New Muslims APP

লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ এর অর্থ ও দাওয়াত

লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ এর অর্থ ও দাওয়াত

লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ এর অর্থ ও দাওয়াত

তাওহীদ শব্দটি আরবী (ওহদ) ক্রিয়ামূল থেকে উৎপত্তি হয়েছে। এর অভিধানিক অর্থ কোন জিনিসকে একক হিসেবে র্নিধারণ করা। না বাচক ও হাঁ বাচক উক্তি ব্যতীত এটির বাস্তবায়ন হওয়া সম্ভব নয়। অর্থাৎ একককৃত বস্তু ব্যতীত অন্য বস্তু হতে কোন বিধানকে অস্বীকার করে একককৃত বস্তুর জন্য তা সাব্যস্ত করা। যেমন আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন মাবুদ নেই, এ কথার সাক্ষ্য দেয়া ব্যতীত কোন ব্যক্তির তাওহীদ পূর্ণ হবেনা। যে ব্যক্তি এই সাক্ষ্য প্রদান করবে, সে আল্লাহ ছাড়া অন্যান্য সকল বস্তু হতে উলুহীয়্যাতকে (ইবাদত) অস্বীকার করে শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য তা সাব্যস্ত করবে। অর্থাৎ নাফি (না বোধক) ও ইছবাত ( হাঁ বোধক ) বাক্যের সমন্বয় ব্যতীত তাওহীদ কখনো প্রকৃত তাওহীদ হিসাবে গণ্য হবে না। মুসলিম বিদ্বানগণ তথা জ্ঞানীগণ তাওহীদকে তিন ভাগে বিভক্ত করেছেন। যেমন ১। তাওহীদুর রুবুবীয়াহ। ২। তাওহীদুল উলুহীয়াহ। ৩। তাওহীদুল আসমা আস সিফাত। তাওহীদ উপর্যুক্ত তিন প্রকারের মাঝে সীমিত।
তাওহীদে রুবুবীয়্যার পরিচয়: যেমন সৃষ্টি, রাজত্ব, কর্তৃত¦ ও পরিচালনায় আল্লাহকে এক হিসেবে বিশ্বাস করার নাম তাওহীদে রুবুবীয়াহ। আল্লাহ একাই সব কিছুর সৃষ্টি কর্তা তিনি বলেন! আল্লাহ ছাড়া কোন ¯্রষ্টা আছে কি? যে তোমাদেরকে আকাশ ও জমিন হতে জীবিকা প্রদান করে, প্রকৃত পক্ষে আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই। (সূরা ফাতির: ৩) অন্যত্র আল্লাহ বলেন: সে মহান সত্তা অতিব বরকতময়, যার হাতে রয়েছে সকল রাজত্ব। আর তিনি প্রতিটি বিষয়ের উপর ক্ষমতাবান। (সূরা মুলক: ১) এ ভাবে বহু আয়াত এবং হাদীস রয়েছে যার দৃষ্টান্ত। অন্যত্র আল্লাহ পাক বলেন: সৃষ্টি করা ও আদেশ দানের মালিক একমাত্র তিনি। বিশ্ব জগতের প্রতিপালক আল্লাহ তাআলা অতিব বরকত ময়। (সূরা আরাফ: ৫৪)
তাওহীদুল উলুহীয়্যাহ: এককভাবে আল্লাহর এবাদত করার নাম তাওহীদে উলুহীয়্যাহ। আল্লাহ পাক বলেন! নিশ্চয়ই যে ব্যক্তি শিরকে লিপ্ত হবে, আল্লাহ তার উপর জান্নাত হারাম করে দিয়েছেন। তার ঠিকানা জাহান্নাম। আর জালেমদের জন্য কোন সাহায্যকারী নেই। (সূরা মায়েদা: ৭২)
তাওহীদুল আসমা ওয়াস সিফাত: তাওহীদুল আসমা ওয়াসসিফাতের অর্থ হল; আল্লাহ নিজেকে যে সমস্ত নামে নামকরণ করেছেন, এবং তাঁর কিতাবে নিজেকে যে সমস্ত গুণে গুণান্বিত করেছেন সে সমস্ত নাম ও গুণাবলিতে আল্লাহকে একক ও অদ্বিতীয় হিসেবে মেনে নেওয়া। আল্লাহ বলেন: তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর এবং তার সাথে কাউকে শরীক করোনা । (সূরা নিসা: ৩৬)
তাওহীদ ইসলামের এক গুরুত্ব পূর্ণ মৌলিক বিশ্বাসের নাম। এই বিশ্বের সৃষ্টির্কতা একমাত্র মহান আল্লাহ তায়ালা, তিনি প্রতিটি বস্তু সৃষ্টি করেছেন, তিনিই এই বিশ্বের প্রতিপালক ও পরিচালক। তার কোন শরীক বা অংশীদার নেই। তাওহীদ হল মহান স্রষ্টা আল্লাহকে তাঁর ক্ষমতা ও তার সকল গুণাবলীসহ বিশ্বাস করা যেমন, তিনি জব্বার ও কাহ্হার আবার তিনি রহিম ও রহমান। এবং তাঁর কোন শরীক বা অংশীদার নেই। এবং তিনি সমস্ত ক্ষমতার উৎস। আল্লাহর প্রকৃত পরিচয় ও তাঁর গুণাবলী, অধিকার, এবং ক্ষমতাসহ তাঁকে বিশ্বাস করা এবং এ ব্যাপারে কাউকে অংশীদার না বানানোই হচ্ছে তাওহীদ।
তাওহীদের মূলমন্ত্র বা ঘোষণা হচ্ছে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ। নেই কোন ইলাহ আল্লাহ ছাড়া বা আল্লাহ ব্যতীত। এখানে দুটি বিষয়ে ঘোষণা দেওয়া হল। প্রথমে একটি অস্বীকার করার দ্বিতীয়টি স্বীকার করার। যেমন লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ মুহাম্মদুর রাসুলুল্লাহ। এই কালেমা পড়েই আমরা তাওহীদের ঘোষণা বা স্বীকৃতি প্রদান করে থাকি। আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই। মুহাম্মাদ (সা.) আল্লাহর প্রেরিত রাসূল। আমাদের বাংলা ভাষায় এই কালেমার অর্থ আমরা ছোটকাল থেকেই শুনে আসছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই মুহাম্মাদ (সা.) আল্লাহর রাসূল। এতে একটি আরবী শব্দকে আরেকটি আরবী শব্দ দিয়ে তরজুমা করা হয়েছে । এতে বাংলা ভাষার লোকেরা কি বুঝবে? মাবুদ শব্দের অর্থ যার এবাদত করা হয় যিনি এবাদতের যোগ্য। আরবী দিয়ে আরবী তরজুমা করলে সেটাতো আর তরজুমা হয়না। লা ইলাহা, এটা অস্বীকার করা যে কোন ইলাহ বা আইন দাতা, বিধান দাতা, ক্ষমতাদর নেই। ‘ইল্লাল্লাহ’ আল্লাহ ছাড়া তথা আল্লাহ ব্যতীত, এটা স্বীকার করা। আবার অনেক জায়গায় মুরুব্বীদের আলোচনায় তথা বয়ান করতে শুনেছি। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এর অর্থ, কিছু থেকে কিছু হয় না যা কিছু হয় আল্লাহ থেকে হয়। এই হচ্ছে কালেমার অর্থ। তাওহীদের এই ঘোষণা যদি আমরা সঠিকভাবে দিতে না পারি তাহলে এই কলেমা আমাদেরকে যে মরদে মুমিন বানানোর কথাছিল তা না বানিয়ে আমাদেরকে বানানো হলো বিখারীর মত নতজানু নীতির মুমিন। কারণ কালেমায়ে তাওহীদে যে স্বীকার অস্বীকারের বিপ্লবী ঘোষণা রয়েছে তা যদি বুঝে না আসে তাহলে কি করে মরদে মুমিন হওয়া যাবে? জ্ঞানী হওয়ার জন্য জ্ঞান অর্জন করতে হবে। জ্ঞান অর্জন না করে জ্ঞানী হওয়া যায় না। সে জন্য নবী করীম (সা.) বলেছেন জ্ঞান অর্জন করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য ফরজ। (সহীহ আল জা‘মে ৩৮০৮-৩৮০৯)
আমরা ইতিহাস থেকে দেখতে পাই ছাহাবায়ে কেরামগণ ঈমান আনার পর কি ভাবে দ্বীনের কাজ আঞ্জাম দিয়ে ছিলেন। যেমন হযরত ওমর (রা.) ঈমান আনার পূর্বে তিনি অত্যন্ত প্রভাবশালী ছিলেন বিরোধিতার ক্ষেত্রে। আল্লাহর প্রিয় হাবীব জনাবে মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) আল্লাহর কাছে দোয়া করলেন হে আল্লাহ! ইসলামের শক্তি বৃদ্ধির জন্য দুই ওমর থেকে এক ওমরকে ইসলামের জন্য কবুল করুন! আল্লাহপাক হযরত ওমর (রা.)কে ইসলামের জন্য কবুল করে নিলেন। ইতিহাস সাক্ষি যে রাস্তাদিয়ে হযরত ওমর (রা.) চলতেন সে রাস্তা থেকে শয়তান পর্যন্ত পালিয়ে যেত। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন; আমার পরে কোন নবী আসবে না, যদি নবী আসতো তাহলে ওমর হতো আমার পরের নবী।
হযরত ওমর (রা.) খেলাফতের সময়ে তিনি অর্ধেক পৃথিবীর শাসক ছিলেন। ঈমানের পরীক্ষা দিয়ে সাহাবায়ে কেরামগণ বহুদৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, যা আমাদের জন্য অনুকরনীয় ও অনুসরণীয়। যেমন হযরত ওমর (রা.) ঈমান আনার পর তথা তাওহীদের ঘোষণা দেওয়ার সাথে সাথে কি ভাবে দ্বীনের দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ঘর থেকে বের হয়ে নবীজির দরবারে এসে বললেন; হে আল্লার রাসূল! আমরা সংখ্যায় কতজন নবীজি (সা.) বললেন ৪০ জন, ওমর (রা.) বললেন আমারা কি সত্যে দ্বীনের দাওয়াত দিচ্ছি কি না? জবাবে নবীজি বললেন হ্যাঁ। ওমর (রা.) বললেন তাহলে গোপনে দাওয়াত কেন? তিনি প্রকাশ্য আল্লাহর তাওহীদের বাণী ঘোষণা করে দিলেন। কারণ তিনি কালেমার তাৎপর্য বুঝেছিলেন। আমাদেরকেও কালেমার অর্থ বুঝতে হবে তাহলেই তাওহীদের সঠিক দায়িত্ব ও তাৎপর্য উপলব্দি করতে পারব। আল্লাহ পাক তাঁর ঐশীগ্রন্থ আল কুরআনে বিশ্ববাসীকে জানিয়ে দিলেন ঈমান আনতে হলে প্রথমে তাগুত তথা (শয়তানি শক্তি)-কে অস্বীকার করতে হবে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন: দ্বীনের ব্যাপারে জোর-জবরদস্তি নেই। ভ্রান্ত মত ও পথ থেকে সঠিক মত ও পথকে ছাঁটাই করে আলাদা করে দেয়া হয়েছে। এখন যে কেউ তাগুতকে অস্বীকার করে এবং আল্লাহর উপর ঈমান আনে, সে এমন একটি মজবুত অবলম্বন আঁকড়ে ধরল, যা কখনো ছিন্ন হয় না। আর আল্লাহ সব কিছু শোনেন ও জানেন। যারা ঈমান আনে আল্লাহ তাদের সাহায্যকারী ও সহায়। তিনি তাদেরকে অন্ধকার থেকে আলোর মধ্যে নিয়ে আসেন। আর যারা কুফরীর পথ অবলম্বন করে তাদের সাহায্যকারী ও সহায় হচ্ছে তাগুত। সে তাদেরকে আলো থেকে অন্ধকারের মধ্যে টেনে নিয়ে যায়। এরা আগুনের অধিবাসী। সেখানে থাকবে এরা চিরকালের জন্য। (সূরা আল বাকারা ২৫৬-২৫৭)
আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে কালিমা তায়্যিবার অর্থ সঠিকভাবে অনুধাবন করে তার দাওয়াতদানে কবূল করুন। আমীন

 

Leave a Reply


This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.