয় জানা হয়ে গেলে আল্লাহ তায়ালার হুকুম তামিল করা এবং নাফরমানি থেকে বেঁচে থাকা সহজ হয়ে যায়। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে তাওহিদের প্রকৃত দাবি বোঝার ও সে দাবি পরিপূর্ণভাবে আদায় করার তাওফিক দান করুন এবং তার সুফল দ্বারা আমাদের ধন্য করে পরিপ্লুত করুন।
লেখকঃ জাস্টিস আল্লামা মুফতি তাকী উসমানী
অনুবাদ : মুহাম্মদ তৈয়্যেব হোসাইন