নবীদুলালী হযরত যয়নব (রা.) বিনতে রাসূলুল্লাহ্ (সা.)

বানাতুন্নবী বা নবীদুলালী হযরত যয়নব (রা.) বিনতে রাসূলুল্লাহ্ (সা.)

বানাতুন্নবী বা নবীদুলালী
হযরত যয়নব (রা.) বিনতে রাসূলুল্লাহ্ (সা.)

১ম পর্ব

শেষ নবীর বড় কন্যা হযরত যয়নব আল্লাহ্র পথে শাহাদাত বরণ করেন। হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) তার সম্পর্কে নবীজীর উক্তি উল্লেখ করে বলেন, সে ছিল আমার সব চেয়ে ভাল কন্যা, যাকে আমার ভালবাসায় অতিষ্ঠ করা হয়েছে।
তার মাতা ছিলেন খাদীজা ইবনেতে খুওয়াইলিদ। হযরত খাদীজা (রা.) আল্লাহর রাসূলের প্রতি সর্ব প্রথম ঈমান আনেন। তার ফযীলত মর্তবা অসীম। সংক্ষেপে বলে যায়, বিগত উম্মতের মধ্যে হযরত মারইয়ামের যে মর্তবা ছিল, মুসলিম উম্মার মধ্যে হযরত খাদীজার মর্তবাও ঠিক অনুরূপ।
আবু আমর বলেন, তিনি ছিলেন নবীজীর কন্যাদের মধ্যে সবচেয়ে বড়, এতে কোন দ্বিমত নেই। কেউ দ্বিমত পোষণ করে থাকলে ভুল করবে এবং তার দাবি গ্রহণযোগ্য নয়। দ্বিমত এ ব্যাপারে থাকতে পারে যে, নবীজীর সন্তানদের মধ্যে প্রথমে হযরত যয়নবের জন্ম হয়েছে, না হযরত কাসেমের।
মানব বংশধারা সম্পর্কে ওয়াকিফহাল একটা মহলের মতে প্রথমে হযরত কাসেম জন্ম গ্রহণ করেন, অতঃপর হযরত যয়নব। ইবনে কালবীর মতে প্রথমে হযরত যয়নব জন্ম গ্রহণ করেন, এরপর হযরত কাসেম। যা হোক, হযরত যয়নব ছিলেন নবীজীর কন্যা সন্তানদের মধ্যে সবার বড়।
জন্ম
মহানবীর নবুওয়াত লাভের দশ বৎসর পূর্বে তিনি জন্ম গ্রহণ করেন। তখন হযরতের বয়স ছিল ৩০ বৎসর। তার শৈশব কালের কথা তেমন জানা যায় না। ইতিহাস গ্রন্থেও এ সম্পর্কে তেমন কিছু উল্লেখ নেই। নবীজীর কন্যাদের মধ্যে হযরত যয়নবের বিয়ে হয় সর্ব প্রথম। তখন তাঁর বয়স খুবই কম। আল্লাহর রাসূলের নবুওয়াত লাভের আগের ঘটনা। এ বিয়ে হয় তাঁর আপন খালাতো ভাই আবুল আছ এর সাথে। তাঁর লকব বা উপাধী ছিল লাকীত। স্বামী আবুল আছ এর বংশধারা ছিল-আবুল আছ ইবনে রাবী ইবনে আবদুল উযযা ইবনে আবদে শামস ইবনে আবদে মানাফ ইবনে কোছাই। তিনি ছিলেন হযরত খাদীজার আপন বোন হালা ইবনেতে খোওয়াইলিদের পুত্র। তার উপঢৌকনের মধ্যে অন্যান্য জিনিস ছাড়াও ছিল ইয়ামানের প্রসিদ্ধ আকীক পাথরের একটি হার। এটি তাকে হযরত হোযায়ফা দিয়েছিল।
নবীজী নবুওয়াত লাভ করলে হযরত যয়নবও ইসলাম প্রহণ করেন। স্বামী আছ এর ইসলাম গ্রহণ করার আগেই তিনি মদীনায় হিজরত করেন। স্বামী তখনো মুশরিক হিসেবে মক্কায় রয়ে যান। নবীজী যয়নব ও আবুল আছ এর দাম্পত্য সম্পর্ক এবং ভদ্র জনোচিত কর্মধারার প্রশংসা করতেন প্রায় সময়ই। আবুল আছ যেহেতু শিরকে লিপ্ত আর এ ক্ষেত্রে ইসলামের নির্দেশ তো এ হওয়াই স্বভাবিক যে, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটানো উচিত। কিন্তু নবীজী তখনো মক্কায় পরাভুত অবস্থায় ছিলেন। একটা শক্তি হিসেবে তখনো ইসলামের অভ্যুদয় ঘটেনি। মুসলমানদের প্রতি কাফেরদের অত্যাচার-নির্যাতন ছিল তখন চরমে। তখন ছিল ইসলামের সূচনা পর্ব মাত্র তাই  নবীজী পরিণামদর্শীতার পরিচয় দিয়ে স্বামী-স্ত্রীতে বিচ্ছেদ ঘটাননি।
কিন্তু ইসলামের বিকাশ লাভের সাথে সাথে ইসলাম বিরোধীদের বিরুদ্ধাচরণের তীব্রতাও বৃদ্ধি পায়। নবীজীকে উত্যক্ত উৎপীড়িত করার কোন উপায়ই তারা বাদ রাখেনি। কোরাইশের কিছু লোক আবুল আছকে বাধ্য করতে চেষ্টা করে যয়নবকে তালাক দিয়ে তার পরিবর্তে কোরাইশের কোন মহিলাকে বিয়ে করতে। কিন্তু আবুল আছ তাদের এ প্রচেষ্টায় সম্মত হননি, বরং তিনি তা করতে অস্বীকার করেন। এ কারণে নবীজী তাদের দাম্পত্য সম্পর্ককে ভালো মনে করতেন এবং এর প্রশংসা করতেন। হযরত যয়নব আবুল আছকে গভীর ভালবাসতেন। নিচের ঘটনা থেকেই তাদের ভালোবাসার গভীরতা ফুটে ওঠে।
নবুওয়াত লাভের ত্রয়োদশ বর্ষে নবীজী মক্কা মুয়ায্যামা থেকে হিজরত করেন, তখন হযরত যয়নব ছিলেন শ্বশুরালয়ে। স্বামী আবুল আছ মক্কার মুশরিকদের সঙ্গে মিলে মুসলমানদের বিরুদ্ধে বদর যুদ্ধে যোগ দেন। আব্দুল্লাহ্ ইবনে জুবাইর ইবনে নু‘মান অন্যান্য বন্দীদের সাথে আবুল আছকেও গ্রেফতার করে নিয়ে আসেন। এ সম্পর্কে মক্কাবাসীরা জানতে পেরে বন্দীদের মুক্ত করার জন্য ফিদিয়া পাঠায়। হযরত যয়নবও, দেবর আমর ইবনে রাবীকে একটা হারসহ প্রেরণ করেন, যেটি বিয়ের সময় মাতা খাদীজা কন্যাকে উপঢৌকন হিসেবে দিয়েছিলেন। হারটি নবীজীর খেদমতে পেশ করা হলে তিনি শোকাবিভুত হয়ে পড়েন। হযরত খাদীজার কথা তার মনে পড়ে যায়। অতঃপর তিনি সকলকে সম্বোধন করে বলেন, তোমরা ভালো মনে করলে যয়নবের স্বামীকে ছেড়ে দিতে পার। তার হারও ফেরত দিতে পার। হারটি ফেরত দেয়া হয় এবং হযরত যয়নবের স্বামী আবুল আছকেও ছেড়ে দেয়া হয়। (চলবে)

Related Post