কুআনের দাওয়াত তাবলীগ করুন

কুরআনের দাওয়াত তাবলীগ করুন

কুরআনের দাওয়াত তাবলীগ করুন

প্রিয় পাঠকবৃন্দ! আজকের  বিষয় হলো: হে রাসূল আপনী কুরআনের দাওয়াতের তাবলীগ করুন। পবিত্র কুরআনের এই আয়াতের আলোকে: يَا أَيُّهَا الرَّسُولُ بَلِّغْ مَا أُنْزِلَ إِلَيْكَ مِنْ رَبِّكَ খুতবাহ পেশ করা হবে। ইনশা আল্লাহ।

 দাওয়াত-প্রচারের মহান দায়িত্ব নিয়েই আম্বিয়ায়ে কিরামগণ প্রেরিত হয়েছেন, যুগে যুগে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠির কাছে। আল্লাহর প্রতি যাদের বিশ্বাস নেই,অথবা থাকলেও শিরক-মিশ্রিত,অথবা বিকৃত তাদের সঠিক পথের দিশা দেয়া,দাসত্বের সরল সঠিক পথ তাদের সামনে পরিষ্কারভাবে উম্মোচিত করে তাদেরকে এমন পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া যাতে কিয়ামতের ময়দানে বলতে না পারে, আমাদের কাছে জান্নাতের সুসংবাদদাতা অথবা জাহান্নাম থেকে হুঁশিয়ারকারী হিসেবে কেউ আসেনি। ইরশাদ হয়েছে: أَنْ تَقُولُوا مَا جَاءَنَا مِنْم بَشِيرٍ وَلَا نَذِيرٍ فَقَدْ جَاءَكُمْ بَشِيرٌ وَنَذِيرٌ وَاللهُ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ

‘যেন তোমরা না বল যে,আমাদের নিকট কোনো সুসংবাদদাত কিংবা সতর্ককারী আসেনি। অবশ্যই তোমাদের নিকট সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী এসেছে। আর আল্লাহ সব কিছুর ওপর মতাবান’। (সূরা আল মায়িদা:১৯)

সম্মানিত পাঠক! আল্লাহ তাআলা মানুষকে সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করেছেন। আর তা হলো একমাত্র আল্লাহ তাআলার একক সত্তার প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করে কেবল তাঁরই ইবাদত করা। ইবাদত-বন্দেগী,দুআ-প্রার্থনার ক্ষেত্রে অন্য কাউকে তাঁর সাথে শরীক না করা। ইরশাদ হয়েছে :

وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنْسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ، مَا أُرِيدُ مِنْهُمْ مِنْ رِزْقٍ وَمَا أُرِيدُ أَنْ يُطْعِمُونِ.

‘আর জিন ও মানুষকে আমি কেবল এজন্যই সৃষ্টি করেছি যে, তারা আমার ইবাদত করবে। আমি তাদের কাছে কোন রিযক চাই না আর আমি চাই না যে, তারা আমাকে খাবার দিবে (সূরা আয্যারিয়াত: ৫৬-৫৭)।

আর আল্লাহ তাআলা অসীম দয়ালু,করুণার আধার। তাই তিনি মানব সৃষ্টির উদ্দেশ্য,পৃথিবীতে মানুষের করণীয়, মানুষের সর্বশেষ গন্তব্য ইত্যাদি বিষয় সবিস্তারে বলে দেয়ার দায়িত্ব নিজ হাতে নিয়েছেন এবং নবী রাসূলগণের মাধ্যমে তার সুস্পষ্ট বিবরণ মানুষের সামনে তুলে ধরেছেন। কারণ মানুষ নিজ উদ্যোগে এসব বিষয়ের আদ্যোপান্ত জানতে অক্ষম। আর এসব বিষয় সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা অর্জিত না হলে মানুষ তার কর্তব্য নির্ধারণে ব্যর্থ হবে নিশ্চিত রূপেই। ফলে পরকালের শাশ্বত জীবনে বঞ্চিত হবে অফুরান নিয়ামতপূর্ণ জান্নাত থেকে, বঞ্চিত হবে রাব্বুল আলামীনের মহা-আনন্দময় দীদার থেকে। শুধু তাই নয় বরং তার আবাস হিসেবে নির্ধারিত হবে মর্মন্তুদ শাস্তি ও অসহনীয় কষ্ট-যাতনার ভয়াবহ স্থান জাহান্নাম।

মানব জাতি রাসূল ও তাঁর উত্তরসূরিদের দাওয়াতের কারণেই সঠিক পথের দিশা পেয়েছে

প্রিয় পাঠক ও পাঠিকাবৃন্দ! নবী-রাসূলগণ মানুষকে জাহান্নামী জীবন থেকে উদ্ধার করে জান্নাতের পথে নিয়ে আসার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে গেছেন। আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রাপ্ত সংবাদ অক্লান্ত পরিশ্রম করে,সীমাহীন নির্যাতন-নিপীড়ন সহ্য করে মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন। নবী-রাসূলগণ যেসব জাতি ও মানব সম্প্রদায়ের প্রতি প্রেরিত হয়েছেন তাদেরকে পয়গামে ইলাহী পৌঁছিয়ে বালাগুম মুবীনের পর্যায় পর্যন্ত নিয়ে গেছেন এবং তাদের ওপর আল্লাহর প্রমাণ প্রতিষ্ঠা করে দিয়েছেন। অর্থাৎ তাদেরকে এমন পর্যায়ে নিয়ে গেছেন যে,তাদের কেউ আর বলতে পারবে না, আমাদের কাছে চিরসুখের জান্নাতী জীবনের পথ দেখানোর জন্য কেউ আসেনি। জান্নাতের সুসংবাদ বাহক কেউ প্রেরিত হয়নি। অথবা মর্মন্তুদ শাস্তির ঠিকানা জাহান্নাম থেকে হুঁশিয়ারকারী কেউ আসেনি। ইরশাদ হয়েছে :

رُسُلًا مُبَشِّرِينَ وَمُنْذِرِينَ لِئَلَّا يَكُونَ لِلنَّاسِ عَلَى اللهِ حُجَّةٌ بَعْدَ الرُّسُلِ وَكَانَ اللهُ عَزِيزًا حَكِيمًا

‘আর (আমি পাঠিয়েছি) রাসূলগণকে সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে, যাতে আল্লাহর বিপে রাসূলদের পর মানুষের জন্য কোন অজুহাত না থাকে। আর আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়’ (সূরা আন-নিসা:১৬৫)।

আখেরী নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আবির্ভাবের মাধ্যমে নবী-রাসূল প্রেরণের ধারাবাহিকতার সমাপ্তি ঘটে। মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পর আর কোন নবী আসবেন না। তবে যেহেতু পৃথিবী ধ্বংস হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত মানব সম্প্রদায়ের বংশ বিস্তার অব্যাহত থাকবে,তাই যারা ঈমানহারা, যারা সত্যের পথ থেকে দূরে অবস্থান করে,তাদের কাছে আল্লাহর পয়গাম পৌঁছে দেয়ার প্রয়োজন ফুরিয়ে যায়নি। তাদেরকে ঐশী আদর্শ ও মূল্যবোধ তথা ইসলামের প্রতি আহ্বানের দায়িত্ব রহিত হয়ে যায় নি,বরং খতমে নবুওতের পর তাবলীগে দ্বীনের এ মহান দায়িত্ব উম্মতে মুহাম্মাদীর কাঁধে অর্পিত হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে :

كُنتُمْ خَيْرَ أُمَّةٍ أُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ تَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَتَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنكَرِ وَتُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ ۗ وَلَوْ آمَنَ أَهْلُ الْكِتَابِ لَكَانَ خَيْرًا لَّهُم ۚ مِّنْهُمُ الْمُؤْمِنُونَ وَأَكْثَرُهُمُ الْفَاسِقُونَ   110 

তোমরাই হলে সর্বোত্তম উম্মত, মানবজাতির কল্যাণের জন্যেই তোমাদের উদ্ভব ঘটানো হয়েছে। তোমরা সৎকাজের নির্দেশ দান করবে ও অন্যায় কাজে বাধা দেবে এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে। আর আহলে-কিতাবরা যদি ঈমান আনতো,তাহলে তা তাদের জন্য মঙ্গলকর হতো। তাদের মধ্যে কিছু তো রয়েছে ঈমানদার আর অধিকাংশই হলো পাপাচারী। (সূরা আলে ইমরান: ১১০)

তাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসারী হিসেবে প্রতিটি ব্যক্তিকেই যার যার সাধ্যানুযায়ী ইসলামের প্রচারমূলক কার্যক্রমের সাথে জড়িত থাকতে হবে। অন্যথায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসারী হওয়ার দাবি মিথ্যা বলে সাব্যস্ত হবে।

দাওয়াত প্রচারের ক্ষেত্রে জান ও মাল ‍উভয় বিলিয়ে দিতে হবে:

সম্মানিত ভ্রমণকারী! দাওয়াত তথা ইসলামের প্রচার প্রসারে আমাদেরকে ঐকান্তিকভাবে কাজ করে যেতে হবে। এ পথে জান-মাল ব্যয় করতে হবে। কেবল নিজে সত্যানুসারী হলে দায়িত্ব শেষ হয়ে যাবে না বরং অন্যদেরকেও সত্যের দিকে আহ্বান করতে হবে। তবে এক্ষেত্রে পরিবেশ ও পারিপার্শ্বিকতার দাবি ও চাহিদা সামনে রেখে কর্তব্য পালনে মনোযোগী হতে হবে। গুরুত্বানুসারে দাওয়াতী কার্যক্রমের টার্গেটসমূহ ঢেলে সাজাতে হবে। যারা তাওহীদে অবিশ্বাসী, আল্লাহর নিরঙ্কুশ একত্ববাদে যাদের ঈমান নেই তাদের প্রতি দাওয়াতী কার্যক্রমের প্রারম্ভিক বিন্দু হবে তাওহীদের প্রতি বিশ্বাসের আহ্বান। তাওহীদের প্রতি বিশ্বাস স্থাপিত হলে নামাযের প্রতি আহ্বান। এরপর রোযা,হজ্ব,যাকাত ইত্যাদির প্রতি পর্যায়ক্রমে আহ্বান। ইবনে আব্বাস রাযি. থেকে বর্ণিত একটি হাদীসে এসেছে:

قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِمُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ حِينَ بَعَثَهُ إِلَى الْيَمَنِ إِنَّكَ سَتَأْتِي قَوْمًا أَهْلَ كِتَابٍ فَإِذَا جِئْتَهُمْ فَادْعُهُمْ إِلَى أَنْ يَشْهَدُوا أَن لَّا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَّسُولُ اللهِ، فَإِنْ هُمْ أَطَاعُوا لَكَ بِذَلِكَ فَأَخْبِرْهُمْ أَنَّ اللهَ قَدْ فَرَضَ عَلَيْهِمْ خَمْسَ صَلَوَاتٍ فِي كُلِّ يَوْمٍ وَلَيْلَةٍ، فَإِنْ هُمْ أَطَاعُوا لَكَ بِذَلِكَ فَأَخْبِرْهُمْ أَنَّ اللهَ قَدْ فَرَضَ عَلَيْهِمْ صَدَقَةً تُؤْخَذُ مِنْ أَغْنِيَائِهِمْ فَتُرَدُّ عَلَى فُقَرَائِهِمْ فَإِنْ هُمْ أَطَاعُوا لَكَ بِذَلِكَ، فَإِيَّاكَ وَكَرَائِمَ أَمْوَالِهِمْ وَاتَّقِ دَعْوَةَ الْمَظْلُومِ فَإِنَّهُ لَيْسَ بَيْنَهُ وَبَيْنَ اللهِ حِجَابٌ

‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুআ‘য ইবনে জাবাল (রাযি.) কে যখন ইয়েমেনে পাঠান,তখন তাকে বলেন,‘তুমি নিশ্চয় কিতাবীদের কাছে যাবে। তাই যখন তুমি তাদের কাছে যাবে,তাদেরকে এ কথার প্রতি সাক্ষ্য দানের আহ্বান জানাবে যে,আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই এবং মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর রাসূল। অতঃপর তারা যদি এ বিষয়ে তোমার আনুগত্য করে তবে তাদেরকে জানিয়ে দেবে,আল্লাহ তাআলা তাদের ওপর দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরয করেছেন। যদি তারা এ বিষয়ে তোমার আনুগত্য করে তবে তাদেরকে জানিয়ে দেবে,আল্লাহ তাআলা তাদের ওপর যাকাত ফরয করেছেন,যা ধনীদের কাছ থেকে নিয়ে দরিদ্রদেরকে দেয়া হবে। যদি তারা এব্যাপারে তোমার অনুসরণ করে তবে তুমি তাদের সর্বোত্তম সম্পদ পরিহার করবে। আর মাযলুমের দু‘আ থেকে হুঁশিয়ার থাকবে কেননা মাযলুম ব্যক্তি ও আল্লাহর মাঝে কোনো প্রতিবন্ধকতা নেই’। (বুখারী)

দূরদর্শিতা বিচক্ষণতার সঙ্গে দাওয়াত প্রচার করতে হবে:

মুহতারাম হাজেরীন! দাওয়াতের স্থান-কাল ও পাত্র নির্ণয়ের ক্ষেত্রে ও আমাদেরকে দূরদর্শিতার পরিচয় দিতে হবে। স্থান-কাল-পাত্র ভেদে দাওয়াতী বিষয়বস্তু উপস্থাপনের পন্থা ও পদ্ধতি নির্ণয় করতে হবে। যার সাথে যেভাবে কথা বললে অধিক ফলপ্রসু বলে মনে হবে তার সাথে সে ধরনের ভাষায় কথা বলতে হবে।

 এ দিকে ইঙ্গিত করেই মহাগ্রন্থ আল কুরআনে ইরশাদ হয়েছে :

وَمَا أَرْسَلْنَا مِنْ رَسُولٍ إِلَّا بِلِسَانِ قَوْمِهِ لِيُبَيِّنَ لَهُمْ فَيُضِلُّ اللهُ مَنْ يَشَاءُ وَيَهْدِي مَنْ يَشَاءُ وَهُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ.

‘আর আমি প্রত্যেক রাসূলকে তার কাওমের ভাষাতেই পাঠিয়েছি,যাতে সে তাদের কাছে বর্ণনা দেয়,সুতরাং আল্লাহ যাকে ইচ্ছা পথভ্রষ্ট করেন এবং যাকে ইচ্ছা সঠিক পথ দেখান। আর তিনি পরাক্রমশালী,প্রজ্ঞাময়’ । (সূরা ইবরাহীম: ৪)

দাওয়াত প্রচারের ক্ষেত্রে ধারাবাহিকতা বজায় রাখা:

সম্মানিত ভিজিটর! দাওয়াত উপস্থাপনের ক্ষেত্রে ধারাবাহিকতা বজায় রাখা জরুরী। পুরো ইসলাম একসাথে উপস্থাপন করার পরিবর্তে প্রথমে আকীদা-বিশ্বাস দিয়ে শুরু করা। এরপর পর্যায়ক্রমে এগিয়ে যাওয়া উচিত। আল্লাহর প্রতি ঈমান,রাসূলের প্রতি ঈমান,আসমানী কিতাবের প্রতি ঈমান,আখিরাতের প্রতি ঈমান,ফেরেশতাদের প্রতি ঈমান ইত্যাদি বিষয় সর্বাগ্রে উপস্থাপন করা। অর্থাৎ ঈমান ও আকীদাসংক্রান্ত বিষয়গুলো আগে উপস্থাপন করা। এসবের প্রতি যখন ব্যক্তির ধারণা পরিষ্কার হয়ে যাবে এবং যথার্থভাবে তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে নেবে, তখন পর্যায়ক্রমে তাকে আমলী বিষয়গুলোর প্রতি দাওয়াত দেয়া, যেমন নামায রোযা হজ্ব যাকাত ইত্যাদি। দাওয়াতী কার্যক্রমের ক্ষেত্রে এ ধারাবাহিকতা বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরী। আয়েশা রাযি. থেকে এক বর্ণনায় এসেছে:

وَلَوْ نَزَلَ أَوَّلُ شَيْءٍ : لَا تَشْرَبُوْا الْخَمْرَ ، لَقَالُوْا : لَا نَدَعُ الْخَمْرَ أَبَداً، وَلَوْ نَزَلَ : لَا تَزْنُوْا، لَقَالُوْا: لَا نَدَعُ الزِّنَا أَبَداً، لَقَدْ نَزَلَ بِمَكَّةَ عَلَى مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَإِنِّيْ لَجَارِيَةٌ أَلْعَبُ : بَلِ السَّاعَةُ مَوْعِدُهُمْ وَالسَّاعَةُ أَدْهَى وَأَمَرٌّ . وَمَا نَزَلَتْ سُوْرَةُ الْبَقَرَةِ وَالنِّسَاءِ إِلَّا وَأَنَا عِنْدَهُ.

`যদি শুরুতেই নাযিল হতো: তোমরা মদপান করো না, তবে তারা বলত,`আমরা কখনো মদ ছাড়ব না। যদি শুরুতেই নাযিল হতো: তোমরা যিনা করো না,তবে তারা অবশ্যই বলত: আমরা কখনো যিনা ছাড়ব না। মক্কায় মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট নাযিল হয়েছে, `বরং কিয়ামত তাদের প্রতিশ্রুত সময়। আর কিয়ামত অতি ভয়ঙ্কর ও তিক্ততর। আর তখন আমি ছিলাম ছোট বালিকা। আর সূরা বাকারা ও সূরা নিসা যখন নাযিল হলো তখন তো আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ঘর করছি। (বুখারী)

দাওয়াতকর্মে আদর্শিক দৃঢ়তা অত্যন্ত জরুরী: সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যাবে এ আশঙ্কায় অনেকেই দাওয়াতী বিষয়বস্তু উপাস্থাপন থেকে বিরত থাকেন। এটা মারাত্মক অন্যায়। কেননা দাওয়াত অবশ্যই পৌঁছাতে হবে। এ ক্ষেত্রে কোনো ত্রুটি বা উদাসীনতা আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আল্লাহ তাআলা এব্যাপারে সতর্ক করে বলেন:

يَا أَيُّهَا الرَّسُولُ بَلِّغْ مَا أُنْزِلَ إِلَيْكَ مِنْ رَبِّكَ وَإِنْ لَمْ تَفْعَلْ فَمَا بَلَّغْتَ رِسَالَتَهُ وَاللهُ يَعْصِمُكَ مِنَ النَّاسِ إِنَّ اللهَ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الْكَافِرِينَ

‘হে রাসূল!তোমার রবের পক্ষ থেকে তোমার নিকট যা নাযিল করা হয়েছে তা পৌঁছে দাও। আর যদি তুমি না কর তবে তুমি তাঁর রিসালাত পৌঁছালে না। আর আল্লাহ তোমাকে মানুষ থেকে রক্ষা করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ কাফির সম্প্রদায়কে হিদায়েত করেন না’ । (সূরা আল মায়িদা:৬৭)

  রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাওয়াতকর্ম ছেড়ে দিলে অথবা কুরাইশদের ইচ্ছানুযায়ী তাতে পরিবর্তন ঘটালে তিনি আজীবন তাদের বন্ধু হয়ে থাকতে পারতেন কিন্তু তিনি তা করেননি। আর এ ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাও তাঁকে কঠিনভাবে হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে :

وَإِنْ كَادُوا لَيَفْتِنُونَكَ عَنِ الَّذِي أَوْحَيْنَا إِلَيْكَ لِتَفْتَرِيَ عَلَيْنَا غَيْرَهُ وَإِذًا لَاتَّخَذُوكَ خَلِيلًا. وَلَوْلَا أَنْ ثَبَّتْنَاكَ لَقَدْ كِدْتَ تَرْكَنُ إِلَيْهِمْ شَيْئًا قَلِيلًا. إِذًا لَأَذَقْنَاكَ ضِعْفَ الْحَيَاةِ وَضِعْفَ الْمَمَاتِ ثُمَّ لَا تَجِدُ لَكَ عَلَيْنَا نَصِيرًا.

‘আর তাদের অবস্থা এমন ছিল যে,আমি তোমাকে যে ওহী দিয়েছি,তা থেকে তারা তোমাকে প্রায় ফিতনায় ফেলে দিয়েছিল,যাতে তুমি আমার নামে এর বিপরীত মিথ্যা রটাতে পার এবং তখন তারা অবশ্যই তোমাকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করত। আর আমি যদি তোমাকে অবিচল না রাখতাম,তবে অবশ্যই তুমি তাদের দিকে কিছুটা ঝুঁকে পড়তে। তখন আমি অবশ্যই তোমাকে আস্বাদন করাতাম জীবনের দ্বিগুণ ও মরণের দ্বিগুণ আযাব। তারপর তুমি তোমার জন্য আমার বিরুদ্ধে কোনো সাহায্যাকারী পাবে না’ । (সূরা আল ইসরা:৭৩-৭৫)

দাওয়াত প্রচারের ক্ষেত্রে প্রয়োজনে সঙ্গী গ্রহণ করতে হবে:

 দাওয়াত প্রচারের ক্ষেত্রে শক্তি সঞ্চয়ের উদ্দেশে ভ্রাতৃত্ব,বন্ধুত্ব ইত্যাদির সম্পর্ক কাজে লাগানোও একটি প্রয়োজনীয় বিষয়। মূসা আলাইহিস সালাম তাঁর দাওয়াতকর্মে সহযোগিতার জন্য তাঁর ভাই হারুন আলাইহিস সালামকে সঙ্গী করে নিয়েছিলেন। মহান আল্লাহ এরশাদ করছেন:

وَاجْعَل لِّي وَزِيرًا مِّنْ أَهْلِي  هَارُونَ أَخِي  اشْدُدْ بِهِ أَزْرِي  وَأَشْرِكْهُ فِي أَمْرِي  كَيْ نُسَبِّحَكَ كَثِيرًا  وَنَذْكُرَكَ كَثِيرًا

এবং আমার পরিবারবর্গের মধ্য থেকে আমার একজন সাহায্যকারী করে দিন। আমার ভাই হারুনকে। তার মাধ্যমে আমার কোমর মজবুত করুন। এবং তাকে আমার কাজে অংশীদার করুন। যাতে আমরা বেশী করে আপনার পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করতে পারি। এবং বেশী পরিমাণে আপনাকে স্মরণ করতে পারি। (সূরা ত্বাহা ২৯-৩৪)

দাওয়াত প্রচারে বিনম্র আচরণ ও কথা একটি জরুরী বিষয়: মূসা ও হারুন আলাইহিমাস সালামকে আল্লাহ তাআলা খেতাব করে বলেন :

اذْهَبَا إِلَى فِرْعَوْنَ إِنَّهُ طَغَى. فَقُولَا لَهُ قَوْلًا لَيِّنًا لَعَلَّهُ يَتَذَكَّرُ أَوْ يَخْشَى.  سورة طه 43

‘তোমরা দু’জন ফির‘আউনের নিকট যাও,কেননা সে তো সীমালংঘন করেছে। তোমরা তার সাথে নরম কথা বলবে। হয়তোবা সে উপদেশ গ্রহণ করবে অথবা ভয় করবে ।’

নির্ভরযোগ্য প্রমাণের মাধ্যমে দাওয়াত প্রচার করা:

দাওয়াত প্রচারে অকাট্য দলীল প্রমাণ পেশ করার প্রতি গুরুত্বারোপ করা জরুরী। যাতে দাওয়াতপ্রাপ্ত ব্যক্তির সকল সন্দেহ দূরীভূত হয় এবং দাওয়াতকে অস্বীকার করার মতো তার কাছে কোনো প্রমাণ না থাকে। এ ক্ষেত্রে নমরুদের সাথে ইবরাহীম আলাইহিস সালামের কথোপকথন বিশেষভাবে প্রনিধানযোগ্য। আল্লাহ তাআলা বলেন

 أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِي حَاجَّ إِبْرَاهِيمَ فِي رَبِّهِ أَنْ آتَاهُ اللهُ الْمُلْكَ إِذْ قَالَ إِبْرَاهِيمُ رَبِّيَ الَّذِي يُحْيِي وَيُمِيتُ قَالَ أَنَا أُحْيِي وَأُمِيتُ قَالَ إِبْرَاهِيمُ فَإِنَّ اللهَ يَأْتِي بِالشَّمْسِ مِنَ الْمَشْرِقِ فَأْتِ بِهَا مِنَ الْمَغْرِبِ فَبُهِتَ الَّذِي كَفَرَ وَاللهُ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الظَّالِمِينَ  

তুমি কি সে ব্যক্তিকে দেখনি,যে ইবরাহীমের সাথে তার রবের ব্যাপারে বিতর্ক করেছে যে, আল্লাহ তাকে রাজত্ব দিয়েছেন? যখন ইবরাহীম বলল,‘আমার রব তিনিই’ যিনি জীবন দান করেন এবং মৃত্যু ঘটান। সে বলল,আমিই জীবন দান করি এবং মৃত্যু ঘটাই। ইবরাহীম বলল, নিশ্চয় আল্লাহ পূর্বদিক থেকে সূর্য আনেন। অতএব তুমি তা পশ্চিম দিক থেকে আন। ফলে কাফির ব্যক্তি হতভম্ব হয়ে গেল। আর আল্লাহ যালিম সম্প্রদায়কে হিদায়াত দেন না’ (সূরা আল বাকারা:২৫৮)।

দাওয়াতের ক্ষেত্রে যুক্তিপ্রমাণ বিভিন্ন প্রকৃতির হতে পারে: তন্মধ্যে একটি হলো, প্রাকৃতিক দলীল যা মানুষ স্বাভাবিকভাবে বুঝে নিতে সক্ষম হয়। যেমন সৃষ্টিজগৎ ও মানব প্রকৃতিকেন্দ্রিক সাধারণ যুক্তিপ্রমাণ। এ ক্ষেত্রে নিজ কাওমের কাছে ইবরাহীম আলাইহিস-সালামের যুক্তি-প্রমাণ পেশ করার পদ্ধতি বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য। আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন:

فَلَمَّا جَنَّ عَلَيْهِ اللَّيْلُ رَأَىٰ كَوْكَبًا ۖ قَالَ هَـٰذَا رَبِّي ۖ فَلَمَّا أَفَلَ قَالَ لَا أُحِبُّ الْآفِلِينَ  فَلَمَّا رَأَى الْقَمَرَ بَازِغًا قَالَ هَـٰذَا رَبِّي ۖ فَلَمَّا أَفَلَ قَالَ لَئِن لَّمْ يَهْدِنِي رَبِّي لَأَكُونَنَّ مِنَ الْقَوْمِ الضَّالِّينَ  فَلَمَّا رَأَى الشَّمْسَ بَازِغَةً قَالَ هَـٰذَا رَبِّي هَـٰذَا أَكْبَرُ ۖ فَلَمَّا أَفَلَتْ قَالَ يَا قَوْمِ إِنِّي بَرِيءٌ مِّمَّا تُشْرِكُونَ  إِنِّي وَجَّهْتُ وَجْهِيَ لِلَّذِي فَطَرَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ حَنِيفًا ۖ وَمَا أَنَا مِنَ الْمُشْرِكِينَ

অতঃপর যখন চন্দ্রকে ঝলমল করতে দেখল,বললঃ এটি আমার প্রতিপালক। অনন্তর যখন তা অদৃশ্য হয়ে গেল,তখন বলল যদি আমার প্রতিপালক আমাকে পথ-প্রদর্শন না করেন,তবে অবশ্যই আমি বিভ্রান্ত সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাব। অতঃপর যখন সূর্যকে চকচক করতে দেখল,বললঃ এটি আমার পালনকর্তা,এটি বৃহত্তর। অতপর যখন তা ডুবে গেল,তখন বলল হে আমার সম্প্রদায়,তোমরা যেসব বিষয়কে শরীক কর,আমি ওসব থেকে মুক্ত। আমি এক মুখী হয়ে স্বীয় আনন ঐ সত্তার দিকে করেছি, যিনি নভোমন্ডল ও ভুমন্ডল সৃষ্টি করেছেন এবং আমি মুশরেক নই। (সূরা আনয়াম: ৭৬-৭৯)

 ইবরাহীম আলাইহিস সালাম চন্দ্র সূর্যের অস্ত যাওয়াকে, চন্দ্র সূর্য যে প্রভু হওয়ার অযোগ্য এবং প্রভু কেবল তিনিই হবেন যিনি এদের সৃষ্টি করেছেন,এ বিষয়ের দলিল হিসেবে পেশ করেছেন। শিরকী আকীদা-বিশ্বাসের পক্ষে আল্লাহর পক্ষ হতে নাযিল-হওয়া কোনো প্রমাণ নেই। তাই মুশরিকরা যেসব বস্তুকে মাবুদ বলে বিশ্বাস করে সেগুলোকে ভয় পাওয়ার কিছু নেই,এ যুক্তিটিও একটি স্বাভাবিক যুক্তি যা সকলেই বুঝে নিতে সক্ষম।

হিকমত ও প্রজ্ঞার মাধ্যমে দাওয়াত প্রচার করা:

দাওয়াত প্রচারের ক্ষেত্রে হেকমত একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। দাওয়াতপ্রাপ্ত ব্যক্তির সাথে দাওয়াতী সম্পর্ক কায়েম করার সঠিক পদ্ধতি কী হবে, কীভাবে তাকে ইসলামী আকীদা ও মূল্যবোধের প্রতি আগ্রহী করে তোলা যাবে, কখন ও কোন্ পদ্ধতিতে দাওয়াত দিলে সে অতিসহজে সত্য অনুধাবনে সম হবে, এসব বিষয় নির্ধারণের ক্ষেত্রে হেকমতের আশ্রয় নেয়া ছাড়া অন্যকোনো উপায় নেই।

দাওয়াতের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি হলো মাওইযায়ে হাসানা:  মাও‘ইযায়ে হাসানা অর্থ সুন্দর ওয়াজ বা কথামালা। বাচনভঙ্গি থেকে শুরু করে দাওয়াতী কথার উপকরণ নির্ধারণ, ধারাবাহিকতা বজায় রেখে যুক্তি-প্রমাণ পেশ,কাহিনী বর্ণনা,জান্নাতের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করা, জাহান্নামের ব্যাপারে ভয় ও শঙ্কা সৃষ্টি করা মাও‘ইযায়ে হাসানার অন্তর্ভুক্ত।

উত্তম পদ্ধতিতে বিতর্ক করা: মাও‘ইযায়ে হাসানার পরবর্তী পর্যায় হলো,উত্তম পদ্ধতিতে বিতর্ক করা। অর্থাৎ যদি দাওয়াতপ্রাপ্ত ব্যক্তি দাওয়াত দাতার সাথে বিতর্ক করতে চায়,অথবা পরিস্থিতি বিতর্কের দিকে গড়ায় তাহলে সে ক্ষেত্রে উত্তম পদ্ধতিতে বিতর্ক করা। ইরশাদ হয়েছে :

ادْعُ إِلَى سَبِيلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ وَجَادِلْهُمْ بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ إِنَّ رَبَّكَ هُوَ أَعْلَمُ بِمَنْ ضَلَّ عَنْ سَبِيلِهِ وَهُوَ أَعْلَمُ بِالْمُهْتَدِينَ

‘তুমিতোমার রবের পথে হিকমত ও সুন্দর উপদেশের মাধ্যমে আহ্বান কর এবং সুন্দরতম পন্থায় তাদের সাথে বিতর্ক কর। নিশ্চয় একমাত্র তোমার রবই জানেন কে তার পথ থেকে ভ্রষ্ট হয়েছে এবং হিদায়াতপ্রাপ্তদের তিনি খুব ভাল করেই জানেন’ । (সূরা আন নাহল: ১২৫)

অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে :

وَلَا تُجَادِلُوا أَهْلَ الْكِتَابِ إِلَّا بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ إِلَّا الَّذِينَ ظَلَمُوا مِنْهُمْ وَقُولُوا آمَنَّا بِالَّذِي أُنْزِلَ إِلَيْنَا وَأُنْزِلَ إِلَيْكُمْ وَإِلَهُنَا وَإِلَهُكُمْ وَاحِدٌ وَنَحْنُ لَهُ مُسْلِمُونَ.

‘আর তোমরা উত্তম পন্থা ছাড়া আহলে কিতাবদের সাথে বিতর্ক করো না। তবে তাদের মধ্যে ওরা ছাড়া, যারা যুলম করেছে। আর তোমরা বল, ‘আমরা ঈমান এনেছি আমাদের প্রতি যা নাযিল করা হয়েছে এবং তোমাদের প্রতি যা নাযিল করা হয়েছে তার প্রতি এবং আমাদের ইলাহ ও তোমাদের ইলাহ তো একই। আর আমরা তাঁরই সমীপে আত্মসমর্পণকারী’ (সূরা আল আনকাবূত:৪৬)।

দাওয়াত প্রচারের ক্ষেত্রে সব ধরণের মাধ্যম গ্রহণ করতে হবে:

সম্মানিত মুসাল্লিবৃন্দ! দাওয়াত প্রচারে আমাদেরকে আধুনিক সকল মাধ্যমই ব্যবহার করতে হবে। প্রিন্ট মিডিয়া, ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া, ইন্টারনেট প্রযুক্তি এসব কিছুকেই দাওয়াত প্রচারে ব্যবহার করতে হবে। অন্যথায় শত কোটি মানুষের দোরগোড়ায় ইসলামের অমীয় বাণী পৌঁছে দেয়া সম্ভবপর হবে না। আধুনিক প্রচার ও যোগাযোগ মাধ্যমগুলো এই বলে বর্জন করা যাবে যে, এগুলো অমুসলিমদের আবিস্কৃত। অথবা অন্যরা এসব মাধ্যমকে খারাপ উদ্দেশ্যে ব্যবহার করে থাকে। কেননা আধুনিক প্রচার ও যোগাযোগ মাধ্যম আল্লাহ তাআলার বিরাট এক নিয়ামত। তাই এ নেয়ামতকে আল্লাহর দ্বীন প্রচারের উদ্দেশ্যে অবশ্যই ব্যবহার করতে হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর যুগের সকল প্রচারমাধ্যমকেই ব্যবহার করেছেন। তাই রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইত্তিবা ও ইকতিদার দাবি হবে, আমাদের যুগের সকল প্রচারমাধ্যমকে আল্লাহর দ্বীন প্রচারের ক্ষেত্রে যথার্থরূপে ব্যবহার করা।

প্রিয় পাঠক বন্ধুগণ! সমগ্র পৃথিবীতে ছয়শত কোটির বেশি মানুষের বসবাস। আর এদের অধিকাংশই অমুসলিম। আবার মুসলমানদের মধ্যে অধিকাংশই হল নামেমাত্র মুসলিম। তাই ইসলাম প্রচারের দায়িত্ব থেকে পিছিয়ে থাকলে আল্লাহর কাছে জওয়াব দেয়ার মতো কোনো ভাষা আমাদের থাকবে না। কাজেই আসুন, আমরা সবাই মিলে ব্যাপক পরিকল্পনা ও নিরলস কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে এ মহান দায়িত্ব আনঞ্জাম দেয়ার জন্য বদ্ধপরিকর হই।

Related Post