Originally posted 2013-09-02 06:27:12.
হে আমার দোকানদার/ব্যবসায়িক ভাই!
আস্সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু…
এটি একটি পত্র যা আপনার এমন এক ভাইয়ের পক্ষ থেকে প্রেরিত, যিনি আপনার কল্যাণকামী, আপনার প্রতি দয়াকারী, যিনি আপনার জন্য দুনিয়া ও আখেরাতের সফলতা কামনা করেন, রুযী রুটীর বৃদ্ধি ও তার বর্কত কামনা করেন। ইহা আমার সৌভাগ্যের বিষয় যে, আমি আপনার নিকট এই নছীহত পেশ করতেছি যা আশা করি আপনি কবুল করবেন, ইহাই আমার আপনার বিষয়ে সুধারণা। আর প্রকৃত জ্ঞানী তো তিনিই যিনি কোন কথা শুনতে পেলে তার মধ্যে যা সর্বাধিক উত্তম তার অনুসরণ করেন। আমি আল্লাহর নিকট আমার, আপনার এবং সমস্ত মুসলিমদের জন্য দ্বীনের জ্ঞান চাচ্ছি। আমি আরো তাঁর নিকট কামনা করছি যেন, আপনি আপনার সমাজে একজন সৎ ও সংস্কারক সদস্য হিসাবে গড়ে উঠেন;নিশ্চয় তিনি অতি শ্রোতা, নিকট বর্তী এবং জবাব দানকারী।
আপনার নিকট হয়তো ধুমপানের বিধান অপ্রকাশ্য থাকতে পারে, তাই আপনাকে বলছিঃ
শরঈ দলীলসমূহ এই মর্মে প্রমাণ করে যে ধুমপান শরীয়তের দৃষ্টিতে হারাম বস্তুর অন্তর্ভুক্ত। কারণ এতে অপবিত্রতা,সহ বহু রকম ক্ষতি শামেল রয়েছে। মহা পবিত্র আল্লাহ খাদ্য ও পানীয় সমূহ হতে এক মাত্র সেটাই তাঁর বান্দাহদের জন্য বৈধ করেছেন যা পবিত্র এবং উপকারী। পক্ষান্তরে যা তাদের দ্বীন ও দুনিয়ায় তাদের জন্য ক্ষতিকারক বা তাদের জ্ঞান লোপকারী- এসব বস্তু তিনি তাদের উপর হারাম করে দিয়েছেন। তিনি নিজ বান্দাহদের উপর তাদের চেয়েও বেশী দয়াশীল। তিনি হলেন নিজের কথা,কর্ম,সংবিধান ও নির্ধারণ প্রভৃতি সর্ব বিষয়ে মহা প্রজ্ঞাময়,মহাজ্ঞানী। উক্ত ধুমপান হারাম হওয়ার বিষয়ে কুরআনের অন্যতম দলীল হল মহান আল্লাহর নিম্ন বর্ণিত বাণীঃ
(يَسْأَلونَكَ مَاذَا أُحِلَّ لَهُمْ قُلْ أُحِلَّ لَكُمُ الطَّيِّبَاتُ)[سورة المائدة:৪]
‘ওরা আপনাকে জিজ্ঞাসা করে তাদের জন্য কোন্ বস্তু হালাল করা হয়েছে? আপনি বলুনঃ তোমাদের জন্য পবিত্র বস্তু সমূহ হালাল করা হয়েছে (সূরাতুল মায়েদাহ: ৪)। মহান আল্লাহ আমাদের নবী মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর পরিচয় দিতে গিয়ে বলেনঃ
(يَأْمُرُهُمْ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَاهُمْ عَنِ الْمُنْكَرِ وَيُحِلُّ لَهُمُ الطَّيِّبَاتِ وَيُحَرِّمُ عَلَيْهِمُ الْخَبَائِثَ)[سورة الأعراف:১৫৭]
‘তিনি তাদেরকে ন্যায়ের আদেশ করেন, অন্যায় থেকে নিষেধ করেন, তাদের জন্য পবিত্র বস্তুসমূহ হালাল করেন এবং তাদের উপর খবীছ-অপবিত্র বস্তুসমূহ হারাম করেন’। (সূরাতুল আ‘রাফ: ১৫৭)
বস্তুত মহান আল্লাহ এই দুই আয়াত দিয়ে পরিস্কার বুঝিয়ে দিয়েছেন যে,তিনি এক মাত্র পবিত্র ও উপকারী খাদ্য-পানীয় হালাল করেছেন। কিন্তু যেসব খাদ্য, পানীয় ক্ষতিকর যেমন, সমস্ত নেশাকারী বস্তু, হিরোইন সহ সমস্ত প্রকার ক্ষতিকর খাদ্য ও পানী যা দ্বীন বা শরীর বা ব্রেনের জন্য ক্ষতিকারক সেগুলোই অপবিত্র হারাম দ্রব্যের অন্তর্ভুক্ত। সমস্ত ডাক্তার এবং অন্যান্য ব্যক্তি বর্গ যারা ধুম পান ও তার ক্ষতি সম্পর্কে সম্যক অবগত- তাঁরা এই মর্মে ঐকমত্য পোষণ করেছেন যে, ধুমপান ক্ষতিকর পেয় বস্তু সমূহের অন্তর্ভুক্ত যা বড় ধরনের ক্ষতি বয়ে আনে। তারা আরো উল্লেখ করেন যে, এটা বহু রকম অসুখ বিসুখের কারণ হয়ে থাকে;যেমন ক্যান্সার, হাট এ্যাটাক প্রভৃতি…।
হে আমার মুমিন ভাই! সম্ভবত এই ভূমিকার পর অনুধাবন করতে পেরেছেন আমি কি চাই, কারণ জ্ঞানী ব্যক্তি ইশারাতেই বুঝে নেয়। মহান আল্লাহ বলেনঃ
(وَتَعَاوَنُوا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوَى وَلا تَعَاوَنُوا عَلَى الْاِثْمِ وَالْعُدْوَانِ وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَاب)[سورة المائدة:২]
‘আর তোমরা পরস্পরে নেকী ও আল্লাহ ভীতির কাজে সহযোগিতা করবে,পাপাচারিতা ও সীমা লংঘনের কাজে পরস্পরে সহযোগিতা করবে না, আর তোমরা আল্লাহকে ভয় করবে, কারণ তিনি হলেন কঠিন শাস্তি দানকারী’(সূরাতুল মায়িদাহঃ২)।
আল্লাহ আপনার মাঝে বর্কত দিন-আমি আপনার নিকট চাই উক্ত আয়াতটি আপনি বার বার পড়–ন, কারণ আয়াতটির অর্থ একেবারেই প্রকাশ্য ও স্পষ্ট..। আর যদি আমরা কুরআন ওয়ালা উম্মত হই, নিজ প্রতিপালক, সৃষ্টিকর্তার নিকট আত্ম সমর্পনকারী হই তবে অবশ্যই আমাদেরকে আল্লাহ রাযী খুশী হন এরূপ পন্থায় চলতে হবে। অর্থাৎ তাঁর নির্দেশসমূহ মেনে চলতে হবে, তাঁর নে‘আমতের শুকরিয়া জ্ঞাপন করতে হবে, এবং তাঁর নিষেধ কৃত বস্তুসমূহ থেকে বিরত থাকতে হবে। অন্যথায় আমরা তার বান্দাহ হওয়ার যোগ্য নই বলে বিবেচিত।
হে আমার সম্মানিত ভাই! আল্লাহ আপনাকে তাওফীক্ব দিন। আমি যা ইচ্ছা পোষণ করেছি তা হল আপনাকে এই মর্মে সতর্ক করে দেওয়া যে, আপনার মুসলিম ভাইদের নিকট ধুপ পান জাতীয় দ্রব্য বিক্রয় করা হারাম। কারণ তা পাপচারিতা ও সীমালংঘণের কাজে পরস্পরকে সহযোগিতা করার অন্তর্ভুক্ত, যা থেকে মহান আল্লাহ তাঁর এই বাণী দ্বারা নিষিদ্ধ করে দিয়েছেন।
(وَلا تَعَاوَنُوا عَلَى الْاِثْمِ وَالْعُدْوَانِ)[سورة المائدة:২]
‘আর তোমরা পরস্পরে পাপাচারিতা ও সীমালংঘনের কাজে সহযোগিতা করবে না’। (সূরাতুল মায়িদাহ: ২)
আরো বলতে চাই যে সম্পদ উক্ত ধুমপান দ্রব্য থেকে আপনি জমা করে থাকেন তা নিছক হারাম সম্পদ। হাদীছে এসেছেঃ
(إِنَّهُ لَا يَرْبُو لَحْمٌ نَبَتَ مِنْ سُحْتٍ إِلَّا كَانَتِ النَّارُ أَوْلَى بِهِ) [رواه الترمذي وصححه الألباني في صحيح الترغيب ২/ ১৫০، الحديث رقم ১৭২৯].
‘যে মাংস হারাম দ্বারা বর্ধিত হবে তার জন্য জাহান্নামই বেশী উপযুক্ত’(তিরমিযী,জুমআ অধ্যায়,হা/৫৫৮,হাদীছ ছহীহ। দ্রঃ ছহীহুত্ তারগীব ২/১৫০,হা/১৭২৯)।
নিশ্চয় আমি আপনাকে মহান আল্লাহর নিকট তাওবাহ করার, এবং এসব ধুমপানের ক্রয় বিক্রয় বন্ধ করার প্রতি উদাত্ত আহবান জানাচ্ছি। ইহাতে রয়েছে মহান আল্লাহর নির্দেশের বাস্তবায়ন, এদ্বারা আপনার উপার্জিত সম্পদ, নিজের জন্য সন্তান-সন্ততির জন্য ব্যয়কৃত সম্পদ সব কিছু এমনভাবে হালাল গণ্য হবে,যাতে হারামের কোনই সংমিশ্রণ থাকবে না। হাদীছে এসেছেঃ
(إِنَّ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ إِذَا حَرَّمَ أَكْلَ شَيْءٍ حَرَّمَ ثَمَنَهُ)[رواه أحمد برقم ২৫৪৬، وأبوداود في كتاب البيوع من سننه برقم ৩০২৬].
‘নিশ্চয় মহান আল্লাহ যখন কোন বস্তুর ভক্ষণ হারাম করেন, তখন তার মূল্য নেওয়াও হারাম করে দেন’(মুসনাদ আহমাদ,মুসনাদে বানী হাশেম,হা/২৫৪৬, আবুদাউদ, বেচা-কেনা অধ্যায়,হা/৩০২৬,সনদ ছহীহ। দ্রঃ মুহাদ্দিছ শুআইব আরনাউত্ব এর তাহক্বীক্ব কৃত মুসনাদ আহমাদ ১/২৯৩,হা/২৬৭৮)।
আমি আপনাকে আল্লাহকে ভয় করে চলার ওছীয়ত করছি,কারণ ইহা রুযী রুটি বৃদ্ধির অন্যতম মাধ্যম। যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ
(وَمَنْ يَتَّقِ اللَّهَ يَجْعَلْ لَهُ مَخْرَجاً . وَيَرْزُقْهُ مِنْ حَيْثُ لا يَحْتَسِبُ)[سورة الطلاق:২-৩]
‘আর যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করবে, আল্লাহ তার জন্য নি®কৃতির পথ বের করে দিবেন, আর তাকে তার ধারণাতীত জায়গা থেকে রিযিক দিবেন (সূরাতুত্ ত্বালাক্বঃ২-৩)।
পরিশেষেঃ
হে আমার সম্মানিত ভাই! আপনি নিজের শেষ বিদায় মুহূর্তের এবং মহান আল্লাহর সামনে উপস্থিত হওয়ার কথাটি স্মরণ করুন। সেই মহান দিবসের কথাটি স্মরণ করুন, যে দিন আল্লাহর নিকট সকলকে উপস্থাপন করা হবে। আপনাকেও প্রত্যেক ছোট বড় বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। জিজ্ঞাসা করা হবে আপনার এই সম্পদ সম্পর্কে, তা আপনি কিভাবে উপার্জন করেছেন, আর কোন খাতে তা ব্যয় করেছেন?? (কাজেই সাবধান! যাবতীয় হারাম খাদ্য দ্রব্য ও হারাম সামগ্রীর বেচা-কেনা পরিত্যাগ করুন। কাষ্টোমারকে ধোকা দেওয়া, মিথ্যা কথা/তথ্য দেওয়ার অভ্যাস থাকলে তা পরিহার করুন। আল্লাহ আপনাকে সেই তাওফীক দিন,আপনার রুটী রুযীতে বর্কত দিন-আমীন)।
আমি সুউচ্চ মহান আল্লাহর নিকট আপনার হেদায়াত কামনা করছি, আরো ইহা কামনা করছি যেন, আপনি আপনার সমাজে একজন সৎকর্মশীল ও সংষ্কারক হিসাবে গড়ে উঠেন।